গ্রেপ্তারের আগে নিপুন রায় টকশোতে কি বলেছিলেন
একটি
টকশো ঘিরে আলোচনা সর্বত্র। আর এটি একাত্তর জার্নালের ১৪ই নভেম্বর বুধবার
প্রচারিত। মিথিলা ফারজানার সঞ্চালনায় প্রচারিত টকশোতে অতিথি ছিলেন দুই
সিনিয়র সাংবাদিক জ. ই. মামুন, মুস্তফা ফিরোজ এবং তরুণ রাজনীতিক, বিএনপির
জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী। ১৪ই নভেম্বর বিএনপি
কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষ, পুলিশের
নিষ্ক্রিয়তা, হেলমেট বাহিনীসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে নিপুন রায় চৌধুরী খোলামেলা
কথা বলেন। তার কথায় ওঠে আসে সার্বিক পরিস্থিতি কী ঘটেছিল সেদিন নয়াপল্টনে।
একাত্তর জার্নালের সেই পর্বের অতিথিদের কথোপকথন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা
হলো-
টকশোতে নিপুন রায় চৌধুরীকে উদ্দেশ্যে করে সাংবাদিক জ ই মামুন বলেন- ‘আপনার বা আপনাদের সমস্যা হল শুধু বলে যান। শুনতে চান না।’ জবাবে নিপুন রায় বলেন, ‘আপনারা টিভি ক্যামেরার সামনে মিথ্যাচার করবেন। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন।
আইনকে সরকারের গতিতে চলতে বাধ্য করবেন। আর আমরা চুপ করে বসে থাকব?’
এ সময় জ. ই. মামুন বলেন- ‘আপনারা অবশ্যই গাড়িতে আগুন দেবেন।’ তার কথা কেড়ে নিয়ে নিপুন রায় বলেন, ‘আগুন যে আপনারা দিয়েছেন এই কথাটা আপনি আপনার বক্তব্যের মাধ্যমে বার বার প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। আপনার কাছে কি প্রমাণ আছে যে, বিএনপি পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে? আমার কাছে প্রমাণ আছে হেলমেট বাহিনী, সন্ত্রাস বাহিনী, ছাত্রলীগ-যুবলীগ দিয়ে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’
এসময় জ. ই. মামুন বলেন, ‘আপনিই একটু আগে বলেছেন- কেন সাংবাদিকরা গাড়ি সরিয়ে নিল, টেলিভিশনের গাড়ি সরিয়ে নিল। কিন্তু পুলিশ কেন গাড়ি সরিয়ে নিল না? সরালে তো আগুন দিতাম না।’
জবাবে নিপুন রায় বলেন, ‘এই ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। এই গাড়ি সরাবো না। কাগজপত্র তুলে নিলাম। যে ছেলেটি আগুন দিল তাকে গ্রেপ্তার করা হল না। আগুন যখন দিচ্ছে প্রশাসন তখন তাকিয়ে দেখছে। তারা ঘটনাস্থলে এলো না। এ থেকেই বোঝা যায় এটা পরিকল্পিত। এটা সরকারের বাহিনী দিয়ে ঘটানো হয়েছে।’ নিপুন রায় বলেন, ‘আমি বলিনি সাংবাদিকরা আগুন দিয়েছে। বলেছি সরকারের বাহিনী আগুন দিয়েছে। আপনারা টিভি ক্যামেরার সামনে সরকারের পক্ষ নিয়ে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন। সেটা তো আমরা মেনে নিতে পারব না। আমরা তো নীতি নিয়ে চলি। আমরা জনগণের পক্ষে কাজ করি। জনগণের জন্য বিএনপি রাজনীতি করে। আমাদের নেত্রী, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের মা। তিনি গণতন্ত্রের জন্য, স্বার্বভৌমত্বের জন্য, সরকারের নির্যাতন সহ্য করছেন।’
এ পর্যায়ে জ. ই. মামুন বলেন, ‘আপনার নেত্রীর সম্পর্কে যত ভালো ভালো কথা বলবেন, তত আপনার পদ পদবি ভালো হবে। এই রাজনীতি আমরা জানি। এসব কথা আমাদের বলে লাভ নেই। আপনি অনেকদিন ধরে বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু মূল কথা হচ্ছে বিএনপির রাজনীতি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি না। আমরা আলোচনা করছি একটি ইনসিডেন্ট নিয়ে। সেই ইনসিডেন্টের সময় যে সন্ত্রাসীরা আগুন দিল। সে ছাত্রলীগ না ছাত্রদল নাকি শিবির সেটি আমার জানার কথা না। আপনাদের তো হাজার হাজার লোক ছিল লাঠি নিয়ে। আপনি নিজেও লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আপনারা কেন তাকে ধরতে পারলেন না। নাগরিক হিসেবেও তো একটা দায়িত্ব ছিল দুষ্কৃতকারীকে ধরিয়ে দেয়া। সেই দায়িত্ব কেন আপনি পুলিশের উপর ছেড়ে দিলেন?’
