কোটা সংস্কারের দাবি: বিক্ষোভের উত্তাল ঢেউ
এ
যেন উত্তাল তরঙ্গ। শুরু আছে শেষ নেই। মিছিলের সব হাত-পা-কণ্ঠ একই। কোটা
সংস্কারের দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে মুখর রাজপথ। শুরুটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে। আর ক্রমশ এতে যোগ দিয়েছেন লাখ লাখ শিক্ষার্থী। টানা চতুর্থ দিনের
বিক্ষোভে গতকাল উত্তাল ছিল সারা দেশ। ৫ দফা দাবিতে বুধবার দেশের বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন, অবরোধ ও বিক্ষোভ
কর্মসূচি পালন করে। বিভিন্ন সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করায় কার্যত
অচল হয়ে পড়ে রাজধানী। গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকায় এমন পরিস্থিতি
সৃষ্টি হয়। টানা চার দিনের এ আন্দোলনে গতকাল ছিল ভিন্নমাত্রা। সরকারি
আশ্বাসের পরের বিভক্তি এবং একদিন পর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণায় দেশের প্রায়
সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে
আন্দোলনে অংশ নেন। চতুর্থ দিনে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীরাও সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
দিনভর বিক্ষোভের পর সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বক্তব্য দিলেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিতের কোনো ঘোষণা দেননি। তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য পর্যালোচনা করে আজ সিদ্ধান্ত জানাবেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার সকাল দশটার আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোয় অবস্থান নিয়ে দাবির পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। হাতে পতাকা, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার। অনেকের শরীরে শোভা পায় প্রতিবাদের কথামালা। রাস্তার কালো পিচে কোটাবিরোধী লেখা। এতে অচল হয়ে পড়ে পুরো রাজধানী। দিনভর ছিল এমন অবস্থা। বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তা অবরোধ করে চলা আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরাতে পুলিশকে শান্তিপূর্ণ চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি রাজধানীর বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি-বেসরকারি কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সংখ্যায় রাস্তায় নেমে পড়ে। এই পরিস্থিতি সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ায়। বিকাল থেকে কমতে থাকে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটা বাতিলের ঘোষণার পর দিনের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হলে শিক্ষার্থীরা অবস্থান ছাড়েন।
আন্দোলনকারীদের দখলে ঢাবি: কোটা সংস্কার আন্দোলনের চতুর্থ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছিল বিক্ষোভে উত্তাল। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় ঢাবি এলাকা যেন এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘কোটা সংস্কার চাই’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার’ এরকমই স্লোগানে মুখরিত ছিল সারাদিন। এসময় আওয়ামী লীগ নেত্রী মতিয়া চৌধুরীকে নিয়ে নানা স্লোগান দিতে শোনা যায়। পুরো এলাকাই ছিল আন্দোলনকারীদের দখলে।
সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশি তৎপরতা তেমন ছিল না। শুধুমাত্র শাহবাগ থানার সামনে ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে ঢাবি’র বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা পাবলিক লাইব্রেরিতে এসে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ১১টার দিকে পাবলিক লাইব্রেরি থেকে অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর মিছিল বের হয়। মিছিলে অর্ধেকই ছিল নারী শিক্ষার্থী। চারুকলা ইনস্টিটিউটের গেট প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি রোকেয়া হল, নীলক্ষেত, পলাশী মোড়, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট, মৎস্য ভবন, শাহবাগ হয়ে পুনরায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে এসে থামে। মিছিলে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মিছিলের সময় উৎসুক পথচারী, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা একাত্মতা প্রকাশ ও স্লোগান দিতে দেখা যায়।
দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। সাড়ে বারোটার দিকে আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান বলেন, নোয়াখালী ও গোপালগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলা চালানো হয়েছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনে যারা হামলা চালিয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি আগামী দুই ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলন থেকে প্রশাসন ও পুলিশ সরিয়ে নিতে হবে। এছাড়া পুলিশ মসজিদে টিয়াল শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের জন্য আইজিপিকে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। দুপুর দেড়টার দিকে ঢাবি’র শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইতুল ইসলাম আন্দোলনে যোগ দিয়ে আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন জানান। এসময় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবি’র প্রতি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আমাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। শিক্ষক সমিতি মনে করে এই কোটা সংস্কার এখন যুগের চাহিদা। সে অনুযায়ী কোটা সংস্কার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দ্রুততম সময়ে ঘোষণা করার জন্য আমরা আহ্বান জানাই।
এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিএসসি মোড়ের উত্তাপ আরো বেড়ে যায়। একের পর এক স্লোগান আর আলাদা আলাদা হলের মিছিল ঢাবি’র বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
প্রচণ্ড রোদ আর গরম উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যায়। এক সময় তারা গ্রুপ করে সড়কে বসে স্লোগান দিতে থাকে। তখন রাজু ভাস্কর্য ও তার আশেপাশের এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি একটাই কোটা সংস্কার করতে হবে। আর এজন্য প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো মন্ত্রীর ঘোষণা মানা হবে না। এছাড়া আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও গ্রেপ্তারদের মুক্তি দিতে হবে। এমন দাবি নিয়ে চলতে থাকে তাদের আন্দোলন। দুপুরের পর থেকে গুঞ্জন ছিল অন্যরকম। সকাল ১০টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের নিজেদের ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে কোটা পদ্ধতি থাকবে না বলে তারা স্ট্যাটাস দেন। এমনকি বিকাল ৫টায় কোটা পদ্ধতি নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন সবাই যেন সংসদ টিভিতে চোখ রাখে। ওই স্ট্যাটাসে এমনটাই লেখা ছিল। অবশ্য বিকালে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা পদ্ধতিই থাকবে না বলে ঘোষণা দেন। এ খবর টিএসসি এলাকায় যাওয়ার পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা কোটা পদ্ধতি বাতিল চাইনি। শুধু ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে এনে ১০ শতাংশ করার আন্দোলন করছি।
স্থবির ঢাকা: সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাজধানীর পান্থপথ মোড়ে জড়ো হতে থাকে আশেপাশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এক ঘণ্টার ব্যবধানে সেখানে জড়ো হয় ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধসহস্র শিক্ষার্থী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়। বেলা ১১টার দিকে পান্থপথ মোড়ে অবরোধ সৃষ্টি করে অবস্থান নেয় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। দিতে থাকে মিছিল-স্লোগান। বহন করে প্ল্যাকার্ড। এসময় তারা রাস্তায়ও কোটাবিরোধী স্লোগান লিখে রাখেন। সারাদিন পান্থপথ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, সিটি ইউনিভার্সিটি, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও নর্দান ইউনিভার্সিটির কাওরান বাজারস্থ সিটি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। তাদের অবরোধে সংযুক্ত চারটি সড়কেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মানবজমিনকে বলেন, কোটা কীভাবে ৫৬ ভাগ হয়। তা সহনীয় করা হোক। দশভাগে নামিয়ে আনা হোক। সে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
সিটি ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাহিম আহমেদ বলেন, কোটা পদ্ধতিতে মেধাবীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাই কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক। ঢাবি’র সুফিয়া হলের আন্দোলনকারী ছাত্রীকে ছাত্রলীগ পায়ের রগ কেটে দিলো কেন? আমরা তারও জবাব চাই। সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির ছাত্র মো. মিজানুর রহমান বলেন, সাধারণের চেয়ে কোটায় বেশি চাকরি। তাতো ‘আমের চেয়ে আঁটি বড়’র মতো। কাওরানবাজার থেকে পান্থপথ মোড়ে গিয়ে বাকি পাঁচ ইউনিভার্সিটির ওই দলকে ভারি করে নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এই ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ১০ম সেমিস্টারের ছাত্র জাহিদ হাসান বলেন, অল্প কিছু মানুষের জন্য বেশির ভাগ কোটা এটা বড় বৈষম্য। পাকিস্তান আমলের মতো স্বাধীন দেশে আমরা আর এই বৈষম্য চাই না। এদিকে বেলা ১১টার পর ধানমন্ডি ৩২-এর কাছে শুক্রাবাদে মিরপুর রোডে নেমে পড়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। অবশ্য তার আগেই রাস্তায় নামে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ধানমন্ডি ২৭-এর ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। তারা ধানমন্ডি ২৭ থেকে ৩২ পর্যন্ত রাস্তার এক পাশ অবরোধ করে সকাল থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত বিক্ষোভ করে। এসময় ওই রোডে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
কোটা সংস্কারের দাবিতে স্লোগানের পাশাপাশি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির সহস্রাধিক শিক্ষার্থী কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন।
