ওদের পরিবারের স্বপ্ন চুরমার by ফরিদউদ্দিন আহমেদ
তাদের
ঘিরে পরিবারগুলোর অনেক স্বপ্ন ছিল। অথচ সব স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্ন হয়ে গেল।
তৌহিদুল ইসলাম, শাহীন মিয়া, হাফিজুর রহমান ও দীপ্ত সরকার ছিলেন নিম্নবিত্ত
পরিবারের একমাত্র ভরসা। তারাই ছিলেন পরিবারের আলো। তাদের ঘিরেই পরিবারগুলো
শূন্যতার মাঝে পূর্ণতার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু সব আশা আর পূর্ণতার
প্রত্যাশা মিশে গিয়েছে হতাশার বালুচরে। স্বজনদের চোখে-মুখে এখন শুধু
দীর্ঘঃশ্বাস। নিজেদের অসহায় নিম্নবিত্ত পরিবারের হাল ধরার আশায় গত
ফেব্রুয়ারিতে কুয়েটে ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ময়মনসিংহের ভালুকায় স্কয়ার ফ্যাশন
কারখানায় শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তারা।
প্রত্যাশা ছিল একমাস পর বস্ত্র প্রকৌশলের স্বীকৃতি নিয়ে বের হবেন। একমাসের
জন্য ওই পোশাক কারখানার পাশে মাস্টারবাড়ী এলাকার ছয়তলা ভবনের তিনতলায় চার
বন্ধু মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন। গত ২৪শে মার্চ রাতে ময়মনসিংহের
ভালুকায় ওই ভবনের তৃতীয় তলায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হন কুয়েট ছাত্র
শাহীন মিয়া, হাফিজুর রহমান ও দীপ্ত সরকার। একই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই মারা
যান আরেক সহপাঠী তৌহিদুল ইসলাম। বাকি তিনজনকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে
ভর্তি করা হলে তারাও একে একে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ
(ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) বস্ত্র প্রকৌশল বিভাগের তিন মেধাবী শিক্ষার্থী
ভর্তি হন গত রোববার। তারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে প্রহর গুণছিলেন গত
পাঁচ-ছয় দিন ধরে। এদিকে রাতদিন এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে টাকা, রক্ত ও ওষুধসহ
যাবতীয় ব্যবস্থা করেও তিন বন্ধু হাফিজ, দীপ্ত ও শাহিনের কাউকে বাঁচানো গেল
না। ২০ থেকে ২৫ জন বন্ধু সর্বদা তাদের বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করলেও
বন্ধুদের ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে ওরা এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলেন
গেলেন। টানা চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বুধবার রাতে মারা যান শাহিন
মিয়া। এরপর মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন অপর দুজনও। হাফিজ বৃহস্পতিবার দিনগত
রাত দেড়টায় ও গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় দিকে দীপ্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তাদের স্মৃতিচারণ করে বন্ধু সাফোয়ান বলেন, তারা ছিল অত্যন্ত মেধাবী। এরা
সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা দশের তালিকায়। এমনকি পড়াশোনার বাইরেও তাদের আচরণ
ছিল মনে রাখার মতো। সবার সঙ্গে প্রাণ খুলে মিশতো। তাদের আরেক বন্ধু বলেন,
আমাদের সব চেষ্টা যেন বৃথা হয়ে গেল। তাদের পরিবারের জন্য আমরা কিছুই করতে
পারিনি। অনেকে সাহায্য- সহযোগিতা করেছে। তাতেও তারা ফিরে আসেনি। তাদের ঘিরে
পরিবারগুলোর অনেক স্বপ্ন ছিল। অথচ সব স্বপ্ন বাড়িওয়ালার ভুলে দুঃস্বপ্ন
হয়ে গেল। তিনি আরও বলেন, বন্ধুরা তো বাঁচেনি। কিন্তু তাদের পরিবারগুলোকে তো
বাঁচাতে হবে। এ ঘটনায় পুলিশ বাড়িওয়ালাকে আসামি করে মামলা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও মামলা করা হবে বলে জেনেছি। তবে আমাদের একটাই
দাবি- তাদের ক্ষতিপূরণ যেন অসহায় পরিবারগুলো দ্রুত পায়, সে ব্যবস্থা যেন
হয়। তা না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে নামব। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রোববার থেকে
কুয়েটের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল জলিলসহ
চারজন শিক্ষক ঢামেকে অবস্থান করেন। ওই ঘটনায় নিহত মো. তৌহিদুল ইসলাম অপুর
গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার শাহাজাহানপুর উপজেলার মাঝিরা গ্রামে। দীপ্ত
সরকারের বাড়ি মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার দীঘল গ্রামে। তার বাবা নেই। মো.
শাহীন মিয়ার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার খাস সাতবাড়িয়া গ্রামে।
তারও বাবা বেঁচে নেই। মো. হাফিজুর রহমান নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার
বান্দিপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে। তাদের সবার বয়স ২৩ থেকে ২৪ বছরের
মধ্যে। তারা প্রায় সবাই নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান বলে সহপাঠীরা
জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ নাঈম হাসান মানবজমিনকে বলেন, তাদের প্রত্যেকের লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রদের দুটি বাসে করে এবং ঢাকা থেকে মাইক্রোবাসে নিহতদের বাড়িতে গেছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করা হবে এবং পুলিশও মামলা করেছে। তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা আহতদের চিকিৎসার জন্য ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা করে। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ড থেকেও কিছু সহায়তা করা হয় তাদের। কিন্তু তারা তো বেঁচে নেই। এই টাকাগুলো হয়তো তাদের পরিবারকে দেয়া হবে। কারণ, তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই করুণ বলে এই শিক্ষক মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, শুরু থেকেই তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। শাহিনের ৮৩ শতাংশ, দীপ্তের ৫৪ এবং হাফিজের ৫৮ শতাংশ বার্ন হয়েছিল। তাদের সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গিয়েছিল। এ ধরনের রোগীকে বাঁচানো খুবই ক্রিটিক্যাল। তবুও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা চলে গেল।
এ বিষয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ নাঈম হাসান মানবজমিনকে বলেন, তাদের প্রত্যেকের লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রদের দুটি বাসে করে এবং ঢাকা থেকে মাইক্রোবাসে নিহতদের বাড়িতে গেছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করা হবে এবং পুলিশও মামলা করেছে। তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা আহতদের চিকিৎসার জন্য ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা করে। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ড থেকেও কিছু সহায়তা করা হয় তাদের। কিন্তু তারা তো বেঁচে নেই। এই টাকাগুলো হয়তো তাদের পরিবারকে দেয়া হবে। কারণ, তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই করুণ বলে এই শিক্ষক মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, শুরু থেকেই তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। শাহিনের ৮৩ শতাংশ, দীপ্তের ৫৪ এবং হাফিজের ৫৮ শতাংশ বার্ন হয়েছিল। তাদের সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গিয়েছিল। এ ধরনের রোগীকে বাঁচানো খুবই ক্রিটিক্যাল। তবুও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা চলে গেল।
No comments