বাংলাদেশি ঠেকাতে আসামে ‘খিলঞ্জিয়া বাহিনী’ চান রাজখোয়া-চেটিয়া by রঞ্জন বসু
বছরের
পর বছর ধরে বাংলাদেশে কাটিয়ে যাওয়া অনুপ চেটিয়া বা অরবিন্দ রাজখোয়ার মতো
শীর্ষ আলফা নেতারা এখন সীমান্তে ‘বাংলাদেশি ঠেকানোর জন্য’ সাবেক আলফা
ক্যাডারদের নিয়ে নতুন বাহিনী গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। বাংলা ট্রিবিউন জানতে
পেরেছে, দিল্লিতে আলফার চেটিয়া-রাজখোয়া গোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন যে অংশটির
সঙ্গে ভারত সরকারের শান্তি আলোচনা চলছে, তারাই সেই বৈঠকে এই ‘খিলঞ্জিয়া
বাহিনী’ গড়ার কথা বলেছেন।
অসমিয়া ভাষায় খিলঞ্জিয়া কথাটির অর্থ ‘ভূমিপুত্র’ বা ‘মূলবাসী’। তবে খিলঞ্জিয়া বলতে ঠিক কাদের বোঝানো হবে, তা নিয়ে ওই রাজ্যে প্রচুর বিতর্কও আছে – আর খিলঞ্জিয়া শব্দের সংজ্ঞা নির্ধারণ নিয়েও রয়েছে বহু মতভেদ। তবে আলফার আলোচনাপন্থী নেতারা ভারত সরকারের কাছে যে খিলঞ্জিয়া বাহিনী গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে এককালের দুর্ধর্ষ বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গি সংগঠন আলফার সাবেক ক্যাডারদের ঠাঁই দেওয়ার কথাই বলা হয়েছে।
গত সপ্তাহে শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে দিল্লিতে এসেছিলেন আলফার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা। সেই বৈঠকের পর আলফার সভাপতি অরবিন্দ রাজখোয়া এই প্রতিবেদককে তাদের প্রস্তাবটি বিশদে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই মুহুর্তে আসাম-বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ একটি জ্বলন্ত সমস্যা – এবং বহুদিন ধরেই আসামকে এর ফল ভুগতে হচ্ছে। আমাদের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দুদেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা একটা নতুন মাত্রা পাবে।’
‘ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের দায়িত্ব হল বর্ডারকে নিশ্ছিদ্র রাখার – অথচ তাদের বিরুদ্ধে প্রায়শই অসংখ্য অভিযোগ ওঠে যে তারা ঘুষ নিয়ে বাংলাদেশিদের অবৈধভাবে সীমান্ত পার করিয়ে দেন।’
‘এই কারণেই আমরা খিলঞ্জিয়া বাহিনী গড়ে তুলতে চাই – যারা বিএসএফের পর একটি ‘সেকেন্ড লাইন অব ডিফেন্স’ হিসেবে কাজ করবে, আসামের সীমান্তকে বাড়তি সুরক্ষা যোগাবে’, বলেন অরবিন্দ রাজখোয়া।
আলফার যে সশস্ত্র ক্যাডার বা জঙ্গি সদস্যরা বিগত বছরগুলোতে আত্মসমর্পণ করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন, তাদের নিয়েই এই বাহিনী গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। তবে তারা এটাও জানিয়েছেন, এই খিলঞ্জিয়া বাহিনীতে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র বহনকারী সদস্য থাকবেন না – তারা হবেন নিরস্ত্র, বড়জোর লাঠিসোঁটার মতো হাতিয়ার বহন করবেন।
এর আগে নেপালের মাওবাদী বিদ্রোহীরা যখন আত্মসমর্পণ করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছিলেন, তাদের কাউকে কাউকে সে দেশের সেনাবাহিনীতে চাকরির সুযোগ করে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই সাবেক জঙ্গি বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এভাবে পুনর্বাসন দেওয়ার রেওয়াজ আছে, তাই আলফা নেতারা এই দাবির মধ্যে অন্যায় কিছু দেখছেন না – কিংবা মনে করছেন না এটা বাড়াবাড়ি।
আলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াও দিল্লিতে জানিয়েছেন, ‘খিলঞ্জিয়ার আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় এসেছি বলে তাদের আমরা ভুলে যেতে পারি না।’
