নদী যেখানে মরা খাল by আবদুল আলীম
এক
সময় যে নদীতে থই থই করত পানি, তাতে চলত পাল তোলা নৌকা। কোথাও বা জাল দিয়ে
মাছ ধরত জেলে। তীরে কলসি কাঁখে কুলবধূ। কোথাও আবার কলার ভেলা ভাসিয়ে ছেলে
মেয়েরা খেলা করত। নাইতে নামত হাজারো নারী পুরুষ আর ছেলে-মেয়ে। কোথাও জল সেচ
দিয়ে কৃষকের জমিতে পানি দেয়ার উৎসব। হ্যাঁ এসব বর্ণনা নিছক নয় জয়পুরহাটের
ছোট যমুনা, চিরি নদী, তুলশী গঙ্গা আর হারাবতী নদীর নিত্য রূপ ছিল। কিন্তু
এখন এসব শুধুই সুখস্মৃতি। স্রোতহীন, জলহীন নদী এখন ফসলের মাঠ। নদীতে পানি
না থাকায় স্থানীয় চাষিরা নদী দখলে নিয়ে করছেন চাষাবাদ। আর চাষাবাদ করার
কারণেও নদীগুলো পরিণত হয়েছে মরা খালে। কোথাও দু-এক হাঁটু পানি থাকলেও তা
দখল করে চলছে চাষ। নাদী আর সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপযোগী না হয়ে হয়েছে
ব্যক্তিগত ফসল চাষের ক্ষেত্র। জয়পুরহাটের চার নদীর চিত্র এখন এমনই। প্রতি
বছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পলি জমে নদীগুলোর বুকে এখন ফসলের
মাঠের উপযোগী হওয়ায় এক শ্রেণির কৃষক এই সুযোগ নিচ্ছেন আর সেখানে চাষাবাদ
করছেন ধান, মিষ্টি আলুসহ নানা ফসল, চরছে গরু-ছাগলও। কোথাও কোথাও খেলার মাঠ
বানিয়ে তাতে মেতে উঠছে শিশু-কিশোরের দল। যে কারণে বর্ষায় নদীগুলোর গতিপথ
ঠিক না থাকায় অল্প পানিতেই দেখা দিচ্ছে বন্যা।
উজান থেকে নেমে আসা বর্ষার পানি নামতে পারে না ভাটিতে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে নদীর পানি দুই কূল ছাপিয়ে জনপদে ঢুকে সৃষ্টি করছে জলাবদ্ধতার। প্রতি বছর অস্বাভাবিক বন্যায় ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে হাজার হাজার মানুষ।
জেলা ত্রাণ ও কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, অকাল বন্যায় প্রতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সেই হিসাবে গত ১১ বছরে ক্ষতির পরিমাণ কয়েক শ’ কোটি টাকা। অথচ নদীগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নদী খননের প্রস্তাব পাঠালেও কোনো পদক্ষেপ নেই সরকারের। নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ সৃষ্টি করতে না পারলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এ এলাকায় মরু পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পানি বিশেষজ্ঞরা।
ভারতীয় সীমানার অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে জয়পুরহাট জেলায় প্রবেশ করেছে ছোট যমুনা ও চিরি নদী আর উত্তরের জেলা দিনাজপুর থেকে তুলসীগঙ্গা ও গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জের মাঠ থেকে হারাবতি নদীর সৃষ্টি। একসময় সারা বছর পানিতে ভরা থাকত নদীগুলো।
নৌকা চলত নিয়মিত, মাঝির গলায় উঠত গান আর দু-পারের কৃষি জমিতে সেচ চলত সেই পানি দিয়ে। নদীতে সারাবছর পানি থাকায় দু’পারের মানুষের সেতু বন্ধনের জন্য কিছুদূর পরপর তৈরি হয়েছে সেতু। দূরবর্তী এলাকার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সড়কপথের চেয়ে নদীপথ ব্যবহৃত হতো বেশি। পার্শ্ববর্তী জেলার সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যমই ছিল এই নদীগুলো। শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলো এখন খটখটে। সবুজে ভরে যায় তার বুক। বোরো মৌসুমে নদীর বুকে অগভীর নলকূপ বসিয়ে সেচকাজ করেন কৃষক।
১৯৮২ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে তুলসীগঙ্গা নদী খনন কাজ শুরু হলেও পরে অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। বাকি তিনটি নদী জন্মের পর কোনোদিনই খনন করা হয়নি বলে জানায় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বিভাগ। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য তৈরি স্লুইচ গেটগুলোও এখন অচল।
জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আপেল মাহমুদ জানান, প্রতি অর্থবছরই জেলার নদীগুলো খননের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ছোট যমুনা, তুলসীগঙ্গা, হারাবতি ও চিরি নদীর ১০২ কিলোমিটার খননের জন্য ১৩৪ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব পাঠানো হয় কিন্তু সরকার ও দাতা সংস্থার টানাপড়েনের কারণে তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বেসরকারিভাবেও নদী রক্ষায় নেই কোনো উদ্যোগ। পরিবেশ রক্ষার নামে দাতা সংস্থার কাছ থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার ফান্ড সংগ্রহ করলেও নদী রক্ষায় এগিয়ে আসেনি কোনো এনজিও।
