ইরানকে ধরতে মক্কায় ওআইসিসহ বহুজাতিক তিন জোটের জরুরি বৈঠক
পশ্চিম
এশিয়ায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও জনপ্রিয়তায়
চিন্তিত হয়ে পড়েছে রাজতন্ত্র শাসিত কয়েকটি আরব দেশ। এ কারণে তারা এ অঞ্চলে
ইরানের উত্থান ঠেকানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
এ লক্ষ্যে সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে ইরান বিরোধী তিনটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমে আরব লীগ এবং পরে পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি'র শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সৌদি আরবের তেল সরবরাহ লাইনে সম্প্রতি ইয়েমেনি যোদ্ধাদের ড্রোন হামলা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরা বন্দরে কয়েকটি দেশের তেলবাহী জাহাজে বোমা বিস্ফোরণ, এ অঞ্চলের ব্যাপারে তেহরানের নীতি পর্যালোচনা ও ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার উপায় খুঁজে বের করা ছিল এই তিনটি জরুরি বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘটনাকে অজুহাত করে "আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে ইরানের হুমকি" শীর্ষক এসব বৈঠকের আয়োজন করেন সৌদি রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ। তবে ইরানের বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগ এরই মধ্যে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় বেশ কিছু আরব দেশের নেতারা মক্কা বৈঠকে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকেন। লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামদ আলে সানি, মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ, ওমানের বাদশাহ সুলতান কাবুস মক্কা বৈঠকে যোগ দেননি।
মক্কায় জরুরি বৈঠকের আয়োজন ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের পুরানো কৌশলেরই পুনরাবৃত্তি মাত্র। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘটনাবলীতে সৌদি আরব যখনই পরাজিত হয় তখনই আরব দেশগুলোকে নিয়ে জরুরি বৈঠকের আয়োজন কোরে নিজের কূটনৈতিক শক্তিকে জাহির করার চেষ্টা চালায়। সৌদি তেল স্থাপনায় ইয়েমেনি যোদ্ধাদের হামলা, সৌদি বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও আমিরাতের বন্দরে তেলবাহী জাহাজে বিস্ফোরণের পর রিয়াদ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া, আমেরিকা ইরানের সঙ্গে সামরিক যুদ্ধে অনাগ্রহ প্রকাশ করায় সৌদি আরব আরো হতাশ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও ইরানকে ঠেকানোর উপায় খুঁজে বের করা জন্য রিয়াদ আরব দেশগুলোকে নিয়ে জরুরি বৈঠকের আয়োজন করে। প্রকৃতপক্ষে, তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা কমে আসায় সৌদি আরব তাড়াহুড়া করে মক্কা বৈঠকের আয়োজন কোরে ইরানকে এ অঞ্চলের জন্য বিরাট হুমকি ও দেশটিকে সন্ত্রাসবাদের সমর্থক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছে।
এ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সৌদি আরব ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালানোর জন্য আমেরিকাকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময়ও সৌদি কর্মকর্তারা ইরানের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর জন্য তাকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছেন। যদিও বোল্টন নিজেও ইরানে হামলা চালাতে ব্যাপক আগ্রহী। এ ব্যাপারে ইরানের পশ্চিম এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক সাবাহ জাঙ্গানেহ বলেছেন, "ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জরুরি বৈঠক আয়োজন করে সৌদি আরব পুরানো কৌশলেরই পুনরাবৃত্তি করেছেন। তারা যখনই কোথাও পরাজিত হয় তখনই আরব কিংবা অন্যান্য মুসলিম নেতাদেরকে এ ধরণের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানায় এবং আলোচনা শেষে কেবল বিবৃতি প্রকাশ করে।" তিনি আরো বলেছেন, "এ ধরণের বৈঠক লোক দেখানো এবং এ অঞ্চলের ঘটনাবলীতে তা কোনো প্রভাব ফেলবে না, কোনো সমস্যারও সমাধান করবে না। মধ্যপ্রাচ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সব দেশের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। তাই এ ধরণের কিছু জরুরি বৈঠক ডেকে সমস্যার কোনো সমাধান হবে না।"