জবাবে নিপুন রায় বলেন, রাস্তার ওই পারে হেলমেট বাহিনীর ছেলেটি গাড়িটি ভাঙতে গিয়েছিল। আমাদের নেতৃবৃন্দ এগিয়ে গিয়েছিল ছেলেটিকে ধরতে। কিন্তু সে সেখান থেকে সরে গিয়েছে। তার পাশেই প্রশাসন। প্রশাসন তাকে প্রটোকল দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে। কেন তাকে সরিয়ে দেয়া হল। কেন আমাকে ওই ছেলেটি বলল দিদি আপনি গাড়িতে লাথি মারেন। দিদি আপনি গাড়িতে আগুন দেয়ার ব্যবস্থা করেন। তার মানে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় কমিটির মেম্বার হিসেবে যদি আমি হঠাৎ কন্ট্রোলের বাইরে গিয়ে আক্রমণ করতাম তাহলে আপনারা প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন এই ঘটনা বিএনপি ঘটিয়েছে। কিন্তু না। আমরা নীতিগত দিক থেকে এতটাই নীতি মেনে চলি। জনগণের জানমাল রক্ষার্থে আমরা এতটাই নীতি মেনে চলি যে, আমরা কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনা।’
এ পর্যায়ে জ. ই. মামুন বলেন- ‘সবাই গাড়ি সরিয়ে নিল। পুলিশের ওই লোক গাড়ি সরিয়ে নিল না। এই কথাটা কেন বললেন?’ জবাবে নিপুন রায় বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসন জানতো আজ আমরা এই গাড়িটা পোড়াবো। এবং বিএনপির উপর তার দায় চাপাবে। যার কারণে তারা গাড়ি সরালো না। এটা তাদের প্রি-প্ল্যান ছিল। এই জন্য সব গাড়ি সরানো হল। ওই গাড়ি কেন সরানো হল না। আমাদের কাছে এমন প্রশ্ন থাকতেই পারে। আমাদের প্রশ্ন থাকতেই পারে কেন ড্রাইভার সামনে এল না। কেন অফিসারকে ফোন করল না।’
জ. ই. মামুন বলেন- ‘আমরা ভিডিও ফুটেজে দেখলাম আপনারা পুলিশের উপরও আক্রমণ করেছেন। ওখানে দায়িত্বরত ওসির (তদন্ত) উপর আপনারা, আপানাদের নেতাকর্মীরা আক্রমণ করেছেন। এই ঘটনা আমরা টেলিভিশনের ক্যামেরায় দেখেছি। সেটা কেন করেছেন?’ এসময় সঞ্চালক বলেন, ‘ওখানে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল যে অন্য সব গাড়ি সরিয়ে নিতে হয়েছে।’ জবাবে নিপুন রায় চৌধুরী বলেন- ‘যখন জলকামান, বুলেট ও চারিদিক থেকে গুলি করা শুরু হল। পুলিশ প্রশাসন থেকে যখন টিয়ারশেল মারা হল। তখন রাস্তার সব গাড়ি উল্টা দিকে ঘুরানো শুরু হল। মিডিয়ার গাড়িগুলো সব সরিয়ে নেয়া হল।’