অরবিন্দ রাজখোয়া বা অনুপ চেটিয়া, আলফার এই দুই শীর্ষ নেতাই বছরের পর বছর বাংলাদেশে ছিলেন। অনুপ চেটিয়া ১৯৯৭ সালে ঢাকায় আটক হওয়ার পর ফরেনার্স অ্যাক্টে সাত বছরের সাজা পান।
কিন্তু সাজার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও তিনি বহু বছর প্রথমে কাশিমবাজার ও পরে রাজশাহীর জেলে কাটিয়েছেন। তাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য দিল্লির অনুরোধ বহু বছর ঝুলে থাকার পর অবশেষে ২০১৫ সালে তাকে হস্তান্তর করা হয়। ঠিক সেই সময় ভারতও নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকেও বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, এই দুই হস্তান্তর ছিল একটি ‘বিনিময় সমঝোতা’র অংশ।
এর আগে ২০০৯ সালের নভেম্বরে শেখ হাসিনা সরকার অরবিন্দ রাজখোয়াকেও গোপনে সীমান্ত পার করিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়। অনুপ চেটিয়া ও অরবিন্দ রাজখোয়াই এখন মূলত ভারত সরকারের সঙ্গে আলফার শান্তি আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আলফার আর এক গোষ্ঠীর নেতা পরেশ বড়ুয়া এখনও ভারতের সঙ্গে লড়াই চালানোর নীতিতে বিশ্বাসী, তবে রাজখোয়া-চেটিয়া জানিয়ে রেখেছেন পরেশ বড়ুয়া (‘পি বি’) আলোচনায় অংশ নিতে চাইলে তিনিও স্বাগত।
দীর্ঘদিন বাংলাদেশে কাটিয়ে আসা অরবিন্দ রাজখোয়া ও অনুপ চেটিয়া (যার একটা পর্বে আবার বিএনপি-জামাত জোট সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থনও পেয়েছেন তারা) যেভাবে এখন বাংলাদেশি ঠেকানোর নামে আসামে নতুন বাহিনী গড়ার কথা বলেছেন, সেটাকে পর্যবেক্ষকরা অনেকেই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন। তবে এখানে উল্লেখ করা দরকার, আলফা নেতাদের খিলঞ্জিয়া বাহিনী গঠনের প্রস্তাব নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখনও হ্যাঁ বা না, কিছুই স্পষ্ট করে বলেনি।
শান্তি আলোচনায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দূত হিসেবে যিনি অংশ নিচ্ছেন, সেই সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা তথা আইপিএস অফিসার এ বি মাথুরও এই প্রস্তাব নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অসমিয়া ভাষায় খিলঞ্জিয়া কথাটির অর্থ ‘ভূমিপুত্র’ বা ‘মূলবাসী’। তবে খিলঞ্জিয়া বলতে ঠিক কাদের বোঝানো হবে, তা নিয়ে ওই রাজ্যে প্রচুর বিতর্কও আছে – আর খিলঞ্জিয়া শব্দের সংজ্ঞা নির্ধারণ নিয়েও রয়েছে বহু মতভেদ। তবে আলফার আলোচনাপন্থী নেতারা ভারত সরকারের কাছে যে খিলঞ্জিয়া বাহিনী গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে এককালের দুর্ধর্ষ বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গি সংগঠন আলফার সাবেক ক্যাডারদের ঠাঁই দেওয়ার কথাই বলা হয়েছে।
গত সপ্তাহে শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে দিল্লিতে এসেছিলেন আলফার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা। সেই বৈঠকের পর আলফার সভাপতি অরবিন্দ রাজখোয়া এই প্রতিবেদককে তাদের প্রস্তাবটি বিশদে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই মুহুর্তে আসাম-বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ একটি জ্বলন্ত সমস্যা – এবং বহুদিন ধরেই আসামকে এর ফল ভুগতে হচ্ছে। আমাদের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দুদেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা একটা নতুন মাত্রা পাবে।’
‘ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের দায়িত্ব হল বর্ডারকে নিশ্ছিদ্র রাখার – অথচ তাদের বিরুদ্ধে প্রায়শই অসংখ্য অভিযোগ ওঠে যে তারা ঘুষ নিয়ে বাংলাদেশিদের অবৈধভাবে সীমান্ত পার করিয়ে দেন।’