ওই ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র জহির রায়হান বলেন, ন্যায্য আন্দোলন করতে আমাদের ভাইয়ের রক্ত ঝরলো কেন। মতিয়া চৌধুরী আমাদের রাজাকার বলে গালি দিলেন কেন? আমরা জবাব চাই। দুই সড়কে শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে আশেপাশের সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। সড়কে যানবাহন চলতে না পারায় সাধারণ যাত্রীরা হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে যান।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুরে আন্দোলন করে বেসরকারি প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে তারা মিছিল নিয়ে মিরপুর মাজার রোড হয়ে সনি সিনেমা পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে। এসময় তারা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, ৫৬ ভাগ কোটা মানি না’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়। এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সামনের রোকেয়া সরণি বন্ধ করে আন্দোলন করেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। মিরপুর ১০ নম্বর গোল চক্কর থেকে দুপুরে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এতে এ সড়ক হয়ে আসা যানবাহন মিরপুর ১ ও ২ হয়ে যাতায়াত করে। এতে ওই সড়কসহ আশেপাশের সড়কে যানজট তৈরি হয়। মিরপুর থেকে ফার্মগেট ও মতিঝিলগামী যাত্রীদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।
সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন করেছে বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইস্ট ওয়েস্টসহ আরো একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। নর্থ সাউথ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানীর নর্দা-কুড়িল রোড অবরোধ করে আন্দোলন করে। অন্যদিকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজের কাছে অবস্থান নিয়ে অবরোধ তৈরি করে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিনভর বন্ধ থাকায় দুর্ভোগের সীমা ছিল না সাধারণ যাত্রীদের। এদিকে মহাখালী থেকে সাতরাস্তাগামী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের অবস্থানে ওই সড়কেও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালরয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে পুরান ঢাকা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে রায়সাহেব বাজার হয়ে তাঁতীবাজারে আসেন তারা।
বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত তাঁতীবাজার মোড়ে অবস্থান নেন জবি শিক্ষার্থীরা। ফলে এ সময় ঢাকা-মাওয়া, গুলিস্তান-সদরঘাট, সদরঘাট-যাত্রাবাড়ী মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। এদিকে ছাত্রলীগ আন্দোলনে বিরোধিতা করলেও দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনে যোগ দেয়। জবি ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কর্মীরা যোগ দেয়। তারাও তাঁতীবাজার মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করে।
দিনভর বিক্ষোভের পর সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বক্তব্য দিলেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিতের কোনো ঘোষণা দেননি। তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য পর্যালোচনা করে আজ সিদ্ধান্ত জানাবেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার সকাল দশটার আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোয় অবস্থান নিয়ে দাবির পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। হাতে পতাকা, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার। অনেকের শরীরে শোভা পায় প্রতিবাদের কথামালা। রাস্তার কালো পিচে কোটাবিরোধী লেখা। এতে অচল হয়ে পড়ে পুরো রাজধানী। দিনভর ছিল এমন অবস্থা। বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তা অবরোধ করে চলা আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরাতে পুলিশকে শান্তিপূর্ণ চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি রাজধানীর বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি-বেসরকারি কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সংখ্যায় রাস্তায় নেমে পড়ে। এই পরিস্থিতি সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ায়। বিকাল থেকে কমতে থাকে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটা বাতিলের ঘোষণার পর দিনের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হলে শিক্ষার্থীরা অবস্থান ছাড়েন।
আন্দোলনকারীদের দখলে ঢাবি: কোটা সংস্কার আন্দোলনের চতুর্থ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছিল বিক্ষোভে উত্তাল। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় ঢাবি এলাকা যেন এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘কোটা সংস্কার চাই’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার’ এরকমই স্লোগানে মুখরিত ছিল সারাদিন। এসময় আওয়ামী লীগ নেত্রী মতিয়া চৌধুরীকে নিয়ে নানা স্লোগান দিতে শোনা যায়। পুরো এলাকাই ছিল আন্দোলনকারীদের দখলে।
সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশি তৎপরতা তেমন ছিল না। শুধুমাত্র শাহবাগ থানার সামনে ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে ঢাবি’র বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা পাবলিক লাইব্রেরিতে এসে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ১১টার দিকে পাবলিক লাইব্রেরি থেকে অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর মিছিল বের হয়। মিছিলে অর্ধেকই ছিল নারী শিক্ষার্থী। চারুকলা ইনস্টিটিউটের গেট প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি রোকেয়া হল, নীলক্ষেত, পলাশী মোড়, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট, মৎস্য ভবন, শাহবাগ হয়ে পুনরায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে এসে থামে। মিছিলে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মিছিলের সময় উৎসুক পথচারী, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা একাত্মতা প্রকাশ ও স্লোগান দিতে দেখা যায়।
দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। সাড়ে বারোটার দিকে আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান বলেন, নোয়াখালী ও গোপালগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলা চালানো হয়েছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনে যারা হামলা চালিয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি আগামী দুই ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলন থেকে প্রশাসন ও পুলিশ সরিয়ে নিতে হবে। এছাড়া পুলিশ মসজিদে টিয়াল শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের জন্য আইজিপিকে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। দুপুর দেড়টার দিকে ঢাবি’র শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইতুল ইসলাম আন্দোলনে যোগ দিয়ে আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন জানান। এসময় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবি’র প্রতি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আমাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। শিক্ষক সমিতি মনে করে এই কোটা সংস্কার এখন যুগের চাহিদা। সে অনুযায়ী কোটা সংস্কার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দ্রুততম সময়ে ঘোষণা করার জন্য আমরা আহ্বান জানাই।
এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিএসসি মোড়ের উত্তাপ আরো বেড়ে যায়। একের পর এক স্লোগান আর আলাদা আলাদা হলের মিছিল ঢাবি’র বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
প্রচণ্ড রোদ আর গরম উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যায়। এক সময় তারা গ্রুপ করে সড়কে বসে স্লোগান দিতে থাকে। তখন রাজু ভাস্কর্য ও তার আশেপাশের এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি একটাই কোটা সংস্কার করতে হবে। আর এজন্য প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো মন্ত্রীর ঘোষণা মানা হবে না। এছাড়া আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও গ্রেপ্তারদের মুক্তি দিতে হবে। এমন দাবি নিয়ে চলতে থাকে তাদের আন্দোলন। দুপুরের পর থেকে গুঞ্জন ছিল অন্যরকম। সকাল ১০টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের নিজেদের ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে কোটা পদ্ধতি থাকবে না বলে তারা স্ট্যাটাস দেন। এমনকি বিকাল ৫টায় কোটা পদ্ধতি নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন সবাই যেন সংসদ টিভিতে চোখ রাখে। ওই স্ট্যাটাসে এমনটাই লেখা ছিল। অবশ্য বিকালে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা পদ্ধতিই থাকবে না বলে ঘোষণা দেন। এ খবর টিএসসি এলাকায় যাওয়ার পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা কোটা পদ্ধতি বাতিল চাইনি। শুধু ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে এনে ১০ শতাংশ করার আন্দোলন করছি।
স্থবির ঢাকা: সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাজধানীর পান্থপথ মোড়ে জড়ো হতে থাকে আশেপাশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এক ঘণ্টার ব্যবধানে সেখানে জড়ো হয় ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধসহস্র শিক্ষার্থী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়। বেলা ১১টার দিকে পান্থপথ মোড়ে অবরোধ সৃষ্টি করে অবস্থান নেয় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। দিতে থাকে মিছিল-স্লোগান। বহন করে প্ল্যাকার্ড। এসময় তারা রাস্তায়ও কোটাবিরোধী স্লোগান লিখে রাখেন। সারাদিন পান্থপথ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, সিটি ইউনিভার্সিটি, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও নর্দান ইউনিভার্সিটির কাওরান বাজারস্থ সিটি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। তাদের অবরোধে সংযুক্ত চারটি সড়কেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মানবজমিনকে বলেন, কোটা কীভাবে ৫৬ ভাগ হয়। তা সহনীয় করা হোক। দশভাগে নামিয়ে আনা হোক। সে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
