ঢাকা যেন ঝুঁকির রাজধানী by জিয়া চৌধুরী
ঢাকা,
তিলোত্তমা এক নগরী, বাংলাদেশের রাজধানী। চারশো বছরেরও পুরনো শহর ঢাকার আছে
নানা ইতিহাস আর ঐতিহ্য। এত কিছু ছাপিয়ে ঢাকা পেয়েছে এক নতুন তকমা। বিশ্বের
অন্যতম অনিরাপদ ও অপরিচ্ছন্ন শহর। বিশ্বের ঘনবসতির রাজধানীর তালিকার শুরুর
দিকে আছে ঢাকাও। এত জনসংখ্যার চাপ কুলিয়ে উঠতে না পেরে ধীরে ধীরে ঢাকা হয়ে
উঠছে অনিরাপদ ঝুঁকির নগরী। বাস চাপায়, আগুনে পুড়ে, ভবন ধসসহ নানা
দুর্ঘটনার ফাঁদ এখানে। প্রতিনিয়ত মরছে অসংখ্য মানুষ।
যানজট, সুপেয় পানির অভাব আর ভেজাল খাবারের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরের বাসিন্দারা। জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ছুটে আসা মানুষের চাপে তিলে তিলে ঢাকা হয়ে উঠছে এক অনিরাপদ নগরী। যেখানে স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
সড়কে, নদীতে, আগুনে, ভবন ধসে কিংবা নানা দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের। চকবাজারের চুড়িহাট্টা থেকে বনানীর ফারুক রূপায়ণ (এফ আর) টাওয়ার ও সবশেষ গুলশানের ডিএনসিসি কাঁচাবাজারের অগ্নিকাণ্ড এখনো জ্বলজ্বলে প্রমাণ। বনানীর আগুনের পর গত তিন দিনে রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, হাতিরপুল, মোহাম্মদপুর, রামপুরাসহ অন্তত আরো দশটি জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার কোনো প্রাণহানি না হলেও নগরের বাসিন্দাদের মনে ভাবনার উদ্রেক করছে, ঢাকা আসলে কতটা নিরাপদ? একের পর এক আগুনের ঘটনায় বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেয়া তথ্য মতে, ঢাকায় গত এক বছরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকায় আগুনে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও ক্ষয়-ক্ষতি তুলনামূলকভাবে বেশি। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সারা দেশে ৮ হাজার ৪৬১টি আবাসিক ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে ২ হাজার ৮৮টি ঢাকা বিভাগে, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৮৫ ও রাজশাহীতে ঘটেছে ১১৬টি। এর বাইরে সারা দেশে ৫০৮টি নৌ-দুর্ঘটনার মধ্যে ঢাকায় ১৯৫টি, চট্টগ্রামে ৫৪ ও খুলনায় ৪০টি।
এসব দুর্ঘটনায় শুধু ঢাকাতে প্রাণ হারান অন্তত ১২১ জন। গত এক বছরে দেশে ১৬টি ভবন ধসের ঘটনার ১০টি ঢাকায়। ভবন ধসের মতো ঘটনায় নিহত হয়েছেন আরো ছয়জন। ২০১৮ সালে দেশের তৈরিপোশাক কারখানাগুলোতে ১৭৩টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১১৫টি হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। এ ছাড়া, শিল্প কারখানায় ১ হাজার ১৩১টি আগুনের ঘটনার মধ্যে ৫২৬টি ঘটেছে ঢাকায়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০১৭ সালে ৯২ কোটি ও ২০১৮ সালে প্রায় ১৬৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে। গত ২০শে ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনার পর আবারো আঁতকে ওঠেন রাজধানীবাসী। চুড়িহাট্টার ধকল কাটতে না কাটতে বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে ২৩ তলা সুউচ্চ এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর আবারো রাজধানীর বহুতল ও আবাসিক ভবনের অগ্নি নির্বাপণ সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের হিসেবে, রাজধানীর গুলশান, বনানী ও বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় দেখা যায় অধিকাংশ ভবনে আগুন নেভানোর মতো যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। এসব এলাকার ২০১টি ভবন অগ্নি ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষম নয় বলে মত দেয় ফায়ার সার্ভিস। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকার স্থাপনাগুলোর অগ্নিঝুঁকি নিরূপণ করে সংস্থাটি। অগ্নি দুর্ঘটনা রোধের সক্ষমতা যাচাইয়ে ভবনগুলোর ভূগর্ভস্থ জলাধারের ধারণক্ষমতা, অবস্থানকারীর সংখ্যা, প্রবেশদ্বারের প্রশস্ততা, ধোঁয়া ও তাপ শনাক্তকরণ যন্ত্রের উপস্থিতি, মেঝের আয়তন, জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি ও প্রয়োজনীয় লিফটের উপস্থিতি বিবেচনায় নেয়া হয়। এর ভিত্তিতে ভবনগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। আর অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলার অধিক প্রস্তুতি আছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘সন্তোষজনক’ বলে চিহ্নিত করে দেয় সংস্থাটি।
