কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ইমরান by আব্বাস নাসির
পাকিস্তানের
নির্বাচনে এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান তেহ্রিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। নতুন শাসক দল
হিসেবে পিটিআই বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সর্বপ্রথমেদলটির প্রধান
ইমরান খান বিরোধীদলীয় নেতা থেকে রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হবেন। যেসব রাজনৈতিক দল
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে তাদের শান্ত করার জন্য ইমরান খানকে একটি
কৌশল বের করতে হবে।
২৬শে জুলাই দেয়া ভাষণে ইমরান খান বিরোধীদের প্রতি সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, যেসব আসনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সেগুলো তদন্ত করে দেখা হবে। তিনি অঙ্গীকার করেছেন, এতে কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থাকবে না। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো মজবুত করা হবে যেন এগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। তিনি নিঃস্বার্থ ব্যক্তিত্বের নজির স্থাপন করার কথা বলেন। দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠন করার জন্য তিনি নিজেকে জবাবদিহি করার কথা বলেন। তিনি এমন পরিকল্পনা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন, যা গরিবদের দারিদ্র্যতার ফাঁদ থেকে টেনে তুলবে। এছাড়া, তিনি সকল প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার কথা বলেন।
বিরোধী দলগুলো ইমরান খানের এসব সম্প্রীতির বার্তা মানবে কি-না তা দ্রুতই পরিষ্কার হবে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে তারা অন্তত ভোট পুনর্গণনার দাবি তুলতে পারে। পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এর জ্যেষ্ঠ নেতা মুসাহিদ হুসেইন বলেন, এটা ছিল সবচেয়ে জঘন্য নির্বাচন। দলের হতাশাজনক ফলাফলের প্রেক্ষিতে তিনি প্রাথমিকভাবে এই মন্তব্য করেন। বহিষ্কৃৃত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাই ও পিএমএল-এন দলের বর্তমান সভাপতি শাহবাজ শরীফ নির্বাচনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এভাবে, ‘এমনকি আমার মতো শান্তিবাদী মানুষের কাছেও এটা (অনিয়ম) অনেক বেশি হয়ে গেছে। আমরা এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি।’
শাহবাজ শরীফ নিজেকে শান্তিবাদী আখ্যা দিয়েছেন। তার বড় ভাই নওয়াজ শরীফ বেসামরিক প্রশাসনে হস্তক্ষেপ ও জঙ্গিগোষ্ঠীদের পৃষ্ঠপোষকতা করার কারণে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু শাহবাজ শরীফ দীর্ঘদিন ধরেই বড় ভাইয়ের এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছেন।
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পাকিস্তান পিপল্স পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনের দিন চূড়ান্ত ভোট গণনার সময় তাদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। শেষ মুহূর্তে এসে ফল পরিবর্তনের এটাই মোক্ষম সময় বলে ধরা হচ্ছে। দুঃখজনক বিষয় হলো- সবাই এজন্য সেনাবাহিনীর প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, কিন্তু কেউ নাম উল্লেখ করেননি।
নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আট ঘণ্টার মধ্যে ফল প্রকাশের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু ফল ঘোষণায় বিলম্ব করার কারণে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। আপাত দৃষ্টিতে ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচন কশিনের রেজাল্ট ট্রান্সমিশন সার্ভিস (আরটিএস) বিকল হয়ে পড়ে। যার কারণে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণায় বিলম্ব হয়।
