হাঁটতে পারছেন না খালেদা: বিএসএমএমইউতে ভর্তি
হাঁটতে
পারছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর
চিকিৎসার জন্য গতকাল তাকে স্থানান্তর করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ)। দুপুর বারোটা ৩৫ মিনিটে
তাকে বহনকারী পুলিশের কালো রঙের একটি গাড়ি নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন
কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হাসপাতালে এসে পৌঁছে। আগে থেকেই সেখানে
বিএসএমএমইউ’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক ও অতিরিক্ত
পরিচালক ডা. নাজমুল করিম উপস্থিত ছিলেন। গাড়ির দরজা খোলার সময় দেখা যায় তার
সঙ্গে আসা গৃহকর্মী ফাতেমার শরীরে হেলান দিয়ে আছেন খালেদা জিয়া। গাড়ি থেকে
নামার পর দাঁড়াতেও পারছিলেন না তিনি।
গাড়ি থেকে কয়েক কদম দূরে রাখা হুইল চেয়ারে গিয়ে বসার আগে পরিস্কার দেখা গেছে কাতর চেহারা। তিনি হাঁটতে পারছিলেন না।
পরে গোলাপী শাড়ি ও মাথায় স্কার্ফ পরিহিত খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে কারারক্ষীরা কেবিন ব্লকে নিয়ে যান। বর্তমানে তিনি কেবিন ব্লকের ৬২১ নম্বর কক্ষে ভর্তি রয়েছেন। পাশের ৬২২ নম্বর কক্ষটিও তার জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এদিকে রোববার রাত থেকে গুঞ্জন চলছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হতে পারে। তারই প্রেক্ষিতে সোমবার সকাল থেকেই হাসপাতাল প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকধারী বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি তৎপরতা বাড়তে থাকতে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের। সেই সঙ্গে সকাল থেকেই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকে বিএনপি, মহিলা দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। কিন্তু পুলিশ তাদের হাসপাতালের তিন নম্বর গেট থেকে সি ব্লক পর্যন্ত এলাকায় দাঁড়াতে দেয়নি। হাসপাতালের সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। তারা বি ব্লকের কোনায় দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কারাগারে একটি ভ্যানে করে সকালেই হাসপাতালে আনা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। জিনিসপত্রের মধ্যে দেখা গেছে- একটি খাট, দুটি সুটকেস, চেয়ার, ছোট একটি ফ্রিজ ও প্লাস্টিকের ওয়ারড্রোব। এদিকে বেলা ১২টার দিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয় হাসপাতাল প্রাঙ্গণে। ১২টা ৩৫ মিনিটে কড়া নিরাপত্তার ভেতর দিয়ে পুলিশের একটি কালো গাড়িতে করে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে আনা হয়। পুলিশ গণমাধ্যম কর্মীদের কেবিন ব্লকের সিঁড়ির একপাশে ঘিরে রাখে। কারারক্ষী ও পুলিশের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যদিয়ে খালেদা জিয়াকে কালো গাড়ি থেকে নামিয়ে হুইল চেয়ারে করে কেবিন ব্লকে তুলে নেয়া হয়।
আমরা উদ্বিগ্ন, শঙ্কিত: ফখরুল
বিএনপি চেয়ারপারসনকে কেবিন ব্লকে নেয়ার পর বি ব্লকের নিচে কোনায় দাঁড়িয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে নেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। আমরা সেজন্যই বারবার বলছি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অবশ্যই বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানো হোক। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে তার ট্রিটমেন্টটা কীভাবে হবে।
খালেদা জিয়া সুস্থ, তবে হাঁটাচলা করতে পারছেন না
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একে মাহবুবুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন, ভাল আছেন। আমরা খালেদা জিয়াকে দেখেছি। তার সঙ্গে কথা বলে তাকে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হয়েছে। তিনি আমাদের সঙ্গে বসে থেকে কথা বলেছেন। তার পায়ে ও জয়েন্টে ব্যথা আছে। তার ডায়াবেটিস স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, শরীর দুর্বল। তার ঘুম কম হয়, খাবারের রুচি কমে গেছে। তিনি একা হাঁটাচলা করতে পারছেন না, হাঁটার সময় আরেকজনের সাহায্য নিচ্ছেন। গতকাল বিএসএমএমইউর কেবিনে ভর্তির পর খালেদা জিয়াকে চিকিৎসকরা দেখার পর বিএসএমএমইউ’র পরিচালক (হাসপাতাল) সাংবাদিকদের ব্রিফিং-এ এসব কথা জানান।
খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন, পরিচালকের এমন বক্তব্যে সাংবাদিকরা জানতে চান, তাহলে তো খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দেয়ার কথা। কিন্তু তাকে তো ভর্তি করা হয়েছে। জবাবে পরিচালক বলেন, খালেদা জিয়া যদি মনে করেন তিনি চলে যাবেন, কমফোর্ট ফিল করছেন না, তাহলে তিনি চলে যেতে পারেন। তিনি যদি থাকেন (হাসপাতালে) তাহলে প্রতিদিন তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক তাকে ভিজিট করবেন। উনি এখন ৬২১ নম্বর কেবিনে আছেন। আর তার সঙ্গে যারা রয়েছেন, তাদেরকে ৬২২ নম্বর কেবিনে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিএসএমএমইউ’তে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হবে কিনা এমন প্রশ্নে পরিচালক বলেন, উনার (খালেদা জিয়া) এখন যে সমস্যা, তা কোনও জটিল সমস্যা না। বিএসএমএমইউ’তে চিকিৎসা সম্ভব না এমন কিছু আমরা পাইনি। বিএসএমএমইউ উচ্চ বিশেষায়িত হাসপাতাল। খালেদা জিয়ার যা সমস্যা রয়েছে, তার চিকিৎসা করা এখানে সম্ভব। খালেদা জিয়ার চিকিৎসক বদলানো হবে কিনা সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি বলেন, আজকে আমরা তাকে যেভাবে দেখেছি, তাতে বর্তমান চিকিৎসক বোর্ডের প্রতি তার আস্থা রয়েছে।