ফায়ার সার্ভিসের মূল্যায়নে গুলশান, বনানী ও বারিধারার বাণিজ্যিক ভবনগুলোর মধ্যে ৪৬টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে ২১টি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করে দ্রুত সময়ে অগ্নি ও ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে সংস্থাটি। যার মধ্যে গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটটিকেও অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পাশাপাশি সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভবন ও প্রতিষ্ঠান মালিকদের একাধিকবার চিঠিও দেয় ফায়ার সার্ভিস। তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই সেগুলো কার্যকর করেনি। ঢাকায় কেন এত অগ্নিকাণ্ড এমন প্রশ্নে ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ঢাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। অল্প জায়গায় বেশি মানুষ বসবাস করতে হয়। অনেক অপরিকল্পিত ও অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে। নতুন নতুন ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, ল্যাপটপ, মোবাইল চার্জারসহ অন্যান্য দাহ্য পদার্থের সহজলভ্যতা বেশি। এসব কারণে ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডসহ অন্যান্য দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি। গত বছর দেশে যত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তার কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে।
তাদের তথ্য বলছে, গত বছর দেশে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে ১৮ হাজারের কিছু বেশি। গত বছরের সব অগ্নি দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে। এর পরই বেশি আগুন লেগেছে চুলা থেকে। শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে প্রায় ৩৭ শতাংশ ঘটনায়। আর চুলা থেকে আগুন লাগে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ। ঢাকার আগুন নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ৫টি বিভাগ মিলে একটি গবেষণা করে। গবেষণার বিষয়ে বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, বুয়েটের গবেষণায় দেখা গেছে অগ্নি দুর্ঘটনার ৭০-৮০ ভাগ হয় বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে।
ফায়ার সার্ভিসও সার্ভে করে তাই বলছে। আর আগুনের ব্যাপারে আরেকটা বিষয় দায়ী, তা হলো বিল্ডিং ‘প্ল্যানেবল গ্যাপ’। এ ছাড়া সিলিন্ডার থেকে লিকিং হয়। যা কখনও ইন্সটল করা হয় না। সাধারণত আমরা দেখেছি কারখানা ও বাসা বাড়িতে ইলেকট্রনিক স্পার্কিং অর্থাৎ স্ফুলিঙ্গ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। অন্যদিকে আইনের প্রয়োগ নেই। আর প্রয়োগ করাও যায় না। কারণ, সরকারি-বেসরকারি মনিটরিং সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড পর্যাপ্ত ও যথার্থ নয়। এ ছাড়া বিশ্বে সবচেয়ে বায়ুদূষণের কবলে থাকা শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা শহরের অবস্থান ১৭তম। আর রাজধানী শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। এই শহরের বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তু কণিকার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫) পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেঁধে দেয়া মাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান এয়ারভিজ্যুয়ালের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
যানজট, সুপেয় পানির অভাব আর ভেজাল খাবারের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরের বাসিন্দারা। জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ছুটে আসা মানুষের চাপে তিলে তিলে ঢাকা হয়ে উঠছে এক অনিরাপদ নগরী। যেখানে স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
সড়কে, নদীতে, আগুনে, ভবন ধসে কিংবা নানা দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের। চকবাজারের চুড়িহাট্টা থেকে বনানীর ফারুক রূপায়ণ (এফ আর) টাওয়ার ও সবশেষ গুলশানের ডিএনসিসি কাঁচাবাজারের অগ্নিকাণ্ড এখনো জ্বলজ্বলে প্রমাণ। বনানীর আগুনের পর গত তিন দিনে রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, হাতিরপুল, মোহাম্মদপুর, রামপুরাসহ অন্তত আরো দশটি জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার কোনো প্রাণহানি না হলেও নগরের বাসিন্দাদের মনে ভাবনার উদ্রেক করছে, ঢাকা আসলে কতটা নিরাপদ? একের পর এক আগুনের ঘটনায় বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেয়া তথ্য মতে, ঢাকায় গত এক বছরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকায় আগুনে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও ক্ষয়-ক্ষতি তুলনামূলকভাবে বেশি। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সারা দেশে ৮ হাজার ৪৬১টি আবাসিক ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে ২ হাজার ৮৮টি ঢাকা বিভাগে, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৮৫ ও রাজশাহীতে ঘটেছে ১১৬টি। এর বাইরে সারা দেশে ৫০৮টি নৌ-দুর্ঘটনার মধ্যে ঢাকায় ১৯৫টি, চট্টগ্রামে ৫৪ ও খুলনায় ৪০টি।
