জাম্বুরা ফুল by তানজিদ শুভ্র
সেদিন
শুভ্র প্রাইভেট ক্লাসে বসে অংক কষছিল হাসিমুখেই। যখন ক্লাসে ঢুকছিল তখনই
শুভ্র ফুলের সুভাষ পায়। ফুল নিয়ে শুভ্রর জ্ঞান মোটামোটি কম। তাই বুঝতে
পারেনি এটা কোন ফুলের ঘ্রাণ। তবে এটা খুব সহজেই বুঝতে পারে ফুলের এই মিষ্টি
সুভাষ আসছে পেছনের বেঞ্চের মেয়েটার হাতের ওই ফুল থেকে। সাদা একটা ফুল হাতে
রেখে মেয়েটাও অঙ্ক কষছিল। শুভ্র যতদূর জানে মেয়েটার নাম ফারহা। অঙ্ক কষার
পাশাপাশি ফারহা’র ফুলের দিকে নজর বুলিয়ে নিয়েছিল শুভ্র। মন থেকে ফুলটা পেতে
ইচ্ছে করলেও কিছুই বলতে পারছিল না শুভ্র।
মন চাইলেও তো আর সব কিছু হয় না। তাই মন স্থির করে নিল। হঠাৎ পাশের বেঞ্চের রাব্বিকে ডাক দিয়ে শুভ্র বলল:
– কিরে, ফারহার হাতের ফুলটা আনতে পারবি?
– এটা আর কী এমন ব্যাপার? পারবো।
– আচ্ছা, পারলে এনে দিস।
– তিন-চার মিনিট অপেক্ষা কর।
– আরে এখন না, ছুটির সময়।
নিষেধ না মেনে মিনিট চারেক পর পাশ থেকে রাব্বী শুভ্রর হাতে কিছু একটা দিল। খুলে দেখে সাদা ফুল হাতে আর ফারহার হাত ফাঁকা। মনে হচ্ছে হাতে হাতে বন্ধন না, বিবাদ হবে। কী করবে এবার! ফারহার সাথের বান্ধবীগুলোও ঘটনা বুঝে হাসছিল খুব। হয়ত শুভ্রকে দুএকটা বকাও দিতে চেষ্টা করছিল। শুভ্র লক্ষ্য করল আড় চোখে ফারহা তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
শুভ্র চেষ্টা করল মুখে বিষন্নতার ছোঁয়া লাগাতে। শুভ্র এবার রাব্বিকে দিয়ে ফুল ফারহার বেঞ্চে রেখে দিয়ে আরও একবার হাসির পাত্র হয়। হাসাহাসি শেষ না হতেই ছুটি হয়ে গেল। ফারহা চলে গেল। সাদা ফুল পড়ে রইল বেঞ্চে। আবির হাতে নিয়ে একটা পাঁপড়ি দিল শুভ্রকে। সাদা ফুলের সুভাষ মন কেড়ে নেওয়ার পরও দিনের প্রস্থান হয় ইতিবাচকতার সাথে।
পরদিন প্রাইভেট ক্লাসে আধাঘণ্টা পর গিয়ে ফারহার পাশের সিটে বসতে হয় শুভ্রকে। হয়ত শুভ্রর অনুপস্থিতে কারও আলোচনার বিষয় ছিল গতকালের ফুল কিংবা কারও মায়াবী দৃষ্টি “শুভ্র” নামক অবয়ব খুঁজেও ব্যর্থ হয়েছে। না খুঁজলেও দোষ নেই তাতে। শুভ্র ভাবছিল কী হবে আজকে? বিভাদ নাকি বন্ধন। যাই হউক, কেউ কিছু না বললেও ফারহাকে শুনিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে শুভ্র ছড়া কাটে। ছড়ার শ্রী ছিল এমন-
ফুল চুরিতে যদিও আছে পাপ,
পারলে করে দিও মাফ।
ভালোবেসে পুষিয়ে দিব তোমার যত রাগ!
