বাংলাদেশ, ভারতে তৎপর ছিল আল কায়েদার সামিউন
২৮
বছর বয়সী বৃটিশ সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা সামিউন রহমান। সন্দেহ করা হয়, সে
সিরিয়ায় আল কায়েদার হয়ে লড়াই করেছে। অবশেষে রাষ্ট্রহীন মুসলিম রোহিঙ্গা
সম্প্রদায়ের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দিয়ে তাকে পাঠানো হয় বাংলাদেশ ও ভারতে।
উদ্দেশ্য দলে সদস্য সংগ্রহ করা ও যুবকদের লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করা। বাংলাদেশে
সে জেল খেটেছে। এরপর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যায়। সেখানে গড়ে তোলার
চেষ্টা করে আল কায়েদার ঘাঁটি। ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ এমনটাই মনে
করছে। ভারতের মিজোরাম হয়ে মিয়ানমারে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল সে। সেখান থেকে
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম আসার পরিকল্পনা ছিল তার। এরই মধ্যে সে বাংলাদেশের
সিলেট, নবীগঞ্চ ও ঢাকা সফর করেছে। সফর করেছে বাংলাদেশের আরো এলাকা। এ খবর
দিয়েছে ভারতের অনলাইন ইন্ডিয়া টুডে। এতে বলা হয়, আল কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান
সাবকন্টিনেন্টের হয়ে ভারতে তৎপরতা চালাচ্ছিল সামিউন, চার্জশিটে এমন অভিযোগ
এনেছে এনআইএ। তাতে বলা হয়েছে, সে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর চেষ্টা করছিল।
মেইল টুডে ওই চার্জশিট হাতে পেয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, লন্ডন থেকে সিরিয়া হয়ে
ভারতে এসেছে সামিউন। উল্লেখ্য, ২৫ শে আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর
নৃশংসতা শুরুর পর প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয়
নিতে বাধ্য হন। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা অনেক দেশ একে গণহত্যা,
জাতিনিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তবে মিয়ানমারের বক্তব্য তারা রাখাইনে
রোহিঙ্গা ‘সন্ত্রাসীদের’ গেরিলাদের ধরার জন্য ওই অভিযান চালিয়েছে। এসব
ঘটনায় যখন সারাবিশ্বে নিন্দার ঝড় বইতে থাকে তখনই তৎপর হয়ে ওঠে সামিউন
রহমান। টেলিগ্রাম ও অন্যান্য ম্যাসেজিং অ্যাপ থেকে তার ৫৩৬টি চ্যাট উদ্ধার
করে চার্জশিটের সঙ্গে জমা দিয়েছে এনআইএ। এতে বলা হয়েছে, ভারত, বাংলাদেশ,
সিরিয়া ও অন্যান্য দেশের আল কায়েদার সঙ্গে যোগসূত্র বা যোগাযোগ ছিল সামিউন
রহমানের। এনআইএ বলেছে, সিরিয়ায় আল কাযেদার জন্য সদস্য সংগ্রহ ও তাদেরকে
সিরিয়ায় আল কায়েদার ঘাঁটির নিরাপত্তার জন্য লোক নিয়োগ করতে হতো। ওই সিরিয়ায়
তিনি দু’সপ্তাহ লড়াই করেছেন বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে। এরপর তাকে পাঠিয়ে
দেয়া হয় বাংলাদেশে। কারণ, তিনি স্থানীয় ভাষা জানেন। এ ছাড়া তাকে ভারত
উপমহাদেশে একটি ঘাঁটি গড়ে তোলার তায়িত্ব দেয়া হয়। এরপরই ২০১৪ সালে সামিউন
ঢাকা পৌঁছে। ছুটে যায় তার পিতৃপুরুষের গ্রামে। সেখানে বসে ফেসবুকে একটি
পেজ খোলে। এর নাম দেয়া হয় ‘এইড টু সিরিয়া’। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় চলমান
সঙ্কটের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষ্য নেয়া হয়। তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়
আসিফ আদনানের। তিনি একজন বিচারপতির ছেলে। আসিফ আদনাল তাকে প্রভাবিত করেছেন।
অন্যদিকে সামিউনের সঙ্গে যোগাযোগ হয় একজন সরকারি কর্মকর্তার ছেলে তানজিলের
সঙ্গে। বাংলাদেশে অবস্থানকালে সামিউন সফর করে সিলেট, নবীগঞ্জ, ঢাকা ও
বিভিন্ন স্থান। সদস্য সংগ্রহ করে সিরিয়া ও মিয়ানমারে পাঠানোর জন্য।
বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড জানালোর কারণে সহযোগী সহ তাকে গ্রেপ্তার করা
হয়। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত জেলে রাখা হয়। এনআইএ’র মতে,
আমেরিকা ও ইসরাইলকে টার্গেট করার পর আল কায়েদার অগ্রাধিকারে রয়েছে
বাংলাদেশ ও ভারত। আল কায়েদা মনে করে, ধর্ম নিরপেক্ষ সরকারের বড় সুরক্ষক হলো
ভারত ও বাংলাদেশ। তাদের মতে ইসলামের বিরোধিতাকারী শক্তিশালী শত্রুরা হলো
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইসরাইল। অন্যদিকে জিহাদি তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে
কাশ্মির, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে, বাংলাদেশে ও মিয়ানমারে। ওদিকে জেল থেকে
মুক্ত হয়ে সামিউন রহমান আল কায়েদার সঙ্গে তার যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। সে
ভারত উপমহাদেশে একটি ঘাঁটি স্থাপনের জন্য চেষ্টা করে। চেষ্টা করে
রোহিঙ্গাদের জন্য লড়াই করতে। এক পর্যায়ে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে
পশ্চিমবঙ্গের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে সে। এ সময় তার কাছে
কোনো কাগজপত্র ছিল না। দিল্লি পুলিশকে সে বলেছেন, ২০১৭ সালের জুলাইয়ের
প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশী নাগরিক আবু আখতারের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। আবু
আখতার বাংলাদেশী নাগরিক এবং আল কায়েদার সক্রিয় সদস্য। আবু আখতার অবস্থান
করে ভারতে। সে ও তার সহযোগিরা সামিউনের ভারত প্রবেশে সহায়তা করে। সীমান্ত
অতিক্রম করে ভারতে যাওয়ার পর সামিউনকে আবু আখতার গাড়িতে করে নিয়ে যায়
হাজারিবাগে। তারপর রাঁচি থেকে একটি ট্রেনে চেপে দিল্লির পথ ধরে। সেখানে
গিয়ে অবস্থান করে ৫৪ দিন। গত বছর ১৭ই সেপ্টেম্বর দিল্লি পুলিশ খবর পায় যে,
রাজু ভাই নামে কেউ একজন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালানোর পরিকল্পনা করছে। এ
ঘটনায় বেরিয়ে আসে সামিউন রহমানের নাম। তাকে গ্রেপ্তারের পর জানায়, গত বছর
এপ্রিলে বাংলাদেশে আল কায়েদার সদস্য মাহিনের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। এর আগে
২০১১ সালে ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগে সামিউন রহমানকে লন্ডনের জেলে
পাঠানো হয়েছিল।
No comments