এ পর্যায়ে জ. ই. মামুন বলেন, ‘পুলিশ তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা কি পলায়নপর মনোবৃত্তি নিয়ে ওখানে যাবে? তারা তো আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যাবে। আপনারা পুলিশের উপরে আক্রমণ করবেন। পুলিশের গাড়িতে আগুন দিবেন। আর পুলিশ ওখান থেকে পালিয়ে যাবে। এটাই কি চাচ্ছিলেন আপনারা।’ জবাবে নিপুন রায় বলেন, ‘আমি সেটাই বলছি। গাড়ি দুটিতে ভাঙচুর করা হল। গাড়িতে আগুন ধরানো হল। পুলিশ কেন নিয়ন্ত্রণ করতে এলো না।’
জ. ই. মামুন বলেন- ‘পুলিশকে আক্রমণ করলেন কেন আপনারা? সেটার উত্তর দেন।’ জবাবে নিপুন রায় বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসকে পাঠানো হল আগুন নেভানোর জন্য। কিন্তু তারা যদি ন্যূন্যতম চেষ্টা তারা করতো তাহলে বুঝে নিতাম। প্রশাসনের মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটানো হয়নি। তার দায়ভার আমরা নিতাম।’
এ পর্যায়ে সঞ্চালক বলেন, ‘তাহলে পুলিশের উপর আক্রমণ কে করেছে?’ জবাবে নিপুন রায় বলেন, ‘যারা হেলমেট বাহিনী তারা।’ এ সময় কথা কেড়ে নিয়ে জ. ই. মামুন বলেন, ‘বিএনপি অফিসের সামনে কি সব আওয়ামী লীগের লোকজন গিয়ে ভিড় করেছিল মনোনয়নের জন্য?’ এসময় নিপুন রায় বলেন, ‘যখন আমার উপর আক্রমণ হল। তখন আমার জীবন রক্ষার জন্য পাল্টা কাউন্টার নেব, এটাই স্বাভাবিক। প্রথম স্টেপ আমাকে নিতেই হবে।’
জ. ই. মামুন প্রশ্ন রেখে বলেন- ‘তাহলে আপনারা জীবন রক্ষার জন্য পুলিশের উপর আক্রমণ করেছিলেন?’ জবাবে নিপুন রায় বলেন, ‘আমরা আক্রমণ করিনি। আক্রমণ করতে যাব কেন? কয়জন পুলিশ আহত হয়েছে সেটা ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে দেখানো হোক। আর কয়জন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছে সেটা কেন আপনারা বলছেন না। এটা তো একবারের জন্য বের হল না বিএনপির এই নেত্রী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বিএনপির ওই নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তার জন্য আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আপনি তো একজন সাংবাদিক হয়ে নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দিলেন।’
