ফুটবল ভক্ত ছিলেন ফারাজ স্মৃতিকাতর পরিবার by মরিয়ম চম্পা
মা-ভাইয়ের সঙ্গে ফারাজ। ছবিটি এখন কেবলই স্মৃতি |
ফুটবলের
ভক্ত ছিলেন গুলশানের হলি আর্টিজান হামলায় নিহত ফারাজ আইয়াজ হোসেন। চলতি
বছরেই আমেরিকার বিখ্যাত এমোরি ইউনিভার্সিটির বিজনেস কোর্স থেকে গ্র্যাজুয়েট
হওয়ার কথা ছিল তার। ফারাজের বড় ভাই যারেফ হোসেন বলেন, আমার মা সিমিন
হোসেনের কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে এ বছর গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে কাজে জয়েন করতেন
আমাদের ‘ছটু’ (ফারাজ)। আম্মু একদমই ভালো নেই। ফারাজ চলে যাওয়ার পর আম্মু
ধর্ম-কর্ম নিয়ে ব্যস্ত। প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে তিনি ফারাজকে স্মরণ করেন।
তবে এতো কষ্টের মধ্যেও আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে এমোরি স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বছর তাদের গ্রাজুয়েশন কোর্সে নিজেদের গ্র্যাজুয়েট স্কলার হিসেবে ফারাজকে যুক্ত করেছে। প্রয়াত শিক্ষার্থীকে ভোলেনি যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠানে। গ্র্যাজুয়েশনের সময় যে একটা বুকলেট তারা রিলিজ করে সেটাতেও তারা ফারাজের নাম যুক্ত করেছে। এছাড়া বিখ্যাত গস ভোটেড বিজনেস স্কুল এই বছর প্রথমবারের মতো একটি অ্যাওয়ার্ড ইনস্টিটিউট ঘোষণা করেছে। যার নাম দিয়েছে তারা “ফারাজ হোসেন কোর ভ্যালিউজ অ্যাওয়ার্ড”। ফারাজ যে সেক্রিফাইজ করেছে, হিউম্যানিটি দেখিয়েছে, তার স্মৃতি স্মরণ করতেই এই অ্যাওয়ার্ড। আর প্রথমবারের মতো পুরস্কারটি পেয়েছেন ভারতের গুরবানি সিং নামের এক শিক্ষার্থী। যিনি গস-এর টপ লিডিং ও এমোরি ইউনোভার্সিটির স্টুডেন্ট বডির প্রেসিডেন্ট।
ছোট ভাই ফারাজের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে যারেফ আরো বলেন, আমাদের দুই ভাইয়ের এমন কোনো বিষয় নেই যেটা আম্মু জানতেন না। ফারাজ, আমি আর মা সিমিন ছিলাম ভালো বন্ধু। তার পরেও ওর সঙ্গে একটি স্মৃতিময় বিষয় আজ শেয়ার করতে চাই। ফারাজ বরাবরই ইংল্যান্ডের নাম করা ফুটবল ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলো। বছর কয়েক আগে ফারাজ, যারেফ ও তাদের মা সিমিন হোসেন একত্রে বিখ্যাত ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যান। স্টেডিয়ামে খেলা দেখা শেষে ট্রেন স্টেশনে এসেই ফারাজ কান্না শুরু করে। কেন কান্না করছে জানতে চাইলে ফারাজ জানায়, এটা তার এতো প্রিয় একটি ক্লাব যে ওটা ছেড়ে চলে যেতে ওর খুব খারাপ লাগছে। ফারাজ ও যারেফ একই রুমে বেড শেয়ার করে থাকতেন। একদিন গভীর রাতে দুই ভাই একত্রে এফএ কাপ ফাইনাল খেলা দেখছিলেন। যেটা খুব বড় খেলা ছিল। ওই ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড প্রথমে ১ গোলে হারতে যাচ্ছিল।
তখন ফারাজ খুব চিৎকার করে বলছিল ‘অসম্ভব বলে কিছু নেই’। পরবর্তীতে খেলাটা ড্র হয় এবং শেষ মুহূর্তে ম্যানচেস্টার ২-১ গোলে জিতে যায়। সে তখন উত্তেজিত হয়ে আবারো চিৎকার করে বলে, ভাইয়া আমি বলেছিলাম না, ইম্পসিবল বলে কিছু নেই’। ফারাজ সবসময় ইংল্যান্ডকে সাপোর্ট করতো। ফারাজের প্রিয় দল ইংল্যান্ড এ বছর ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপ ফুটবলে সেকেন্ড রাউন্ডে আছে। চলতি বছর মাস দুয়েক আগে যারেফ ও তার মা সিমিন ফারাজের