যেভাবে বাংলাদেশি অভিবাসীরা বদলে দিয়েছেন ইতালির বালারো বাজার
সিসিলি
দ্বীপের বালারো অঞ্চল বহু বছর ধরেই অবহেলিত ছিল। ইতালির পালার্মো শহরের
অন্তর্ভুক্ত এ জায়গাটিতে তুলনামূলক দরিদ্রদের বসবাস। ১৯৯০-এর পর থেকে
সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসীর বসতি গড়ে উঠেছে। যাদের বেশিরভাগই
দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে। পালার্মো শহরের প্রধান
বাজারের নাম বালারো, যা সিসিলিয়ান মাফিয়াদের কাছে অনেকটা স্বর্গরাজ্যের
মতো। বাজারের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সেখানে যাতায়াত আছে এমন প্রত্যেক
ব্যক্তিকে মাফিয়াদের কর্তৃত্ব মেনে চলতে হতো। তাদের আর্থিক চাহিদাও পূরণ
করা লাগতো সেখানকার অধিবাসীদের। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে এই দৃশ্যপটে আমূল
পরিবর্তন ঘটেছে।
বালারোর স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের অধিকারের প্রতি সচেতন হয়ে উঠেছে। যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পিছপা হন না তারা। এখন সেখানে কমে এসেছে মাফিয়া দলের দৌরাত্ম্য। বরং তাদেরকে কোর্ট দেখিয়েছে বালারোবাসী। আর এই পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন ১০ বাংলাদেশি অভিবাসী।
২০১৬ সালের এপ্রিলের এক বিকালে বালারো বাজারে গাম্বিয়ান অভিবাসী ইউসুফা সুসোর মাথায় গুলি করেন স্থানীয় মাফিয়া ইমানুয়েল রুবিনো। সকালের দিকে তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়। এর রেশ ধরেই বিকালে গুলির ঘটনা ঘটে। বুলেট সুসোর মস্তিষ্কে আঘাত করে। কোমায় যেতে হয় তাকে। এই ঘটনায় বালারো বাজারের দোকানিরা ফুঁসে ওঠে। অভিবাসী দোকানিরা মাফিয়াদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। এই প্রতিবাদের নেতৃত্বে ছিলেন ১০ বাংলাদেশি অভিবাসী। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় তিউনিসিয়া, গাম্বিয়া ও নাইজেরিয়ার অভিবাসীরা। মাফিয়াদের ক্রোধের শিকার হওয়ার ভয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে বালারোবাসী নীরব ছিলেন, তারাই প্রতিবাদী বাংলাদেশি অভিবাসীদের ছোঁয়ায় পুরোপুরি বদলে যান। মাফিয়াদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়ে তাদেরকে বার্তা দেন, ‘কোর্টে দেখে নেবো তোমাদের’। মামলার কার্যক্রম শুরু হতে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিলম্ব হলেও অবশেষে এর প্রক্রিয়া শুরু হয়। আটক করা হয় সুসোর ওপর হামলাকারী মাফিয়া রুবিনোকে। মামলায় রুবিনো ছাড়াও বালারোবাসীদেরও পর নির্যাতনকারী অন্য মাফিয়াদেরকে আসামি করা হয়েছে। গত নভেম্বরে ওই মামলায় হত্যা প্রচেষ্টার দায়ে রুবিনোর ১২ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। রুবিনোর ভাই গিসেপ্পেও এ মামলার আসামি ছিল। কিন্তু তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। এই একটি মামলা বালারোর দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। বাংলাদেশি অভিবাসীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এখন সেখানকার অন্য অভিবাসীরাও কর্তৃপক্ষের কাছে সেখানকার নিরাপত্তা জোরদারের দাবি তুলেছে। একসময় তাদের মধ্যে যে আতঙ্ক কাজ করতো, তা এখন শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
১৯৯০ সালের দিকে অভিবাসীরা বালারো অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করে। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্ততে এসব অভিবাসীরা আগমন করলেও এদের কারণে এখন বালারোর পরিস্থিতিই বদলে গেছে। এই বাজারের দোকানিদের বেশিরভাগই অভিবাসী। আহমেদ নামের এক বাংলাদেশি অভিবাসী জানান, তিনি ২০ বছর ধরে সিসিলি দ্বীপে বাস করেন। দুই পুত্র ও সিসিলিতে জন্ম নেয়া এক কন্যার পিতা আহমেদ ২০১৩ সালে বালারোতে ব্যবসা শুরু করেন।
