পাঁচ বছরের গ্যারান্টিতে রাস্তা, নষ্ট হলে ঠিক করে দেবেন ঠিকাদার by সালেহ টিটু
দেশে প্রথমবারের মতো পাঁচ বছরের গ্যারান্টিসহ আধুনিক পেভার মেশিন দিয়ে
সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায়। ওই সময়ের মধ্যে
রাস্তায় যে কোনও ধরনের সংস্কার বা মেরামত প্রয়োজন হলে ঠিকাদার নিজ দায়িত্বে
তা করে দেবেন। একই সঙ্গে প্রথমবারের মতো আধুনিক প্রযুক্তির থ্রিডি জেব্রা
ক্রসিং দেওয়া হচ্ছে নগরীর অভ্যন্তরীণ সড়কে। থ্রিডি জেব্রা ক্রসিং দেশে এটাই
প্রথম হবে বলে দাবি করেছে সিটি করপোরেশন।
২০০২ সালে সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর থেকে তিনটি পরিষদের আমলে একই
সড়কে তিন থেকে চারবার সংস্কার করা হলেও অল্পদিনের ব্যবধানে তা আবার আগের
অবস্থায় ফিরে যেতো। আর ভোগান্তিতে পড়তে হতো নগরবাসীসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা
লাখো মানুষকে। বর্ষায় ভোগান্তির মাত্রা আরও বেড়ে যেতো। অভিযোগ ছিল,
নিম্নমানের কাজ করে টাকা ভাগবাটোয়ারা হতো সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। আর এ কারণে
নগরীতে পিচ ঢালাই সড়কও বাড়েনি।
এবার প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ডেঞ্চ কার্পেটিং’-এর মাধ্যমে নগরীর
অভ্যন্তরে নির্মিত হচ্ছে উন্নতমানের সড়ক। আধুনিক বিটুমিন মিক্সিং প্লান্টে
চার প্রকারের পাথর এবং বিটুমিন মিক্সিং করে পেভার মেশিন দিয়ে প্রায় ৬০
মিলিমিটার পুরু সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। আমতলা বিজয় বিহঙ্গ মোড় থেকে সদর
রোড, নাজিরের পোল এবং সোনালী আইসক্রিম মোড় হয়ে পলাশপুর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার
এবং জেলখানা মোড় থেকে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সোয়া ২
কিলোমিটার সড়কে ‘ডেঞ্চ কার্পেটিং’-এর কাজ শেষ। এভাবে নগরীর অলিগলির সড়কও
পেভার মেশিন দিয়ে করার পরিকল্পনা রয়েছে সিটি করপোরেশনের।
সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মু. আনিচুজ্জামান
জানান, ‘সড়কে পিচ ঢালাই শেষে তিনটি রোলার দিয়ে কমপেকশন করায় সড়কের
স্থায়িত্বকাল বেড়ে গেছে। পানি জমে না থাকলে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করলে সড়ক পাঁচ
বছরেও কিছু হবে না বলে গ্যারান্টি রয়েছে।’
অপরদিকে দেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো বরিশাল নগরীতে আধুনিক প্রযুক্তির
(থ্রিডি) জেব্রা ক্রসিং দেওয়া হচ্ছে। নগরীর জিলা স্কুল মোড়ে আধুনিক মেশিন
দিয়ে এবং চারুকলা শিল্পীদের সহযোগিতায় জেব্রা ক্রসিংয়ের কাজ শুরু হয় গত
শুক্রবার থেকে।
সিটি করপোরশেনের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আনিচুজ্জামান
বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে নগরীর অতি গুরুত্বপূর্ণ ৮টি পয়েন্টে থ্রিডি জেব্রা
ক্রসিং করা হচ্ছে। পয়েন্টগুলো হচ্ছে−জিলা স্কুল মোড়, জেলখানা মোড়, কাকলীর
মোড়, লঞ্চঘাট মোড়, শিশুপার্কের (প্ল্যানেট পার্ক) সামনে, সরকারি সৈয়দ হাতেম
আলী কলেজ চৌমাথা, নথুল্লাবাদ, আমতলার মোড়। এরপর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ
পয়েন্টে থ্রিডি জেব্রা ক্রসিং করে দেওয়া হবে। উন্নতমানের সড়ক নির্মাণের
পরপরই জেব্রা ক্রসিংয়ের কাজ করবে সিটি করপোরেশন।’
সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের সড়কের
কাজ হচ্ছে বরিশালে। কিছু টাকা বেশি লাগলেও রাস্তা টেকসই হয়েছে। এতে
প্রতিবছর সড়ক সংস্কার করার প্রয়োজন হবে না। থাকবে না নগরবাসীর ভোগান্তি।
এছাড়া টেকসই সড়ক নির্মাণ করায় সাশ্রয় হওয়া টাকা দিয়ে একই মানের বর্ধিত
এলাকার রাস্তা নির্মাণ করা হবে।’
থ্রিডি জেব্রা ক্রসিং বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে এই প্রথম
বরিশাল নগরীর সড়কে থ্রিডি জেব্রা ক্রসিং করা হচ্ছে। ৫০ থেকে ১শ’ ফুট দূর
থেকে চালকরা সহজেই জেব্রা ক্রসিং দেখতে পারবেন এবং ৮-৯ ইঞ্চি উঁচু মনে
করবে। এর ফলে তারা তাদের যানবাহনের গতি কমাবেন। এতে করে স্কুল, কলেজগামী
শিক্ষার্থী ও পথচারীসহ সবাই সহজে চলাচল করতে পারবে এবং দুর্ঘটনা কমবে।’
No comments