স্মৃতি স্মরণ করতে ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামে গিয়েছিল খেলা দেখতে। ওখানে তারা খেলা দেখার একপর্যায়ে দেখতে পায় স্টেডিয়ামের একটা জায়গায় ঠিক ফারাজের বলা কথাটি লেখা রয়েছে, অসাধ্য বলে কোনো কিছুই নাই’। কোনো বিষয়ে হাল ছাড়ার পাত্র ছিল না সে। ঠিক একই ভাবে তার এই চরিত্রের পরিচয় দিয়েছিল হলি আর্টিজান হামলার সময়। যখন তার বন্ধুদের রেখে ফারাজকে বেরিয়ে যেতে বলেছিল আততায়ীরা। তখন সে বলেছিল নো, যখন আমার বন্ধুকে ছাড়া হবে ঠিক তখনই আমি যাবো। ঘটনার দিন রাতে ফারাজের মা বড় ছেলে যারেফকে বলেছিল, আমি নিশ্চিত যে ফারাজ কিছুতেই বের হবে না। সত্যি সেই ডায়হার্ড ফারাজ বন্ধুদের ছাড়া বের হয়নি।
চলতি বছর মার্চে ফারাজকে প্রথম রাইচাস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইতালির বেনভেন্তোর রুম্মো হাইস্কুল। স্কুল প্রাঙ্গণের গার্ডেন অব রাইচাসে (ন্যায়নিষ্ঠদের জন্য স্মৃতি উদ্যান) ফারাজের নামে একটি গাছ লাগানো হয়েছে। ইউরোপিয়ান ডে অব দ্য রাইচাস উপলক্ষে ৬ মার্চ এ গাছ লাগানো হয়। ২০১৬ সালে মার্চে মুম্বইয়ের বিমানবন্দরের কাছে পাঁচতারা জে ডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেলের প্রধান হলের মঞ্চে ফারাজের মায়ের হাতে ছেলের সম্মাননা তুলে দিয়েছেন আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও সিস্টার প্র্যাকসি।
এই প্রথম বিদেশি কোনো ‘নায়ক’কে মরণোত্তর সম্মান জানালো হারমনি ফাউন্ডেশন। সৃষ্টি হলো সংগঠনের এক নতুন অধ্যায়ের। অমানবিক প্রতিকূলতার মধ্যেও মানবতার প্রমাণ রেখে গেছেন ফারাজ। ফারাজ মরে গেছেন, কিন্তু তিনি সারা পৃথিবীর যুবকদের মাঝে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে বেঁচে থাকবেন।’ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থা ডিসট্রেসড চিলড্রেন অ্যান্ড ইনফ্যান্টস (ডিসিআই) ইন্টারন্যাশনাল আয়োজন করে ‘কনসার্ট ফর চিলড্রেন’-এর। এখানেই ২০১৭ সালের মানবতাবাদী পুরস্কার দেয়া হয় ফারাজ আইয়াজ হোসেনকে।
তবে এতো কষ্টের মধ্যেও আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে এমোরি স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বছর তাদের গ্রাজুয়েশন কোর্সে নিজেদের গ্র্যাজুয়েট স্কলার হিসেবে ফারাজকে যুক্ত করেছে। প্রয়াত শিক্ষার্থীকে ভোলেনি যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠানে। গ্র্যাজুয়েশনের সময় যে একটা বুকলেট তারা রিলিজ করে সেটাতেও তারা ফারাজের নাম যুক্ত করেছে। এছাড়া বিখ্যাত গস ভোটেড বিজনেস স্কুল এই বছর প্রথমবারের মতো একটি অ্যাওয়ার্ড ইনস্টিটিউট ঘোষণা করেছে। যার নাম দিয়েছে তারা “ফারাজ হোসেন কোর ভ্যালিউজ অ্যাওয়ার্ড”। ফারাজ যে সেক্রিফাইজ করেছে, হিউম্যানিটি দেখিয়েছে, তার স্মৃতি স্মরণ করতেই এই অ্যাওয়ার্ড। আর প্রথমবারের মতো পুরস্কারটি পেয়েছেন ভারতের গুরবানি সিং নামের এক শিক্ষার্থী। যিনি গস-এর টপ লিডিং ও এমোরি ইউনোভার্সিটির স্টুডেন্ট বডির প্রেসিডেন্ট।
