ইসরাইলকে রক্ষার জন্য ট্রাম্পের 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' পরিকল্পনায় যা আছে: পর্ব-এক
মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে তার বিভিন্ন লক্ষ্য এগিয়ে
নিয়ে যাওয়ার জন্য 'শতাব্দীর সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের
পদক্ষেপ নিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকায় যে সরকারই ক্ষমতায়
এসেছে তাদের সবাইকে ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকট মোকাবেলা করতে হয়েছে এবং এটা ছিল
তাদের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু কেউই এ সংকটের কোনো সুরাহা করতে পারেনি। কারণ আমেরিকা সবসময় ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব অবসানে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করলেও কখনই তারা নিরপেক্ষ ছিল না বরং দখলদার ইসরাইল ও তাদের সমস্ত অপরাধী কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন দিয়ে এসেছে। ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে আমেরিকা এ পর্যন্ত বহু রকমের পরিকল্পনা উত্থাপন করেছে। কিন্তু এসব পরিকল্পনা ঘুরে ফিরে কেবল ইসরাইলি স্বার্থের অনুকূলে হওয়ায় সংকট নিরসনে তা কোনো কাজে আসেনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব নিরসন করা হবে তার সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এ কারণে তিনি 'শতাব্দীর সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেন এবং এর কিছু কিছু ধারা এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জার্ড কুশনার, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত জেইসন গ্রিনবালাত এবং ইসরাইলে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রেডম্যান হচ্ছেন ওই পরিকল্পনার মূল প্রণেতা।
ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে কথিত ‘শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে আমেরিকা। যদিও মার্কিন এ পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ এবং গত সাত মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপ ও কর্মকাণ্ডের আলোকে পরিকল্পনার বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। 'শতাব্দীর সেরা চুক্তি' নামক মার্কিন পরিকল্পনায় ইসরাইল ও ফিলিস্তিন নামে দু'টি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হলেও এর মূল উদ্দেশ্য ভিন্ন। ফিলিস্তিনকে পাশ কাটিয়ে ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করা আমেরিকার প্রধান উদ্দেশ্য। ইসরাইল ও ফিলিস্তিন নামক দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক পরিকল্পনা অনুসারে সংকট নিরসনের চেষ্টা নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা মধ্যপ্রাচ্য আপোষ আলোচনায় এ বিষয়টি সংলাপের শীর্ষে রয়েছে। কিন্তু দুই রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপায় ও এর বহু খুঁটিনাটি বিষয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য থাকার কারণে আজ পর্যন্ত তা সফলতার মুখ দেখেনি।
'শতাব্দীর সেরা চুক্তি' পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাসকে দখলদার ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ডিসেম্বর বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে স্থানান্তর করার ঘোষণা দেন। চলতি বছর মে মাসে দূতাবাস স্থানান্তরের মাধ্যমে তিনি ওই ঘোষণা বাস্তবায়ন করেন। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সাইয়্যেদ হাদি সাইদা আল-ফাকহি এ ব্যাপারে বলেছেন, 'শতাব্দীর সেরা চুক্তি' নামক মার্কিন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
দখলদার ইসরাইলকে রক্ষা করা, বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইহুদিকরণ এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসকে বের করে আনা 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বলেছেন, "শান্তি আলোচনায় বায়তুল মোকাদ্দাস নিয়ে আর কোনো কথাবার্তা হবে না।" এই পরিকল্পনায় আবুদিস এলাকাকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে। ইসরাইলি দৈনিক হারেতয লিখেছে, 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক ট্রাম্পের পরিকল্পনার দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, আমেরিকা চাচ্ছে পূর্ব বায়তুল মোকাদ্দাসে অবস্থিত আবুদিস গ্রামকে ফিলিস্তিনের রাজধানী করা হবে এবং এর আশেপাশে ফিলিস্তিনের তিনটি অথবা পাঁচটি গ্রাম থেকে ইসরাইল সরে যাবে। ১৯৬৭ সালে এসব এলাকা ইসরাইলের দখলে আসে। এ পদক্ষেপের অর্থ হচ্ছে বায়তুল মোকাদ্দাসের প্রাচীন অংশটি ইসরাইলের দখলে থাকবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পরিকল্পনায় ইহুদি উপশহর নির্মাণ বন্ধ কিংবা দখলীকৃত এলাকাগুলো থেকে ইসরাইলের সরে যাওয়ার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি।
'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক ট্রাম্পের পরিকল্পনায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের যে কথা বলা হয়েছে তাতে ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব কোনো সেনাবাহিনী এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র থাকতে পারবে না। এমনকি বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফিলিস্তিনিদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে আসারও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি বরং বলা হয়েছে ফিলিস্তিনিরা যেসব দেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে তারা সেখানেই থাকবে যাতে এর মাধ্যমে ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ পরিকল্পনায় ইহুদি উপশহরগুলো পুরোপুরি ইসরাইলের অধীনে রাখার কথা বলা হয়েছে।
