ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা
ঋণ
নিয়ে তা ফেরত না দেয়ার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না
বললেই চলে। এতে কমে গেছে ব্যাংকের নগদ আদায়। আবার আমানতের সুদহার কম হওয়ায়
দীর্ঘ দিন ধরে আমানত প্রবাহ কমে গেছে। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে ডলার
সঙ্কট। ডলার সঙ্কটের কারণে ব্যাংকগুলো প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নগদ
টাকার বিপরীতে ডলার কিনছে। চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত প্রায় দেড় শ’ কোটি
ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে তুলে নিয়েছে
প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। নতুন করে বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে নিয়ম
রক্ষার জন্য সরকারি তহবিল প্রত্যাহার করা হচ্ছে। সব মিলে ব্যাংকিং খাতে এখন
নগদ টাকার জন্য ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বেশির ভাগ ব্যাংকেই এখন নগদ টাকার
সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সামনে রমজান। আমদানি ব্যয় আরো বেড়ে যেতে পারে। রফতানি
আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ না বাড়লে সামনে ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা আরো বেড়ে
যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা। ঋণ আদায় কমে গেছে : ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে
পরিশোধ না করার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে এক দিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে
যাচ্ছে। কিন্তু এর বিপরীতে কমে যাচ্ছে আদায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ
পরিসংখ্যান মতে, তিন মাসে এক লাখ আট হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বিপরীতে
আদায় হয়েছে মাত্র চার হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায়ের হার
মাত্র ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। গত জুন শেষে অবলোপনসহ মোট খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ আট
হাজার কোটি টাকা।
কিন্তু এর মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র চার হাজার আট কোটি
টাকা। খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকেরই প্রায় অর্ধেক। কিন্তু
আদায় হয়েছে সবচেয়ে কম। যেমন ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের জুন শেষে অবলোপনসহ
মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৫৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে মাত্র ৬৫২
কোটি টাকা, যা শতকরা হিসাবে মাত্র ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে সোনালী
ব্যাংকের ১৭ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকার বিপরীতে ২০৮ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে।
আদায়ের হার মাত্র ১ দশমিক ১৭ শতাংশ। জনতা ব্যাংকের ৯ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকার
বিপরীতে আদায় হয়েছে ২০০ কোটি টাকা, আদায়ের হার মাত্র ২ শতাংশ। অগ্রণী
ব্যাংকের ১০ হাজার ৮৫১ কোটি টাকার মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র ২১৫ কোটি টাকা।
আদায়ের হার মাত্র ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বিপরীতে সবচেয়ে কম আদায়
হয়েছে বেসিক ব্যাংকের। সাত হাজার ৪২৪ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র
৫৩ লাখ টাকা। আর রূপালী ব্যাংকের ৪৮৮ কোটি টাকার মাত্র ৪০ কোটি টাকা।
আদায়ের হার মাত্র শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ। আবার বেসরকারি বাণিজ্যিক
ব্যাংকগুলো ৪৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায় হয়েছে এক
হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আদায়ের হার মাত্র ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ৪০টি বেসরকারি
ব্যাংকের মধ্যে ১৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে মোট খেলাপির ঋণের ১
শতাংশের নিচে। শুধু খেলাপি ঋণই আদায়ের হার কমেনি, ব্যাংকের খাতায় যেসব ঋণ
নিয়মিত দেখানো হচ্ছে ওই সব ঋণও এখন আদায় হচ্ছে না। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত
ব্যাংকগুলোতে এ প্রবণতা বেশি। সরকারি ছয় ব্যাংকের প্রায় ৯০ হাজার কোটি
টাকার নিয়মিত ঋণের মধ্যে তিন মাসে আদায় হয়েছে মাত্র সাড়ে ৫ কোটি টাকা।
সরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রেই নিয়মিত ঋণ আদায় কমে যায়নি, কিছু কিছু
বেসরকারি ব্যাংকের আদায়ের হার খুবই কম। যেমন ১৩টি ব্যাংকের নিয়মিত ঋণের এক
টাকাও আদায় হয়নি আলোচ্য তিন মাসে। আর বাকি তিনটি ব্যাংকের আদায়ের হার ১০
শতাংশের নিচে রয়েছে। গত জুনের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতে মোট
নিয়মিত ঋণ রয়েছে ছয় লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সামগ্রিকভাবে আদায়
দেখানো হয়েছে ১৯ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর আদায়ের হার
দুই অঙ্কের ঘরে অর্থাৎ ২০ শতাংশের মধ্যে থাকলেও সরকারি ব্যাংকগুলোর অবস্থা
খুবই নাজুক। যেমন আলোচ্য সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে নিয়মিত ঋণ
আদায়ের দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ অগ্রণী ব্যাংকের। ব্যাংকটির ১৭ হাজার ৪৭০
কোটি টাকার নিয়মিত ঋণের মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র ৫৬ কোটি টাকা। আদায়ের হার
মাত্র শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ। সোনালী ব্যাংকের ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার
মধ্যে তিন মাসে আদায় হয়েছে মাত্র এক হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। আদায়ের হার মাত্র
সাড়ে ৬ শতাংশ। রূপালী ব্যাংকের ১৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আদায় হয়েছে সাড়ে
চার শ’ কোটি টাকা। আদায়ের হার মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ। আর নিয়মিত ঋণের বিপরীতে
