দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতার লড়াই
দক্ষিণ
এশিয়ায় ক্ষমতার তীব্র লড়াই চলছে। সে লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র,
ভারত, চীন ও পাকিস্তান। বিশেষত কাশ্মীর ও চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর
(সিপিইসি)কে কেন্দ্র করে এ লড়াই ক্রমশ উত্তেজনায় পূর্ণ হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস
দমনে ব্যর্থতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যখন পাকিস্তানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে
নিচ্ছে, তখন পাকিস্তান পূর্বমুখী নীতি গ্রহণ করেছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক
উন্নত করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে পাকিস্তান বেছে নিয়েছে চীনকে।
জন্মের পর থেকেই উত্তেজনায় আচ্ছন্ন থাকা ভারত ও পাকিস্তান। উভয় দেশের কাছেই আছে পারমাণবিক অস্ত্র। শেষ পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার বা ক্ষমতার এ লড়াইয়ে কে জিতবে! এ বিষয়ে একটি বিশ্লেষণ দাঁড় করেছেন সাংবাদিক ফাহাদ শাহ। তিনি একজন সাংবাদিক ও ‘দ্য কাশ্মীর ওয়ালা’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক। সম্প্রতি তিনি দ্য ডিপ্লোম্যাট-এ ‘ট্রাম্প, পাকিস্তান অ্যান্ড কাশ্মীর’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। তার শুরুতেই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। তা হলো- যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের পরিবর্তন কি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ও কাশ্মীর ইস্যুতে কোনো প্রভাব ফেলবে? এরপরই তিনি বিশ্লেষণ শুরু করেন। তাতে লিখেছেন, ২০১৮ সালের প্রথম দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে একটি বার্তা দেন। তাতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানের প্রতি তার দেশের নীতি পরিবর্তনের কথা জানান। আফগানিস্তানে ১৭ বছরের যুদ্ধে এই পাকিস্তান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গী বা অংশীদার। ট্রাম্পের ওই ঘোষণার একদিন পরেই হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করে যে, পাকিস্তানকে ২৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সামরিক সহায়তা কর্তন করা হবে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তান। এর আগে পাকিস্তানকে দেয়া ১৩০ কোটি ডলারের বার্ষিক সহায়তা কর্তনের ঘোষণা দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওই ঘোষণায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পাকিস্তানের জন্য। কারণ, এ দেশটি অনেক ইস্যুতে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সংঘাতময় অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে তার মধ্যে প্রধান ইস্যু হলো কাশ্মীরের মর্যাদা। ফাহাদ শাহ আরো লিখেছেন, ১৯৪৭ সালে বৃটিশদের কাছ থেকে দেশভাগের পর জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তানের। সেই জন্মের পর থেকেই প্রকৃতপক্ষে কখনোই শান্তি নেই দেশ দুটির মধ্যে। এই সংঘাতের মূলে রয়েছে মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু ও কাশ্মীর, যা সাধারণভাবে কাশ্মীর নামে পরিচিত- তাকে ঘিরে। এই কাশ্মীরের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে উভয় দেশই। সেই অংশ দুটিকে আলাদা করেছে নিয়ন্ত্রণ রেখা। শেষ পর্যন্ত ওই নিয়ন্ত্রণ রেখায়ও উত্তেজনা বিরাজমান। দু’দেশের মধ্যে গোলা ও বুলেট বিনিময় হচ্ছে মাঝে মধ্যেই। এর ফলে অনেক সেনা সদস্য ও বেসামরিক মানুষ মারা যাচ্ছেন। এ ছাড়া কাশ্মীরের ভেতরেও সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৩৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি সহায়তা পেয়েছে পাকিস্তান। এখন যুক্তরাষ্ট্রের ২০০ কোটিরও বেশি মোট সহায়তা জব্দ করায় তাদের সম্পর্ক শীতলতা, তিক্ততায় পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নুয়ার্ট বলেছেন, পাকিস্তান সরকার যতদিন আফগান তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেবে, ততদিন পাকিস্তানকে দেয়া জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সহায়তা স্থগিত করা হচ্ছে। এটি নিশ্চিত। ওদিকে সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের মতে, ১৯৫১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে পাকিস্তানকে প্রায় ৬৭০০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আবার যখন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে, এর প্রভাব পড়বে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে। তার প্রভাব পড়বে কাশ্মীর বিরোধেও। ‘নট ওয়ার, নট পিস: মোটিভেটিং পাকিস্তান টু প্রিভেন্ট ক্রস-বর্ডার টেরোরিজম’ বইটির সহ-লেখক টনি ডালটন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সম্পর্কের এই অবনতির কি প্রভাব পড়বে এ অঞ্চলে তা আগেভাগে পূর্বাভাস দেয়া কঠিন। তার ভাষায়, কাশ্মীর উত্তেজনার অনেকগুলো নির্ণায়ক আছে। বিশেষ করে তা হলো ভারত ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরে। এখানে আফগানিস্তান কিন্তু সুস্পষ্টভাবে আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রতিযোগিতায় আছে। ডালটন বলেন, ভবিষ্যতে আফগানিস্তানে ভারতীয় কোনো স্বার্থে যদি অধিক পরিমাণে হামলা হয় তাহলে তাতে আমি বিস্মিত হবো না। ডালটন আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও এই অঞ্চলে আরো অনেক দেশ ভারতের উত্থানে সুযোগ দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। পাকিস্তানি নেতারা দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা দেখতে পেয়েছেন, ভারতের দিকে ঘুরে গিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ভারতের স্বার্থ রয়েছে আফগানিস্তানে। তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে বিনিয়োগ করছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) নাসের খান জানজুয়া সতর্ক করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক যুদ্ধের বাস্তব আশঙ্কা রয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। বলেন, বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের নীতি অনুসরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। ফাহাদ শাহ’র ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে এ অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক যে ধারা চলছে তার মূলে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতার লড়াই। নাসের খান জানজুয়া ইসলামাবাদে বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাবকে টেক্কা দিতে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি)-এর বিরুদ্ধে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে ওয়াশিংটন। সিপিইসি’তে ৬০০০ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই করিডোর পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করেছে। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ দাবি করে ভারত। তাই তারা ওই করিডোরের বিরোধিতা করছে। ব্রুকলিন ইনস্টিটিউশনের নয়াদিল্লিস্থ ভারত অফিসের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক ফেলো ধ্রুব জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, পাকিস্তানের দিকে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে ঝুঁকে পড়েছে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায়। তবে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমানে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর প্রতি পাকিস্তানের সমর্থন বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পাকিস্তানের অনীহা বা অসামর্থ্য ওয়াশিংটনকে হতাশ করেছে। এতে ভারতের জন্য কিছু সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ওদিকে সিপিইসির অংশ হিসেবে পাকিস্তানে অধিকহারে বিনিয়োগ করছে চীন। ভারতে চীনের যে বিনিয়োগ আছে সম্ভবত পাকিস্তানে তার চেয়ে সামান্য বেশি আছে। জয়শঙ্কর মনে করেন, এটার সবচেয়ে বড় প্রভাব হলো মনস্তাত্ত্বিক। তিনি বলেন, পাকিস্তানের অনেকেই বিশ্বাস করেন, তারা বেইজিংয়ের কাছ থেকে নতুন মাত্রায় সমর্থন পাচ্ছেন। আর এই সমর্থনের কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লি। ফলে এখন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে ভারত। আর পাকিস্তান তাকিয়ে আছে পূর্ব চীনের দিকে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খুররম দস্তগির বলেছেন, ইসলামাবাদ এখন রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গাড় করছে। একই রকম সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে ইউরোপের সঙ্গে। এর কারণ, চীনকে দমাতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এ ছাড়া ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যু একটি অন্যতম বিষয়। এ সমস্যা যুগ যুগ ধরে বিদ্যমান।
জন্মের পর থেকেই উত্তেজনায় আচ্ছন্ন থাকা ভারত ও পাকিস্তান। উভয় দেশের কাছেই আছে পারমাণবিক অস্ত্র। শেষ পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার বা ক্ষমতার এ লড়াইয়ে কে জিতবে! এ বিষয়ে একটি বিশ্লেষণ দাঁড় করেছেন সাংবাদিক ফাহাদ শাহ। তিনি একজন সাংবাদিক ও ‘দ্য কাশ্মীর ওয়ালা’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক। সম্প্রতি তিনি দ্য ডিপ্লোম্যাট-এ ‘ট্রাম্প, পাকিস্তান অ্যান্ড কাশ্মীর’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। তার শুরুতেই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। তা হলো- যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের পরিবর্তন কি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ও কাশ্মীর ইস্যুতে কোনো প্রভাব ফেলবে? এরপরই তিনি বিশ্লেষণ শুরু করেন। তাতে লিখেছেন, ২০১৮ সালের প্রথম দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে একটি বার্তা দেন। তাতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানের প্রতি তার দেশের নীতি পরিবর্তনের কথা জানান। আফগানিস্তানে ১৭ বছরের যুদ্ধে এই পাকিস্তান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গী বা অংশীদার। ট্রাম্পের ওই ঘোষণার একদিন পরেই হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করে যে, পাকিস্তানকে ২৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সামরিক সহায়তা কর্তন করা হবে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তান। এর আগে পাকিস্তানকে দেয়া ১৩০ কোটি ডলারের বার্ষিক সহায়তা কর্তনের ঘোষণা দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওই ঘোষণায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পাকিস্তানের জন্য। কারণ, এ দেশটি অনেক ইস্যুতে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সংঘাতময় অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে তার মধ্যে প্রধান ইস্যু হলো কাশ্মীরের মর্যাদা। ফাহাদ শাহ আরো লিখেছেন, ১৯৪৭ সালে বৃটিশদের কাছ থেকে দেশভাগের পর জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তানের। সেই জন্মের পর থেকেই প্রকৃতপক্ষে কখনোই শান্তি নেই দেশ দুটির মধ্যে। এই সংঘাতের মূলে রয়েছে মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু ও কাশ্মীর, যা সাধারণভাবে কাশ্মীর নামে পরিচিত- তাকে ঘিরে। এই