সিটি ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাহিম আহমেদ বলেন, কোটা পদ্ধতিতে মেধাবীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাই কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক। ঢাবি’র সুফিয়া হলের আন্দোলনকারী ছাত্রীকে ছাত্রলীগ পায়ের রগ কেটে দিলো কেন? আমরা তারও জবাব চাই। সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির ছাত্র মো. মিজানুর রহমান বলেন, সাধারণের চেয়ে কোটায় বেশি চাকরি। তাতো ‘আমের চেয়ে আঁটি বড়’র মতো। কাওরানবাজার থেকে পান্থপথ মোড়ে গিয়ে বাকি পাঁচ ইউনিভার্সিটির ওই দলকে ভারি করে নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এই ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ১০ম সেমিস্টারের ছাত্র জাহিদ হাসান বলেন, অল্প কিছু মানুষের জন্য বেশির ভাগ কোটা এটা বড় বৈষম্য। পাকিস্তান আমলের মতো স্বাধীন দেশে আমরা আর এই বৈষম্য চাই না। এদিকে বেলা ১১টার পর ধানমন্ডি ৩২-এর কাছে শুক্রাবাদে মিরপুর রোডে নেমে পড়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। অবশ্য তার আগেই রাস্তায় নামে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ধানমন্ডি ২৭-এর ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। তারা ধানমন্ডি ২৭ থেকে ৩২ পর্যন্ত রাস্তার এক পাশ অবরোধ করে সকাল থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত বিক্ষোভ করে। এসময় ওই রোডে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
কোটা সংস্কারের দাবিতে স্লোগানের পাশাপাশি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির সহস্রাধিক শিক্ষার্থী কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন।
ওই ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র জহির রায়হান বলেন, ন্যায্য আন্দোলন করতে আমাদের ভাইয়ের রক্ত ঝরলো কেন। মতিয়া চৌধুরী আমাদের রাজাকার বলে গালি দিলেন কেন? আমরা জবাব চাই। দুই সড়কে শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে আশেপাশের সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। সড়কে যানবাহন চলতে না পারায় সাধারণ যাত্রীরা হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে যান।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুরে আন্দোলন করে বেসরকারি প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে তারা মিছিল নিয়ে মিরপুর মাজার রোড হয়ে সনি সিনেমা পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে। এসময় তারা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, ৫৬ ভাগ কোটা মানি না’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়। এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সামনের রোকেয়া সরণি বন্ধ করে আন্দোলন করেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। মিরপুর ১০ নম্বর গোল চক্কর থেকে দুপুরে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এতে এ সড়ক হয়ে আসা যানবাহন মিরপুর ১ ও ২ হয়ে যাতায়াত করে। এতে ওই সড়কসহ আশেপাশের সড়কে যানজট তৈরি হয়। মিরপুর থেকে ফার্মগেট ও মতিঝিলগামী যাত্রীদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।
সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন করেছে বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইস্ট ওয়েস্টসহ আরো একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। নর্থ সাউথ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানীর নর্দা-কুড়িল রোড অবরোধ করে আন্দোলন করে। অন্যদিকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজের কাছে অবস্থান নিয়ে অবরোধ তৈরি করে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিনভর বন্ধ থাকায় দুর্ভোগের সীমা ছিল না সাধারণ যাত্রীদের। এদিকে মহাখালী থেকে সাতরাস্তাগামী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের অবস্থানে ওই সড়কেও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালরয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে পুরান ঢাকা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে রায়সাহেব বাজার হয়ে তাঁতীবাজারে আসেন তারা।
বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত তাঁতীবাজার মোড়ে অবস্থান নেন জবি শিক্ষার্থীরা। ফলে এ সময় ঢাকা-মাওয়া, গুলিস্তান-সদরঘাট, সদরঘাট-যাত্রাবাড়ী মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। এদিকে ছাত্রলীগ আন্দোলনে বিরোধিতা করলেও দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনে যোগ দেয়। জবি ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কর্মীরা যোগ দেয়। তারাও তাঁতীবাজার মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করে।
No comments