পেনশনের অপেক্ষায় ১৫০০০ বেসরকারি শিক্ষক by নূর মোহাম্মদ
সাড়ে
৬ বছর নানা ভোগান্তির পর বাবার অবসরের টাকা পেয়ে খানিকটা খুশি ফখরুল আলম।
তবে তার আফসোস টাকাটা আরো ৬ মাস আগে পেলেই বাবা-মায়ের চিকিৎসাটা করাতে
পারতেন। বোনের বিয়েটাও তারা দেখে যেতে পারতেন। শুধু ফখরুল নন, সারা জীবনের
জমানো টাকা সময়মতো না পেয়ে হাজার হাজার শিক্ষক মারা গেছেন। অনেকেই
দূরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন। চিকিৎসা করাতে পারছেন না। মেয়ের বিয়ে দিতে
পারছেন না, জীবনের শেষ ইচ্ছা হজ করতে পারছেন না। এমন প্রায় ৭৫ হাজার
শিক্ষকের কান্না জমাট বেঁধে ছিল ব্যানবেইস ভবনে।
এখন সে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। সরকারের বিশেষ বরাদ্দ ও প্রধানমন্ত্রীর এককালীন অনুদানে সেই সংখ্যা এখন ২৭ হাজারে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংখ্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে আরও ২০০০ কোটি টাকা দরকার। এ টাকা হলেই এক মাসের মধ্যে সব শিক্ষকের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব।
অবসর ও কল্যাণ বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষকদের এমন কান্নায় সরকারের টনক নড়ে। সরকার শিক্ষকদের জন্য নানা বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মোতাবেক সরকার গত বছরের বাজেটে জট দূর করতে অবসর বোর্ডে ১শ’ কোটি ও কল্যাণ ট্রাস্টে ৫০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেয়। এছাড়া অবসর বোর্ডে ৫শ’ কোটি টাকা সিডমানি (যা খরচ করা যাবে না) দিয়েছে। থোক বরাদ্দ, সিডমানির সুদ এবং চাঁদাসহ অন্যান্য অর্থ মিলিয়ে এক বছরে সাড়ে ৮ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এবারের বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ থেকে অবসর খাতে ১৫০০ কোটি এবং কল্যাণ খাতে আরও ৫০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে ২০১৭ সালে জুন পর্যন্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের টাকা পরিশোধ হয়েছে। সর্বশেষ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৭ হাজার শিক্ষকের আবেদন অপেক্ষমাণ রয়েছে। এ আবেদন নিষ্পত্তি করতে ২০০০ কোটি টাকা লাগবে। সরকার আরেকবার এখানে দৃষ্টি দিলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করেন তারা। কর্মকর্তারা জানান, বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে আপৎকালীন সমাধান হয়। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। তারা বলেন, সম্প্রতি শিক্ষকদের ৫% ইনক্রিমেন্ট দেয়ায় নতুন করে এখানে আর্থিক সংকট আরও বেড়ে গেছে। কারণ দেখিয়ে বলেন, যে শিক্ষক আগে ৫০ হাজার টাকা বেতন পেতেন তিনি ৫% ইনক্রিমেন্টসহ পাবেন ৫২ হাজার টাকা। এতে নতুন আরও প্রতি বছর ২৫০ কোটির নতুন আর্থিক সংকট যোগ হয়েছে।
অবসর বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে ৫৪২ কোটি এসেছে। এছাড়া আরও ২৫০ কোটি টাকার বিশেষ অনুদান দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এই ৭৯২ কোটি টাকা ছাড়াও গত বছর বাজেট সিডমানি হিসেবে আরও ৫০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এ টাকা ব্যাংকে ফিক্স ডিপোডিট (এফডিআর) করে রাখা হয়েছে। মোট ১২৯২ কোটি টাকার অনুদানে গত এক বছরের কয়েক হাজার শিক্ষকদের অবসর ভাতা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত শিক্ষকদের অবসরোত্তর ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ১৫ হাজার শিক্ষকের আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। এসব অপেক্ষমাণ আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা দরকার। এ টাকা এককালীন অনুদান পেলে আবেদনের সংখ্যা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা সম্ভব। এ ব্যাপারে অবসর বোর্ডের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ সাদী মানবজমিনকে বলেন, আমরা চাই একজন শিক্ষক অবসর নেয়ার এক মাসেই মধ্যে তার অবসরের পাওনা টাকা পেয়ে যাক।