কাশ্মীরের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে উভয় দেশই। সেই অংশ দুটিকে আলাদা করেছে নিয়ন্ত্রণ রেখা। শেষ পর্যন্ত ওই নিয়ন্ত্রণ রেখায়ও উত্তেজনা বিরাজমান। দু’দেশের মধ্যে গোলা ও বুলেট বিনিময় হচ্ছে মাঝে মধ্যেই। এর ফলে অনেক সেনা সদস্য ও বেসামরিক মানুষ মারা যাচ্ছেন। এ ছাড়া কাশ্মীরের ভেতরেও সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৩৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি সহায়তা পেয়েছে পাকিস্তান। এখন যুক্তরাষ্ট্রের ২০০ কোটিরও বেশি মোট সহায়তা জব্দ করায় তাদের সম্পর্ক শীতলতা, তিক্ততায় পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নুয়ার্ট বলেছেন, পাকিস্তান সরকার যতদিন আফগান তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেবে, ততদিন পাকিস্তানকে দেয়া জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সহায়তা স্থগিত করা হচ্ছে। এটি নিশ্চিত। ওদিকে সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের মতে, ১৯৫১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে পাকিস্তানকে প্রায় ৬৭০০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আবার যখন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে, এর প্রভাব পড়বে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে। তার প্রভাব পড়বে কাশ্মীর বিরোধেও। ‘নট ওয়ার, নট পিস: মোটিভেটিং পাকিস্তান টু প্রিভেন্ট ক্রস-বর্ডার টেরোরিজম’ বইটির সহ-লেখক টনি ডালটন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সম্পর্কের এই অবনতির কি প্রভাব পড়বে এ অঞ্চলে তা আগেভাগে পূর্বাভাস দেয়া কঠিন। তার ভাষায়, কাশ্মীর উত্তেজনার অনেকগুলো নির্ণায়ক আছে। বিশেষ করে তা হলো ভারত ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরে। এখানে আফগানিস্তান কিন্তু সুস্পষ্টভাবে আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রতিযোগিতায় আছে। ডালটন বলেন, ভবিষ্যতে আফগানিস্তানে ভারতীয় কোনো স্বার্থে যদি অধিক পরিমাণে হামলা হয় তাহলে তাতে আমি বিস্মিত হবো না। ডালটন আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও এই অঞ্চলে আরো অনেক দেশ ভারতের উত্থানে সুযোগ দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। পাকিস্তানি নেতারা দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা দেখতে পেয়েছেন, ভারতের দিকে ঘুরে গিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ভারতের স্বার্থ রয়েছে আফগানিস্তানে। তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে বিনিয়োগ করছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) নাসের খান জানজুয়া সতর্ক করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক যুদ্ধের বাস্তব আশঙ্কা রয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। বলেন, বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের নীতি অনুসরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। ফাহাদ শাহ’র ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে এ অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক যে ধারা চলছে তার মূলে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতার লড়াই। নাসের খান জানজুয়া ইসলামাবাদে বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাবকে টেক্কা দিতে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি)-এর বিরুদ্ধে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে ওয়াশিংটন। সিপিইসি’তে ৬০০০ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই করিডোর পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করেছে। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ দাবি করে ভারত। তাই তারা ওই করিডোরের বিরোধিতা করছে। ব্রুকলিন ইনস্টিটিউশনের নয়াদিল্লিস্থ ভারত অফিসের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক ফেলো ধ্রুব জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, পাকিস্তানের দিকে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে ঝুঁকে পড়েছে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায়। তবে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমানে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর প্রতি পাকিস্তানের সমর্থন বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পাকিস্তানের অনীহা বা অসামর্থ্য ওয়াশিংটনকে হতাশ করেছে। এতে ভারতের জন্য কিছু সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ওদিকে সিপিইসির অংশ হিসেবে পাকিস্তানে অধিকহারে বিনিয়োগ করছে চীন। ভারতে চীনের যে বিনিয়োগ আছে সম্ভবত পাকিস্তানে তার চেয়ে সামান্য বেশি আছে। জয়শঙ্কর মনে করেন, এটার সবচেয়ে বড় প্রভাব হলো মনস্তাত্ত্বিক। তিনি বলেন, পাকিস্তানের অনেকেই বিশ্বাস করেন, তারা বেইজিংয়ের কাছ থেকে নতুন মাত্রায় সমর্থন পাচ্ছেন। আর এই সমর্থনের কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লি। ফলে এখন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে ভারত। আর পাকিস্তান তাকিয়ে আছে পূর্ব চীনের দিকে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খুররম দস্তগির বলেছেন, ইসলামাবাদ এখন রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গাড় করছে। একই রকম সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে ইউরোপের সঙ্গে। এর কারণ, চীনকে দমাতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এ ছাড়া ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যু একটি অন্যতম বিষয়। এ সমস্যা যুগ যুগ ধরে বিদ্যমান।
No comments