মনোবল হারাননি পা হারানো রুবিনা by সুদীপ অধিকারী
ট্রেন
ইঞ্জিনের নিচে চাপা পড়ে দু’ পা হারান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী
রুবিনা। দুর্ঘটনার দুই মাসের বেশি সময় পার হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ
(ঢামেকে) হাসপাতালের পুরনো বিল্ডিংয়ের ৬৭ নম্বর কেবিনে একপ্রকার শুয়ে দিন
কাটে তার। তবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার পাশে থাকায় আস্থা
হারাননি রুবিনা। তিনি স্বপ্ন দেখছেন দ্রুতই তিনি সুস্থ হবেন। পা নেই
তাতে কি? মনোবল হারাননি তিনি। চাকরি করে সংসারের হাল ধরতে চান রুবিনা। মা
রহিমাকেও প্রতিনিয়তই ভরসা ও সাহস দিচ্ছেন তিনি। গত ২৮শে জানুয়ারি কমলাপুর
রেলস্টেশনের ৪ নম্বর প্লাটফর্ম হেঁটে পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার
হয়েছিলেন জবি’র সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রুবিনা। কেটে
ফেলতে হয় দুই পা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্ঘটনার দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত সার্বক্ষণিক রুবিনার পাশে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রুবিনার মা রহিমা। তিনি বলেন, রুবিনার চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। আজ যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের পাশে না দাঁড়াতো, তাহলে আমাদের পরিবারটা ভেসে যেত। কিন্তু পা হারা মেয়ের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না রহিমার। মেয়ের কোথায় বিয়ে দেবেন, কি করে মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাবেন এসব নিয়েই দুশ্চিন্তায় দিন কাটে তার। তিনি বলেন, এখন হাসপাতালে আছি একরকম দিন কেটে যাচ্ছে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ছাড় দেয়ার পর কি করবো সেটাই ভাবতে পারছি না। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছোট ছেলের পড়া-লেখার খরচ চালানো যাবে কিনা- এ নিয়েও দুশ্চিন্তা কাটছে না স্বামীহারা রহিমার। তিনি জানান, কোনোমতে দিন কাটলেও রুবিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ার পর গ্রামের সকলের কাছ থেকে টাকা-পয়সা উঠিয়ে ঢাকা পাঠানো হয় তাকে। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে এই মেধাবী মেয়েই সংসারের হাল ধরবে। তিনি জানান, সংসারের অভাব-অনটনের কারণে অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হয়েছে। দুই ছেলে-মেয়েকে ঠিকমতো ভালো খাবারও খাওয়াতে পারেতন না তিনি। তারপরও স্বপ্ন ছিল তার চোখে। তিনি বলেন, দুর্বল শরীর নিয়ে প্ল্যাটফর্ম পার হতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যায় রুবিনা। আর তখনই ট্রেনের ইঞ্জিন পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। রহিমা বলেন, মেয়ের দুই পায়ের সঙ্গে পরিবারের স্বপ্নগুলোও শেষ হয়ে গেছে ট্রেনের চাকার নিচে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, কতদিন আর সবাই এমন পাশে থাকবেন। একটা নির্দিষ্ট সময় পর সবাই তাদের নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। কিন্তু আমার এই দুই পা হারা মেয়ে তার পুরোটা জীবন কি করে পার করবে? রুবিনা না হয় অসুস্থ ছিল বলেই মাথা ঘুরে রেললাইনের ওপর পড়ে যায়। কিন্তু ট্রেনের ড্রাইভারেরা কি একটুও চোখে দেখেনি সেখানে একটা মানুষ পড়ে রয়েছে? অশ্রুভরা চোখে এমনই সব প্রশ্ন ওঠে আসে রুবিনার মায়ের মুখে। মেয়ের কথা বলতে গিয়ে মায়ের চোখ দিয়ে যখন অঝরে পানি বেয়ে পড়ছে তখন মেয়ে রুবিনাই তার মায়ের চোখ মুছে দিয়ে বলছে, আম্মু তুমি কাঁদছো কেন। আমিতো ঠিক হয়ে গেছি। দুই পা নেই তাতে কি