এসময় অনুষ্ঠান সঞ্চালক বড় পর্দায় ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে বলেন- ‘দেখা যাচ্ছে একজন পুলিশকে আলাদা করে নিয়ে পেটানো হচ্ছে। একজনকে বেশ ভালোই প্রহার করা হচ্ছে। মিছিল থেকে তাকে দাবড়িয়ে ধরে প্রহার করা হচ্ছে। এই ফুটেজটা আমরা আজকে সারাদিন দেখেছি। এটিএন নিউজে সম্ভবত এই ফুটেজ দেখেছি।’ তার কথা কেড়ে নিয়ে নিপুন রায় বলেন, ‘মিছিলের উপর যখন পুলিশ স্বেচ্ছায় গাড়ি তুলে দিচ্ছিলেন। তখন এই ঘটনা। সব ভিডিও আপনি ফুটেজে পাবেন না। যে ঘটনা তাৎক্ষণিক ঘটেছে। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর ক্যামেরাম্যান এলে তো অন্য ফুটেজ কালেক্ট করছেন। কারণ সে তো জানতো না এখানে কি হচ্ছে।’ এ সময় জ. ই. মামুন বলেন, ‘তাহলে ফুটেজে পাব না। আপনি যা বলবেন সেটাই বিশ্বাস করতে হবে। মিডিয়া তো আপনি যাওয়ার আগে থেকেই ওখানে ছিল।’ তার কথার জবাবে নিপুন রায় বলেন- ‘সরকার উদ্দেশ্য করে যে এই ঘটনা ঘটাবে সেটা তো মিডিয়াকে ইনফর্ম করেনি। তাহলে তো এই ঘটনা ঘটতো না। এই ঘটনা ঘটালো। গাড়ি চাপা দেয়া হল। ঘটনা ঘটার পর মিডিয়া সেই ভিডিওগুলো কালেক্ট করেছে। এখন আগের ঘটনা মিডিয়াতে আসেনি বলে অস্বীকার করবেন সেটা তো ঠিক না।’
এ পর্যায়ে জ. ই. মামুন বলেন, ‘আগের ঘটনাও মিডিয়াতে এসেছে। পুরোটাই মিডিয়াতে এসেছে।’ দ্বিমত প্রকাশ করে নিপুন রায় বলেন- ‘না না। কিভাবে বলেন আপনি? আপনি একতরফা কথা বলছেন। আমার তো মনে হয় আপনি সরকারের একজন পে ভুক্ত। অন্যায়কে যেভাবেই হোক জবর দখল করে স্টাবলিস্ট করতে হবে। বিএনপি এই করেছে। ওই করেছে। সেই দায়িত্ব নিয়েছেন।’ এসময় জ. ই. মামুন বলেন, ‘এখানে স্টাবলিস্ট করার কিছু নেই। এটা অলরেডি স্টাবলিস্ট বাই দ্য ভিডিও ফুটেজ।’
এসময় সঞ্চালক বলেন, ‘আমার মনে হয় এটা ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। উনি উনার মত দিচ্ছেন। উনি যদি মনে করেন এই ঘটনা এভাবে ঘটেছে তাহলে সেটি বলার অধিকার নিশ্চয় উনার আছে।’
অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য।
টকশোতে নিপুন রায় চৌধুরীকে উদ্দেশ্যে করে সাংবাদিক জ ই মামুন বলেন- ‘আপনার বা আপনাদের সমস্যা হল শুধু বলে যান। শুনতে চান না।’ জবাবে নিপুন রায় বলেন, ‘আপনারা টিভি ক্যামেরার সামনে মিথ্যাচার করবেন। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন।
আইনকে সরকারের গতিতে চলতে বাধ্য করবেন। আর আমরা চুপ করে বসে থাকব?’