যা হোক, পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতা শাহ মেহমুদ কোরেশী এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি নিজের দলের বিজয়কে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফল হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভোটাররা যে দায়িত্ব দিয়েছে, পিটিআই তা বহন করতে প্রস্তুত। বাস্তবেই পাকিস্তানের সাবেক তারকা ক্রিকেটার ও ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক ইমরান খান যখন নতুন প্রধানমন্ত্রী হবেন, তখন তাকে বিরাট বোঝা বহন করতে হবে। প্রথমেই তাকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বলা হচ্ছে, নির্বাচনী প্রচারণাকালীন সময়ে সেনাবাহিনী তার দলের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর অধঃস্তন অংশীদার শাসক হিসেবে আবির্ভূত না হয়ে তাকে নিজের বিশ্বস্ততা ধরে রাখতে হবে। তাকে দেখাতে হবে যে, দেশের নির্বাচিত বেসামরিক নেতা হিসেবে তিনিই প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। এখন পর্যন্ত তিনি ভালোভাবেই দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবার তাকে দেখাতে হবে যে, একটি বিভক্ত দেশের নেতা হওয়ার সক্ষমতাও তার আছে।
নির্বাচনের ফলাফলে বিরোধী দলগুলো কতটা কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায় তার ওপর আগামী সময়ের বেশির ভাগ উন্নয়ন নির্ভর করছে। যদি তাদের প্রতিক্রিয়া সংবাদ সম্মেলনেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং রাজনীতিবিদরা সংসদীয় রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন, তাহলে নতুন প্রধানমন্ত্রী তার সুবিশাল সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর নজর দিতে সক্ষম হবেন।
আর বিরোধী দলগুলো যদি নির্বাচনের ফলাফল চ্যালেঞ্জ জানায়, যেমনটি ইমরান ২০১৩ সালের নির্বাচনে করেছিলেন, তাহলে নতুন সরকারকে নাকাল হতে হবে। পরবর্তীতে সৃষ্টি হওয়া অস্থিতীশীল পরিস্থিতিতে সরকারে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ব্যাহত হবে। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আর সেনা সদর দপ্তর নিয়ে ইমরান খানের এমন কোনো ভয় নেই, যা তার পূর্বসূরিদের ছিল। নওয়াজ শরীফ ও তার মেয়ে মরিয়মকে জেলে রেখে শাহবাজ শরীফের নেতৃত্বে পিএমএল-এন, অন্যদিকে কয়েকটি মামলা নিয়ে পিপিপি’র নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো ও তার পরিবারের রাজপথে নামার সম্ভাবনা কম।
কিন্তু দেশে যদি পুরোপুরি স্থীতিশীল পরিবেশও বজায় থাকে, তারপরেও নতুন সরকারকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তালেবান সমস্যাসহ বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। পাকিস্তানের মাটিতে আফগানিস্তানের তালেবানরা আশ্রয় নেয়ার কারণে ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের প্রতি বেশ কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলিয়ে নির্যাতিত কাশ্মিরীদের মুক্তি দেয়ার জন্য দিল্লির সঙ্গে সমঝোতার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এছাড়া, নতুন সরকারকে সীমান্তবর্তী চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে চীনের বিনিয়োগ ধরে রাখতে হবে। এছাড়াও সরকারকে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) ‘গ্রে-লিস্ট’ থেকে পাকিস্তানের নাম বাদ দেয়ার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠী পাকিস্তানের ব্যাংক ব্যবস্থা ব্যবহার করতে সক্ষম এমন অভিযোগে সম্প্রতি এফএটিএফ পাকিস্তানকে তাদের ‘গ্রে-লিস্টে’ অন্তর্ভুক্ত করে।
ইমরান খান তার ‘নয়া পাকিস্তানের’ প্রচারণার সময় ১ কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির অঙ্গীকার করেছিলেন। পাশাপাশি নির্বাচিত হলে দরিদ্রদের জন্য ৫০ লাখ নতুন ঘর নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি । তিনি দাবি করেন, সম্পদশালী প্রবাসীরা এজন্য বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশের নির্বাচিত নেতা হিসেবে তাকে এখন সব অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে।
সমালোচকরা দাবি করে, তিনি ‘জেনারেল ইলেকশেনের’ পরিবর্তে ‘জেনারেল’স সিলেকশনে’ জিতেছেন। তাকে এসব সমালোচকদেরও মোকাবেলা করতে হবে। এক্ষেত্রে বিজয়ী ভাষণে দেয়া প্রতিজ্ঞাগুলো তার বাস্তবায়ন করা উচিত। যেসব আসন বিরোধী দলগুলো তাদের থেকে চুরি করে নেয়ার দাবি তুলেছে, সেখানে ভোট গণনা করার নির্দেশ দেয়া উচিত। গণমাধ্যমের ওপর চাপ কমানোর জন্য সেনাবাহিনীকে রাজি করানোর বিষয়টিও তাকে সাহায্য করতে পারে।