যখন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তাকে দেখতে যান, তখন উনি বসে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আমাদের কাছে মনে হয়েছে, বোর্ডের ব্যাপারে তিনি সন্তুষ্ট। আজকে তাকে চিকিৎসকরা ওষুধ দিয়েছেন। এখন তাকে এই ওষুধগুলো মেনে খেতে হবে। আগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনুযায়ী এই ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, খালেদা জিয়া এই হাসপাতালে শতভাগ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আছেন। তিনি বলেন, গত ২৮শে মার্চ খালেদা জিয়ার জন্য নতুন একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এই বোর্ডের প্রধান হলেন বিএসএমএমইউ’র ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. জিলন মিঞা সরকার। বোর্ডের সদস্যরা হলেন রিউমাটালোজি বিভাগের অধ্যাপ ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানজিমা পারভীন, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেসা আহমেদ, আর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইকবাল মাহামুদ। এছাড়া ডা. শামীম আহমেদ এবং ডা. মামুন মেডিকেল বোর্ডকে সহযোগিতা করছেন। ডা. মামুন কি খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডা. মামুন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক না। তবে তাকে খালেদা জিয়া পছন্দ করেন। এর আগে বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটের দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আনা হয়।
মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে গতকাল বেলা দেড়টার দিকে উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ার থেকে ফুজি টাওয়ার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী। মিছিল শুরুর আগে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা এখন চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। তাঁকে চিকিৎসা দেয়ার নামে প্রতারণা করে যাচ্ছে সরকার। তার পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে বরং যেখানে উন্নত চিকিৎসা দূরের কথা চিকিৎসার আধুনিক সরঞ্জামাদিও নেই সেই হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এভাবে চিকিৎসার নামে জনগণকে বারবার ধোকা দিচ্ছে সরকার। এটি খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলারই সামিল। এই খেলা বন্ধ করে অবিলম্বে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দের হাসপাতালে সুচিকিৎসার সুযোগসহ নিঃশর্ত মুুক্তির দাবি জানাচ্ছি।
গাড়ি থেকে কয়েক কদম দূরে রাখা হুইল চেয়ারে গিয়ে বসার আগে পরিস্কার দেখা গেছে কাতর চেহারা। তিনি হাঁটতে পারছিলেন না।
পরে গোলাপী শাড়ি ও মাথায় স্কার্ফ পরিহিত খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে কারারক্ষীরা কেবিন ব্লকে নিয়ে যান। বর্তমানে তিনি কেবিন ব্লকের ৬২১ নম্বর কক্ষে ভর্তি রয়েছেন। পাশের ৬২২ নম্বর কক্ষটিও তার জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এদিকে রোববার রাত থেকে গুঞ্জন চলছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হতে পারে। তারই প্রেক্ষিতে সোমবার সকাল থেকেই হাসপাতাল প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকধারী বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি তৎপরতা বাড়তে থাকতে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের। সেই সঙ্গে সকাল থেকেই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকে বিএনপি, মহিলা দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। কিন্তু পুলিশ তাদের হাসপাতালের তিন নম্বর গেট থেকে সি ব্লক পর্যন্ত এলাকায় দাঁড়াতে দেয়নি। হাসপাতালের সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। তারা বি ব্লকের কোনায় দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কারাগারে একটি ভ্যানে করে সকালেই হাসপাতালে আনা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। জিনিসপত্রের মধ্যে দেখা গেছে- একটি খাট, দুটি সুটকেস, চেয়ার, ছোট একটি ফ্রিজ ও প্লাস্টিকের ওয়ারড্রোব। এদিকে বেলা ১২টার দিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয় হাসপাতাল প্রাঙ্গণে। ১২টা ৩৫ মিনিটে কড়া নিরাপত্তার ভেতর দিয়ে পুলিশের একটি কালো গাড়িতে করে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে আনা হয়। পুলিশ গণমাধ্যম কর্মীদের কেবিন ব্লকের সিঁড়ির একপাশে ঘিরে রাখে। কারারক্ষী ও পুলিশের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যদিয়ে খালেদা জিয়াকে কালো গাড়ি থেকে নামিয়ে হুইল চেয়ারে করে কেবিন ব্লকে তুলে নেয়া হয়।
আমরা উদ্বিগ্ন, শঙ্কিত: ফখরুল