'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক ট্রাম্পের পরিকল্পনা দখলদার ইসরাইলের জন্য অনেক বড় সেবা। ইসরাইলকে রক্ষায় এমন সময় এ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে যখন একদিকে, ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের ৩৩ ও ৫১ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের অপরাজিত হওয়ার দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে অন্যদিকে ইরাক ও সিরিয়ায় দায়েশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আবির্ভাব ঘটেছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ঐতিহাসিক বিজয় ইসরাইলের জন্য অনেক বড় আঘাত। কারণ ইসরাইল দায়েশ সন্ত্রাসীদের প্রধান সহযোগী ও সমর্থক। ইসরাইলের কর্মকর্তারা বহুবার স্বীকার করেছেন, ৩৩ কিংবা ৫১ দিনের যুদ্ধের মতো আর কোনো যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার মতো অবস্থা তাদের নেই। ইসরাইলি কর্মকর্তাদের ধারণা 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে একদিকে তারা সমালোচনার মাত্রা কমিয়ে আনতে পারবে অন্যদিকে এর আগে ইসরাইল-মার্কিন পরিকল্পনাগুলোর ব্যর্থতা পুষিয়ে নিতে পারবে।
এভাবে ফিলিস্তিন সংকটের একটা সমাধান করার পর মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল বিরোধী যেসব প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠেছে সেসবকে দমন বা দুর্বল করা 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক ট্রাম্পের পরিকল্পনার আরেকটি উদ্দেশ্য। গত কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলীর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এখানে দু'টি ধারা গড়ে উঠেছে। একটি হচ্ছে ইসরাইলসহ যেকোনো আগ্রাসী শক্তির সঙ্গে আপোষকামী একটি দল আর অন্যটি হচ্ছে আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকামী দল।
২০১১ সালে আরব দেশগুলোতে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ শুরু হওয়ার পর এবং ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সরকারের পতনের পর এ অঞ্চলে প্রতিরোধ সংগ্রাম জোরদার হয়ে ওঠে। কিন্তু প্রতিরোধ সংগ্রাম যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য দায়েশ সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়া হয়। সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে একদিকে সিরিয়ার ইসরাইল বিরোধী সরকারকে উৎখাত করার এবং অন্যদিকে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়েছে। 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক ট্রাম্পের পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরোধ শক্তিকে ধ্বংস করে দেয়া।
'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক ট্রাম্পের পরিকল্পনার আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে এ অঞ্চলের প্রতিরোধ শক্তি ও ইরানের বিরুদ্ধে আরব ও ইসরাইলকে ঐক্যবদ্ধ করা। দায়েশ সন্ত্রাসীদের দিয়ে প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ইসরাইল ও আরব দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে আমেরিকা। বিষয়টি আগে গোপন থাকলেও এখন প্রকাশ্যে এসেছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিনা সালমান গত মার্চে দখলদার ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
কিন্তু কেউই এ সংকটের কোনো সুরাহা করতে পারেনি। কারণ আমেরিকা সবসময় ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব অবসানে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করলেও কখনই তারা নিরপেক্ষ ছিল না বরং দখলদার ইসরাইল ও তাদের সমস্ত অপরাধী কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন দিয়ে এসেছে। ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে আমেরিকা এ পর্যন্ত বহু রকমের পরিকল্পনা উত্থাপন করেছে। কিন্তু এসব পরিকল্পনা ঘুরে ফিরে কেবল ইসরাইলি স্বার্থের অনুকূলে হওয়ায় সংকট নিরসনে তা কোনো কাজে আসেনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব নিরসন করা হবে তার সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এ কারণে তিনি 'শতাব্দীর সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেন এবং এর কিছু কিছু ধারা এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জার্ড কুশনার, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত জেইসন গ্রিনবালাত এবং ইসরাইলে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রেডম্যান হচ্ছেন ওই পরিকল্পনার মূল প্রণেতা।
ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে কথিত ‘শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে আমেরিকা। যদিও মার্কিন এ পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ এবং গত সাত মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপ ও কর্মকাণ্ডের আলোকে পরিকল্পনার বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। 'শতাব্দীর সেরা চুক্তি' নামক মার্কিন পরিকল্পনায় ইসরাইল ও ফিলিস্তিন নামে দু'টি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হলেও এর মূল উদ্দেশ্য ভিন্ন। ফিলিস্তিনকে পাশ কাটিয়ে ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করা আমেরিকার প্রধান উদ্দেশ্য। ইসরাইল ও ফিলিস্তিন নামক দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক পরিকল্পনা অনুসারে সংকট নিরসনের চেষ্টা নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা মধ্যপ্রাচ্য আপোষ আলোচনায় এ বিষয়টি সংলাপের শীর্ষে রয়েছে। কিন্তু দুই রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপায় ও এর বহু খুঁটিনাটি বিষয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য থাকার কারণে আজ পর্যন্ত তা সফলতার মুখ দেখেনি।