দোকান থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। অভিবাসী হয়ে আসার পর দক্ষিণ সিসিলিতে পর্যটন মৌসুমে কাজ করে যে পুঁজি সঞ্চয় করেছিলেন, বালারো বাজারের ব্যবসায় তা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু এরপরই তাকে মাফিয়াদের বিভিন্ন ধরনের হুমকির মুখে পড়তে হয়। স্থানীয় বাঙালি সমিতির সভাপতি তোফাজ্জল তপু বালারো বাজারের অবস্থা তুলে ধরেন এভাবে- বালারোতে থাকতে হলে আপনাকে স্থানীয় মাফিয়া বসদের খুশি রাখতে হবে। তা না হলে তারা আপনার দোকান লুট করে নিয়ে যাবে। টার্গেটে পরিণত হওয়ার ভয়ে অনেক দোকানি এসব মাফিয়াদের ‘প্রটেকশন মানি’ও দিয়ে থাকেন। এই এলাকায় যারা কাজ করেন, তারা কখনো মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন- এমনটি প্রকাশ হলেই তাদের দোকান লুট হয়ে যায়। মানুষ এ ঝামেলায় জড়াতে চায় না। তাই তারা নীরব থাকে।
ভূমধ্যসাগরের সবচেয়ে বড় দ্বীপ সিসিলি। এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। এদের মধ্যে পৌনে দুই লাখের মতো অভিবাসী রয়েছে। বিপুল সংখ্যক আফ্রিকান অভিবাসী থাকলেও সিসিলিতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও চীনের অভিবাসীও কম না। বেশিরভাগ অভিবাসীরা পাইকারি, খুচরা বেচাকেনা ও গৃহস্থালি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
অনেক বাঙালি অভিবাসী রাস্তার পাশে মোবাইলের কভারসহ বিভিন্ন সস্তা পণ্য বিক্রি করেন। পর্যটন মৌসুমে তাদের ব্যবসা বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। এসব ব্যবসায়ীরাও হরহামেশাই মাফিয়াদের উৎপাতের শিকার হন। মাফিয়াদের বিরুদ্ধে এসব ব্যবসায়ীদের আইনি সুরক্ষা দেয়ার জন্য ২০০৪ সালে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ‘আদ্দিপিজ্জো’ নামে একটি মাফিয়া-বিরোধী সংগঠন গড়ে তোলেন। এর সদস্য এডোয়ার্ডো জাফুতো বলেন, আগে স্থানীয়রা পুলিশের কাছে মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ করতো। এক্ষেত্রে একটি বিষয় চোখে পড়ার মতো যে, দোকানিরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে যেতেন দল বেঁধে। জাফুতো বলেন, মজার বিষয় হলো, রুখে দাঁড়ানো এই কাজের নেতৃত্বে পালার্মোর স্থানীয়দের কেউ ছিলেন না। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষেরা। যা হোক, মাফিয়াদের বিরুদ্ধে সোচ্চার এসব ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতো। তপু বলেন, প্রতিবাদে নেতৃত্বদানকারী এসব বাঙালিদের দোকানের তালায় সুপারগ্লু লাগানো হতো। মাফিয়ারা সংশ্লিষ্ট দোকানিকে পর্যবেক্ষণ করছে, এটা ছিল তার প্রাথমিক সতর্কবার্তা। এই সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করলে তাদের দোকানে হামলা করা হতো, মালামাল লুট করা হতো।
সূর্যাস্তের পর রাতের পালার্মোর দৃশ্যপট আবার ভিন্ন। শহরের প্রধান রাস্তাগুলোর পাশে বাঙালি হকাররা ঠেলাগাড়িতে বিভিন্ন পণ্য ফেরি করে বিক্রি করেন। এমনই এক বিক্রেতা মোহাম্মদ মিয়া। দিনে ইতালিয়ান পরিবারগুলোতে ক্লিনারের কাজ করেন তিনি। আর সন্ধ্যার পর ফেরি করে বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক পণ্য বিক্রি করেন। তিনিও মাফিয়াদের হুমকির শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। পুলিশ তার অভিযোগকে গুরুত্ব দেয়নি। তাই, নির্যাতনের শিকার এমন আরো বিক্রেতাদের নিয়ে তিনি নিজেই নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছেন। কেউ মাফিয়াদের হুমকি বা নির্যাতনের শিকার হলে সবাইকে জানিয়ে দেন। পরে একজোট হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তারা। মোহাম্মদ মিয়ার মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে সিসিলির জীবন হলো সংগ্রামের। জীবিকা নির্বাহের মতো উপার্জন করতেও তাদের হিমশিম খেতে হয়। তারপরেও মাফিয়াদের হুমকি ও অর্থনৈতিক দুর্ভোগ উপেক্ষা করে তারা মূলধারার সিসিলিয়ান সমাজে জায়গা করে নিতে শুরু করেছেন। যদিও এ প্রক্রিয়া এগোচ্ছে অনেক ধীরগতিতে। এরই মধ্যে তাদের কেউ কেউ আবার পরম আরাধ্য ইতালির নাগরিকত্ব বা বৈধ কাগজপত্র পেয়ে যান।