এ সময় জ. ই. মামুন বলেন- ‘আপনারা অবশ্যই গাড়িতে আগুন দেবেন।’ তার কথা কেড়ে নিয়ে নিপুন রায় বলেন, ‘আগুন যে আপনারা দিয়েছেন এই কথাটা আপনি আপনার বক্তব্যের মাধ্যমে বার বার প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। আপনার কাছে কি প্রমাণ আছে যে, বিএনপি পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে? আমার কাছে প্রমাণ আছে হেলমেট বাহিনী, সন্ত্রাস বাহিনী, ছাত্রলীগ-যুবলীগ দিয়ে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’
এসময় জ. ই. মামুন বলেন, ‘আপনিই একটু আগে বলেছেন- কেন সাংবাদিকরা গাড়ি সরিয়ে নিল, টেলিভিশনের গাড়ি সরিয়ে নিল। কিন্তু পুলিশ কেন গাড়ি সরিয়ে নিল না? সরালে তো আগুন দিতাম না।’
জবাবে নিপুন রায় বলেন, ‘এই ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। এই গাড়ি সরাবো না। কাগজপত্র তুলে নিলাম। যে ছেলেটি আগুন দিল তাকে গ্রেপ্তার করা হল না। আগুন যখন দিচ্ছে প্রশাসন তখন তাকিয়ে দেখছে। তারা ঘটনাস্থলে এলো না। এ থেকেই বোঝা যায় এটা পরিকল্পিত। এটা সরকারের বাহিনী দিয়ে ঘটানো হয়েছে।’ নিপুন রায় বলেন, ‘আমি বলিনি সাংবাদিকরা আগুন দিয়েছে। বলেছি সরকারের বাহিনী আগুন দিয়েছে। আপনারা টিভি ক্যামেরার সামনে সরকারের পক্ষ নিয়ে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন। সেটা তো আমরা মেনে নিতে পারব না। আমরা তো নীতি নিয়ে চলি। আমরা জনগণের পক্ষে কাজ করি। জনগণের জন্য বিএনপি রাজনীতি করে। আমাদের নেত্রী, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের মা। তিনি গণতন্ত্রের জন্য, স্বার্বভৌমত্বের জন্য, সরকারের নির্যাতন সহ্য করছেন।’
এ পর্যায়ে জ. ই. মামুন বলেন, ‘আপনার নেত্রীর সম্পর্কে যত ভালো ভালো কথা বলবেন, তত আপনার পদ পদবি ভালো হবে। এই রাজনীতি আমরা জানি। এসব কথা আমাদের বলে লাভ নেই। আপনি অনেকদিন ধরে বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু মূল কথা হচ্ছে বিএনপির রাজনীতি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি না। আমরা আলোচনা করছি একটি ইনসিডেন্ট নিয়ে। সেই ইনসিডেন্টের সময় যে সন্ত্রাসীরা আগুন দিল। সে ছাত্রলীগ না ছাত্রদল নাকি শিবির সেটি আমার জানার কথা না। আপনাদের তো হাজার হাজার লোক ছিল লাঠি নিয়ে। আপনি নিজেও লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আপনারা কেন তাকে ধরতে পারলেন না। নাগরিক হিসেবেও তো একটা দায়িত্ব ছিল দুষ্কৃতকারীকে ধরিয়ে দেয়া। সেই দায়িত্ব কেন আপনি পুলিশের উপর ছেড়ে দিলেন?’
জবাবে নিপুন রায় বলেন, রাস্তার ওই পারে হেলমেট বাহিনীর ছেলেটি গাড়িটি ভাঙতে গিয়েছিল। আমাদের নেতৃবৃন্দ এগিয়ে গিয়েছিল ছেলেটিকে ধরতে। কিন্তু সে সেখান থেকে সরে গিয়েছে। তার পাশেই প্রশাসন। প্রশাসন তাকে প্রটোকল দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে। কেন তাকে সরিয়ে দেয়া হল। কেন আমাকে ওই ছেলেটি বলল দিদি আপনি গাড়িতে লাথি মারেন। দিদি আপনি গাড়িতে আগুন দেয়ার ব্যবস্থা