অবশেষে মুঘলে আজম এলেন by শামীমুল হক
অবশেষে
এলেন মুঘলে আজম। না! ঘোড়া কিংবা পালকিতে চড়ে নয়। এমনকি বজরায় চড়েও আসেননি
তিনি। এসেছেন কড়া পাহারায়। গাড়িতে চড়ে। তবে তার এ আসা রাজদরবারে নয়,
বন্দিশালায়। কিন্তু কদিন দেরি করে আসলেন তিনি। প্রায় দুই সপ্তাহজুড়েই
প্রজারা অপেক্ষায় মুঘলে আজমের জন্য।
গোটা রাজ্যেই আলোচনা চলছিল মুঘলে আজম রাজবন্দি! প্রজাদের আলোচনা রোববার সত্যি প্রমাণিত হলো। রাজবন্দি হয়ে এলেন তিনি প্রকাশ্যে। ক্যাসিনো মুঘল সম্রাট আগেকার দিনের মুঘল, রাজা, বাদশাহ, নবাবদের মতোই রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। মুঘল কিংবা নবাব, রাজা কিংবা বাদশাদের আমল বিলুপ্ত হয়েছে বহু আগেই। কিন্তু সেই আমলকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন ক্যাসিনো মুঘল সম্রাট। ফেনীর ইসমাইল একসময় সম্রাট হয়ে যাওয়ার কাহিনী আরব্য রজনীকেও হার মানিয়েছে। সেই যুগের মুঘল, নবাবদের মতোই দিন যাপন করেছে এ যুগের মুঘলে আজম সম্রাট। রাজা, বাদশাহ, মুঘল, নবাবরা বৈধভাবে খাজনা আদায় করতেন বছরের একটা সময়।
কিন্তু এ যুগের মুঘলে আজম সম্রাট খাজনা পেতেন প্রতি রাতে। এক, দুই টাকা নয়। লাখে লাখে। কাকরাইলের যে ভবনে তার অফিস সেখানেই সম্রাট বসাতেন দরবার। রাজ দরবারের আদলে সেই দরবারে হাজির হতো বিভিন্ন সেক্টরের লোকজন। সম্রাটকে খাজনা দিয়ে ফিরতেন বাড়ি। সন্ধ্যার পর এ ভবনেই ভিড় জমাতো তার জগতের উজির নাজির আর পাইক পেয়াদারা। সম্রাট এ ভবনে তার দরবার বানানোর পরই ভয়ে ভবনের অন্যরা একে একে ভবন ছেড়ে চলে যান। শূন্য এ ভবন দখল করে নেন সম্রাট। তার প্রতিদিনের খাজনা কেউ না পৌঁছালে নেমে আসত খড়গ। ডেকে এনে এ ভবনের টর্চার সেলে চালানো হতো নির্যাতন। এভাবেই ফেনীর ইসমাইল হোসেন হয়ে উঠেন সম্রাট। আর নিজেকে ভাবতে থাকেন মুঘলে আজম। গোটা রাজধানীজুড়ে তার পোস্টার, ব্যানার থাকত সারা বছরই। যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হয়ে তার জীবনই পাল্টে যায়। চাঁদাবাজি তার মূল পেশা। আর মূল নেশা ছিল জুয়া। বস্তায় টাকা নিয়ে তিনি দেশের বাইরে চলে যেতেন ক্যাসিনো খেলতে। অবাক বিস্ময়। অসীম ক্ষমতাধর একজন রক্ত মাংসের মানুষ হয়েও ইসমাইল নামের পাশে যোগ হয় সম্রাট। গডফাদার। এই নামটির প্রতি জন্মে প্রজাদের আতঙ্ক। ভয়। নির্মম নিষ্ঠুরতার প্রতীক হয়ে উঠেন সম্রাট। ১৯৬৯ সালে ইতালিয়ান মাফিয়া পরিবার নিয়ে উপন্যাস লেখেন মারিয়ো পুজো। বিখ্যাত লেখক তিনি। সে সময় তিনি দ্য গডফাদার উপন্যাসে তুলে ধরেন, গডফাদার কর্লিয়নি পরিবারের কাহিনী।