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মক্কায় মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের নিয়ে যে তিনটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে তার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল এ অঞ্চলে ইরানভীতি ছড়িয়ে দেয়া। জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি একবার ইয়েমেনের আনসারুল্লা যোদ্ধাদের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ দেখিয়ে দাবি করেছিলেন এসব ইরানের তৈরি অস্ত্র। সৌদি সরকারের কর্মকর্তাদের পরিচালিত ইন্ডিপেন্ডেন্ট আরব ওয়েব সাইটে বলা হয়েছে, "মক্কায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের প্রবেশ কক্ষে এমনভাবে ইয়েমেনিদের ছোঁড়া অস্ত্রের ধ্বংসাবশেষের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে সম্মেলন কক্ষে প্রবেশের সময় সবার নজর কাড়তে পারে।" নিকি হ্যালি ২০১৭ সালে জাতিসংঘে ইরানের বিরুদ্ধে প্রমাণ তুলে ধরার জন্য ইয়েমেনিদের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিলেন। নিকি হ্যালি ক্ষেপণাস্ত্রের খোলস দেখিয়ে দাবি করেছিলেন এগুলো ইরান ইয়েমেনিদেরকে সরবরাহ করেছে। সৌদি সরকারও ঠিক একইভাবে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে যাতে ইরান সম্পর্কে সবার মনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু সৌদি আরবের এ প্রচেষ্টা সফল হয়নি। এমনকি মক্কা সম্মেলন সবার হাসির খোরাকে পরিণত হয়।
মক্কা বৈঠকেও সৌদি নেতারা ইরানভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন। সৌদি রাজা সালমান আরব লীগের শীর্ষ বৈঠকে দেয়া ভাষণে আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং এ অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে ইরানকে অভিযুক্ত করেন। কিন্তু সৌদি রাজার এসব বক্তব্যও কোনো কাজে আসেনি।
কারণ সম্মেলনে উপস্থিত প্রায় কোনো আরব নেতাই তাদের বক্তব্যে ইরানের নাম উল্লেখ করেননি। এমনকি সেখানে উপস্থিত ইরাকের প্রেসিডেন্ট বারহাম সালেহ প্রকাশ্যে ইরানের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন। সৌদি আরব বৈঠক শেষে ইরান বিরোধী বিবৃতি প্রকাশেরও চেষ্টা করেছে। কিন্তু আরব লীগের শীর্ষ বৈঠক এবং ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি'র বৈঠকেও তীব্র মতপার্থক্যের কারণে শেষ পর্যন্ত কোনো বিবৃতিতেই ইরানের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা পিজিসিসি'র বৈঠকে অবশ্য ইরান বিরোধী বিবৃতি নতুন কিছু নয়। সৌদি আরব এবারও এ বৈঠককে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। মক্কায় অনুষ্ঠিত আরব লীগ ও ওআইসি'র সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্যের কারণে সৌদি আরবের ইরান বিরোধী ষড়যন্ত্র শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, সৌদি আরব মক্কায় অনুষ্ঠিত তিনটি বৈঠককে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালালেও শেষ পর্যন্ত তা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে গেছে। কারণ এসব বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'ডিল অব সেঞ্চুরি' পরিকল্পনাকে প্রধান হুমকি হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ইসরাইল ও আমেরিকার প্রণীত এ পরিকল্পনা আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর জন্য ক্ষতিকর। স্বাধীন গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের একই সময়ে মক্কায় বৈঠক আয়োজন করা থেকে বোঝা যায় বোল্টন ট্রাম্পের বিতর্কিত ওই পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন আদায়ের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছেন। ইন্টারনেট ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল আরাবি আল জাদিদ লিখেছে, "আগামী ২৫ ও ২৬ জুন বাহরাইনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের 'ডিল অব সেঞ্চুরি' পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে। ওই বৈঠককে সফল করতেই মক্কা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।"
ইরানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক গবেষক হাসান হানি যাদেহ বলেছেন, মক্কা বৈঠকের মাধ্যমে ইরানভীতি ছড়ানো এবং মুসলমানদের প্রধান সমস্যা অর্থাৎ ফিলিস্তিন বিষয়টিকে আড়াল করার চেষ্টা চালানো হয়েছে।
