আবরার হত্যা: বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি কি বন্ধ হওয়া উচিত?
বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ
হত্যাকাণ্ডে একটি ছাত্র সংগঠনের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর ছাত্র রাজনীতি
বন্ধের দাবি উঠেছে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে।
বুয়েটের
ইলেক্ট্রনিক এন্ড ইলেট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের একজন
সাধারণ শিক্ষার্থী যিনি নিজেকে রাহাত নামে পরিচয় দিতে চান, তিনি বলেন,
শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত।
"আমাদের ক্যাম্পাসে
ছাত্র রাজনীতির নামে যা চলছে তা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। এসব অত্যাচারগুলা
বন্ধ হতে হলে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত" বলেন রাহাত।
তবে সাধারণ
শিক্ষার্থীদের এমন দাবি মানতে চাইছেন না ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা। তারা
বলছেন, ছাত্র রাজনীতি নয় বরং ছাত্র রাজনীতির নামে যে সন্ত্রাস ও
দখলদারিত্বের রাজনীতি শুরু হয়েছে তা বন্ধ হওয়া উচিত।
ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি উঠেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে |
ছাত্র
রাজনীতি বন্ধ হলে শিক্ষাঙ্গনে প্রশাসনিক দখলদারিত্ব বেড়ে যাবে বলে মনে
করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল
মাহমুদ।
তিনি বলেন, "আমরা কোন ভাবেই মনে করি না ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত এবং আমরা এই দাবির বিরুদ্ধে"।
"শিক্ষার্থীদের
জিম্মি করে যে রাজনীতি বা প্রক্রিয়া সেটা বন্ধ হওয়া উচিত। এর বিরুদ্ধে
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করা দরকার বা কথা বলা দরকার" বলেন মি. আহমেদ।
ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন তুলে দেয়া উচিত।
কারণ তারা ছাত্র রাজনীতির কোন নিয়ম বা ব্যাকরণ অনুসরণ করছে না বলে মনে করেন ডাকসুর সাবেক জিএস ড. মোস্তাক হোসাইন।
তিনি
বলেন, "অপরাজনীতিকে দমন করতে হলে সুস্থ্য ধারার ছাত্র রাজনীতি প্রয়োজন।
ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে সেটা হবে না। অপরাধী ছাত্র সংগঠন বন্ধ হোক। এগুলো
ক্যাম্পাসে থাকা উচিত না"।
"রাজনৈতিক দলের শাখা হিসেবে শুধু শিক্ষাঙ্গনে নয় বরং ছাত্র, শিক্ষক,
পেশাজীবি-কোথাও হওয়া উচিত নয়। এই দাবি তারা তুললে গোটা দেশবাসীর সমর্থন
তারা পাবে" তিনি বলেন।
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় ছাত্র রাজনীতির অনেক অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে
গত ১০ বছরে বাংলাদেশে যতগুলো বড় আন্দোলন হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য
কোটা বিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন,
২০০৬ সালে শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান বিরোধী আন্দোলন এবং
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন।
এসব আন্দোলনের কোনটাই রাজনৈতিক দলের সহযোগি ছাত্র সংগঠনগুলোর উদ্যোগে হয়নি।
বরং অনেক আন্দোলন যেমন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীদের উপর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগ রয়েছে।
রাজনৈতিক
বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি দরকার। তবে সরকারের এজেন্ডা
বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা ছাত্র রাজনীতির জন্য খারাপ বলে জানান
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা।
তিনি
বলেন "ছাত্রদের নিজেদের যে চাওয়া পাওয়া রয়েছে তার পক্ষে অর্থ্যাৎ তাদের
নিজেদের যা নিয়ে রাজনীতি করার কথা সে সুযোগ তাদের থাকতে হবে।"
"কিন্তু সরকারি দলের যে দলগত রাজনীতি সেটা বন্ধ করা জরুরী"।
"এটার
চেয়েও যেটা বেশি জরুরী সেটা হল, শিক্ষকদের যে দলীয় রাজনীতি সেটাও
ক্ষতিকর। এই শিক্ষক রাজনীতি টিকে থাকলে তা ছাত্র রাজনীতিকে নিজেদের টিকে
থাকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে" বলেন তিনি।
দলীয় রাজনীতির
ছত্রছায়া বন্ধ করা গেলে গেস্টরুম কালচার, গণরুম ও র্যাগিংয়ের নামে
ভয়ংকর নিপীড়ণ বন্ধ করা সম্ভব বলেও জানান সামিনা লুৎফা।
No comments