তবে তিনি যাই করুন না কেন, এটা পরিষ্কার যে, ২৫শে জুলাইয়ের সাধারণ নির্বাচন পাকিস্তানের অস্থীতিশীল রাজনীতিতে তুলনামূলক শান্ত পরিস্থিতি বয়ে আনবে না।
(আব্বাস নাসির পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন এর সাবেক সম্পাদক)
২৬শে জুলাই দেয়া ভাষণে ইমরান খান বিরোধীদের প্রতি সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, যেসব আসনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সেগুলো তদন্ত করে দেখা হবে। তিনি অঙ্গীকার করেছেন, এতে কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থাকবে না। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো মজবুত করা হবে যেন এগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। তিনি নিঃস্বার্থ ব্যক্তিত্বের নজির স্থাপন করার কথা বলেন। দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠন করার জন্য তিনি নিজেকে জবাবদিহি করার কথা বলেন। তিনি এমন পরিকল্পনা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন, যা গরিবদের দারিদ্র্যতার ফাঁদ থেকে টেনে তুলবে। এছাড়া, তিনি সকল প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার কথা বলেন।
বিরোধী দলগুলো ইমরান খানের এসব সম্প্রীতির বার্তা মানবে কি-না তা দ্রুতই পরিষ্কার হবে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে তারা অন্তত ভোট পুনর্গণনার দাবি তুলতে পারে। পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এর জ্যেষ্ঠ নেতা মুসাহিদ হুসেইন বলেন, এটা ছিল সবচেয়ে জঘন্য নির্বাচন। দলের হতাশাজনক ফলাফলের প্রেক্ষিতে তিনি প্রাথমিকভাবে এই মন্তব্য করেন। বহিষ্কৃৃত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাই ও পিএমএল-এন দলের বর্তমান সভাপতি শাহবাজ শরীফ নির্বাচনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এভাবে, ‘এমনকি আমার মতো শান্তিবাদী মানুষের কাছেও এটা (অনিয়ম) অনেক বেশি হয়ে গেছে। আমরা এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি।’
শাহবাজ শরীফ নিজেকে শান্তিবাদী আখ্যা দিয়েছেন। তার বড় ভাই নওয়াজ শরীফ বেসামরিক প্রশাসনে হস্তক্ষেপ ও জঙ্গিগোষ্ঠীদের পৃষ্ঠপোষকতা করার কারণে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু শাহবাজ শরীফ দীর্ঘদিন ধরেই বড় ভাইয়ের এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছেন।
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পাকিস্তান পিপল্স পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনের দিন চূড়ান্ত ভোট গণনার সময় তাদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। শেষ মুহূর্তে এসে ফল পরিবর্তনের এটাই মোক্ষম সময় বলে ধরা হচ্ছে। দুঃখজনক বিষয় হলো- সবাই এজন্য সেনাবাহিনীর প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, কিন্তু কেউ নাম উল্লেখ করেননি।
নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আট ঘণ্টার মধ্যে ফল প্রকাশের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু ফল ঘোষণায় বিলম্ব করার কারণে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। আপাত দৃষ্টিতে ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচন কশিনের রেজাল্ট ট্রান্সমিশন সার্ভিস (আরটিএস) বিকল হয়ে পড়ে। যার কারণে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণায় বিলম্ব হয়।
যা হোক, পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতা শাহ মেহমুদ কোরেশী এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি নিজের দলের বিজয়কে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফল হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভোটাররা যে দায়িত্ব দিয়েছে, পিটিআই তা বহন করতে প্রস্তুত। বাস্তবেই পাকিস্তানের সাবেক তারকা ক্রিকেটার ও ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক ইমরান খান যখন নতুন প্রধানমন্ত্রী হবেন, তখন তাকে বিরাট বোঝা বহন করতে হবে। প্রথমেই তাকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বলা হচ্ছে, নির্বাচনী প্রচারণাকালীন সময়ে সেনাবাহিনী তার দলের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর অধঃস্তন অংশীদার শাসক হিসেবে আবির্ভূত না হয়ে তাকে নিজের বিশ্বস্ততা ধরে রাখতে হবে। তাকে দেখাতে হবে যে, দেশের নির্বাচিত বেসামরিক নেতা হিসেবে তিনিই প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। এখন পর্যন্ত তিনি ভালোভাবেই দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবার তাকে দেখাতে হবে যে, একটি বিভক্ত দেশের নেতা হওয়ার সক্ষমতাও তার আছে।