ছোট ভাই ফারাজের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে যারেফ আরো বলেন, আমাদের দুই ভাইয়ের এমন কোনো বিষয় নেই যেটা আম্মু জানতেন না। ফারাজ, আমি আর মা সিমিন ছিলাম ভালো বন্ধু। তার পরেও ওর সঙ্গে একটি স্মৃতিময় বিষয় আজ শেয়ার করতে চাই। ফারাজ বরাবরই ইংল্যান্ডের নাম করা ফুটবল ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলো। বছর কয়েক আগে ফারাজ, যারেফ ও তাদের মা সিমিন হোসেন একত্রে বিখ্যাত ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যান। স্টেডিয়ামে খেলা দেখা শেষে ট্রেন স্টেশনে এসেই ফারাজ কান্না শুরু করে। কেন কান্না করছে জানতে চাইলে ফারাজ জানায়, এটা তার এতো প্রিয় একটি ক্লাব যে ওটা ছেড়ে চলে যেতে ওর খুব খারাপ লাগছে। ফারাজ ও যারেফ একই রুমে বেড শেয়ার করে থাকতেন। একদিন গভীর রাতে দুই ভাই একত্রে এফএ কাপ ফাইনাল খেলা দেখছিলেন। যেটা খুব বড় খেলা ছিল। ওই ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড প্রথমে ১ গোলে হারতে যাচ্ছিল।
তখন ফারাজ খুব চিৎকার করে বলছিল ‘অসম্ভব বলে কিছু নেই’। পরবর্তীতে খেলাটা ড্র হয় এবং শেষ মুহূর্তে ম্যানচেস্টার ২-১ গোলে জিতে যায়। সে তখন উত্তেজিত হয়ে আবারো চিৎকার করে বলে, ভাইয়া আমি বলেছিলাম না, ইম্পসিবল বলে কিছু নেই’। ফারাজ সবসময় ইংল্যান্ডকে সাপোর্ট করতো। ফারাজের প্রিয় দল ইংল্যান্ড এ বছর ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপ ফুটবলে সেকেন্ড রাউন্ডে আছে। চলতি বছর মাস দুয়েক আগে যারেফ ও তার মা সিমিন ফারাজের স্মৃতি স্মরণ করতে ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামে গিয়েছিল খেলা দেখতে। ওখানে তারা খেলা দেখার একপর্যায়ে দেখতে পায় স্টেডিয়ামের একটা জায়গায় ঠিক ফারাজের বলা কথাটি লেখা রয়েছে, অসাধ্য বলে কোনো কিছুই নাই’। কোনো বিষয়ে হাল ছাড়ার পাত্র ছিল না সে। ঠিক একই ভাবে তার এই চরিত্রের পরিচয় দিয়েছিল হলি আর্টিজান হামলার সময়। যখন তার বন্ধুদের রেখে ফারাজকে বেরিয়ে যেতে বলেছিল আততায়ীরা। তখন সে বলেছিল নো, যখন আমার বন্ধুকে ছাড়া হবে ঠিক তখনই আমি যাবো। ঘটনার দিন রাতে ফারাজের মা বড় ছেলে যারেফকে বলেছিল, আমি নিশ্চিত যে ফারাজ কিছুতেই বের হবে না। সত্যি সেই ডায়হার্ড ফারাজ বন্ধুদের ছাড়া বের হয়নি।
চলতি বছর মার্চে ফারাজকে প্রথম রাইচাস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইতালির বেনভেন্তোর রুম্মো হাইস্কুল। স্কুল প্রাঙ্গণের গার্ডেন অব রাইচাসে (ন্যায়নিষ্ঠদের জন্য স্মৃতি উদ্যান) ফারাজের নামে একটি গাছ লাগানো হয়েছে। ইউরোপিয়ান ডে অব দ্য রাইচাস উপলক্ষে ৬ মার্চ এ গাছ লাগানো হয়। ২০১৬ সালে মার্চে মুম্বইয়ের বিমানবন্দরের কাছে পাঁচতারা জে ডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেলের প্রধান হলের মঞ্চে ফারাজের মায়ের হাতে ছেলের সম্মাননা তুলে দিয়েছেন আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও সিস্টার প্র্যাকসি।
এই প্রথম বিদেশি কোনো ‘নায়ক’কে মরণোত্তর সম্মান জানালো হারমনি ফাউন্ডেশন। সৃষ্টি হলো সংগঠনের এক নতুন অধ্যায়ের। অমানবিক প্রতিকূলতার মধ্যেও মানবতার প্রমাণ রেখে গেছেন ফারাজ। ফারাজ মরে গেছেন, কিন্তু তিনি সারা পৃথিবীর যুবকদের মাঝে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে বেঁচে থাকবেন।’ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থা ডিসট্রেসড চিলড্রেন অ্যান্ড ইনফ্যান্টস (ডিসিআই) ইন্টারন্যাশনাল আয়োজন করে ‘কনসার্ট ফর চিলড্রেন’-এর। এখানেই ২০১৭ সালের মানবতাবাদী পুরস্কার দেয়া হয় ফারাজ আইয়াজ হোসেনকে।
No comments