‘জিনের বাদশা’ সেজে নারীদের সর্বনাশ by রিপন আনসারী
ভণ্ডপীর
তাহের আলী। মানুষজনের কাছে দীর্ঘদিন ধরে যিনি নিজেকে জিনের বাদশা হিসেবে
জাহির করে আসছেন। আর তার ধোঁকাবাজির কবলে পড়ে নারীদের ইজ্জত, সম্মান, টাকা
পয়সা, গরু-বাছুরসহ সব কিছুই খোয়াচ্ছেন গ্রামের সহজ সরল নিরীহ মানুষজন। এমন
এক ভণ্ডপীরের আবির্ভাব হয়েছে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটবাউর এলাকায়। তবে
তার ভণ্ডামীর গুমর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় গণধোলাই খেয়ে এখন শ্রীঘরই তার ঠিকানা।
তার বাড়ি সদর উপজেলার ভাটবাউর গ্রামে।
সরজমিন সদর উপজেলার দিঘি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা গেল ভণ্ডপীর তাহের আলী (৫৭)কে নিয়ে বসেছে গ্রাম আদালত। এই সালিশে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন অভিযোগকারী নারীকে দেখা গেল। সকাল ১০টার দিকে চরতিল্লি গ্রামের লুৎফর রহমান ও তার স্ত্রী মিতু আক্তারসহ পরিবারের লোকজন হাজির হয়েছেন ভণ্ডপীরের কু-কীর্তি ফাঁস করে দিতে। পরিবারের অভিযোগ এই আদালতেও ভণ্ডপীরের কেরামতি। বিচার প্রার্থী হিসেবে সাক্ষী দিতে আসা ১৯ বছরের গৃহবধূ মিতু আক্তারের ওপর নাকি জিনের বাদশা তাহের পীর ভর করেছে। সুস্থ সবল ওই গৃহবধূ ইউনিয়ন পরিষদের বিচারিক আদালতের একটি চেয়ারে বসে ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ ভণ্ডপীর সেখানে উপস্থিত হন। তখন পীরের চোখ পড়ে ওই নারীর দিকে। তাকে দেখেই ওই নারী সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত এবং ছটফট করতে থাকেন। সুস্থ মানুষ অস্বাভাবিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় গ্রামীণ আদালতে উপস্থিত সকলের ভেতর কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। এ খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সংবাদ কর্মীরা।
এরপর বেরিয়ে আসতে থাকে ভণ্ডপীর তাহের আলীর কু-কীর্তির নানা কথা। তাহের আলীর প্রধান টার্গেট থাকে গ্রামে যাদের বিয়ের পর সন্তান হয় না এমন নারীদের প্রতি।
অভিযোগকারীর একজন হলেন লুৎফর রহমান। গ্রামের খেটে খাওয়া সহজ-সরল যুবক। এই লুৎফরের এক সময় ওই ভণ্ডপীরের প্রতি ছিল গভীর বিশ্বাস। সে সুবাদে তার শিষ্য হয়েছেন। বছর আড়াই হলো লুৎফর রহমান বিয়ে করেন সুন্দরী মিতু আক্তারকে। বিয়ের পর সরল মনে স্ত্রীকে পরিচয় করিয়ে দেন ভণ্ড তাহের আলীর সঙ্গে। এতেই ওই গৃহবধূর দিকে শকুনের দৃষ্টি পড়ে ভণ্ড তাহেরের। লুৎফর রহমান বলেন, আমি খুব বিশ্বাস করতাম তাহের আলী পীর সাহেবকে। আমার স্ত্রীর সন্তান হচ্ছিল না। তখন পীরের কাছে নিয়ে যাই। তখন পীর আমাকে জানিয়ে দিলো তোর স্ত্রী বন্ধ্যা। সে সন্তান লাভ করতে পারবে না। তোর স্ত্রীকে একা আমার কাছে (পীরের) পাঠিয়ে দিবি। তারপর বিষয়টা দেখবো। পীরের কথায় সরল মনে স্ত্রীকে তার কাছে পাঠাই। সেখান থেকে এসে আমার স্ত্রী আমাকে বলে তোমার ওই পীর লোক ভালো না। স্ত্রীর কাছে বিষয়টি জানার চেষ্টা করেন স্বামী লুৎফর রহমান। তার স্ত্রীকে তাহের আলী পীর বলে দেয় তুই কখনোই মা হতে পারবি না। তুই বন্ধ্যা। তবে উপায় একটা আছে। তুই যদি আমার (পীর) সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলিশ তবেই তোর গর্ভে সন্তান আসবে। আর এ কথা যেনো কেউ না জানে। এ কাজটা জিন দ্বারা করতে হবে।
লুৎফর রহমান বলেন, আমার স্ত্রী যখন এসব কথা আমাকে বলে সেদিন থেকে ওই পীরের সঙ্গে আমি কথা বলা এবং তার বাড়িতে আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেই। এতে সে আমার এবং আমার স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সময় কুফরী কালাম দিয়ে আমার স্ত্রীকে অসুস্থ করে তোলে। ওই পীরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে আমি চেয়ারম্যানের আশ্রয় নেই। বিচার চাই তার কাছে। বিচারে সাক্ষী দিতে এসেও আমার স্ত্রীকে কুফরী করে জবান বন্ধ করে দেন এবং মুখ-নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। পরে পুলিশের সহায়তায় স্ত্রীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করি। মিতু আক্তারের মতো গ্রামে আরো বেশ কয়েকজন নারী ওই ভণ্ডপীরের লালসার শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়।