কিন্তু অর্থসংকটের কারণে সেটি এত দিন সম্ভব হয়নি। তবে এখন আগের মতো সমস্যা প্রকট নয়। বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দৃষ্টি দেয়ায় এ সমস্যা সমাধান সম্ভব হয়েছে। বিশেষ বরাদ্দের কারণে খাদের কিনারে থাকা অবসর বোর্ডকে একটা একটা ভালো পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। এখন মাত্র সাত মাসের আবেদন ঝুলে আছে।
একই সুখবর দিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টে কর্মকর্তারা। তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দসহ অন্যান্য বরাদ্দ মিলে ৫০৬ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এ দিয়ে ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত আবেদনকারী টাকা দেয়া সম্ভব হয়েছে। আরও ১২ হাজার শিক্ষকদের আবেদন নিষ্পত্তি করতে ৫০০ কোটি টাকা লাগবে। এ টাকা পেলেই এক মাসের মধ্যে সব শিক্ষকের আবেদন নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু মানবজমিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ দেয়ায় ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত শিক্ষকদের কল্যাণের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আরও ১২ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করতে মাত্র ৫০০ কোটি টাকা লাগবে। এ টাকাটা পেলেই এক মাসের মধ্যে সবার টাকা পরিশোধ করা সম্ভব। বিশেষ বরাদ্দের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে এ শিক্ষক নেতা বলেন, সমাজের সম্মানিত শিক্ষকদের এ সমস্যা সমাধানে স্থায়ী সমাধান করার উদ্যোগ নিতে হবে।
অবসর বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, অবসর বোর্ডের সব আবেদন এখন অনলাইনে জমা নেয়া হয়। একজন শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর অবসর বোর্ডের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করেই অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। এতে দালাল ধরা, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কষ্ট করে ঢাকা আসার কোনো প্রয়োজন নেই। এছাড়া শিক্ষকদের টাকা ব্যাংকের অললাইনের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কোনো শিক্ষক আবেদন থেকে শুরু করে টাকা পাওয়া পর্যন্ত ঢাকা না আসলেও চলবে। এ ব্যাপারে বোর্ডের সদস্য সচিব শরীফ আহমেদ সাদী বলেন, অনলাইন করতে গিয়ে নানা ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। তার পরও ঝুঁকি নিয়ে করেছি। এতে শিক্ষকদের হয়রানি, দালালদের দৌরাত্ম্য একেবারে কমে গেছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের টাকা তার ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। শিক্ষকরা তাদের আবেদন কোন পর্যায়ে আছে, সেটা বাসায় বসে জানতে পারেন সেজন্য কল সেন্টার ও আবেদন ট্যাকিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিগগিরই এ দুটি সেবা চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা আইনের মাধ্যমে বোর্ড গঠন করা হয়। ২০০৩ থেকে ২০০৪ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় ৮৯ কোটি টাকা সিডমানি দেয়। যার লভ্যাংশ এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের থেকে প্রাপ্ত ৬% চাঁদার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের অবসর সুবিধা দিতে হচ্ছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি মাসের বেতন থেকে ৪ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হয়। ওই টাকা দিয়ে তাদের অবসর সুবিধা দেয়া হয়। ২০০৯ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী চাঁদা বাবদ প্রতি মাসে ১৮ কোটি টাকা আয় হয়। আর অবসর সুবিধা প্রদানের জন্য দরকার হয় ৩৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি ১৮ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে নতুন বেতন স্কেল ঘোষণার পরে ঘাটতি আরো বেড়ে যায়। শিক্ষকদের কাছ থেকে আদায় হয় ৩৫ কোটি টাকা। খরচ হয় ৭০ কোটি টাকা। ঘাটতি থাকে ৩৫ কোটি টাকা। একই অবস্থা কল্যাণ ট্রাস্টে। প্রতি মাসে যে আবেদন জমা হয় তা নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন ৩০ কোটি টাকা। ২% হারে যে চাঁদা আদায় হয় তাতে আসে ১৭ কোটি টাকা। এখানে প্রতি মাসে ঘাটতি থাকে ১৩ কোটি।
