গাজীপুরে গজারির বনে বসন্ত by সাদিক মৃধা
‘ছোটবেলায়
বনের মাটিতে শুয়ে গজারি ফুলের ছন্দময় পতন দেখতাম। অপূর্ব সুন্দর ফুলগুলো
মগডাল থেকে ঘুরতে ঘুরতে মাটিতে পড়ত। দৃশ্যটি দেখার মতো। ফুলের তীব্র গন্ধ
প্রচলিত যেকোনো ফুলের চেয়ে ভিন্ন এক অনুভূতি জাগায়।’
কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বাসিন্দা এমরান আহমেদ। বসন্তের শেষ সময়ে দেশের সবুজবেষ্টিত এলাকা শ্রীপুরে হাজারো একর গজারি বনে ফুল ফুটেছে। গত বুধবার সরেজমিনে শাল-গজারির বন ঘুরে দেখা যায়, গাছগুলোতে নবযৌবন এসেছে। ৫০০ গজ এগিয়ে বনের কাছাকাছি যেতেই মাতাল করা গন্ধ নাকে এসে লাগে। দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিল সারি সারি গাছের আগা সাদা-হলুদের মিশ্রণে মেঘের মতো হয়ে আছে। গাছের পাতাগুলো ঝরে যাওয়ায় নতুন পত্রপল্লব গজাচ্ছে। একই সঙ্গে পুরো গাছের ডালপালা ফুলে ফুলে ভরে গেছে। বনের গাছগুলোর নিচে পড়ে আছে ঝরে পড়া গজারি ফুলগুলো। বনের ভেতরে সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া পিচের রাস্তায় বিছিয়ে আছে ঝরা ফুল, এ যেন এক গালিচা। এ যেন জাপানের সড়কগুলোতে থাকা চেরি ফুলের সৌন্দর্যের চেয়ে কম নয়।
বন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মার্চ মাসজুড়ে গজারিগাছে ফুল থাকে। এপ্রিলের শুরুর দিকে ফুল ঝরতে থাকে। এর গন্ধ তীব্র হয়। গজারি ফুলগুলো ঝরে পড়ার সময় উড়ে গিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল মাসে বনের হাজার হাজার একরজুড়ে সাদা মেঘের মতো ফুলের সমারোহ দেখা যায়। এ অঞ্চলে ৩০ হাজার একরের বেশি জায়গায় গজারিগাছ বিস্তৃত।
শ্রীপুর উপজেলার পেয়ার আলী কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আহাম্মাদুল কবির বলেন, ‘ছোটবেলায় বনের মাটিতে শুয়ে গজারি ফুলের পতনের দৃশ্য দেখতাম। এক অদ্ভুত ছন্দে এরা ঘুরতে ঘুরতে মাটিতে পড়ে। ওপর থেকে একটা ফুল পড়তে দেখলে যেখানে ধারণা করা হয় সেখানে কখনোই পড়ে না, উড়তে উড়তে দূরে গিয়ে পড়ে এটি।’ তিনি বলেন, ‘১০ বছর ধরেই আমি গজারির নতুন পাতা দেখতে যাই। মাতাল করা গন্ধ উপভোগ করি পরিবারের সবাইকে নিয়ে। নতুন পাতার রংটা যেন এস এম সুলতানের কল্পনার মতো সুন্দর।’
লেখক শাহান শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘পারস্যের গোলাপ বাগান যেমন মানুষকে সৌন্দর্যে আচ্ছন্ন করতে পারে; ওমর খৈয়াম যেভাবে সেই গোলাপে মগ্ন হয়েছিলেন, আমরাও গজারি ফুলের সৌন্দর্যে মগ্নতায় হারিয়ে যাই। ওমর খৈয়ামের জন্য যে অর্থে গোলাপ, আমাদের জন্য সৌন্দর্যের নাম সে অর্থে গজারি ফুল। এর গন্ধ মহুয়ার চেয়ে কোনো অংশে কম না। মনকে জাগতিকতার দহন থেকে মুহূর্তে বের করে নিয়ে আসার জন্য এই ফুলের কাছে একটা আলাদা ক্ষমতা আছে বলে মনে হয়।’ তিনি বলেন, ‘দোল পূর্ণিমার রাতে এই ফুলের সৌন্দর্য দেখার মতো। জ্যোৎস্নার রং যেন ফুলের গায়ে লেপ্টে থাকে। এমন বহু রাত বনে কাটিয়েছি ফুলের গন্ধ আর সৌন্দর্যের প্রেমে।’
শ্রীপুরের আযোগীচালা গ্রামের তরুণ মেহেদী হাসান। বর্তমানে পড়াশোনা করছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। তিনি টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবুজের এই যে উপহার, এর তুলনা হয় না। রিপন নামে আমার এক বন্ধুর বাড়ি শ্রীপুরের গজারি বনবেষ্টিত গ্রাম ভেরামতলীতে। এক পূর্ণিমা রাতে আমরা জ্যোৎস্না দেখতে তাঁদের বনে গিয়েছিলাম। ফুলে ফুলে ছেয়ে ছিল বন। আর সেবার ফুলের গন্ধে অভিভূত হয়ে সারা রাত বসে ছিলাম বনে। শালের সঙ্গে আরও নানা ফুলের সুবাস মিশে সে কী বুনো মাতাল গন্ধ। সে এক অদ্ভুত সুন্দর জ্যোৎস্না রাত ছিল। সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ, এই শালবনকে বাঁচিয়ে রাখুন। অবাধে গাছ কাটা, আগুন ধরিয়ে দেওয়া, বনের মাটি কাটা বন্ধ করতে সবাইকে সচেতন করুন।’
কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বাসিন্দা এমরান আহমেদ। বসন্তের শেষ সময়ে দেশের সবুজবেষ্টিত এলাকা শ্রীপুরে হাজারো একর গজারি বনে ফুল ফুটেছে। গত বুধবার সরেজমিনে শাল-গজারির বন ঘুরে দেখা যায়, গাছগুলোতে নবযৌবন এসেছে। ৫০০ গজ এগিয়ে বনের কাছাকাছি যেতেই মাতাল করা গন্ধ নাকে এসে লাগে। দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিল সারি সারি গাছের আগা সাদা-হলুদের মিশ্রণে মেঘের মতো হয়ে আছে। গাছের পাতাগুলো ঝরে যাওয়ায় নতুন পত্রপল্লব গজাচ্ছে। একই সঙ্গে পুরো গাছের ডালপালা ফুলে ফুলে ভরে গেছে। বনের গাছগুলোর নিচে পড়ে আছে ঝরে পড়া গজারি ফুলগুলো। বনের ভেতরে সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া পিচের রাস্তায় বিছিয়ে আছে ঝরা ফুল, এ যেন এক গালিচা। এ যেন জাপানের সড়কগুলোতে থাকা চেরি ফুলের সৌন্দর্যের চেয়ে কম নয়।
বন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মার্চ মাসজুড়ে গজারিগাছে ফুল থাকে। এপ্রিলের শুরুর দিকে ফুল ঝরতে থাকে। এর গন্ধ তীব্র হয়। গজারি ফুলগুলো ঝরে পড়ার সময় উড়ে গিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল মাসে বনের হাজার হাজার একরজুড়ে সাদা মেঘের মতো ফুলের সমারোহ দেখা যায়। এ অঞ্চলে ৩০ হাজার একরের বেশি জায়গায় গজারিগাছ বিস্তৃত।
শ্রীপুর উপজেলার পেয়ার আলী কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আহাম্মাদুল কবির বলেন, ‘ছোটবেলায় বনের মাটিতে শুয়ে গজারি ফুলের পতনের দৃশ্য দেখতাম। এক অদ্ভুত ছন্দে এরা ঘুরতে ঘুরতে মাটিতে পড়ে। ওপর থেকে একটা ফুল পড়তে দেখলে যেখানে ধারণা করা হয় সেখানে কখনোই পড়ে না, উড়তে উড়তে দূরে গিয়ে পড়ে এটি।’ তিনি বলেন, ‘১০ বছর ধরেই আমি গজারির নতুন পাতা দেখতে যাই। মাতাল করা গন্ধ উপভোগ করি পরিবারের সবাইকে নিয়ে। নতুন পাতার রংটা যেন এস এম সুলতানের কল্পনার মতো সুন্দর।’
লেখক শাহান শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘পারস্যের গোলাপ বাগান যেমন মানুষকে সৌন্দর্যে আচ্ছন্ন করতে পারে; ওমর খৈয়াম যেভাবে সেই গোলাপে মগ্ন হয়েছিলেন, আমরাও গজারি ফুলের সৌন্দর্যে মগ্নতায় হারিয়ে যাই। ওমর খৈয়ামের জন্য যে অর্থে গোলাপ, আমাদের জন্য সৌন্দর্যের নাম সে অর্থে গজারি ফুল। এর গন্ধ মহুয়ার চেয়ে কোনো অংশে কম না। মনকে জাগতিকতার দহন থেকে মুহূর্তে বের করে নিয়ে আসার জন্য এই ফুলের কাছে একটা আলাদা ক্ষমতা আছে বলে মনে হয়।’ তিনি বলেন, ‘দোল পূর্ণিমার রাতে এই ফুলের সৌন্দর্য দেখার মতো। জ্যোৎস্নার রং যেন ফুলের গায়ে লেপ্টে থাকে। এমন বহু রাত বনে কাটিয়েছি ফুলের গন্ধ আর সৌন্দর্যের প্রেমে।’
শ্রীপুরের আযোগীচালা গ্রামের তরুণ মেহেদী হাসান। বর্তমানে পড়াশোনা করছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। তিনি টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবুজের এই যে উপহার, এর তুলনা হয় না। রিপন নামে আমার এক বন্ধুর বাড়ি শ্রীপুরের গজারি বনবেষ্টিত গ্রাম ভেরামতলীতে। এক পূর্ণিমা রাতে আমরা জ্যোৎস্না দেখতে তাঁদের বনে গিয়েছিলাম। ফুলে ফুলে ছেয়ে ছিল বন। আর সেবার ফুলের গন্ধে অভিভূত হয়ে সারা রাত বসে ছিলাম বনে। শালের সঙ্গে আরও নানা ফুলের সুবাস মিশে সে কী বুনো মাতাল গন্ধ। সে এক অদ্ভুত সুন্দর জ্যোৎস্না রাত ছিল। সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ, এই শালবনকে বাঁচিয়ে রাখুন। অবাধে গাছ কাটা, আগুন ধরিয়ে দেওয়া, বনের মাটি কাটা বন্ধ করতে সবাইকে সচেতন করুন।’
No comments