সিসিলির বাঙালি রাজনীতিবিদ সুমি ডালিয়া আক্তার প্রথমবারের মতো জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেঞ্জির দল ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতি করেন। সুমি বলেন, বালারোতে মাফিয়াদের প্রত্যাখ্যান করে বিদেশি হিসেবে আমাদের সাহস দেখিয়েছি। এর মাধ্যমে বাঙালিরা দেখিয়ে দিয়েছে যে, তারা পালার্মোর অবিচ্ছেদ্য অংশ।
(সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে)
বালারোর স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের অধিকারের প্রতি সচেতন হয়ে উঠেছে। যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পিছপা হন না তারা। এখন সেখানে কমে এসেছে মাফিয়া দলের দৌরাত্ম্য। বরং তাদেরকে কোর্ট দেখিয়েছে বালারোবাসী। আর এই পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন ১০ বাংলাদেশি অভিবাসী।
২০১৬ সালের এপ্রিলের এক বিকালে বালারো বাজারে গাম্বিয়ান অভিবাসী ইউসুফা সুসোর মাথায় গুলি করেন স্থানীয় মাফিয়া ইমানুয়েল রুবিনো। সকালের দিকে তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়। এর রেশ ধরেই বিকালে গুলির ঘটনা ঘটে। বুলেট সুসোর মস্তিষ্কে আঘাত করে। কোমায় যেতে হয় তাকে। এই ঘটনায় বালারো বাজারের দোকানিরা ফুঁসে ওঠে। অভিবাসী দোকানিরা মাফিয়াদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। এই প্রতিবাদের নেতৃত্বে ছিলেন ১০ বাংলাদেশি অভিবাসী। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় তিউনিসিয়া, গাম্বিয়া ও নাইজেরিয়ার অভিবাসীরা। মাফিয়াদের ক্রোধের শিকার হওয়ার ভয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে বালারোবাসী নীরব ছিলেন, তারাই প্রতিবাদী বাংলাদেশি অভিবাসীদের ছোঁয়ায় পুরোপুরি বদলে যান। মাফিয়াদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়ে তাদেরকে বার্তা দেন, ‘কোর্টে দেখে নেবো তোমাদের’। মামলার কার্যক্রম শুরু হতে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিলম্ব হলেও অবশেষে এর প্রক্রিয়া শুরু হয়। আটক করা হয় সুসোর ওপর হামলাকারী মাফিয়া রুবিনোকে। মামলায় রুবিনো ছাড়াও বালারোবাসীদেরও পর নির্যাতনকারী অন্য মাফিয়াদেরকে আসামি করা হয়েছে। গত নভেম্বরে ওই মামলায় হত্যা প্রচেষ্টার দায়ে রুবিনোর ১২ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। রুবিনোর ভাই গিসেপ্পেও এ মামলার আসামি ছিল। কিন্তু তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। এই একটি মামলা বালারোর দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। বাংলাদেশি অভিবাসীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এখন সেখানকার অন্য অভিবাসীরাও কর্তৃপক্ষের কাছে সেখানকার নিরাপত্তা জোরদারের দাবি তুলেছে। একসময় তাদের মধ্যে যে আতঙ্ক কাজ করতো, তা এখন শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
১৯৯০ সালের দিকে অভিবাসীরা বালারো অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করে। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্ততে এসব অভিবাসীরা আগমন করলেও এদের কারণে এখন বালারোর পরিস্থিতিই বদলে গেছে। এই বাজারের দোকানিদের বেশিরভাগই অভিবাসী। আহমেদ নামের এক বাংলাদেশি অভিবাসী জানান, তিনি ২০ বছর ধরে সিসিলি দ্বীপে বাস করেন। দুই পুত্র ও সিসিলিতে জন্ম নেয়া এক কন্যার পিতা আহমেদ ২০১৩ সালে বালারোতে ব্যবসা শুরু করেন।
দোকান থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। অভিবাসী হয়ে আসার পর দক্ষিণ সিসিলিতে পর্যটন মৌসুমে কাজ করে যে পুঁজি সঞ্চয় করেছিলেন, বালারো বাজারের ব্যবসায় তা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু এরপরই তাকে মাফিয়াদের বিভিন্ন ধরনের হুমকির মুখে পড়তে হয়। স্থানীয় বাঙালি সমিতির সভাপতি তোফাজ্জল তপু বালারো বাজারের অবস্থা তুলে ধরেন এভাবে- বালারোতে থাকতে হলে আপনাকে স্থানীয় মাফিয়া বসদের খুশি রাখতে হবে। তা না হলে তারা আপনার দোকান লুট করে নিয়ে যাবে। টার্গেটে পরিণত হওয়ার ভয়ে অনেক দোকানি এসব মাফিয়াদের ‘প্রটেকশন মানি’ও দিয়ে থাকেন। এই এলাকায় যারা কাজ করেন, তারা কখনো মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন- এমনটি প্রকাশ হলেই তাদের দোকান লুট হয়ে যায়। মানুষ এ ঝামেলায় জড়াতে চায় না। তাই তারা নীরব থাকে।