এখন সে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। সরকারের বিশেষ বরাদ্দ ও প্রধানমন্ত্রীর এককালীন অনুদানে সেই সংখ্যা এখন ২৭ হাজারে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংখ্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে আরও ২০০০ কোটি টাকা দরকার। এ টাকা হলেই এক মাসের মধ্যে সব শিক্ষকের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব।
অবসর ও কল্যাণ বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষকদের এমন কান্নায় সরকারের টনক নড়ে। সরকার শিক্ষকদের জন্য নানা বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মোতাবেক সরকার গত বছরের বাজেটে জট দূর করতে অবসর বোর্ডে ১শ’ কোটি ও কল্যাণ ট্রাস্টে ৫০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেয়। এছাড়া অবসর বোর্ডে ৫শ’ কোটি টাকা সিডমানি (যা খরচ করা যাবে না) দিয়েছে। থোক বরাদ্দ, সিডমানির সুদ এবং চাঁদাসহ অন্যান্য অর্থ মিলিয়ে এক বছরে সাড়ে ৮ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এবারের বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ থেকে অবসর খাতে ১৫০০ কোটি এবং কল্যাণ খাতে আরও ৫০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে ২০১৭ সালে জুন পর্যন্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের টাকা পরিশোধ হয়েছে। সর্বশেষ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৭ হাজার শিক্ষকের আবেদন অপেক্ষমাণ রয়েছে। এ আবেদন নিষ্পত্তি করতে ২০০০ কোটি টাকা লাগবে। সরকার আরেকবার এখানে দৃষ্টি দিলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করেন তারা। কর্মকর্তারা জানান, বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে আপৎকালীন সমাধান হয়। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। তারা বলেন, সম্প্রতি শিক্ষকদের ৫% ইনক্রিমেন্ট দেয়ায় নতুন করে এখানে আর্থিক সংকট আরও বেড়ে গেছে। কারণ দেখিয়ে বলেন, যে শিক্ষক আগে ৫০ হাজার টাকা বেতন পেতেন তিনি ৫% ইনক্রিমেন্টসহ পাবেন ৫২ হাজার টাকা। এতে নতুন আরও প্রতি বছর ২৫০ কোটির নতুন আর্থিক সংকট যোগ হয়েছে।
অবসর বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে ৫৪২ কোটি এসেছে। এছাড়া আরও ২৫০ কোটি টাকার বিশেষ অনুদান দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এই ৭৯২ কোটি টাকা ছাড়াও গত বছর বাজেট সিডমানি হিসেবে আরও ৫০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এ টাকা ব্যাংকে ফিক্স ডিপোডিট (এফডিআর) করে রাখা হয়েছে। মোট ১২৯২ কোটি টাকার অনুদানে গত এক বছরের কয়েক হাজার শিক্ষকদের অবসর ভাতা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত শিক্ষকদের অবসরোত্তর ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ১৫ হাজার শিক্ষকের আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। এসব অপেক্ষমাণ আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা দরকার। এ টাকা এককালীন অনুদান পেলে আবেদনের সংখ্যা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা সম্ভব। এ ব্যাপারে অবসর বোর্ডের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ সাদী মানবজমিনকে বলেন, আমরা চাই একজন শিক্ষক অবসর নেয়ার এক মাসেই মধ্যে তার অবসরের পাওনা টাকা পেয়ে যাক।
কিন্তু অর্থসংকটের কারণে সেটি এত দিন সম্ভব হয়নি। তবে এখন আগের মতো সমস্যা প্রকট নয়। বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দৃষ্টি দেয়ায় এ সমস্যা সমাধান সম্ভব হয়েছে। বিশেষ বরাদ্দের কারণে খাদের কিনারে থাকা অবসর বোর্ডকে একটা একটা ভালো পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। এখন মাত্র সাত মাসের আবেদন ঝুলে আছে।