ডন ভিটো কর্লিয়নি গডফাদার নামে পরিচিত। তার মাধ্যমেই কর্লিয়নি পরিবারের উত্থান। গডফাদার কিংবা ডন বলতে তিনিই। কর্লিয়নি পরিবারের আরো এক জন সদস্য আছেন, যিনি কর্লিয়নি পরিবারের দুর্দিনে সাহায্যের দূত হিসেবে আর্বিভুত হয়েছিলেন। তিনি ডন মাইকেল। মাফিয়া একটি আলাদা জগত। ওই উপন্যাসে তিনি দেখিয়েছেন, যতই এর ভিতরে প্রবেশ করা হয়, ততই বিস্মিত আর শিহরিত হতে হয় এর ভয়ানক রূপ দেখে। এ উপন্যাসে শেষ পরিণতি দেখানো হয়, প্রতিপক্ষের গুলিতে গডফাদারের যবনিকা। বাংলাদেশে এমন ভয়ানক গডফাদার কালচার চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু নির্মমতার দিক দিয়ে এরশাদ শিকদার এগিয়ে। মুঘলে আজম সম্রাট ক্ষমতার বলয়ে থেকে সম্রাট হওয়ায় মানুষ মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছিল।
কিন্তু এখন বন্দি হওয়ায় অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছে। নিজের সম্রাজ্য রক্ষা করতে গিয়ে হেন কাজ নেই করেন না এসব সম্রাটরা। হেরেমখানা থেকে শুরু করে সবকিছুই তাদের হাতের নাগালে। মদ, সুরা সবই তাদের সঙ্গী। ইশারায় মেলে নারী সঙ্গ। ক্যাসিনোকাণ্ড একটি বিষয় স্পষ্ট করে গেছে। আগেকার সম্রাটরা তাদের প্রজাদের কল্যাণে কাজ করতেন দিন রাত। বিশাল সম্রাজ্য রক্ষা করতে চৌকশ ও বিশ্বস্থ সেনাপতি ছিল। তাইতো সেই সব সম্রাটরা আজো গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে ইতিহাস হয়ে আছেন। আর এখনকার সম্রাটরা প্রতিটি পাড়া মহল্লা, ব্যবসা, বাণিজ্যকে সেক্টরে ভাগ করে। সেখানে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় খাজনা। যা প্রতিরাতে পৌঁছে দিতে হয় সম্রাটদের দরবারে। এ টাকা দিয়ে তারা করেন ফূর্তি। কিন্তু এসব সম্রাটদের পরিণতি হয় ভয়াবহ। কারো কারো ভাগ্যে ঘটে করুণ পরিণতি। কেউ কেউ প্রতিপক্ষের গুলিতে প্রাণ হারায়। কেউ কেউ গুম হয়ে যায়। চোখের সামনে এসব দেখেও কেউ শিক্ষা নেয়না। তাইতো বলা হয়, ইতিহাসের বড় শিক্ষা হলো- ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।
গোটা রাজ্যেই আলোচনা চলছিল মুঘলে আজম রাজবন্দি! প্রজাদের আলোচনা রোববার সত্যি প্রমাণিত হলো। রাজবন্দি হয়ে এলেন তিনি প্রকাশ্যে। ক্যাসিনো মুঘল সম্রাট আগেকার দিনের মুঘল, রাজা, বাদশাহ, নবাবদের মতোই রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। মুঘল কিংবা নবাব, রাজা কিংবা বাদশাদের আমল বিলুপ্ত হয়েছে বহু আগেই। কিন্তু সেই আমলকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন ক্যাসিনো মুঘল সম্রাট। ফেনীর ইসমাইল একসময় সম্রাট হয়ে যাওয়ার কাহিনী আরব্য রজনীকেও হার মানিয়েছে। সেই যুগের মুঘল, নবাবদের মতোই দিন যাপন করেছে এ যুগের মুঘলে আজম সম্রাট। রাজা, বাদশাহ, মুঘল, নবাবরা বৈধভাবে খাজনা আদায় করতেন বছরের একটা সময়।
কিন্তু এ যুগের মুঘলে আজম সম্রাট খাজনা পেতেন প্রতি রাতে। এক, দুই টাকা নয়। লাখে লাখে। কাকরাইলের যে ভবনে তার অফিস সেখানেই সম্রাট বসাতেন দরবার। রাজ দরবারের আদলে সেই দরবারে হাজির হতো বিভিন্ন সেক্টরের লোকজন। সম্রাটকে খাজনা দিয়ে ফিরতেন বাড়ি। সন্ধ্যার পর এ ভবনেই ভিড় জমাতো তার জগতের উজির নাজির আর পাইক পেয়াদারা। সম্রাট এ ভবনে তার দরবার বানানোর পরই ভয়ে ভবনের অন্যরা একে একে ভবন ছেড়ে চলে যান। শূন্য এ ভবন দখল করে নেন সম্রাট। তার প্রতিদিনের খাজনা কেউ না পৌঁছালে