ভূমধ্যসাগরের সবচেয়ে বড় দ্বীপ সিসিলি। এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। এদের মধ্যে পৌনে দুই লাখের মতো অভিবাসী রয়েছে। বিপুল সংখ্যক আফ্রিকান অভিবাসী থাকলেও সিসিলিতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও চীনের অভিবাসীও কম না। বেশিরভাগ অভিবাসীরা পাইকারি, খুচরা বেচাকেনা ও গৃহস্থালি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
অনেক বাঙালি অভিবাসী রাস্তার পাশে মোবাইলের কভারসহ বিভিন্ন সস্তা পণ্য বিক্রি করেন। পর্যটন মৌসুমে তাদের ব্যবসা বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। এসব ব্যবসায়ীরাও হরহামেশাই মাফিয়াদের উৎপাতের শিকার হন। মাফিয়াদের বিরুদ্ধে এসব ব্যবসায়ীদের আইনি সুরক্ষা দেয়ার জন্য ২০০৪ সালে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ‘আদ্দিপিজ্জো’ নামে একটি মাফিয়া-বিরোধী সংগঠন গড়ে তোলেন। এর সদস্য এডোয়ার্ডো জাফুতো বলেন, আগে স্থানীয়রা পুলিশের কাছে মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ করতো। এক্ষেত্রে একটি বিষয় চোখে পড়ার মতো যে, দোকানিরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে যেতেন দল বেঁধে। জাফুতো বলেন, মজার বিষয় হলো, রুখে দাঁড়ানো এই কাজের নেতৃত্বে পালার্মোর স্থানীয়দের কেউ ছিলেন না। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষেরা। যা হোক, মাফিয়াদের বিরুদ্ধে সোচ্চার এসব ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতো। তপু বলেন, প্রতিবাদে নেতৃত্বদানকারী এসব বাঙালিদের দোকানের তালায় সুপারগ্লু লাগানো হতো। মাফিয়ারা সংশ্লিষ্ট দোকানিকে পর্যবেক্ষণ করছে, এটা ছিল তার প্রাথমিক সতর্কবার্তা। এই সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করলে তাদের দোকানে হামলা করা হতো, মালামাল লুট করা হতো।
সূর্যাস্তের পর রাতের পালার্মোর দৃশ্যপট আবার ভিন্ন। শহরের প্রধান রাস্তাগুলোর পাশে বাঙালি হকাররা ঠেলাগাড়িতে বিভিন্ন পণ্য ফেরি করে বিক্রি করেন। এমনই এক বিক্রেতা মোহাম্মদ মিয়া। দিনে ইতালিয়ান পরিবারগুলোতে ক্লিনারের কাজ করেন তিনি। আর সন্ধ্যার পর ফেরি করে বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক পণ্য বিক্রি করেন। তিনিও মাফিয়াদের হুমকির শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। পুলিশ তার অভিযোগকে গুরুত্ব দেয়নি। তাই, নির্যাতনের শিকার এমন আরো বিক্রেতাদের নিয়ে তিনি নিজেই নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছেন। কেউ মাফিয়াদের হুমকি বা নির্যাতনের শিকার হলে সবাইকে জানিয়ে দেন। পরে একজোট হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তারা। মোহাম্মদ মিয়ার মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে সিসিলির জীবন হলো সংগ্রামের। জীবিকা নির্বাহের মতো উপার্জন করতেও তাদের হিমশিম খেতে হয়। তারপরেও মাফিয়াদের হুমকি ও অর্থনৈতিক দুর্ভোগ উপেক্ষা করে তারা মূলধারার সিসিলিয়ান সমাজে জায়গা করে নিতে শুরু করেছেন। যদিও এ প্রক্রিয়া এগোচ্ছে অনেক ধীরগতিতে। এরই মধ্যে তাদের কেউ কেউ আবার পরম আরাধ্য ইতালির নাগরিকত্ব বা বৈধ কাগজপত্র পেয়ে যান।
সিসিলির বাঙালি রাজনীতিবিদ সুমি ডালিয়া আক্তার প্রথমবারের মতো জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেঞ্জির দল ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতি করেন। সুমি বলেন, বালারোতে মাফিয়াদের প্রত্যাখ্যান করে বিদেশি হিসেবে আমাদের সাহস দেখিয়েছি। এর মাধ্যমে বাঙালিরা দেখিয়ে দিয়েছে যে, তারা পালার্মোর অবিচ্ছেদ্য অংশ।
(সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে)
No comments