একই সুখবর দিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টে কর্মকর্তারা। তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দসহ অন্যান্য বরাদ্দ মিলে ৫০৬ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এ দিয়ে ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত আবেদনকারী টাকা দেয়া সম্ভব হয়েছে। আরও ১২ হাজার শিক্ষকদের আবেদন নিষ্পত্তি করতে ৫০০ কোটি টাকা লাগবে। এ টাকা পেলেই এক মাসের মধ্যে সব শিক্ষকের আবেদন নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু মানবজমিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ দেয়ায় ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত শিক্ষকদের কল্যাণের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আরও ১২ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করতে মাত্র ৫০০ কোটি টাকা লাগবে। এ টাকাটা পেলেই এক মাসের মধ্যে সবার টাকা পরিশোধ করা সম্ভব। বিশেষ বরাদ্দের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে এ শিক্ষক নেতা বলেন, সমাজের সম্মানিত শিক্ষকদের এ সমস্যা সমাধানে স্থায়ী সমাধান করার উদ্যোগ নিতে হবে।
অবসর বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, অবসর বোর্ডের সব আবেদন এখন অনলাইনে জমা নেয়া হয়। একজন শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর অবসর বোর্ডের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করেই অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। এতে দালাল ধরা, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কষ্ট করে ঢাকা আসার কোনো প্রয়োজন নেই। এছাড়া শিক্ষকদের টাকা ব্যাংকের অললাইনের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কোনো শিক্ষক আবেদন থেকে শুরু করে টাকা পাওয়া পর্যন্ত ঢাকা না আসলেও চলবে। এ ব্যাপারে বোর্ডের সদস্য সচিব শরীফ আহমেদ সাদী বলেন, অনলাইন করতে গিয়ে নানা ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। তার পরও ঝুঁকি নিয়ে করেছি। এতে শিক্ষকদের হয়রানি, দালালদের দৌরাত্ম্য একেবারে কমে গেছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের টাকা তার ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। শিক্ষকরা তাদের আবেদন কোন পর্যায়ে আছে, সেটা বাসায় বসে জানতে পারেন সেজন্য কল সেন্টার ও আবেদন ট্যাকিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিগগিরই এ দুটি সেবা চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা আইনের মাধ্যমে বোর্ড গঠন করা হয়। ২০০৩ থেকে ২০০৪ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় ৮৯ কোটি টাকা সিডমানি দেয়। যার লভ্যাংশ এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের থেকে প্রাপ্ত ৬% চাঁদার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের অবসর সুবিধা দিতে হচ্ছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি মাসের বেতন থেকে ৪ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হয়। ওই টাকা দিয়ে তাদের অবসর সুবিধা দেয়া হয়। ২০০৯ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী চাঁদা বাবদ প্রতি মাসে ১৮ কোটি টাকা আয় হয়। আর অবসর সুবিধা প্রদানের জন্য দরকার হয় ৩৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি ১৮ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে নতুন বেতন স্কেল ঘোষণার পরে ঘাটতি আরো বেড়ে যায়। শিক্ষকদের কাছ থেকে আদায় হয় ৩৫ কোটি টাকা। খরচ হয় ৭০ কোটি টাকা। ঘাটতি থাকে ৩৫ কোটি টাকা। একই অবস্থা কল্যাণ ট্রাস্টে। প্রতি মাসে যে আবেদন জমা হয় তা নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন ৩০ কোটি টাকা। ২% হারে যে চাঁদা আদায় হয় তাতে আসে ১৭ কোটি টাকা। এখানে প্রতি মাসে ঘাটতি থাকে ১৩ কোটি।
No comments