করো না আর মান অভিমান…।
ওইদিন প্রাইভেট শেষে বের হয়ে শুভ্র দেখে সামনের জাম্বুরা গাছে ঝুলছে একইরকম ফুল। আবির দুই থোকা ফুল নিয়ে শুভ্রকেও দেয় একটি। আগেরদিন যে ফুলের সুগন্ধ নিয়েছিল ফারহার কাছ থেকে সেইরকম ফুল নিজের হাতে নিয়ে ফারহার পথ অতিক্রম করে শুভ্র। পরদিন শুভ্র প্রাইভেটে যায় নি। শুভ্র ঘুরতে যাওয়ায় প্রাইভেটে না আসার কথা রাব্বী জানত। কিন্তু রাবব্বীও আসে নি প্রাইভেটে। সবার অজানা রয়ে গেলেও ভিন্ন চোখে না আসার কারণ খুঁজে ফারহা। সঠিক সমাধান না পেলেও ভাবে লাজুক ছেলেটা হয়ত ওইদিনের হাসাহাসির কারণে লজ্জা পেয়ে বসে থেকে আজ আসে নি। তারপরের দিনেও শুভ্র’র অনুপস্থিতি ছিল বেশ কয়েকজনের আলোচনার টুকরো বিষয়। বন্ধুহীন শুভ্রর কথা জানার কোন পথ না থাকায় শুধু অপেক্ষার বাতায়ন খোলা ছিল।
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারে শুভ্রর দেখা মিলে প্রাইভেট ক্লাসে। কিন্তু ঐদিন ফারহা না আসায় মান অভিমান ঠিক কাটিয়ে উঠে নি। আবির, রাব্বী, ফারাবী সবাই মজা করলেও শুভ্র’র অন্বেষণের দৃষ্টিতে ছিল ফারহার লাবণ্যময়ী বদনখানি। খুঁজে না পেয়েও আক্ষেপ না করে শনিবার বিকেলের অপেক্ষায় বাড়ি ফিরে শুভ্র।
সাপ্তাহিক ছুটি কাটিয়ে শনিবার বিকেলে যখন শুভ্র প্রাইভেটের সামনে আসে তখন ফারহাকে ঐ গাছতলায় দেখে পাশে দাঁড়ায়। আশেপাশে কেউ না থাকায় শুভ্রকে সজোরে ধাক্কা দেয় ফারহা। শুভ্র চমকে যায়। ফারহার সাথে আগে কখনোও কথাও হয় নি। আর আজ প্রথমেই এত জোরে ধাক্কা! কারণ জানতে চাওয়ার আগেই ফারহা প্রশ্ন করে শুভ্রকে; শুরু হয় কথোপকথন।
– এই ছেলে, এতদিন কোথায় ছিলে তুমি?
– আমি? কয়দিন?
– হ্যাঁ, তুমিই। চারদিন পর আজ দেখলাম।
– ইইই! তুমিই তো বৃহস্পতিবার আস নি।
– তো?
– আমি আসছিলাম তো।
– হুহ।
– এখন বলুন তো, আমাকে ধাক্কাই কেন দিলেন আর নিজেই পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচালেন কেন?
– কিছু নাহ্।
– আচ্ছা।
রুমে ঢুকার ঠিক আগে ফারহা শুভ্র’র ব্যাগের এক পকেটে একটা গোলাপ রাখলেও শুভ্র টের পায় নি আদৌ। বাড়ি ফিরে যখন শুভ্র গোলাপে সন্ধান পায় তখন সাথে একটা চিরকুটও দেখতে পায়। চিরকুটে লেখা- ‘এত অভিমান?’ একটু ভাবনার পরেই বুঝতে পারে ফারহা-ই এই চিরকুটের প্রেরক। শুভ্র’র পক্ষ থেকে কোন উত্তর পায় নি ফারহা। তবে এখন একটু আধটু কথা হয় ওদের। ধীরে ধীরে বন্ধুত্বের পর্যায়ে পৌঁছলেও মান অভিমান ঠিকই থাকে ওদের মাঝে। সপ্তাহে একদিন হলেও অভিমান করে কাটাতে হয় ওদের। এ যেন ওদের নিত্য রুটিন। অভিমানের কারণগুলো যতই নগণ্য হউক না কেন ভাঙতে লাগত ঠিক একদিন।
প্রথম দিনের ঘটনার দুই মাস পর শুভ্রর জন্মদিন ছিল। যদিও বন্ধুবান্ধবদের কেউ জানতই না তবুও সাদা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় ফারহা। জন্মদিনের সূত্র জানতে চাইলে ফারহা জানায় শুভ্রর আইডি কার্ড লুকিয়ে নিয়ে পিছন থেকে খুব কষ্ট করে জেনেছে। শুভ্র অবাক হয়। কারণ, কোন বন্ধুই যেখানে জন্মদিন জানার পরও শুভেচ্ছা জানায় না সেখানে মেয়েটা জন্মদিন খুঁজে বের করতে লুকিয়ে আইডি কার্ড দেখে। সেই থেকেই ধীরে ধীরে মান অভিমান ভাঙা গড়ার ছোট্ট কুটির তৈরি হয়। সাদা ফুল হয় সেই কুটিরের অলংকার।
হঠাৎ একদিন শুভ্র’র মনে একটা প্রশ্ন জাগে।
– জাম্বুরা ফুল কি আসলেই সুগন্ধ ছড়ায় নাকি প্রথম দিনে পু্ষ্পপ্রণয় ছিল অন্য কোন সুভাষে, অন্য কোন মোহে?
