দমনপীড়নের আতঙ্কে সিয়ানের মুসলিমরা
চীনের
শানশি প্রদেশের রাজধানী সিয়ান। এই শহরের অধিবাসী ১ কোটির কাছাকাছি। কোটি
পূর্ণ হলে শহরটি ‘মেগাসিটি’ হিসেবে আখ্যায়িত হবে। সপ্তম শতাব্দীতে এই সিয়ান
অঞ্চলে মুসলিমরা বসতি গড়তে শুরু করে। ট্যাং রাজবংশের আমলে চ্যাংগান নামে
পরিচিত এই শহরে মুসলিম ব্যবসায়ীদের প্রথম আগমন ঘটে। তাদের অনেকে চীনা হান
নারীদের বিয়ে করে এখানেই বসবাস শুরু করেন। এদের বংশধররা হুই নামে পরিচিতি
পেয়েছে, যা চীনের ৫৬টি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর একটি। সিয়ানের মোট মুসলিম
অধিবাসীর সংখ্যা ৬৫ হাজারের মতো।
এদের বেশিরভাগই সিয়ানের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিতি মুসলিম কোয়ার্টারে বাস করেন। সিয়ানে তাদের জীবন দৃশ্যত বেশ ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন হালাল খাবার তৈরি করে থাকেন। এসব খাবারের খোঁজে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকদের আগমন ঘটে। এরাই মুসলিমদের তৈরি হালাল খাবারের প্রধান ক্রেতা। হালাল খাবার ছাড়াও এখানকার স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবারের বিশ্বজোড়া সুখ্যাতি রয়েছে। এছাড়া চীনের ঐতিহ্যবাহী উপহারসামগ্রীও পর্যটকদের সিয়ানে টেনে আনে। রমরমা ব্যবসা থেকে উপার্জিত জীবিকা দিয়ে সিয়ানের মুসলিমদের জীবন ভালোভাবে কাটলেও তাদের মনে দীর্ঘদিন ধরেই আতঙ্ক কাজ করছে। কেননা চীনের বিভিন্ন অংশে মুসলিমদের সঙ্গে কী ঘটছে তা এখানকার অধিবাসীদের অজানা নয়।
বিশেষ করে, সিয়ান থেকে হাজারেরও বেশি মাইল দূরে জিনজিয়াং প্রদেশে সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযানের নামে মুসলিমদের ওপর যে অত্যাচার করা হচ্ছে, তা এখানকার মুসলিমদেরকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। নাম গোপন রাখার শর্তে চীনের একজন হুই মুসলিম বলেন, ‘জিনজিয়াংয়ের পরিস্থিতি আপনারা জানেন। সিয়ানে আমরা এমন পরিস্থিতি চাই না।’
১৯৬০ সালে মাও সেতুংয়ের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় চীনে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন নিষিদ্ধ করা হয়। মসজিদগুলোকে কারখানা, প্রশাসনিক ভবন বা কমিউনিটি সেন্টারে রূপান্তরিত করা হয়। ১৪ শতাব্দীতে তৈরি সিয়ানের ‘গ্রেট মস্ক’ স্টিল তৈরির কারখানায় রূপান্তরিত হয়। আর ৩০০ বছরের পুরনো বেই গুয়াংজি স্ট্রিট মসজিদ পরিণত হয় শহরের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কেন্দ্রে। সিয়ানের অধিবাসীরা দেং জিয়াও পিংয়ের অর্থনৈতিক উদার-নীতিকে সাধুবাদ জানান। কেননা এর অধীনে মুসলিমদের জন্য কোয়ার্টার তৈরি করা হয়।
তবে সিয়ানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী মুসলিমদের আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে তুলেছে। পূর্বে মুসলিম কোয়ার্টারের সদর দরজায় চীনা ও আরবি হরফে নাম লেখা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি তা সরিয়ে শুধু চীনা বর্ণে লেখা হয়েছে। সিয়ান শহরের বৃহত্তম মসজিদের একজন কমিটি মেম্বার বলেন, মসজিদে চীনের পতাকা উত্তোলনের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে তাকে অনুরোধ করেছিলেন সরকার দলীয় কর্মকর্তারা। তবে তিনি এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে মসজিদে একটি পতাকা স্থাপন করতে রাজি হন। পরে সেখানে কয়েকটি দলীয় পোস্টারও টানানো হয়। এছাড়া তাকে মুসলিম শিশুদের গ্রীষ্মকালীন স্কুল বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছিল। এই স্কুলে শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়। স্কুল বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ তাকে ‘জিনজিয়াংয়ের সন্ত্রাসীদের’ (মুসলিম) অবস্থা স্মরণ করিয়ে সতর্কও করেছে।
সম্প্রতি চীনের ওয়েইজু অঞ্চলের গ্র্যান্ড মসজিদ ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এই খবরে সিয়ানের মুসলিমরা আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। সরাসরি এখনো তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিলেও তাদের প্রতিটা ক্ষণ এখন আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে কাটে। যদিও চীনের সংবিধানে সব ধর্মের স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে। সিয়ানের মসজিদ কমিটির এক সদস্য বলেন, আমি মনে করি এসব নির্দেশ কেন্দ্রীয় সরকার থেকে আসেনি। এগুলো স্থানীয় কিছু কর্মকর্তার কাজ। সিয়ানসির রাস্তায় খাবার বিক্রেতা আয়শা মা মুসলিমদের বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণার বিষয়ে সতর্ক করেন। বলেন, তাদের বিশ্বাস করা উচিত না। এখানে আমরা হুই জনগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণভাবে জীবন কাটাচ্ছি। এর চেয়ে ভালো জীবন আর হয় না।
(গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে)
এদের বেশিরভাগই সিয়ানের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিতি মুসলিম কোয়ার্টারে বাস করেন। সিয়ানে তাদের জীবন দৃশ্যত বেশ ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন হালাল খাবার তৈরি করে থাকেন। এসব খাবারের খোঁজে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকদের আগমন ঘটে। এরাই মুসলিমদের তৈরি হালাল খাবারের প্রধান ক্রেতা। হালাল খাবার ছাড়াও এখানকার স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবারের বিশ্বজোড়া সুখ্যাতি রয়েছে। এছাড়া চীনের ঐতিহ্যবাহী উপহারসামগ্রীও পর্যটকদের সিয়ানে টেনে আনে। রমরমা ব্যবসা থেকে উপার্জিত জীবিকা দিয়ে সিয়ানের মুসলিমদের জীবন ভালোভাবে কাটলেও তাদের মনে দীর্ঘদিন ধরেই আতঙ্ক কাজ করছে। কেননা চীনের বিভিন্ন অংশে মুসলিমদের সঙ্গে কী ঘটছে তা এখানকার অধিবাসীদের অজানা নয়।
বিশেষ করে, সিয়ান থেকে হাজারেরও বেশি মাইল দূরে জিনজিয়াং প্রদেশে সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযানের নামে মুসলিমদের ওপর যে অত্যাচার করা হচ্ছে, তা এখানকার মুসলিমদেরকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। নাম গোপন রাখার শর্তে চীনের একজন হুই মুসলিম বলেন, ‘জিনজিয়াংয়ের পরিস্থিতি আপনারা জানেন। সিয়ানে আমরা এমন পরিস্থিতি চাই না।’
১৯৬০ সালে মাও সেতুংয়ের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় চীনে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন নিষিদ্ধ করা হয়। মসজিদগুলোকে কারখানা, প্রশাসনিক ভবন বা কমিউনিটি সেন্টারে রূপান্তরিত করা হয়। ১৪ শতাব্দীতে তৈরি সিয়ানের ‘গ্রেট মস্ক’ স্টিল তৈরির কারখানায় রূপান্তরিত হয়। আর ৩০০ বছরের পুরনো বেই গুয়াংজি স্ট্রিট মসজিদ পরিণত হয় শহরের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কেন্দ্রে। সিয়ানের অধিবাসীরা দেং জিয়াও পিংয়ের অর্থনৈতিক উদার-নীতিকে সাধুবাদ জানান। কেননা এর অধীনে মুসলিমদের জন্য কোয়ার্টার তৈরি করা হয়।
তবে সিয়ানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী মুসলিমদের আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে তুলেছে। পূর্বে মুসলিম কোয়ার্টারের সদর দরজায় চীনা ও আরবি হরফে নাম লেখা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি তা সরিয়ে শুধু চীনা বর্ণে লেখা হয়েছে। সিয়ান শহরের বৃহত্তম মসজিদের একজন কমিটি মেম্বার বলেন, মসজিদে চীনের পতাকা উত্তোলনের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে তাকে অনুরোধ করেছিলেন সরকার দলীয় কর্মকর্তারা। তবে তিনি এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে মসজিদে একটি পতাকা স্থাপন করতে রাজি হন। পরে সেখানে কয়েকটি দলীয় পোস্টারও টানানো হয়। এছাড়া তাকে মুসলিম শিশুদের গ্রীষ্মকালীন স্কুল বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছিল। এই স্কুলে শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়। স্কুল বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ তাকে ‘জিনজিয়াংয়ের সন্ত্রাসীদের’ (মুসলিম) অবস্থা স্মরণ করিয়ে সতর্কও করেছে।
সম্প্রতি চীনের ওয়েইজু অঞ্চলের গ্র্যান্ড মসজিদ ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এই খবরে সিয়ানের মুসলিমরা আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। সরাসরি এখনো তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিলেও তাদের প্রতিটা ক্ষণ এখন আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে কাটে। যদিও চীনের সংবিধানে সব ধর্মের স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে। সিয়ানের মসজিদ কমিটির এক সদস্য বলেন, আমি মনে করি এসব নির্দেশ কেন্দ্রীয় সরকার থেকে আসেনি। এগুলো স্থানীয় কিছু কর্মকর্তার কাজ। সিয়ানসির রাস্তায় খাবার বিক্রেতা আয়শা মা মুসলিমদের বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণার বিষয়ে সতর্ক করেন। বলেন, তাদের বিশ্বাস করা উচিত না। এখানে আমরা হুই জনগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণভাবে জীবন কাটাচ্ছি। এর চেয়ে ভালো জীবন আর হয় না।
(গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে)
No comments