করেন। তার মানে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় কমিটির মেম্বার হিসেবে যদি আমি হঠাৎ কন্ট্রোলের বাইরে গিয়ে আক্রমণ করতাম তাহলে আপনারা প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন এই ঘটনা বিএনপি ঘটিয়েছে। কিন্তু না। আমরা নীতিগত দিক থেকে এতটাই নীতি মেনে চলি। জনগণের জানমাল রক্ষার্থে আমরা এতটাই নীতি মেনে চলি যে, আমরা কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনা।’
এ পর্যায়ে জ. ই. মামুন বলেন- ‘সবাই গাড়ি সরিয়ে নিল। পুলিশের ওই লোক গাড়ি সরিয়ে নিল না। এই কথাটা কেন বললেন?’ জবাবে নিপুন রায় বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসন জানতো আজ আমরা এই গাড়িটা পোড়াবো। এবং বিএনপির উপর তার দায় চাপাবে। যার কারণে তারা গাড়ি সরালো না। এটা তাদের প্রি-প্ল্যান ছিল। এই জন্য সব গাড়ি সরানো হল। ওই গাড়ি কেন সরানো হল না। আমাদের কাছে এমন প্রশ্ন থাকতেই পারে। আমাদের প্রশ্ন থাকতেই পারে কেন ড্রাইভার সামনে এল না। কেন অফিসারকে ফোন করল না।’
জ. ই. মামুন বলেন- ‘আমরা ভিডিও ফুটেজে দেখলাম আপনারা পুলিশের উপরও আক্রমণ করেছেন। ওখানে দায়িত্বরত ওসির (তদন্ত) উপর আপনারা, আপানাদের নেতাকর্মীরা আক্রমণ করেছেন। এই ঘটনা আমরা টেলিভিশনের ক্যামেরায় দেখেছি। সেটা কেন করেছেন?’ এসময় সঞ্চালক বলেন, ‘ওখানে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল যে অন্য সব গাড়ি সরিয়ে নিতে হয়েছে।’ জবাবে নিপুন রায় চৌধুরী বলেন- ‘যখন জলকামান, বুলেট ও চারিদিক থেকে গুলি করা শুরু হল। পুলিশ প্রশাসন থেকে যখন টিয়ারশেল মারা হল। তখন রাস্তার সব গাড়ি উল্টা দিকে ঘুরানো শুরু হল। মিডিয়ার গাড়িগুলো সব সরিয়ে নেয়া হল।’
এ পর্যায়ে জ. ই. মামুন বলেন, ‘পুলিশ তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা কি পলায়নপর মনোবৃত্তি নিয়ে ওখানে যাবে? তারা তো আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যাবে। আপনারা পুলিশের উপরে আক্রমণ করবেন। পুলিশের গাড়িতে আগুন দিবেন। আর পুলিশ ওখান থেকে পালিয়ে যাবে। এটাই কি চাচ্ছিলেন আপনারা।’ জবাবে নিপুন রায় বলেন, ‘আমি সেটাই বলছি। গাড়ি দুটিতে ভাঙচুর করা হল। গাড়িতে আগুন ধরানো হল। পুলিশ কেন নিয়ন্ত্রণ করতে এলো না।’
জ. ই. মামুন বলেন- ‘পুলিশকে আক্রমণ করলেন কেন আপনারা? সেটার উত্তর দেন।’ জবাবে নিপুন রায় বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসকে পাঠানো হল আগুন নেভানোর জন্য। কিন্তু তারা যদি ন্যূন্যতম চেষ্টা তারা করতো তাহলে বুঝে নিতাম। প্রশাসনের মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটানো হয়নি। তার দায়ভার আমরা নিতাম।’
এ পর্যায়ে সঞ্চালক বলেন, ‘তাহলে পুলিশের উপর আক্রমণ কে করেছে?’ জবাবে নিপুন রায় বলেন, ‘যারা হেলমেট বাহিনী তারা।’ এ সময় কথা কেড়ে নিয়ে জ. ই. মামুন বলেন, ‘বিএনপি অফিসের সামনে কি সব আওয়ামী লীগের লোকজন গিয়ে ভিড় করেছিল মনোনয়নের জন্য?’ এসময় নিপুন রায় বলেন, ‘যখন আমার উপর আক্রমণ হল। তখন আমার জীবন রক্ষার জন্য পাল্টা কাউন্টার নেব, এটাই স্বাভাবিক। প্রথম স্টেপ আমাকে নিতেই হবে।’