মন চাইলেও তো আর সব কিছু হয় না। তাই মন স্থির করে নিল। হঠাৎ পাশের বেঞ্চের রাব্বিকে ডাক দিয়ে শুভ্র বলল:
– কিরে, ফারহার হাতের ফুলটা আনতে পারবি?
– এটা আর কী এমন ব্যাপার? পারবো।
– আচ্ছা, পারলে এনে দিস।
– তিন-চার মিনিট অপেক্ষা কর।
– আরে এখন না, ছুটির সময়।
নিষেধ না মেনে মিনিট চারেক পর পাশ থেকে রাব্বী শুভ্রর হাতে কিছু একটা দিল। খুলে দেখে সাদা ফুল হাতে আর ফারহার হাত ফাঁকা। মনে হচ্ছে হাতে হাতে বন্ধন না, বিবাদ হবে। কী করবে এবার! ফারহার সাথের বান্ধবীগুলোও ঘটনা বুঝে হাসছিল খুব। হয়ত শুভ্রকে দুএকটা বকাও দিতে চেষ্টা করছিল। শুভ্র লক্ষ্য করল আড় চোখে ফারহা তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
শুভ্র চেষ্টা করল মুখে বিষন্নতার ছোঁয়া লাগাতে। শুভ্র এবার রাব্বিকে দিয়ে ফুল ফারহার বেঞ্চে রেখে দিয়ে আরও একবার হাসির পাত্র হয়। হাসাহাসি শেষ না হতেই ছুটি হয়ে গেল। ফারহা চলে গেল। সাদা ফুল পড়ে রইল বেঞ্চে। আবির হাতে নিয়ে একটা পাঁপড়ি দিল শুভ্রকে। সাদা ফুলের সুভাষ মন কেড়ে নেওয়ার পরও দিনের প্রস্থান হয় ইতিবাচকতার সাথে।
পরদিন প্রাইভেট ক্লাসে আধাঘণ্টা পর গিয়ে ফারহার পাশের সিটে বসতে হয় শুভ্রকে। হয়ত শুভ্রর অনুপস্থিতে কারও আলোচনার বিষয় ছিল গতকালের ফুল কিংবা কারও মায়াবী দৃষ্টি “শুভ্র” নামক অবয়ব খুঁজেও ব্যর্থ হয়েছে। না খুঁজলেও দোষ নেই তাতে। শুভ্র ভাবছিল কী হবে আজকে? বিভাদ নাকি বন্ধন। যাই হউক, কেউ কিছু না বললেও ফারহাকে শুনিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে শুভ্র ছড়া কাটে। ছড়ার শ্রী ছিল এমন-
ফুল চুরিতে যদিও আছে পাপ,
পারলে করে দিও মাফ।
ভালোবেসে পুষিয়ে দিব তোমার যত রাগ!
