আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চূড়ান্ত প্রস্থানের জন্য এটা কি সঠিক সময়? by জাভেদ হাফিজ
আফগানিস্তানে
দ্রুত শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন সবাই যেন
উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। বহু ইস্যুতে তাদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে, যেগুলোর কারণে
একটা নতুন শীতল যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তা সত্বেও এখানে তাদের
ঐক্যমত রয়েছে। সম্প্রতি তারা পাকিস্তানকে এর সাথে যুক্ত করেছে যাতে আফগান
শান্তি প্রক্রিয়াকে জোরদার করা যায়।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চান আগামী বছরের নির্বাচনের আগেই মার্কিন সেনারা দেশে ফিরে যাক। পাকিস্তানে সাম্প্রতিক একটি আফগান শান্তি সম্মেলনে আফগানিস্তানের বিরোধী দলের সদস্য, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, মিডিয়া ও নারী অধিকার গ্রুপগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিলেন। আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে পরিস্কার বোঝা গেছে যে আফগানরা যুদ্ধ নিয়ে কতটা ক্লান্ত এবং শান্তির জন্য কতটা উদগ্রিব হয়ে অপেক্ষা করছে।
আফগানিস্তানে শান্তির জন্য বর্তমানে যে আশাবাদ তৈরি হয়েছে, সেটা একেবারে ভিত্তিহীন নয়। দোহাতে মার্কিন-তালেবানদের আলোচনার পরপরই এক ধরনের আন্ত:আফগান আলোচনাও হয়েছে। দোহা আলোচনার পরপরই বেইজিংয়ে তিন বিশ্ব শক্তির প্রতিনিধি ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠক থেকে আন্ত:আফগান আলোচনার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়া হয়েছে যাতে একটা শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে শৃঙ্খলাপূর্ণ ও দায়িত্বশীলতার সাথে হস্তান্তর করা যায়।
তবে প্রকৃত শান্তি অর্জনের আগে অনেকগুলো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেগুলো আগে ভাবা হয়নি। তালেবানরা কি বর্তমান সংবিধানের অধীনে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে? আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কি আলোচনা থেকে আলাদা করে দেখতে হবে? আগামী বছরের মধ্যেই মার্কিন সেনা সংখ্যাকে কি একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে? আর, সেনাদের যদি পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়, তাহলে শান্তি চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের বিষয়টি কারা নিশ্চিত করবে? অস্ত্রবিরতির বিষয়টি কারা পর্যবেক্ষণ করবে যেটা শান্তি চুক্তির জন্য অত্যন্ত জরুরি? আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, টেকসই আফগান শান্তির জন্য আলোচনায় তাড়াহুড়া করাটা কি ঠিক না কি এখানে ধাপে ধাপে এগুনো উচিত?
বিদেশী সেনাদের হঠাৎ সরিয়ে নেয়া হলো সেটা বিপর্যয়কর হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র দেশগুলো যখন আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়েছিল, এরপর সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন সেখান থেকে এই প্রত্যাশায় সরি গিয়েছিল যে তারা নিজেরাই নিজেদের দেশকে সামলাতে পারবে, তখন সেখানে রীতিমতো বিপর্যয় নেমে এসেছিল। দীর্ঘ ও রক্তাক্ত ক্ষমতার লড়াই চলেছে এবং তালেবানদের উত্থানের মধ্য দিয়ে তার ইতি ঘটেছে। আকস্মিক সেনা প্রত্যাহার করা হলে সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
কিন্তু ট্রাম্পের অন্যদের বিস্মিত করার একটা প্রবণতা রয়েছে। গত ডিসেম্বরে, তিনি হঠাৎই ঘোষণা দিলেন যে, আফগানিস্তান থেকে অর্ধেক সেনা সরিয়ে নেয়া হবে। এই ঘোষণা তার নিজের মন্ত্রিসভায় ফাটল ধরালো এবং তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেমস ম্যাটিস পদত্যাগ করলেন। ২০১৯ সালের প্রথমার্ধে, আফগানিস্তানে ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে এবং দায়েশ এখানে তাদের উপস্থিতি ভালোভাবেই জানান দিয়েছে।
মনে হচ্ছে ট্রাম্পের অধীনস্থ যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রভাব বলয় থেকে আফগানিস্তানকে মুক্তি দিয়ে কর্তৃত্ব চীন ও রাশিয়ার কাছে হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত। চীন আফগানিস্তানে আগাম শান্তি চায় কারণ দেশটির অবস্থান চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের উপরে। রাশিয়াও একটা স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তান দেখতে চায় কারণ তারা ইস্ট-ওয়েস্ট করিডোরের মাধ্যমে ভারত ও পূর্ব এশিয়ার সাথে সংযোগের চিন্তা-ভাবনা করছে। সংযোগ এই সময়টাতে বহুল উচ্চারিত একটি শব্দ এবং সংযোগ স্থাপিত হলে পুরো এশিয়া অঞ্চলই এখানে লাভবান হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তান এখানে অন্যতম প্রধান লাভবান দেশ হিসেবে উঠে আসবে।
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য আফগানিস্তানকে নিজেদের মতো করে মহাপরিকল্পনা নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া এখানে উন্নয়নের ব্যয় বহন করতে পারে। এর অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্রের চূড়ান্ত প্রস্থানের সময় আসলে এখনও আসেনি কারণ আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমেরিকারনদেরও অন্যতম আকাঙ্ক্ষা।