জ. ই. মামুন প্রশ্ন রেখে বলেন- ‘তাহলে আপনারা জীবন রক্ষার জন্য পুলিশের উপর আক্রমণ করেছিলেন?’ জবাবে নিপুন রায় বলেন, ‘আমরা আক্রমণ করিনি। আক্রমণ করতে যাব কেন? কয়জন পুলিশ আহত হয়েছে সেটা ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে দেখানো হোক। আর কয়জন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছে সেটা কেন আপনারা বলছেন না। এটা তো একবারের জন্য বের হল না বিএনপির এই নেত্রী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বিএনপির ওই নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তার জন্য আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আপনি তো একজন সাংবাদিক হয়ে নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দিলেন।’
এসময় অনুষ্ঠান সঞ্চালক বড় পর্দায় ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে বলেন- ‘দেখা যাচ্ছে একজন পুলিশকে আলাদা করে নিয়ে পেটানো হচ্ছে। একজনকে বেশ ভালোই প্রহার করা হচ্ছে। মিছিল থেকে তাকে দাবড়িয়ে ধরে প্রহার করা হচ্ছে। এই ফুটেজটা আমরা আজকে সারাদিন দেখেছি। এটিএন নিউজে সম্ভবত এই ফুটেজ দেখেছি।’ তার কথা কেড়ে নিয়ে নিপুন রায় বলেন, ‘মিছিলের উপর যখন পুলিশ স্বেচ্ছায় গাড়ি তুলে দিচ্ছিলেন। তখন এই ঘটনা। সব ভিডিও আপনি ফুটেজে পাবেন না। যে ঘটনা তাৎক্ষণিক ঘটেছে। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর ক্যামেরাম্যান এলে তো অন্য ফুটেজ কালেক্ট করছেন। কারণ সে তো জানতো না এখানে কি হচ্ছে।’ এ সময় জ. ই. মামুন বলেন, ‘তাহলে ফুটেজে পাব না। আপনি যা বলবেন সেটাই বিশ্বাস করতে হবে। মিডিয়া তো আপনি যাওয়ার আগে থেকেই ওখানে ছিল।’ তার কথার জবাবে নিপুন রায় বলেন- ‘সরকার উদ্দেশ্য করে যে এই ঘটনা ঘটাবে সেটা তো মিডিয়াকে ইনফর্ম করেনি। তাহলে তো এই ঘটনা ঘটতো না। এই ঘটনা ঘটালো। গাড়ি চাপা দেয়া হল। ঘটনা ঘটার পর মিডিয়া সেই ভিডিওগুলো কালেক্ট করেছে। এখন আগের ঘটনা মিডিয়াতে আসেনি বলে অস্বীকার করবেন সেটা তো ঠিক না।’
এ পর্যায়ে জ. ই. মামুন বলেন, ‘আগের ঘটনাও মিডিয়াতে এসেছে। পুরোটাই মিডিয়াতে এসেছে।’ দ্বিমত প্রকাশ করে নিপুন রায় বলেন- ‘না না। কিভাবে বলেন আপনি? আপনি একতরফা কথা বলছেন। আমার তো মনে হয় আপনি সরকারের একজন পে ভুক্ত। অন্যায়কে যেভাবেই হোক জবর দখল করে স্টাবলিস্ট করতে হবে। বিএনপি এই করেছে। ওই করেছে। সেই দায়িত্ব নিয়েছেন।’ এসময় জ. ই. মামুন বলেন, ‘এখানে স্টাবলিস্ট করার কিছু নেই। এটা অলরেডি স্টাবলিস্ট বাই দ্য ভিডিও ফুটেজ।’
এসময় সঞ্চালক বলেন, ‘আমার মনে হয় এটা ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। উনি উনার মত দিচ্ছেন। উনি যদি মনে করেন এই ঘটনা এভাবে ঘটেছে তাহলে সেটি বলার অধিকার নিশ্চয় উনার আছে।’
অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য।
No comments