করো না আর মান অভিমান…।
ওইদিন প্রাইভেট শেষে বের হয়ে শুভ্র দেখে সামনের জাম্বুরা গাছে ঝুলছে একইরকম ফুল। আবির দুই থোকা ফুল নিয়ে শুভ্রকেও দেয় একটি। আগেরদিন যে ফুলের সুগন্ধ নিয়েছিল ফারহার কাছ থেকে সেইরকম ফুল নিজের হাতে নিয়ে ফারহার পথ অতিক্রম করে শুভ্র। পরদিন শুভ্র প্রাইভেটে যায় নি। শুভ্র ঘুরতে যাওয়ায় প্রাইভেটে না আসার কথা রাব্বী জানত। কিন্তু রাবব্বীও আসে নি প্রাইভেটে। সবার অজানা রয়ে গেলেও ভিন্ন চোখে না আসার কারণ খুঁজে ফারহা। সঠিক সমাধান না পেলেও ভাবে লাজুক ছেলেটা হয়ত ওইদিনের হাসাহাসির কারণে লজ্জা পেয়ে বসে থেকে আজ আসে নি। তারপরের দিনেও শুভ্র’র অনুপস্থিতি ছিল বেশ কয়েকজনের আলোচনার টুকরো বিষয়। বন্ধুহীন শুভ্রর কথা জানার কোন পথ না থাকায় শুধু অপেক্ষার বাতায়ন খোলা ছিল।
সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারে শুভ্রর দেখা মিলে প্রাইভেট ক্লাসে। কিন্তু ঐদিন ফারহা না আসায় মান অভিমান ঠিক কাটিয়ে উঠে নি। আবির, রাব্বী, ফারাবী সবাই মজা করলেও শুভ্র’র অন্বেষণের দৃষ্টিতে ছিল ফারহার লাবণ্যময়ী বদনখানি। খুঁজে না পেয়েও আক্ষেপ না করে শনিবার বিকেলের অপেক্ষায় বাড়ি ফিরে শুভ্র।
সাপ্তাহিক ছুটি কাটিয়ে শনিবার বিকেলে যখন শুভ্র প্রাইভেটের সামনে আসে তখন ফারহাকে ঐ গাছতলায় দেখে পাশে দাঁড়ায়। আশেপাশে কেউ না থাকায় শুভ্রকে সজোরে ধাক্কা দেয় ফারহা। শুভ্র চমকে যায়। ফারহার সাথে আগে কখনোও কথাও হয় নি। আর আজ প্রথমেই এত জোরে ধাক্কা! কারণ জানতে চাওয়ার আগেই ফারহা প্রশ্ন করে শুভ্রকে; শুরু হয় কথোপকথন।
– এই ছেলে, এতদিন কোথায় ছিলে তুমি?
– আমি? কয়দিন?
– হ্যাঁ, তুমিই। চারদিন পর আজ দেখলাম।
– ইইই! তুমিই তো বৃহস্পতিবার আস নি।
– তো?
– আমি আসছিলাম তো।
– হুহ।
– এখন বলুন তো, আমাকে ধাক্কাই কেন দিলেন আর নিজেই পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচালেন কেন?
– কিছু নাহ্।
– আচ্ছা।
রুমে ঢুকার ঠিক আগে ফারহা শুভ্র’র ব্যাগের এক পকেটে একটা গোলাপ রাখলেও শুভ্র টের পায় নি আদৌ। বাড়ি ফিরে যখন শুভ্র গোলাপে সন্ধান পায় তখন সাথে একটা চিরকুটও দেখতে পায়। চিরকুটে লেখা- ‘এত অভিমান?’ একটু ভাবনার পরেই বুঝতে পারে ফারহা-ই এই চিরকুটের প্রেরক। শুভ্র’র পক্ষ থেকে কোন উত্তর পায় নি ফারহা। তবে এখন একটু আধটু কথা হয় ওদের। ধীরে ধীরে বন্ধুত্বের পর্যায়ে পৌঁছলেও মান অভিমান ঠিকই থাকে ওদের মাঝে। সপ্তাহে একদিন হলেও অভিমান করে কাটাতে হয় ওদের। এ যেন ওদের নিত্য রুটিন। অভিমানের কারণগুলো যতই নগণ্য হউক না কেন ভাঙতে লাগত ঠিক একদিন।
প্রথম দিনের ঘটনার দুই মাস পর শুভ্রর জন্মদিন ছিল। যদিও বন্ধুবান্ধবদের কেউ জানতই না তবুও সাদা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় ফারহা। জন্মদিনের সূত্র জানতে চাইলে ফারহা জানায় শুভ্রর আইডি কার্ড লুকিয়ে নিয়ে পিছন থেকে খুব কষ্ট করে জেনেছে। শুভ্র অবাক হয়। কারণ, কোন বন্ধুই যেখানে জন্মদিন জানার পরও শুভেচ্ছা জানায় না সেখানে মেয়েটা জন্মদিন খুঁজে বের করতে লুকিয়ে আইডি কার্ড দেখে। সেই থেকেই ধীরে ধীরে মান অভিমান ভাঙা গড়ার ছোট্ট কুটির তৈরি হয়। সাদা ফুল হয় সেই কুটিরের অলংকার।
হঠাৎ একদিন শুভ্র’র মনে একটা প্রশ্ন জাগে।
– জাম্বুরা ফুল কি আসলেই সুগন্ধ ছড়ায় নাকি প্রথম দিনে পু্ষ্পপ্রণয় ছিল অন্য কোন সুভাষে, অন্য কোন মোহে?
No comments