যাদের স্বপ্ন বাড়ি যায় না by শেখ জাহাঙ্গীর আলম
ঈদের ছুটিতে ডিউটি |
ঈদ মানে আনন্দ। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে চায়
সবাই। তাই সুমিষ্ট স্বপ্ন নিয়ে নাড়ির টানে বাড়ি যায় মানুষ। কিন্তু সবার
বাসনা কী পূর্ণ হয়! হয়তো না। তাই তো সবাই যখন নিজ বাড়িতে ফিরে ঈদ উল্লাসে
মাতোয়ারা, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে
ব্যস্ত। তাদের স্বপ্ন বাড়ি যায় না, আটকে থাকে দায়িত্বের বেড়াজালে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের ছুটিতে রাজধানী একেবারে
ফাঁকা। নগরীর সড়কগুলোতে নেই যানবাহনের চাপ। থানা এলাকাগুলো অনেকটা নীরব।
তাই শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্ব পালন করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
সদস্যরা। পরিবার থেকে অনেক দূরে তারা। ঈদের দিনও দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের
অনেকে।
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় গিয়ে দেখা যায়,
থানা ফটকে দায়িত্ব পালন করছে একজন কনস্টেবল। আর থানার ভেতরে ডিউটি অফিসারের
কক্ষের বাইরে রয়েছেন কনস্টেবল (সেন্ট্রি) মো. রমজান। তার গ্রামের বাড়ি
বরিশালের ঝালকাঠি। ঈদের দিন দায়িত্ব পালনে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি
বলেন, ‘ছুটি পাই নাই। বাড়িতে পরিবারের সবাই ঈদ পালন করছে আর আমি ডিউটি
করছি। মনটা বাড়িতে পড়ে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবাই ঈদে ছুটি চায়, কিন্তু অনেকে পায়
আবার অনেকে পায় না। আমি গত রোজার ঈদেও ডিউটি করেছি। কোরবানির ঈদেও ডিউটি
করছি। একের পরে এক ডিউটি থাকার কারণে এবারও ঈদে ছুটি পাইনি।’
থানার দায়িত্বরত অপর এক কনস্টেবল মো. হায়দার বাংলা
ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি থানায় ঈদ করছি। গত দুই বছর হলো বিয়ে করেছি। কিন্তু
প্রিয় মানুষকে খুব বেশি সময় দিতে পারিনি। এই ঈদটাও আমরা দুজনে একা একা
কাটাচ্ছি। মনে হচ্ছে ঈদের দিন আর অন্যদিন একই। অলস সময় কাটছে।’
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ডিউটি অফিসার হিসেবে
দায়িত্বে রয়েছেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদার। ঈদের
দিন ডিউটির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভালো লাগছে। অনেকে ছুটিতে গেছেন, তবে
সবাইকে ১৪ আগস্টের মধ্যে ফিরে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর ঈদের দিন
আমাদের থানায় খাবারের ভালো ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই থানা এলাকা অনেকটা
শান্ত। এখন পর্যন্ত কোনও অভিযোগ নেই, আসামি গ্রেফতার নেই, কোনও ঘটনাও নেই।’
ছুটির প্রসঙ্গে রাজধানীর হাউজ বিল্ডিং ট্রাফিক পুলিশ
বক্সে থাকা পুলিশ (ট্রাফিক) কনস্টেবল মো. আমির উদ্দিন বলেন, ‘সবাই তো আর
ছুটি পাবে না। নগরবাসীর সেবায় একজন না একজনকে থাকতেই হবে। আমরা নগরীর সেবায়
কাজ করছি। যদিও সড়কে যানবাহনের কোনও চাপ নেই, নিরাপত্তার স্বার্থে ডিউটি
করতেই হবে।’
দায়িত্বের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাড়ি
গফরগাঁও। পুলিশে চাকরির সূত্রে ঢাকায় থাকতে হয়। পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ
উপভোগ করতে কে না চায়। কিন্তু আমাদের কাধে যে দায়িত্ব রয়েছে, সেটি পালন না
করে থাকা যায় না। আমাদের এই জোনে ৭২ জন পুলিশ সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে ১২ জন
এবার ঈদে ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছেন। আর বাকি সবাই ডিউটিতে আছেন। তাই সহকর্মীদের
সঙ্গে সড়কেই ঈদের আনন্দ কাটাচ্ছি।’
উত্তরা সোনারগাঁও জনপথের জমজম মোড়ে দায়িত্ব পালনে
ব্যস্ত ছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট অলিদ চন্দ্র মাহাতো। তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন
সড়ক ফাঁকা, যানবাহনের চাপ নেই। ডিউটি করতে ভালো লাগছে। তবে চালকরা ফাঁকা
রাস্তা পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠে। এই কারণে সড়কে ট্রাফিক পুলিশ থাকলে তারা
অনেকটা সাবধানতার সঙ্গে যানবাহন চালায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক তো আগস্ট মাস। তাই আমাদের ট্রাফিক
বিভাগের সদস্যদের ছুটি কম দেওয়া হয়েছে। কারণ সড়কের নিরাপত্তার বিষয়টি
আমাদের দেখতে হয়।’
No comments