ভারত কি ইসলামী নাম পরিবর্তনে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে?
একটি
স্থানের নামের মধ্যে কি এমন আছে? ভারতের দিকে তাকালে মনে হয় সেখানকার
গ্রাম থেকে শহরগুলোর নাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা
অর্জনের পর থেকে প্রসিদ্ধ শহরগুলোসহ একশ’রও বেশি স্থানের নাম পরিবর্তন করা
হয়েছে দেশটিতে। এরমধ্যে রয়েছে, বম্বে থেকে মুম্বই, ক্যালকাটা থেকে কলকাতা,
মাদ্রাজ থেকে চেন্নাই। বৃটিশ শাসকদের দ্বারা বিকৃত হওয়া নামগুলোকে সংশোধন
করা হয়েছে আবার কখনো ঔপনিবেশিক আমলের নাম বর্জন করা হয়েছে। এর পেছনে অন্যতম
কারণগুলো হচ্ছে আত্মপরিচয় নিয়ে গর্ব, সংস্কৃতি ও ভাষাগত জাতীয়তাবাদ।
বর্তমানে ভারতের ক্ষমতায় রয়েছে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি। নিজের হিন্দু
জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের খুশি করতে তাই দেশটির সরকার রীতিমতো নাম পরিবর্তনের
যুদ্ধে নেমেছেন।
এর শুরু হয় এ বছরের জুলাই মাসে। বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তর প্রদেশের মুঘলসারাই নামের একটি রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় দিনদয়াল উপাধ্যায়া।
এর আগে গত মাসে বিখ্যাত শহর এলাহাবাদের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় প্রায়াগরাজ। হিন্দুদের কাছে স্থানটি পবিত্র হওয়ায় এলাহাবাদ নামটি বিজেপি সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারায়। তবে নাম পরিবর্তনের আসল কারণ হচ্ছে, এলাহাবাদ নামটি ৪৩৫ বছর আগে তৎকালীন মুসলিম শাসকদের রাখা। কিন্তু এত মাত্র শুরু। কট্টরপন্থি হিন্দু ধর্মীয় নেতারা সমপ্রতি ফয়জাবাদ জেলার নাম পরিবর্তন করে অযোধ্যা রেখেছেন। এটি হিন্দুদের দেবতা রামের জন্মভূমি হিসেবে পরিচিত। ১৯৯২ সালে এ অযোধ্যাতেই উগ্রপন্থি হিন্দুরা মুঘল আমলে নির্মিত বাবরি মসজিদ ভেঙেছিল। এর ফলে সমগ্র ভারত জুড়ে ধর্মীয় দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। যাতে নিহত হয় প্রায় ২০০০ মানুষ। বিজেপি সরকার এখন উত্তর প্রদেশের আগ্রা জেলার নামও পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। এখানেই অবস্থিত বিশ্ববিখ্যাত তাজমহল। এ ছাড়াও পাল্টে ফেলা হচ্ছে গুজরাটের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আহমেদাবাদের নামও। এ স্থানগুলোর নাম বদলে আরো হিন্দুবান্ধব নাম রাখার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এ বছরের শুরুতে বিজেপি শাসিত রাজস্থানের তিনটি গ্রামের নামও ইসলামপন্থি হওয়ায় বদলে দেয়া হয়।
নাম পরিবর্তনের বিষয়ে বিজেপি নেতারা বলছেন, নতুন নামগুলো ভারতের হিন্দু শাসনের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে তুলে ধরবে। এতে দেশটির ইসলামী ঐতিহ্য কার্যত হুমকির মুখে পড়েছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গগনপ্রীত সিং এ বিষয়ে বলেন, নাম পরিবর্তনের এ রাজনীতি ঐতিহ্যের রাষ্ট্রীয়করণের মধ্যে নিহিত। ২০১৪ সালে মোদি সরকার মুঘল শাসক আওরঙ্গজেবের নামে থাকা দিল্লির একটি সড়কের নাম বদলে সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আবদুল কালামের নামে নামকরণ করে। কলাম লেখক আতিশ তাসির বলেন, বিজেপি এর মাধ্যমে মুসলিম দেশপ্রেমিকের নাম দিয়ে মুসলিম খলনায়কের নাম মুছে ফেলেছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে ভারতে। নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাস আগে বিজেপির এই নাম পরিবর্তনের খেলাকে অনেকেই দেখছেন ভোট পাওয়ার কৌশল হিসেবে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা মার্চ মাসে পার্লামেন্টে জানান, রেল স্টেশন, শহর ও গ্রামসহ নানা স্থানের নাম পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন রাজ্য থেকে তাদের কাছে ২৭টি প্রস্তাব এসেছে। তবে সব থেকে বেশি আবেদন এসেছে বিজেপি শাসিত রাজস্থান ও হরিয়ানা রাজ্য থেকে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই নানা কারণে শহর ও স্থানের নাম পরিবর্তন করা হয়। তারমধ্যে কিছু কারণে ভারতের সঙ্গেও মিল রয়েছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইসলামী নামগুলোকেই বেছে নেয়ার মাধ্যমে মূলত ভারতের ইতিহাসে মুসলিমদের অস্বীকার করা হচ্ছে। তারা তাদের এ সিদ্ধান্তকে ন্যায্য প্রমাণ করতে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র পাকিস্তানের উদাহরণ দেন। সেখানে প্রায় সকল স্থান ও সড়কের নাম মুসলিম বীর ও ব্যক্তিদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব বলেন, রাজনীতির সব থেকে বড় শিকার হচ্ছে ইতিহাস।