এসব দুর্ঘটনায় শুধু ঢাকাতে প্রাণ হারান অন্তত ১২১ জন। গত এক বছরে দেশে ১৬টি ভবন ধসের ঘটনার ১০টি ঢাকায়। ভবন ধসের মতো ঘটনায় নিহত হয়েছেন আরো ছয়জন। ২০১৮ সালে দেশের তৈরিপোশাক কারখানাগুলোতে ১৭৩টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১১৫টি হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। এ ছাড়া, শিল্প কারখানায় ১ হাজার ১৩১টি আগুনের ঘটনার মধ্যে ৫২৬টি ঘটেছে ঢাকায়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০১৭ সালে ৯২ কোটি ও ২০১৮ সালে প্রায় ১৬৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে। গত ২০শে ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনার পর আবারো আঁতকে ওঠেন রাজধানীবাসী। চুড়িহাট্টার ধকল কাটতে না কাটতে বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে ২৩ তলা সুউচ্চ এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর আবারো রাজধানীর বহুতল ও আবাসিক ভবনের অগ্নি নির্বাপণ সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের হিসেবে, রাজধানীর গুলশান, বনানী ও বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় দেখা যায় অধিকাংশ ভবনে আগুন নেভানোর মতো যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। এসব এলাকার ২০১টি ভবন অগ্নি ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষম নয় বলে মত দেয় ফায়ার সার্ভিস। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকার স্থাপনাগুলোর অগ্নিঝুঁকি নিরূপণ করে সংস্থাটি। অগ্নি দুর্ঘটনা রোধের সক্ষমতা যাচাইয়ে ভবনগুলোর ভূগর্ভস্থ জলাধারের ধারণক্ষমতা, অবস্থানকারীর সংখ্যা, প্রবেশদ্বারের প্রশস্ততা, ধোঁয়া ও তাপ শনাক্তকরণ যন্ত্রের উপস্থিতি, মেঝের আয়তন, জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি ও প্রয়োজনীয় লিফটের উপস্থিতি বিবেচনায় নেয়া হয়। এর ভিত্তিতে ভবনগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। আর অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলার অধিক প্রস্তুতি আছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘সন্তোষজনক’ বলে চিহ্নিত করে দেয় সংস্থাটি।
ফায়ার সার্ভিসের মূল্যায়নে গুলশান, বনানী ও বারিধারার বাণিজ্যিক ভবনগুলোর মধ্যে ৪৬টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে ২১টি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করে দ্রুত সময়ে অগ্নি ও ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে সংস্থাটি। যার মধ্যে গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটটিকেও অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পাশাপাশি সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভবন ও প্রতিষ্ঠান মালিকদের একাধিকবার চিঠিও দেয় ফায়ার সার্ভিস। তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই সেগুলো কার্যকর করেনি। ঢাকায় কেন এত অগ্নিকাণ্ড এমন প্রশ্নে ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ঢাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। অল্প জায়গায় বেশি মানুষ বসবাস করতে হয়। অনেক অপরিকল্পিত ও অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে। নতুন নতুন ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, ল্যাপটপ, মোবাইল চার্জারসহ অন্যান্য দাহ্য পদার্থের সহজলভ্যতা বেশি। এসব কারণে ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডসহ অন্যান্য দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি। গত বছর দেশে যত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তার কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে।
তাদের তথ্য বলছে, গত বছর দেশে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে ১৮ হাজারের কিছু বেশি। গত বছরের সব অগ্নি দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে। এর পরই বেশি আগুন লেগেছে চুলা থেকে। শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে প্রায় ৩৭ শতাংশ ঘটনায়। আর চুলা থেকে আগুন লাগে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ। ঢাকার আগুন নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ৫টি বিভাগ মিলে একটি গবেষণা করে। গবেষণার বিষয়ে বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, বুয়েটের গবেষণায় দেখা গেছে অগ্নি দুর্ঘটনার ৭০-৮০ ভাগ হয় বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে।
ফায়ার সার্ভিসও সার্ভে করে তাই বলছে। আর আগুনের ব্যাপারে আরেকটা বিষয় দায়ী, তা হলো বিল্ডিং ‘প্ল্যানেবল গ্যাপ’। এ ছাড়া সিলিন্ডার থেকে লিকিং হয়। যা কখনও ইন্সটল করা হয় না। সাধারণত আমরা দেখেছি কারখানা ও বাসা বাড়িতে ইলেকট্রনিক স্পার্কিং অর্থাৎ স্ফুলিঙ্গ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। অন্যদিকে আইনের প্রয়োগ নেই। আর প্রয়োগ করাও যায় না। কারণ, সরকারি-বেসরকারি মনিটরিং সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড পর্যাপ্ত ও যথার্থ নয়। এ ছাড়া বিশ্বে সবচেয়ে বায়ুদূষণের কবলে থাকা শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা শহরের অবস্থান ১৭তম। আর রাজধানী শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। এই শহরের বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তু কণিকার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫) পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেঁধে দেয়া মাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান এয়ারভিজ্যুয়ালের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
No comments