বায়ুদূষণে কেমন আছেন দিল্লির রিক্সাওয়ালা!
‘আমার
চোখ জ্বালাপোড়া করে, যখন রিক্সার চালাই তখন নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। শরীর
আর চলে না। দিল্লির বিষাক্ত কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার কথা বলে
আমার শরীর। কিন্তু পরিবারকে চালানোর জন্য আমাকে এ কাজ চালিয়ে যেতেই হবে।
কোথায় যাবো আমি? রাস্তাই তো আমাদের ঘর।’- দিল্লির রাস্তায় রিক্সা চালানোর
এমন অভিজ্ঞতায় বিবিসিকে জানিয়েছেন সঞ্জয় কুমার নামের একজন রিক্সাচালক।
বলছিলেন বায়ু দূষণের মাত্রা কোন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাদের জীবনযাত্রা কতটা
ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।
সঞ্জয় জানান, পাঁচ বছর আগে তিনি চাকরির খোঁজে বিহার থেকে দিল্লিতে যান।
কিন্তু চাকরি না পেয়ে অবশেষে পেটের দায়ে আর পরিবারের কথা ভেবে রিক্সা চালানো শুরু করেন। রিক্সা চালিয়ে তিনি যা আয় করেন তা দিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকা সম্ভব নয়। তাই তিনি ফুটপাতে থাকতে শুরু করেন।
তিনি বলেন, আমি বিছানায় ঘুমানোর আশা করি। কিন্তু জানি সেটা অনেক দূরের স্বপ্ন। আমি ভালো খাবার আশা করি। কিন্তু সেটাও দু®প্রাপ্য। এসব কিছু না হোক, কমপক্ষে বিশুদ্ধ বায়ুতে নিঃশ্বাস নেবার আশা করতেই পারি। কিন্তু শীতের সময়টাতে সেটাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আপনার আরামদায়ক একটি বাড়ি আছে। আর আমাকে তো সব সময় রাস্তাতেই থাকতে হয়।
সঞ্জয় জানান, পাঁচ বছর আগে তিনি চাকরির খোঁজে বিহার থেকে দিল্লিতে যান।
কিন্তু চাকরি না পেয়ে অবশেষে পেটের দায়ে আর পরিবারের কথা ভেবে রিক্সা চালানো শুরু করেন। রিক্সা চালিয়ে তিনি যা আয় করেন তা দিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকা সম্ভব নয়। তাই তিনি ফুটপাতে থাকতে শুরু করেন।
তিনি বলেন, আমি বিছানায় ঘুমানোর আশা করি। কিন্তু জানি সেটা অনেক দূরের স্বপ্ন। আমি ভালো খাবার আশা করি। কিন্তু সেটাও দু®প্রাপ্য। এসব কিছু না হোক, কমপক্ষে বিশুদ্ধ বায়ুতে নিঃশ্বাস নেবার আশা করতেই পারি। কিন্তু শীতের সময়টাতে সেটাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আপনার আরামদায়ক একটি বাড়ি আছে। আর আমাকে তো সব সময় রাস্তাতেই থাকতে হয়।
দিল্লির বায়ু দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিবছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে পার্শ্ববর্তী রাজ্য পাঞ্জাবের কৃষকরা ফসলি জমি পরিষ্কার করার জন্য আগুন লাগিয়ে দেবার কারণে বায়ু দূষণের মাত্রা আরো খারাপ হয়ে যায়। এছাড়া দিওয়ালিতে বাজি পোড়ানোর কারণে বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস মিশে দূষণ আরো তীব্রতর করে।
সঞ্জয় কুমারের মতো আরো এক রিক্সাচালক জয় চাঁদ যাদব। পশ্চিম বাংলা থেকে সাত বছর আগে দিল্লিতে গেছেন। বলছিলেন, বিরতি নেয়ার কোনো সুযোগ নাই। আমি দিনে ৩০০ রুপি আয় করি। তার কিছু অংশ দিয়ে পরিবারের জন্য খাবার কিনি, আর বাকিটা সঞ্চয় করি। আমার পরিবার আমার উপর নির্ভরশীল। তাই নিঃশ্বাস নিতে যত কষ্টই হোক না কেন, কাজ চালিয়ে যেতেই হবে।
তিনি আরো বলেন, আমি মাঝেমধ্যে না খেয়েই রিক্সা চালাই। আমি সেটা কোনোভাবে চালিয়ে নিতে পারি। কিন্তু বায়ুর অবস্থা এতোটাই খারাপ যে, আমার মনে হয় বুকের উপর ৫০ কেজি নিয়ে আমি রিক্সা চালাচ্ছি।
সঞ্জয় কুমার আর জয় চাঁদ যাদবের মতো দিল্লিতে হাজার হাজার রিক্সাচালক রয়েছেন। শীতকালে দিল্লির বায়ু দূষণের মাত্রা গ্রহণযোগ্য মাত্রা থেকে ৩০ গুণ দূষিত হয়ে পড়ে। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রিক্সাচালকরা। রিক্সা চালানোর সময় শ্বাসযন্ত্রে বেশি চাপ পড়ে। এতে করে বাতাসে মিশে থাকা পিএম২.৫ নামের বিষাক্ত ক্ষুদ্র কণা শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করে রক্তে মিশে যায়। এতে করে তাদের শারীরিক পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টও বিষয়টি আমলে নিয়েছে। রায়ু দূষণ স¤পর্কে সম্প্রতি এক শুনানিকালে আদালত সরকারকে বলেছেন, ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়া কোনো সমাধান নয়। রিক্সাচালকদের এটা বলা সম্ভব নয় যে, বাইরে কাজ করতে যাওয়া নিরাপদ নয়। আপনাকে ঘরে থাকতে হবে। এটি খুবই সংকটময় পরিস্থিতি। বিচারক বলেন, যত রিক্সাচালককে আমি দেখেছি, তারা সবাই কাঁশছে অথবা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করছে। কিন্তু এসব কিছুর পরও রিক্সাচালকরা এখনও রাস্তাতেই রয়েছে। কুয়াশাচ্ছন্ন বিষাক্ত বায়ুর মধ্যেই রিক্সা চালাচ্ছে।
No comments