পানি উন্নয়ন বিভাগে কর্মরত পানি বিশেষজ্ঞরা জানান, নদী খনন করে পানিপ্রবাহ সৃষ্টি করতে না পারলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা না হওয়ায় পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। স্থায়ী মরুভূমিতে পরিণত হবে জয়পুরহাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।
উজান থেকে নেমে আসা বর্ষার পানি নামতে পারে না ভাটিতে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে নদীর পানি দুই কূল ছাপিয়ে জনপদে ঢুকে সৃষ্টি করছে জলাবদ্ধতার। প্রতি বছর অস্বাভাবিক বন্যায় ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে হাজার হাজার মানুষ।
জেলা ত্রাণ ও কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, অকাল বন্যায় প্রতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সেই হিসাবে গত ১১ বছরে ক্ষতির পরিমাণ কয়েক শ’ কোটি টাকা। অথচ নদীগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নদী খননের প্রস্তাব পাঠালেও কোনো পদক্ষেপ নেই সরকারের। নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ সৃষ্টি করতে না পারলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এ এলাকায় মরু পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পানি বিশেষজ্ঞরা।
ভারতীয় সীমানার অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে জয়পুরহাট জেলায় প্রবেশ করেছে ছোট যমুনা ও চিরি নদী আর উত্তরের জেলা দিনাজপুর থেকে তুলসীগঙ্গা ও গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জের মাঠ থেকে হারাবতি নদীর সৃষ্টি। একসময় সারা বছর পানিতে ভরা থাকত নদীগুলো।
নৌকা চলত নিয়মিত, মাঝির গলায় উঠত গান আর দু-পারের কৃষি জমিতে সেচ চলত সেই পানি দিয়ে। নদীতে সারাবছর পানি থাকায় দু’পারের মানুষের সেতু বন্ধনের জন্য কিছুদূর পরপর তৈরি হয়েছে সেতু। দূরবর্তী এলাকার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সড়কপথের চেয়ে নদীপথ ব্যবহৃত হতো বেশি। পার্শ্ববর্তী জেলার সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যমই ছিল এই নদীগুলো। শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলো এখন খটখটে। সবুজে ভরে যায় তার বুক। বোরো মৌসুমে নদীর বুকে অগভীর নলকূপ বসিয়ে সেচকাজ করেন কৃষক।
১৯৮২ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে তুলসীগঙ্গা নদী খনন কাজ শুরু হলেও পরে অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। বাকি তিনটি নদী জন্মের পর কোনোদিনই খনন করা হয়নি বলে জানায় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বিভাগ। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য তৈরি স্লুইচ গেটগুলোও এখন অচল।
জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আপেল মাহমুদ জানান, প্রতি অর্থবছরই জেলার নদীগুলো খননের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ছোট যমুনা, তুলসীগঙ্গা, হারাবতি ও চিরি নদীর ১০২ কিলোমিটার খননের জন্য ১৩৪ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব পাঠানো হয় কিন্তু সরকার ও দাতা সংস্থার টানাপড়েনের কারণে তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বেসরকারিভাবেও নদী রক্ষায় নেই কোনো উদ্যোগ। পরিবেশ রক্ষার নামে দাতা সংস্থার কাছ থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার ফান্ড সংগ্রহ করলেও নদী রক্ষায় এগিয়ে আসেনি কোনো এনজিও।
পানি উন্নয়ন বিভাগে কর্মরত পানি বিশেষজ্ঞরা জানান, নদী খনন করে পানিপ্রবাহ সৃষ্টি করতে না পারলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা না হওয়ায় পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। স্থায়ী মরুভূমিতে পরিণত হবে জয়পুরহাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।
No comments