গত সাড়ে চার বছরে সৌদি রাজা সালমান নিজের শক্তিমত্বা প্রমাণের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। মক্কা বৈঠকের মাধ্যমেও সৌদি আরবকেই তিনি সমস্যা সমাধানের একমাত্র কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছেন।
এ লক্ষ্যে সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে ইরান বিরোধী তিনটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমে আরব লীগ এবং পরে পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি'র শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সৌদি আরবের তেল সরবরাহ লাইনে সম্প্রতি ইয়েমেনি যোদ্ধাদের ড্রোন হামলা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরা বন্দরে কয়েকটি দেশের তেলবাহী জাহাজে বোমা বিস্ফোরণ, এ অঞ্চলের ব্যাপারে তেহরানের নীতি পর্যালোচনা ও ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার উপায় খুঁজে বের করা ছিল এই তিনটি জরুরি বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘটনাকে অজুহাত করে "আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে ইরানের হুমকি" শীর্ষক এসব বৈঠকের আয়োজন করেন সৌদি রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ। তবে ইরানের বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগ এরই মধ্যে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় বেশ কিছু আরব দেশের নেতারা মক্কা বৈঠকে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকেন। লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামদ আলে সানি, মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ, ওমানের বাদশাহ সুলতান কাবুস মক্কা বৈঠকে যোগ দেননি।
মক্কায় জরুরি বৈঠকের আয়োজন ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের পুরানো কৌশলেরই পুনরাবৃত্তি মাত্র। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘটনাবলীতে সৌদি আরব যখনই পরাজিত হয় তখনই আরব দেশগুলোকে নিয়ে জরুরি বৈঠকের আয়োজন কোরে নিজের কূটনৈতিক শক্তিকে জাহির করার চেষ্টা চালায়। সৌদি তেল স্থাপনায় ইয়েমেনি যোদ্ধাদের হামলা, সৌদি বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও আমিরাতের বন্দরে তেলবাহী জাহাজে বিস্ফোরণের পর রিয়াদ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া, আমেরিকা ইরানের সঙ্গে সামরিক যুদ্ধে অনাগ্রহ প্রকাশ করায় সৌদি আরব আরো হতাশ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও ইরানকে ঠেকানোর উপায় খুঁজে বের করা জন্য রিয়াদ আরব দেশগুলোকে নিয়ে জরুরি বৈঠকের আয়োজন করে। প্রকৃতপক্ষে, তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা কমে আসায় সৌদি আরব তাড়াহুড়া করে মক্কা বৈঠকের আয়োজন কোরে ইরানকে এ অঞ্চলের জন্য বিরাট হুমকি ও দেশটিকে সন্ত্রাসবাদের সমর্থক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছে।
এ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সৌদি আরব ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালানোর জন্য আমেরিকাকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময়ও সৌদি কর্মকর্তারা ইরানের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর জন্য তাকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছেন। যদিও বোল্টন নিজেও ইরানে হামলা চালাতে ব্যাপক আগ্রহী। এ ব্যাপারে ইরানের পশ্চিম এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক সাবাহ জাঙ্গানেহ বলেছেন, "ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জরুরি বৈঠক আয়োজন করে সৌদি আরব পুরানো কৌশলেরই পুনরাবৃত্তি করেছেন। তারা যখনই কোথাও পরাজিত হয় তখনই আরব কিংবা অন্যান্য মুসলিম নেতাদেরকে এ ধরণের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানায় এবং আলোচনা শেষে কেবল বিবৃতি প্রকাশ করে।" তিনি আরো বলেছেন, "এ ধরণের বৈঠক লোক দেখানো এবং এ অঞ্চলের ঘটনাবলীতে তা কোনো প্রভাব ফেলবে না, কোনো সমস্যারও সমাধান করবে না। মধ্যপ্রাচ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সব দেশের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। তাই এ ধরণের কিছু জরুরি বৈঠক ডেকে সমস্যার কোনো সমাধান হবে না।"
