চার বন্ধুর ছিনতাই মিশনে খুন হয় মাহিদ by ওয়েছ খছরু
চার
বন্ধুর ছিনতাই মিশনে খুন হয়েছে সিলেটের মাহিদ আল সালাম। রিকশায় যাচ্ছিলো
মাহিদ। এ সময় চায়ের দোকানে বসা তারা চারজন। মাহিদকে দেখেই তারা মোটরসাইকেল
স্টার্ট দেয়। কিছু দূর যাওয়ার পর তারা মাহিদকে ঘিরে ফেলে। এরপর মাহিদের কাছ
থেকে সর্বস্ব ছিনতাইকালে তারা উরুতে ছুরিকাঘাত করে। এতে মাটিতে লুটে পড়ে
মাহিদ। আর সব কিছু নিয়ে পালিয়ে যায় ওই চার ছিনতাইকারী। সিলেটে আলোচিত মাহিদ
খুন ও ছিনতাইয়ের ঘটনার রহস্য খোলাসা করেছে পুলিশ। এরই মধ্যে পুলিশ চারজনের
মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া মীর্জা আতিক নামের এক
ছিনতাইকারী আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। আর গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া রাসেলকে ৫
দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। এর আগে পুলিশ বুধবার
খুন ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত রিপনকেও তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ
করছে। পুলিশ সূত্র জানায়, কাজী আতিক খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার
করেছে। এবং তার অপর তিন সহযোগীর নামও বলে। খুনের ঘটনাকালীন সময়েরও বিবরণ
দেয় কাজী আতিক। ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ার কারণেই এ খুন তা পরিস্কার। সিলেটের
দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল জানান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মাহিদ আল সালাম খুনের ঘটনায় জড়িত দক্ষিণ
সুরমার বারোখলা গ্রামের রাসেলকে গতকাল ভোররাতে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাসেলকে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
মামুনুর রশীদ সিদ্দিকীর আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চায়। আদালত তার ৫
দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এখন তাকে পুলিশি হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা
হচ্ছে। তিনি জানান, খুনিদের মোটরসাইকেলসহ মোবাইল ফোন উদ্ধারের চেষ্টা
চলছে। মাহিদ আল সালাম সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক ছাত্র। তার পিতা অ্যাডভোকেট আবদুস
সালাম একজন নামকরা আইনজীবী ছিলেন। নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় তাদের বাসা।
মাহিদ গত রোববার রাতে ব্যাংকের চাকরির ইন্টারভিউ দিতে ঢাকায় যাওয়ার জন্য
নিজ বাসা থেকে বের হয়। রাত ১টার দিকে সে ক্বীন ব্রিজ এলাকা পাড়ি দেয়। এরপর
রাত ৩টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাহিদকে কদমতলী এলাকায় পাওয়া যায়। সেখান
থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে
ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠে সিলেট। খুনিদের
গ্রেপ্তার দাবিতে শাবির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে।
কাফনের কাপড় পরে তারা রাস্তা অবরোধ করে। এতে টনক নড়ে প্রশাসনের। বিক্ষুব্ধ
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পুলিশ অভিযান শুরু করে। বুধবার ভোররাতে পুলিশ
নগরীর মির্জা আতিক ও রিপনকে গ্রেপ্তার করে। মির্জা আতিক সিলেটের দক্ষিণ
সুরমার ভার্তখলা ৬১নং বাসার মির্জা মকবুলের ছেলে। তায়েফ আহমদ রিপন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা গ্রামের বাসিন্দা ইউনুস আলীর ছেলে। বর্তমানে সে
নগরীর কাজিরবাজার পুলিশ স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন। এদিকে মির্জা আতিক আদালতে
দেয়া স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে, গত রোববার রাতে আতিক, রিপনসহ চার ছিনতাইকারী
ক্বীনব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে ফুয়াদ রেস্টুরেন্টে বসেছিল। এ সময় রিকশাযোগে
একটি ছেলেকে মোবাইলে কথা বলে আসতে দেখে তারা। দুই মোটরসাইকেলে তারা চারজন
রিকশার গতিরোধ করে। ছিনতাইকালে বাধা দেয়ায় মাহিদের উরুতে ছুরিকাঘাত করে
মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। হত্যাকাণ্ডের পর সোমবার
সিসিটিভির ফুটেজ দেখে চার ছিনতাইকারীকে শনাক্ত করে পুলিশ। মঙ্গলবার
মধ্যরাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের চাচা সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের
সাংগঠনিক সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল বাদী হয়ে আতিক, রিপনসহ চারজনের
নামোল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে তারা ছিনতাই
করতে গিয়ে মাহিদকে হত্যার বর্ণনা দেয়। এ ঘটনায় মির্জা আতিক আদালতে
স্বীকারোক্তি দিলেও তায়েফ আহমদ রিপন স্বীকার না করায় তার ৭ দিনের রিমান্ড
আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
No comments