বিএনপি চেয়ারপারসনকে কেবিন ব্লকে নেয়ার পর বি ব্লকের নিচে কোনায় দাঁড়িয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে নেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। আমরা সেজন্যই বারবার বলছি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অবশ্যই বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানো হোক। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে তার ট্রিটমেন্টটা কীভাবে হবে।
খালেদা জিয়া সুস্থ, তবে হাঁটাচলা করতে পারছেন না
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একে মাহবুবুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন, ভাল আছেন। আমরা খালেদা জিয়াকে দেখেছি। তার সঙ্গে কথা বলে তাকে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হয়েছে। তিনি আমাদের সঙ্গে বসে থেকে কথা বলেছেন। তার পায়ে ও জয়েন্টে ব্যথা আছে। তার ডায়াবেটিস স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, শরীর দুর্বল। তার ঘুম কম হয়, খাবারের রুচি কমে গেছে। তিনি একা হাঁটাচলা করতে পারছেন না, হাঁটার সময় আরেকজনের সাহায্য নিচ্ছেন। গতকাল বিএসএমএমইউর কেবিনে ভর্তির পর খালেদা জিয়াকে চিকিৎসকরা দেখার পর বিএসএমএমইউ’র পরিচালক (হাসপাতাল) সাংবাদিকদের ব্রিফিং-এ এসব কথা জানান।
খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন, পরিচালকের এমন বক্তব্যে সাংবাদিকরা জানতে চান, তাহলে তো খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দেয়ার কথা। কিন্তু তাকে তো ভর্তি করা হয়েছে। জবাবে পরিচালক বলেন, খালেদা জিয়া যদি মনে করেন তিনি চলে যাবেন, কমফোর্ট ফিল করছেন না, তাহলে তিনি চলে যেতে পারেন। তিনি যদি থাকেন (হাসপাতালে) তাহলে প্রতিদিন তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক তাকে ভিজিট করবেন। উনি এখন ৬২১ নম্বর কেবিনে আছেন। আর তার সঙ্গে যারা রয়েছেন, তাদেরকে ৬২২ নম্বর কেবিনে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিএসএমএমইউ’তে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হবে কিনা এমন প্রশ্নে পরিচালক বলেন, উনার (খালেদা জিয়া) এখন যে সমস্যা, তা কোনও জটিল সমস্যা না। বিএসএমএমইউ’তে চিকিৎসা সম্ভব না এমন কিছু আমরা পাইনি। বিএসএমএমইউ উচ্চ বিশেষায়িত হাসপাতাল। খালেদা জিয়ার যা সমস্যা রয়েছে, তার চিকিৎসা করা এখানে সম্ভব। খালেদা জিয়ার চিকিৎসক বদলানো হবে কিনা সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি বলেন, আজকে আমরা তাকে যেভাবে দেখেছি, তাতে বর্তমান চিকিৎসক বোর্ডের প্রতি তার আস্থা রয়েছে।
যখন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তাকে দেখতে যান, তখন উনি বসে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আমাদের কাছে মনে হয়েছে, বোর্ডের ব্যাপারে তিনি সন্তুষ্ট। আজকে তাকে চিকিৎসকরা ওষুধ দিয়েছেন। এখন তাকে এই ওষুধগুলো মেনে খেতে হবে। আগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনুযায়ী এই ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, খালেদা জিয়া এই হাসপাতালে শতভাগ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আছেন। তিনি বলেন, গত ২৮শে মার্চ খালেদা জিয়ার জন্য নতুন একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এই বোর্ডের প্রধান হলেন বিএসএমএমইউ’র ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. জিলন মিঞা সরকার। বোর্ডের সদস্যরা হলেন রিউমাটালোজি বিভাগের অধ্যাপ ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানজিমা পারভীন, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেসা আহমেদ, আর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইকবাল মাহামুদ। এছাড়া ডা. শামীম আহমেদ এবং ডা. মামুন মেডিকেল বোর্ডকে সহযোগিতা করছেন। ডা. মামুন কি খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডা. মামুন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক না। তবে তাকে খালেদা জিয়া পছন্দ করেন। এর আগে বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটের দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আনা হয়।
মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে গতকাল বেলা দেড়টার দিকে উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ার থেকে ফুজি টাওয়ার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী। মিছিল শুরুর আগে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা এখন চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। তাঁকে চিকিৎসা দেয়ার নামে প্রতারণা করে যাচ্ছে সরকার। তার পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে বরং যেখানে উন্নত চিকিৎসা দূরের কথা চিকিৎসার আধুনিক সরঞ্জামাদিও নেই সেই হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এভাবে চিকিৎসার নামে জনগণকে বারবার ধোকা দিচ্ছে সরকার। এটি খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলারই সামিল। এই খেলা বন্ধ করে অবিলম্বে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দের হাসপাতালে সুচিকিৎসার সুযোগসহ নিঃশর্ত মুুক্তির দাবি জানাচ্ছি।
No comments