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মক্কায় মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের নিয়ে যে তিনটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে তার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল এ অঞ্চলে ইরানভীতি ছড়িয়ে দেয়া। জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি একবার ইয়েমেনের আনসারুল্লা যোদ্ধাদের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ দেখিয়ে দাবি করেছিলেন এসব ইরানের তৈরি অস্ত্র। সৌদি সরকারের কর্মকর্তাদের পরিচালিত ইন্ডিপেন্ডেন্ট আরব ওয়েব সাইটে বলা হয়েছে, "মক্কায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের প্রবেশ কক্ষে এমনভাবে ইয়েমেনিদের ছোঁড়া অস্ত্রের ধ্বংসাবশেষের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে সম্মেলন কক্ষে প্রবেশের সময় সবার নজর কাড়তে পারে।" নিকি হ্যালি ২০১৭ সালে জাতিসংঘে ইরানের বিরুদ্ধে প্রমাণ তুলে ধরার জন্য ইয়েমেনিদের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিলেন। নিকি হ্যালি ক্ষেপণাস্ত্রের খোলস দেখিয়ে দাবি করেছিলেন এগুলো ইরান ইয়েমেনিদেরকে সরবরাহ করেছে। সৌদি সরকারও ঠিক একইভাবে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে যাতে ইরান সম্পর্কে সবার মনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু সৌদি আরবের এ প্রচেষ্টা সফল হয়নি। এমনকি মক্কা সম্মেলন সবার হাসির খোরাকে পরিণত হয়।
মক্কা বৈঠকেও সৌদি নেতারা ইরানভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন। সৌদি রাজা সালমান আরব লীগের শীর্ষ বৈঠকে দেয়া ভাষণে আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং এ অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে ইরানকে অভিযুক্ত করেন। কিন্তু সৌদি রাজার এসব বক্তব্যও কোনো কাজে আসেনি।
কারণ সম্মেলনে উপস্থিত প্রায় কোনো আরব নেতাই তাদের বক্তব্যে ইরানের নাম উল্লেখ করেননি। এমনকি সেখানে উপস্থিত ইরাকের প্রেসিডেন্ট বারহাম সালেহ প্রকাশ্যে ইরানের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন। সৌদি আরব বৈঠক শেষে ইরান বিরোধী বিবৃতি প্রকাশেরও চেষ্টা করেছে। কিন্তু আরব লীগের শীর্ষ বৈঠক এবং ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি'র বৈঠকেও তীব্র মতপার্থক্যের কারণে শেষ পর্যন্ত কোনো বিবৃতিতেই ইরানের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা পিজিসিসি'র বৈঠকে অবশ্য ইরান বিরোধী বিবৃতি নতুন কিছু নয়। সৌদি আরব এবারও এ বৈঠককে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। মক্কায় অনুষ্ঠিত আরব লীগ ও ওআইসি'র সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্যের কারণে সৌদি আরবের ইরান বিরোধী ষড়যন্ত্র শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, সৌদি আরব মক্কায় অনুষ্ঠিত তিনটি বৈঠককে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালালেও শেষ পর্যন্ত তা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে গেছে। কারণ এসব বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'ডিল অব সেঞ্চুরি' পরিকল্পনাকে প্রধান হুমকি হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ইসরাইল ও আমেরিকার প্রণীত এ পরিকল্পনা আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর জন্য ক্ষতিকর। স্বাধীন গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের একই সময়ে মক্কায় বৈঠক আয়োজন করা থেকে বোঝা যায় বোল্টন ট্রাম্পের বিতর্কিত ওই পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন আদায়ের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছেন। ইন্টারনেট ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল আরাবি আল জাদিদ লিখেছে, "আগামী ২৫ ও ২৬ জুন বাহরাইনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের 'ডিল অব সেঞ্চুরি' পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে। ওই বৈঠককে সফল করতেই মক্কা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।"
ইরানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক গবেষক হাসান হানি যাদেহ বলেছেন, মক্কা বৈঠকের মাধ্যমে ইরানভীতি ছড়ানো এবং মুসলমানদের প্রধান সমস্যা অর্থাৎ ফিলিস্তিন বিষয়টিকে আড়াল করার চেষ্টা চালানো হয়েছে।
গত সাড়ে চার বছরে সৌদি রাজা সালমান নিজের শক্তিমত্বা প্রমাণের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। মক্কা বৈঠকের মাধ্যমেও সৌদি আরবকেই তিনি সমস্যা সমাধানের একমাত্র কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছেন।
No comments