নির্বাচনের ফলাফলে বিরোধী দলগুলো কতটা কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায় তার ওপর আগামী সময়ের বেশির ভাগ উন্নয়ন নির্ভর করছে। যদি তাদের প্রতিক্রিয়া সংবাদ সম্মেলনেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং রাজনীতিবিদরা সংসদীয় রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন, তাহলে নতুন প্রধানমন্ত্রী তার সুবিশাল সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর নজর দিতে সক্ষম হবেন।
আর বিরোধী দলগুলো যদি নির্বাচনের ফলাফল চ্যালেঞ্জ জানায়, যেমনটি ইমরান ২০১৩ সালের নির্বাচনে করেছিলেন, তাহলে নতুন সরকারকে নাকাল হতে হবে। পরবর্তীতে সৃষ্টি হওয়া অস্থিতীশীল পরিস্থিতিতে সরকারে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ব্যাহত হবে। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আর সেনা সদর দপ্তর নিয়ে ইমরান খানের এমন কোনো ভয় নেই, যা তার পূর্বসূরিদের ছিল। নওয়াজ শরীফ ও তার মেয়ে মরিয়মকে জেলে রেখে শাহবাজ শরীফের নেতৃত্বে পিএমএল-এন, অন্যদিকে কয়েকটি মামলা নিয়ে পিপিপি’র নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো ও তার পরিবারের রাজপথে নামার সম্ভাবনা কম।
কিন্তু দেশে যদি পুরোপুরি স্থীতিশীল পরিবেশও বজায় থাকে, তারপরেও নতুন সরকারকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তালেবান সমস্যাসহ বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। পাকিস্তানের মাটিতে আফগানিস্তানের তালেবানরা আশ্রয় নেয়ার কারণে ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের প্রতি বেশ কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলিয়ে নির্যাতিত কাশ্মিরীদের মুক্তি দেয়ার জন্য দিল্লির সঙ্গে সমঝোতার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এছাড়া, নতুন সরকারকে সীমান্তবর্তী চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে চীনের বিনিয়োগ ধরে রাখতে হবে। এছাড়াও সরকারকে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) ‘গ্রে-লিস্ট’ থেকে পাকিস্তানের নাম বাদ দেয়ার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠী পাকিস্তানের ব্যাংক ব্যবস্থা ব্যবহার করতে সক্ষম এমন অভিযোগে সম্প্রতি এফএটিএফ পাকিস্তানকে তাদের ‘গ্রে-লিস্টে’ অন্তর্ভুক্ত করে।
ইমরান খান তার ‘নয়া পাকিস্তানের’ প্রচারণার সময় ১ কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির অঙ্গীকার করেছিলেন। পাশাপাশি নির্বাচিত হলে দরিদ্রদের জন্য ৫০ লাখ নতুন ঘর নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি । তিনি দাবি করেন, সম্পদশালী প্রবাসীরা এজন্য বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশের নির্বাচিত নেতা হিসেবে তাকে এখন সব অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে।
সমালোচকরা দাবি করে, তিনি ‘জেনারেল ইলেকশেনের’ পরিবর্তে ‘জেনারেল’স সিলেকশনে’ জিতেছেন। তাকে এসব সমালোচকদেরও মোকাবেলা করতে হবে। এক্ষেত্রে বিজয়ী ভাষণে দেয়া প্রতিজ্ঞাগুলো তার বাস্তবায়ন করা উচিত। যেসব আসন বিরোধী দলগুলো তাদের থেকে চুরি করে নেয়ার দাবি তুলেছে, সেখানে ভোট গণনা করার নির্দেশ দেয়া উচিত। গণমাধ্যমের ওপর চাপ কমানোর জন্য সেনাবাহিনীকে রাজি করানোর বিষয়টিও তাকে সাহায্য করতে পারে।
তবে তিনি যাই করুন না কেন, এটা পরিষ্কার যে, ২৫শে জুলাইয়ের সাধারণ নির্বাচন পাকিস্তানের অস্থীতিশীল রাজনীতিতে তুলনামূলক শান্ত পরিস্থিতি বয়ে আনবে না।
(আব্বাস নাসির পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন এর সাবেক সম্পাদক)
No comments