(বিবিসিতে প্রকাশিত সৌতিক বিশ্বাসের কলাম থেকে)
এর শুরু হয় এ বছরের জুলাই মাসে। বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তর প্রদেশের মুঘলসারাই নামের একটি রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় দিনদয়াল উপাধ্যায়া।
এর আগে গত মাসে বিখ্যাত শহর এলাহাবাদের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় প্রায়াগরাজ। হিন্দুদের কাছে স্থানটি পবিত্র হওয়ায় এলাহাবাদ নামটি বিজেপি সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারায়। তবে নাম পরিবর্তনের আসল কারণ হচ্ছে, এলাহাবাদ নামটি ৪৩৫ বছর আগে তৎকালীন মুসলিম শাসকদের রাখা। কিন্তু এত মাত্র শুরু। কট্টরপন্থি হিন্দু ধর্মীয় নেতারা সমপ্রতি ফয়জাবাদ জেলার নাম পরিবর্তন করে অযোধ্যা রেখেছেন। এটি হিন্দুদের দেবতা রামের জন্মভূমি হিসেবে পরিচিত। ১৯৯২ সালে এ অযোধ্যাতেই উগ্রপন্থি হিন্দুরা মুঘল আমলে নির্মিত বাবরি মসজিদ ভেঙেছিল। এর ফলে সমগ্র ভারত জুড়ে ধর্মীয় দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। যাতে নিহত হয় প্রায় ২০০০ মানুষ। বিজেপি সরকার এখন উত্তর প্রদেশের আগ্রা জেলার নামও পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। এখানেই অবস্থিত বিশ্ববিখ্যাত তাজমহল। এ ছাড়াও পাল্টে ফেলা হচ্ছে গুজরাটের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আহমেদাবাদের নামও। এ স্থানগুলোর নাম বদলে আরো হিন্দুবান্ধব নাম রাখার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এ বছরের শুরুতে বিজেপি শাসিত রাজস্থানের তিনটি গ্রামের নামও ইসলামপন্থি হওয়ায় বদলে দেয়া হয়।
নাম পরিবর্তনের বিষয়ে বিজেপি নেতারা বলছেন, নতুন নামগুলো ভারতের হিন্দু শাসনের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে তুলে ধরবে। এতে দেশটির ইসলামী ঐতিহ্য কার্যত হুমকির মুখে পড়েছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গগনপ্রীত সিং এ বিষয়ে বলেন, নাম পরিবর্তনের এ রাজনীতি ঐতিহ্যের রাষ্ট্রীয়করণের মধ্যে নিহিত। ২০১৪ সালে মোদি সরকার মুঘল শাসক আওরঙ্গজেবের নামে থাকা দিল্লির একটি সড়কের নাম বদলে সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আবদুল কালামের নামে নামকরণ করে। কলাম লেখক আতিশ তাসির বলেন, বিজেপি এর মাধ্যমে মুসলিম দেশপ্রেমিকের নাম দিয়ে মুসলিম খলনায়কের নাম মুছে ফেলেছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে ভারতে। নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাস আগে বিজেপির এই নাম পরিবর্তনের খেলাকে অনেকেই দেখছেন ভোট পাওয়ার কৌশল হিসেবে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা মার্চ মাসে পার্লামেন্টে জানান, রেল স্টেশন, শহর ও গ্রামসহ নানা স্থানের নাম পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন রাজ্য থেকে তাদের কাছে ২৭টি প্রস্তাব এসেছে। তবে সব থেকে বেশি আবেদন এসেছে বিজেপি শাসিত রাজস্থান ও হরিয়ানা রাজ্য থেকে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই নানা কারণে শহর ও স্থানের নাম পরিবর্তন করা হয়। তারমধ্যে কিছু কারণে ভারতের সঙ্গেও মিল রয়েছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইসলামী নামগুলোকেই বেছে নেয়ার মাধ্যমে মূলত ভারতের ইতিহাসে মুসলিমদের অস্বীকার করা হচ্ছে। তারা তাদের এ সিদ্ধান্তকে ন্যায্য প্রমাণ করতে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র পাকিস্তানের উদাহরণ দেন। সেখানে প্রায় সকল স্থান ও সড়কের নাম মুসলিম বীর ও ব্যক্তিদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব বলেন, রাজনীতির সব থেকে বড় শিকার হচ্ছে ইতিহাস।
(বিবিসিতে প্রকাশিত সৌতিক বিশ্বাসের কলাম থেকে)
No comments