আরেক ভুক্তভোগী সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লীর চর গ্রামের আবদুর রহিমের স্ত্রী হানিফা বেগম। তিনিও চেয়ারম্যানের আদালতে ভণ্ডপীর তাহের আলীর বিচারপ্রার্থী। তার বিষয়টা থানা পুলিশ সংক্রান্ত। হানিফা বলেন, তার স্বামী রহিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা হওয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে রহিমের জামিন করানোর কথা বলে ৩৮ হাজার টাকা নেন পীর তাহের আলী। কিন্তু তার স্বামীর জামিন না করিয়ে দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেন।
ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগম বলেন, ভণ্ডপীর আবু তাহের কুফরি কালাম জানেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে সহজ সরল মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেন। কলেজে ভর্তি ও চাকরির কথা বলে মানুষজনের কাছ থেকে টাকা পয়সা নেন। এছাড়া নারীলোভী ওই পীর অনেক নারীর সর্বনাশ করেছে। আমার একটি গরু ও বাছুরকে কুফরি কালাম দিয়ে হত্যা করেছে। দিঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিন মোল্লা বলেন, ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দিঘি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম্য আদালতে ভণ্ডপীরের বিরুদ্ধে বিচারের আয়োজন করা হয়। এতে প্রমাণিত হয় তাহের আলী একজন ভণ্ডপীর। গ্রামের সুন্দরী নারীদের প্রতি তার ছিল লোভ লালসা। এলাকার অনেক নারী তার লালসার শিকার হয়েছে। শুধু তাই নয়, চাকরি, জেল থেকে জামিন, কলেজে ভর্তি, রোগ সারিয়ে দেয়া সহ নানা ভাবে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা পয়সা ও নারীদের ইজ্জত লুটে নিতো। এসব অভিযোগ ফৌজদারি হওয়ায় গ্রাম্য আদালতে বিচারবহির্ভূত। উত্তেজিত এলাকার লোকজন একপর্যায়ে তাই ওই ভণ্ডপীর তাহেরকে গণপিটুনি দেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে আটক করেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, ঘটনা জানার পর ভণ্ডপীর তাহের আলীকে আটক করে থানায় আনা হয়। এরপর লুৎফর রহমান নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ওই ভণ্ডপীরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। সে এখন জেল হাজতে রয়েছে।
সরজমিন সদর উপজেলার দিঘি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা গেল ভণ্ডপীর তাহের আলী (৫৭)কে নিয়ে বসেছে গ্রাম আদালত। এই সালিশে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন অভিযোগকারী নারীকে দেখা গেল। সকাল ১০টার দিকে চরতিল্লি গ্রামের লুৎফর রহমান ও তার স্ত্রী মিতু আক্তারসহ পরিবারের লোকজন হাজির হয়েছেন ভণ্ডপীরের কু-কীর্তি ফাঁস করে দিতে। পরিবারের অভিযোগ এই আদালতেও ভণ্ডপীরের কেরামতি। বিচার প্রার্থী হিসেবে সাক্ষী দিতে আসা ১৯ বছরের গৃহবধূ মিতু আক্তারের ওপর নাকি জিনের বাদশা তাহের পীর ভর করেছে। সুস্থ সবল ওই গৃহবধূ ইউনিয়ন পরিষদের বিচারিক আদালতের একটি চেয়ারে বসে ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ ভণ্ডপীর সেখানে উপস্থিত হন। তখন পীরের চোখ পড়ে ওই নারীর দিকে। তাকে দেখেই ওই নারী সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত এবং ছটফট করতে থাকেন। সুস্থ মানুষ অস্বাভাবিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় গ্রামীণ আদালতে উপস্থিত সকলের ভেতর কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। এ খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সংবাদ কর্মীরা।
এরপর বেরিয়ে আসতে থাকে ভণ্ডপীর তাহের আলীর কু-কীর্তির নানা কথা। তাহের আলীর প্রধান টার্গেট থাকে গ্রামে যাদের বিয়ের পর সন্তান হয় না এমন নারীদের প্রতি।