>>>জাভেদ হাফিজ সাবেক পাকিস্তানী কূটনীতিক
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চান আগামী বছরের নির্বাচনের আগেই মার্কিন সেনারা দেশে ফিরে যাক। পাকিস্তানে সাম্প্রতিক একটি আফগান শান্তি সম্মেলনে আফগানিস্তানের বিরোধী দলের সদস্য, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, মিডিয়া ও নারী অধিকার গ্রুপগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিলেন। আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে পরিস্কার বোঝা গেছে যে আফগানরা যুদ্ধ নিয়ে কতটা ক্লান্ত এবং শান্তির জন্য কতটা উদগ্রিব হয়ে অপেক্ষা করছে।
আফগানিস্তানে শান্তির জন্য বর্তমানে যে আশাবাদ তৈরি হয়েছে, সেটা একেবারে ভিত্তিহীন নয়। দোহাতে মার্কিন-তালেবানদের আলোচনার পরপরই এক ধরনের আন্ত:আফগান আলোচনাও হয়েছে। দোহা আলোচনার পরপরই বেইজিংয়ে তিন বিশ্ব শক্তির প্রতিনিধি ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠক থেকে আন্ত:আফগান আলোচনার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়া হয়েছে যাতে একটা শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে শৃঙ্খলাপূর্ণ ও দায়িত্বশীলতার সাথে হস্তান্তর করা যায়।
তবে প্রকৃত শান্তি অর্জনের আগে অনেকগুলো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেগুলো আগে ভাবা হয়নি। তালেবানরা কি বর্তমান সংবিধানের অধীনে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে? আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কি আলোচনা থেকে আলাদা করে দেখতে হবে? আগামী বছরের মধ্যেই মার্কিন সেনা সংখ্যাকে কি একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে? আর, সেনাদের যদি পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়, তাহলে শান্তি চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের বিষয়টি কারা নিশ্চিত করবে? অস্ত্রবিরতির বিষয়টি কারা পর্যবেক্ষণ করবে যেটা শান্তি চুক্তির জন্য অত্যন্ত জরুরি? আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, টেকসই আফগান শান্তির জন্য আলোচনায় তাড়াহুড়া করাটা কি ঠিক না কি এখানে ধাপে ধাপে এগুনো উচিত?
বিদেশী সেনাদের হঠাৎ সরিয়ে নেয়া হলো সেটা বিপর্যয়কর হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র দেশগুলো যখন আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়েছিল, এরপর সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন সেখান থেকে এই প্রত্যাশায় সরি গিয়েছিল যে তারা নিজেরাই নিজেদের দেশকে সামলাতে পারবে, তখন সেখানে রীতিমতো বিপর্যয় নেমে এসেছিল। দীর্ঘ ও রক্তাক্ত ক্ষমতার লড়াই চলেছে এবং তালেবানদের উত্থানের মধ্য দিয়ে তার ইতি ঘটেছে। আকস্মিক সেনা প্রত্যাহার করা হলে সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
কিন্তু ট্রাম্পের অন্যদের বিস্মিত করার একটা প্রবণতা রয়েছে। গত ডিসেম্বরে, তিনি হঠাৎই ঘোষণা দিলেন যে, আফগানিস্তান থেকে অর্ধেক সেনা সরিয়ে নেয়া হবে। এই ঘোষণা তার নিজের মন্ত্রিসভায় ফাটল ধরালো এবং তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেমস ম্যাটিস পদত্যাগ করলেন। ২০১৯ সালের প্রথমার্ধে, আফগানিস্তানে ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে এবং দায়েশ এখানে তাদের উপস্থিতি ভালোভাবেই জানান দিয়েছে।
মনে হচ্ছে ট্রাম্পের অধীনস্থ যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রভাব বলয় থেকে আফগানিস্তানকে মুক্তি দিয়ে কর্তৃত্ব চীন ও রাশিয়ার কাছে হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত। চীন আফগানিস্তানে আগাম শান্তি চায় কারণ দেশটির অবস্থান চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের উপরে। রাশিয়াও একটা স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তান দেখতে চায় কারণ তারা ইস্ট-ওয়েস্ট করিডোরের মাধ্যমে ভারত ও পূর্ব এশিয়ার সাথে সংযোগের চিন্তা-ভাবনা করছে। সংযোগ এই সময়টাতে বহুল উচ্চারিত একটি শব্দ এবং সংযোগ স্থাপিত হলে পুরো এশিয়া অঞ্চলই এখানে লাভবান হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তান এখানে অন্যতম প্রধান লাভবান দেশ হিসেবে উঠে আসবে।
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য আফগানিস্তানকে নিজেদের মতো করে মহাপরিকল্পনা নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া এখানে উন্নয়নের ব্যয় বহন করতে পারে। এর অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্রের চূড়ান্ত প্রস্থানের সময় আসলে এখনও আসেনি কারণ আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমেরিকারনদেরও অন্যতম আকাঙ্ক্ষা।
>>>জাভেদ হাফিজ সাবেক পাকিস্তানী কূটনীতিক
কাতারের রাজধানী দোহায় আন্ত:আফগান আলোচনায় অংশগ্রহণকারী তালেবান প্রতিনিধি দল, ছবি: এএফপি |
No comments