নেমে আসত খড়গ। ডেকে এনে এ ভবনের টর্চার সেলে চালানো হতো নির্যাতন। এভাবেই ফেনীর ইসমাইল হোসেন হয়ে উঠেন সম্রাট। আর নিজেকে ভাবতে থাকেন মুঘলে আজম। গোটা রাজধানীজুড়ে তার পোস্টার, ব্যানার থাকত সারা বছরই। যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হয়ে তার জীবনই পাল্টে যায়। চাঁদাবাজি তার মূল পেশা। আর মূল নেশা ছিল জুয়া। বস্তায় টাকা নিয়ে তিনি দেশের বাইরে চলে যেতেন ক্যাসিনো খেলতে। অবাক বিস্ময়। অসীম ক্ষমতাধর একজন রক্ত মাংসের মানুষ হয়েও ইসমাইল নামের পাশে যোগ হয় সম্রাট। গডফাদার। এই নামটির প্রতি জন্মে প্রজাদের আতঙ্ক। ভয়। নির্মম নিষ্ঠুরতার প্রতীক হয়ে উঠেন সম্রাট। ১৯৬৯ সালে ইতালিয়ান মাফিয়া পরিবার নিয়ে উপন্যাস লেখেন মারিয়ো পুজো। বিখ্যাত লেখক তিনি। সে সময় তিনি দ্য গডফাদার উপন্যাসে তুলে ধরেন, গডফাদার কর্লিয়নি পরিবারের কাহিনী।
ডন ভিটো কর্লিয়নি গডফাদার নামে পরিচিত। তার মাধ্যমেই কর্লিয়নি পরিবারের উত্থান। গডফাদার কিংবা ডন বলতে তিনিই। কর্লিয়নি পরিবারের আরো এক জন সদস্য আছেন, যিনি কর্লিয়নি পরিবারের দুর্দিনে সাহায্যের দূত হিসেবে আর্বিভুত হয়েছিলেন। তিনি ডন মাইকেল। মাফিয়া একটি আলাদা জগত। ওই উপন্যাসে তিনি দেখিয়েছেন, যতই এর ভিতরে প্রবেশ করা হয়, ততই বিস্মিত আর শিহরিত হতে হয় এর ভয়ানক রূপ দেখে। এ উপন্যাসে শেষ পরিণতি দেখানো হয়, প্রতিপক্ষের গুলিতে গডফাদারের যবনিকা। বাংলাদেশে এমন ভয়ানক গডফাদার কালচার চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু নির্মমতার দিক দিয়ে এরশাদ শিকদার এগিয়ে। মুঘলে আজম সম্রাট ক্ষমতার বলয়ে থেকে সম্রাট হওয়ায় মানুষ মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছিল।
কিন্তু এখন বন্দি হওয়ায় অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছে। নিজের সম্রাজ্য রক্ষা করতে গিয়ে হেন কাজ নেই করেন না এসব সম্রাটরা। হেরেমখানা থেকে শুরু করে সবকিছুই তাদের হাতের নাগালে। মদ, সুরা সবই তাদের সঙ্গী। ইশারায় মেলে নারী সঙ্গ। ক্যাসিনোকাণ্ড একটি বিষয় স্পষ্ট করে গেছে। আগেকার সম্রাটরা তাদের প্রজাদের কল্যাণে কাজ করতেন দিন রাত। বিশাল সম্রাজ্য রক্ষা করতে চৌকশ ও বিশ্বস্থ সেনাপতি ছিল। তাইতো সেই সব সম্রাটরা আজো গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে ইতিহাস হয়ে আছেন। আর এখনকার সম্রাটরা প্রতিটি পাড়া মহল্লা, ব্যবসা, বাণিজ্যকে সেক্টরে ভাগ করে। সেখানে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় খাজনা। যা প্রতিরাতে পৌঁছে দিতে হয় সম্রাটদের দরবারে। এ টাকা দিয়ে তারা করেন ফূর্তি। কিন্তু এসব সম্রাটদের পরিণতি হয় ভয়াবহ। কারো কারো ভাগ্যে ঘটে করুণ পরিণতি। কেউ কেউ প্রতিপক্ষের গুলিতে প্রাণ হারায়। কেউ কেউ গুম হয়ে যায়। চোখের সামনে এসব দেখেও কেউ শিক্ষা নেয়না। তাইতো বলা হয়, ইতিহাসের বড় শিক্ষা হলো- ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।
No comments