অভিযোগকারীর একজন হলেন লুৎফর রহমান। গ্রামের খেটে খাওয়া সহজ-সরল যুবক। এই লুৎফরের এক সময় ওই ভণ্ডপীরের প্রতি ছিল গভীর বিশ্বাস। সে সুবাদে তার শিষ্য হয়েছেন। বছর আড়াই হলো লুৎফর রহমান বিয়ে করেন সুন্দরী মিতু আক্তারকে। বিয়ের পর সরল মনে স্ত্রীকে পরিচয় করিয়ে দেন ভণ্ড তাহের আলীর সঙ্গে। এতেই ওই গৃহবধূর দিকে শকুনের দৃষ্টি পড়ে ভণ্ড তাহেরের। লুৎফর রহমান বলেন, আমি খুব বিশ্বাস করতাম তাহের আলী পীর সাহেবকে। আমার স্ত্রীর সন্তান হচ্ছিল না। তখন পীরের কাছে নিয়ে যাই। তখন পীর আমাকে জানিয়ে দিলো তোর স্ত্রী বন্ধ্যা। সে সন্তান লাভ করতে পারবে না। তোর স্ত্রীকে একা আমার কাছে (পীরের) পাঠিয়ে দিবি। তারপর বিষয়টা দেখবো। পীরের কথায় সরল মনে স্ত্রীকে তার কাছে পাঠাই। সেখান থেকে এসে আমার স্ত্রী আমাকে বলে তোমার ওই পীর লোক ভালো না। স্ত্রীর কাছে বিষয়টি জানার চেষ্টা করেন স্বামী লুৎফর রহমান। তার স্ত্রীকে তাহের আলী পীর বলে দেয় তুই কখনোই মা হতে পারবি না। তুই বন্ধ্যা। তবে উপায় একটা আছে। তুই যদি আমার (পীর) সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলিশ তবেই তোর গর্ভে সন্তান আসবে। আর এ কথা যেনো কেউ না জানে। এ কাজটা জিন দ্বারা করতে হবে।
লুৎফর রহমান বলেন, আমার স্ত্রী যখন এসব কথা আমাকে বলে সেদিন থেকে ওই পীরের সঙ্গে আমি কথা বলা এবং তার বাড়িতে আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেই। এতে সে আমার এবং আমার স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সময় কুফরী কালাম দিয়ে আমার স্ত্রীকে অসুস্থ করে তোলে। ওই পীরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে আমি চেয়ারম্যানের আশ্রয় নেই। বিচার চাই তার কাছে। বিচারে সাক্ষী দিতে এসেও আমার স্ত্রীকে কুফরী করে জবান বন্ধ করে দেন এবং মুখ-নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। পরে পুলিশের সহায়তায় স্ত্রীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করি। মিতু আক্তারের মতো গ্রামে আরো বেশ কয়েকজন নারী ওই ভণ্ডপীরের লালসার শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়।
আরেক ভুক্তভোগী সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লীর চর গ্রামের আবদুর রহিমের স্ত্রী হানিফা বেগম। তিনিও চেয়ারম্যানের আদালতে ভণ্ডপীর তাহের আলীর বিচারপ্রার্থী। তার বিষয়টা থানা পুলিশ সংক্রান্ত। হানিফা বলেন, তার স্বামী রহিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা হওয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে রহিমের জামিন করানোর কথা বলে ৩৮ হাজার টাকা নেন পীর তাহের আলী। কিন্তু তার স্বামীর জামিন না করিয়ে দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেন।
ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগম বলেন, ভণ্ডপীর আবু তাহের কুফরি কালাম জানেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে সহজ সরল মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেন। কলেজে ভর্তি ও চাকরির কথা বলে মানুষজনের কাছ থেকে টাকা পয়সা নেন। এছাড়া নারীলোভী ওই পীর অনেক নারীর সর্বনাশ করেছে। আমার একটি গরু ও বাছুরকে কুফরি কালাম দিয়ে হত্যা করেছে। দিঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিন মোল্লা বলেন, ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দিঘি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম্য আদালতে ভণ্ডপীরের বিরুদ্ধে বিচারের আয়োজন করা হয়। এতে প্রমাণিত হয় তাহের আলী একজন ভণ্ডপীর। গ্রামের সুন্দরী নারীদের প্রতি তার ছিল লোভ লালসা। এলাকার অনেক নারী তার লালসার শিকার হয়েছে। শুধু তাই নয়, চাকরি, জেল থেকে জামিন, কলেজে ভর্তি, রোগ সারিয়ে দেয়া সহ নানা ভাবে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা পয়সা ও নারীদের ইজ্জত লুটে নিতো। এসব অভিযোগ ফৌজদারি হওয়ায় গ্রাম্য আদালতে বিচারবহির্ভূত। উত্তেজিত এলাকার লোকজন একপর্যায়ে তাই ওই ভণ্ডপীর তাহেরকে গণপিটুনি দেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে আটক করেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, ঘটনা জানার পর ভণ্ডপীর তাহের আলীকে আটক করে থানায় আনা হয়। এরপর লুৎফর রহমান নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ওই ভণ্ডপীরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। সে এখন জেল হাজতে রয়েছে।
No comments