হয়েছে, লেখা-পড়াতো আর ভুলে যায়নি। রুবিনা তার মাকে বলেন, তোমার মেয়ে আবার পড়া-লেখা শুরু করবে। পরীক্ষা দেবে। সরকারি চাকরি করে ছোটভাই রুবেলকে পড়াবে, আবারও সংসারের হাল ধরবে। কান্নাজড়িত মুখে হাসি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কথা উল্লেখ করে রুবিনা বলেন, আমি স্যারদের ও বান্ধবীদের কাছে শুনেছি পা না থাকলেও সরকারি চাকরি করা যায়। দুই পা হারানোর পরও শিক্ষক-সহপাঠীদের আশ্বাসে রুবিনা ভেঙে না পড়ে বরং নিজের পরিবার ও আশপাশের অশ্রুসিক্তদের শক্তি যোগাচ্ছে। রুবিনার চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্বে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগেরর প্রধান এমডি আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, রুবিনা এখনো ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের ৬৭ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন। তাকে সব রকম চিকিৎসাই দেয়া হয়েছে। ট্রিটমেন্ট শেষ হওয়ায় রুবিনাকে রিলিজ দেয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাগিদ দিচ্ছেন। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ করার জন্য বাড়ির লোক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই তাকে আরও কিছুদিন হাসপাতালে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে, ৮-১০ দিনের মধ্যেই রুবিনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানান তিনি। তিনি জানান, মে মাসে রুবিনার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি এটাচড বাথসহ একটা রুম খোঁজা হচ্ছে রুবিনার জন্য। এজন্য রুবিনার সহপাঠীদের নিয়ে একটি টিমও গঠন করে দেয়া হয়েছে। অন্য কারোর ওপর ভরসা না করে একাকি চলাফেরা করার সুবিধার্থে রুবিনার জন্য একটি হুইল চেয়ার কেনারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। রুবিনার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার খরচের জন্য সমাজকর্ম বিভাগের ১৪ জন শিক্ষক প্রতি মাসে নিজেদের বেতন থেকে ৫০০০ হাজার টাকা করে দেবেন বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, রুবিনার কৃত্রিম পা লাগানোর জন্যও অর্থের ডোনার খোঁজা হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস কিছুদিনের মধ্যে ডোনারও পেয়ে যাব আমরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্ঘটনার দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত সার্বক্ষণিক রুবিনার পাশে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রুবিনার মা রহিমা। তিনি বলেন, রুবিনার চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। আজ যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের পাশে না দাঁড়াতো, তাহলে আমাদের পরিবারটা ভেসে যেত। কিন্তু পা হারা মেয়ের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না রহিমার। মেয়ের কোথায় বিয়ে দেবেন, কি করে মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাবেন এসব নিয়েই দুশ্চিন্তায় দিন কাটে তার। তিনি বলেন, এখন হাসপাতালে আছি একরকম দিন কেটে যাচ্ছে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ছাড় দেয়ার পর কি করবো সেটাই ভাবতে পারছি না। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছোট ছেলের পড়া-লেখার খরচ চালানো যাবে কিনা- এ নিয়েও দুশ্চিন্তা কাটছে না স্বামীহারা রহিমার। তিনি জানান, কোনোমতে দিন কাটলেও রুবিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ার পর গ্রামের সকলের কাছ থেকে টাকা-পয়সা উঠিয়ে ঢাকা পাঠানো হয় তাকে। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে এই মেধাবী মেয়েই সংসারের হাল ধরবে। তিনি জানান, সংসারের অভাব-অনটনের কারণে অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হয়েছে। দুই ছেলে-মেয়েকে ঠিকমতো ভালো খাবারও খাওয়াতে পারেতন না তিনি। তারপরও স্বপ্ন ছিল তার চোখে। তিনি বলেন, দুর্বল শরীর নিয়ে প্ল্যাটফর্ম পার হতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যায় রুবিনা। আর তখনই ট্রেনের ইঞ্জিন পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। রহিমা বলেন, মেয়ের দুই পায়ের সঙ্গে পরিবারের স্বপ্নগুলোও শেষ হয়ে গেছে ট্রেনের চাকার নিচে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, কতদিন আর সবাই এমন পাশে থাকবেন। একটা নির্দিষ্ট সময় পর সবাই তাদের নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। কিন্তু আমার এই দুই পা হারা মেয়ে তার পুরোটা জীবন কি করে পার করবে? রুবিনা না হয় অসুস্থ ছিল বলেই মাথা ঘুরে রেললাইনের ওপর পড়ে যায়। কিন্তু ট্রেনের ড্রাইভারেরা কি একটুও চোখে দেখেনি সেখানে একটা মানুষ পড়ে রয়েছে? অশ্রুভরা চোখে এমনই সব প্রশ্ন ওঠে আসে রুবিনার মায়ের মুখে। মেয়ের কথা বলতে গিয়ে মায়ের চোখ দিয়ে যখন অঝরে পানি বেয়ে পড়ছে তখন মেয়ে রুবিনাই তার মায়ের চোখ মুছে দিয়ে বলছে, আম্মু তুমি কাঁদছো কেন। আমিতো ঠিক হয়ে গেছি। দুই পা নেই তাতে কি হয়েছে, লেখা-পড়াতো আর ভুলে যায়নি। রুবিনা তার মাকে বলেন, তোমার মেয়ে আবার পড়া-লেখা শুরু করবে। পরীক্ষা দেবে। সরকারি চাকরি করে ছোটভাই রুবেলকে পড়াবে, আবারও সংসারের হাল ধরবে। কান্নাজড়িত মুখে হাসি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কথা উল্লেখ করে রুবিনা বলেন, আমি স্যারদের ও বান্ধবীদের কাছে শুনেছি পা না থাকলেও সরকারি চাকরি করা যায়। দুই পা হারানোর পরও শিক্ষক-সহপাঠীদের আশ্বাসে রুবিনা ভেঙে না পড়ে বরং নিজের পরিবার ও আশপাশের অশ্রুসিক্তদের শক্তি যোগাচ্ছে। রুবিনার চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্বে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগেরর প্রধান এমডি আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, রুবিনা এখনো ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের ৬৭ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন। তাকে সব রকম চিকিৎসাই দেয়া হয়েছে। ট্রিটমেন্ট শেষ হওয়ায় রুবিনাকে রিলিজ দেয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাগিদ দিচ্ছেন। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ করার জন্য বাড়ির লোক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই তাকে আরও কিছুদিন হাসপাতালে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে, ৮-১০ দিনের মধ্যেই রুবিনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানান তিনি। তিনি জানান, মে মাসে রুবিনার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি এটাচড বাথসহ একটা রুম খোঁজা হচ্ছে রুবিনার জন্য। এজন্য রুবিনার সহপাঠীদের নিয়ে একটি টিমও গঠন করে দেয়া হয়েছে। অন্য কারোর ওপর ভরসা না করে একাকি চলাফেরা করার সুবিধার্থে রুবিনার জন্য একটি হুইল চেয়ার কেনারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। রুবিনার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার খরচের জন্য সমাজকর্ম বিভাগের ১৪ জন শিক্ষক প্রতি মাসে নিজেদের বেতন থেকে ৫০০০ হাজার টাকা করে দেবেন বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, রুবিনার কৃত্রিম পা লাগানোর জন্যও অর্থের ডোনার খোঁজা হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস কিছুদিনের মধ্যে ডোনারও পেয়ে যাব আমরা।
No comments