‘এই কারণেই আমরা খিলঞ্জিয়া বাহিনী গড়ে তুলতে চাই – যারা বিএসএফের পর একটি ‘সেকেন্ড লাইন অব ডিফেন্স’ হিসেবে কাজ করবে, আসামের সীমান্তকে বাড়তি সুরক্ষা যোগাবে’, বলেন অরবিন্দ রাজখোয়া।
আলফার যে সশস্ত্র ক্যাডার বা জঙ্গি সদস্যরা বিগত বছরগুলোতে আত্মসমর্পণ করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন, তাদের নিয়েই এই বাহিনী গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। তবে তারা এটাও জানিয়েছেন, এই খিলঞ্জিয়া বাহিনীতে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র বহনকারী সদস্য থাকবেন না – তারা হবেন নিরস্ত্র, বড়জোর লাঠিসোঁটার মতো হাতিয়ার বহন করবেন।
এর আগে নেপালের মাওবাদী বিদ্রোহীরা যখন আত্মসমর্পণ করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছিলেন, তাদের কাউকে কাউকে সে দেশের সেনাবাহিনীতে চাকরির সুযোগ করে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই সাবেক জঙ্গি বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এভাবে পুনর্বাসন দেওয়ার রেওয়াজ আছে, তাই আলফা নেতারা এই দাবির মধ্যে অন্যায় কিছু দেখছেন না – কিংবা মনে করছেন না এটা বাড়াবাড়ি।
আলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াও দিল্লিতে জানিয়েছেন, ‘খিলঞ্জিয়ার আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় এসেছি বলে তাদের আমরা ভুলে যেতে পারি না।’
অরবিন্দ রাজখোয়া বা অনুপ চেটিয়া, আলফার এই দুই শীর্ষ নেতাই বছরের পর বছর বাংলাদেশে ছিলেন। অনুপ চেটিয়া ১৯৯৭ সালে ঢাকায় আটক হওয়ার পর ফরেনার্স অ্যাক্টে সাত বছরের সাজা পান।
কিন্তু সাজার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও তিনি বহু বছর প্রথমে কাশিমবাজার ও পরে রাজশাহীর জেলে কাটিয়েছেন। তাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য দিল্লির অনুরোধ বহু বছর ঝুলে থাকার পর অবশেষে ২০১৫ সালে তাকে হস্তান্তর করা হয়। ঠিক সেই সময় ভারতও নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকেও বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, এই দুই হস্তান্তর ছিল একটি ‘বিনিময় সমঝোতা’র অংশ।
এর আগে ২০০৯ সালের নভেম্বরে শেখ হাসিনা সরকার অরবিন্দ রাজখোয়াকেও গোপনে সীমান্ত পার করিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়। অনুপ চেটিয়া ও অরবিন্দ রাজখোয়াই এখন মূলত ভারত সরকারের সঙ্গে আলফার শান্তি আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আলফার আর এক গোষ্ঠীর নেতা পরেশ বড়ুয়া এখনও ভারতের সঙ্গে লড়াই চালানোর নীতিতে বিশ্বাসী, তবে রাজখোয়া-চেটিয়া জানিয়ে রেখেছেন পরেশ বড়ুয়া (‘পি বি’) আলোচনায় অংশ নিতে চাইলে তিনিও স্বাগত।
দীর্ঘদিন বাংলাদেশে কাটিয়ে আসা অরবিন্দ রাজখোয়া ও অনুপ চেটিয়া (যার একটা পর্বে আবার বিএনপি-জামাত জোট সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থনও পেয়েছেন তারা) যেভাবে এখন বাংলাদেশি ঠেকানোর নামে আসামে নতুন বাহিনী গড়ার কথা বলেছেন, সেটাকে পর্যবেক্ষকরা অনেকেই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন। তবে এখানে উল্লেখ করা দরকার, আলফা নেতাদের খিলঞ্জিয়া বাহিনী গঠনের প্রস্তাব নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখনও হ্যাঁ বা না, কিছুই স্পষ্ট করে বলেনি।
শান্তি আলোচনায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দূত হিসেবে যিনি অংশ নিচ্ছেন, সেই সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা তথা আইপিএস অফিসার এ বি মাথুরও এই প্রস্তাব নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
No comments