'শতাব্দীর সেরা চুক্তি' পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাসকে দখলদার ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ডিসেম্বর বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে স্থানান্তর করার ঘোষণা দেন। চলতি বছর মে মাসে দূতাবাস স্থানান্তরের মাধ্যমে তিনি ওই ঘোষণা বাস্তবায়ন করেন। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সাইয়্যেদ হাদি সাইদা আল-ফাকহি এ ব্যাপারে বলেছেন, 'শতাব্দীর সেরা চুক্তি' নামক মার্কিন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
দখলদার ইসরাইলকে রক্ষা করা, বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইহুদিকরণ এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসকে বের করে আনা 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বলেছেন, "শান্তি আলোচনায় বায়তুল মোকাদ্দাস নিয়ে আর কোনো কথাবার্তা হবে না।" এই পরিকল্পনায় আবুদিস এলাকাকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে। ইসরাইলি দৈনিক হারেতয লিখেছে, 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক ট্রাম্পের পরিকল্পনার দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, আমেরিকা চাচ্ছে পূর্ব বায়তুল মোকাদ্দাসে অবস্থিত আবুদিস গ্রামকে ফিলিস্তিনের রাজধানী করা হবে এবং এর আশেপাশে ফিলিস্তিনের তিনটি অথবা পাঁচটি গ্রাম থেকে ইসরাইল সরে যাবে। ১৯৬৭ সালে এসব এলাকা ইসরাইলের দখলে আসে। এ পদক্ষেপের অর্থ হচ্ছে বায়তুল মোকাদ্দাসের প্রাচীন অংশটি ইসরাইলের দখলে থাকবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পরিকল্পনায় ইহুদি উপশহর নির্মাণ বন্ধ কিংবা দখলীকৃত এলাকাগুলো থেকে ইসরাইলের সরে যাওয়ার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি।
'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক ট্রাম্পের পরিকল্পনায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের যে কথা বলা হয়েছে তাতে ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব কোনো সেনাবাহিনী এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র থাকতে পারবে না। এমনকি বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফিলিস্তিনিদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে আসারও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি বরং বলা হয়েছে ফিলিস্তিনিরা যেসব দেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে তারা সেখানেই থাকবে যাতে এর মাধ্যমে ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ পরিকল্পনায় ইহুদি উপশহরগুলো পুরোপুরি ইসরাইলের অধীনে রাখার কথা বলা হয়েছে।
'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক ট্রাম্পের পরিকল্পনা দখলদার ইসরাইলের জন্য অনেক বড় সেবা। ইসরাইলকে রক্ষায় এমন সময় এ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে যখন একদিকে, ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের ৩৩ ও ৫১ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের অপরাজিত হওয়ার দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে অন্যদিকে ইরাক ও সিরিয়ায় দায়েশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আবির্ভাব ঘটেছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ঐতিহাসিক বিজয় ইসরাইলের জন্য অনেক বড় আঘাত। কারণ ইসরাইল দায়েশ সন্ত্রাসীদের প্রধান সহযোগী ও সমর্থক। ইসরাইলের কর্মকর্তারা বহুবার স্বীকার করেছেন, ৩৩ কিংবা ৫১ দিনের যুদ্ধের মতো আর কোনো যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার মতো অবস্থা তাদের নেই। ইসরাইলি কর্মকর্তাদের ধারণা 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে একদিকে তারা সমালোচনার মাত্রা কমিয়ে আনতে পারবে অন্যদিকে এর আগে ইসরাইল-মার্কিন পরিকল্পনাগুলোর ব্যর্থতা পুষিয়ে নিতে পারবে।
এভাবে ফিলিস্তিন সংকটের একটা সমাধান করার পর মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল বিরোধী যেসব প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠেছে সেসবকে দমন বা দুর্বল করা 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক ট্রাম্পের পরিকল্পনার আরেকটি উদ্দেশ্য। গত কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলীর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এখানে দু'টি ধারা গড়ে উঠেছে। একটি হচ্ছে ইসরাইলসহ যেকোনো আগ্রাসী শক্তির সঙ্গে আপোষকামী একটি দল আর অন্যটি হচ্ছে আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকামী দল।
২০১১ সালে আরব দেশগুলোতে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ শুরু হওয়ার পর এবং ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সরকারের পতনের পর এ অঞ্চলে প্রতিরোধ সংগ্রাম জোরদার হয়ে ওঠে। কিন্তু প্রতিরোধ সংগ্রাম যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য দায়েশ সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়া হয়। সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে একদিকে সিরিয়ার ইসরাইল বিরোধী সরকারকে উৎখাত করার এবং অন্যদিকে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়েছে। 'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক ট্রাম্পের পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরোধ শক্তিকে ধ্বংস করে দেয়া।
'শতাব্দির সেরা চুক্তি' নামক ট্রাম্পের পরিকল্পনার আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে এ অঞ্চলের প্রতিরোধ শক্তি ও ইরানের বিরুদ্ধে আরব ও ইসরাইলকে ঐক্যবদ্ধ করা। দায়েশ সন্ত্রাসীদের দিয়ে প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ইসরাইল ও আরব দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে আমেরিকা। বিষয়টি আগে গোপন থাকলেও এখন প্রকাশ্যে এসেছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিনা সালমান গত মার্চে দখলদার ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
No comments