বেসিক ব্যাংকের সাড়ে ১২ শতাংশ ও জনতা ব্যাংকের আদায় হয়েছে প্রায় ৮ শতাংশ।
তবে সংশ্লিষ্ট এক ব্যাংকার জানান, ব্যাংকগুলো যে আদায় দেখাচ্ছে তার বড় একটি
অংশ কৃত্রিম। কারণ একই গ্রাহককে বেশি পরিমাণ ঋণ দিয়ে আবার ওই ঋণ আদায়
দেখানো হচ্ছে। ঋণ আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
কমে গেছে আমানত প্রবাহ : বিনিয়োগের গতি শ্লথ হওয়ায় দু-তিন বছর ধরে
ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কমিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ সুদের হার ব্যাংক
রেট অর্থাৎ ৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। ফলে সাধারণ গ্রাহক ব্যাংক থেকে
আমানত তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ
পরিসংখ্যান মতে, গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হয়েছে
প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা। অনেকেই সঞ্চয়পত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ
খাতে বিনিয়োগ করেছেন। এতেই সামগ্রিকভাবে আমানতের প্রবাহ কমে গেছে।
ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী বিনিয়োগ : এক দিকে নগদ আদায় কমে গেছে, অন্য দিকে কমছে
আমানতের প্রবাহ; কিন্তু এর পরও কোনো কোনো ব্যাংক আগ্রাসী ব্যাংকিং করেছেন।
অর্থসংস্থান না করেই দেদারচ্ছে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলেছে। ফলে আমদানি
প্রবাহ গত নভেম্বরে এসে ৩০ শতাংশ ছেড়ে যায়। আর বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ২০ শতাংশের
কাছাকাছি চলে যায়।
ডলারের সঙ্কট বেড়ে যায় : এ দিকে ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে ব্যাংকিং খাতে ডলারের সঙ্কট বেড়ে যায়। দীর্ঘ দিন ধরে দেশের স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা দেখা যায়। ডলারের চাহিদা না থাকায় একসময় যেখানে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করত, সেখানে ডলারের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকগুলোর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাততে হয়। গত নভেম্বর থেকে এ সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করে। নিরুপায় বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ করতে থাকে। এর পরও ৭৯ টাকার ডলার এখন ৮৩ টাকায় উঠে গেছে। প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। গতকাল সোমবারও আটটি ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করেছে এক কোটি ৮০ লাখ ডলার। যদিও চাহিদা ছিল ১০ কোটি ডলারের ওপরে। সব মিলে চলতি অর্থবছরের গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় দেড় শ’ কোটি ডলার বিক্রি করেছে ব্যাংকগুলোর কাছে। এর বিপরীতে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। সামনে এ চাপ অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ দিকে ফারমার্স ব্যাংকের জের ধরে সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যাংক থেকে আমানত প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এর কারণ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানের তহবিলের ৭৫ শতাংশ সরকারি ব্যাংকে এবং ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখতে হবে। কিন্তু বেশি মুনাফার আশায় বা অনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান তার তহবিলের শতভাগ বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখে। এর ফলে পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ অনেক প্রতিষ্ঠানের তহবিল ফারমার্স ব্যাংকে আটকে গেছে। শুধু জলবায়ু তহবিলেরই ৫০৩ কোটি টাকা আটকে গেছে ফারমার্স ব্যাংকে। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় নিয়ম রক্ষার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান এখন বেসরকারি ব্যাংক থেকে তহবিল প্রত্যাহার করে সরকারি ব্যাংকে রাখছে। রাতারাতি তহবিল প্রত্যাহার করায় অনেক ব্যাংকই এখন নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, বাস্তবতা হলো অনেক ব্যাংকই তীব্র তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অনেকেই আমানতকারীদের অর্থ ফেরত না দিয়ে সুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক ব্যাংক ঋণসঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করছে। ঋণ মঞ্জুর করেও তা বিনিয়োগ করতে পারছে না। এ দিকে বছর শেষ হলেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ আমানতের অনুপাত কমিয়ে আনার খড়গ ঝুলছে। অর্থাৎ প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ৮৩ শতাংশে এবং ইসলামি ব্যাংকগুলোকে ৮৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। রাতারাতি ঋণ আদায় করা যাবে না, ফলে আমানত সংগ্রহ করেই এ অনুপাত কমিয়ে আনতে হবে। কিন্তু আমানত সরবরাহ না বাড়ার আশঙ্কাই রয়েছে। ফলে বছরের শেষ সময়ে এসে আমানত সংগ্রহ নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে যাবে। সব মিলে সামনে ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনি সঙ্কেত বিরাজ করছে। পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে না রাখলে এ খাতের অস্থিরতা আরো বেড়ে যাবে।
ডলারের সঙ্কট বেড়ে যায় : এ দিকে ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে ব্যাংকিং খাতে ডলারের সঙ্কট বেড়ে যায়। দীর্ঘ দিন ধরে দেশের স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা দেখা যায়। ডলারের চাহিদা না থাকায় একসময় যেখানে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করত, সেখানে ডলারের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকগুলোর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাততে হয়। গত নভেম্বর থেকে এ সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করে। নিরুপায় বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ করতে থাকে। এর পরও ৭৯ টাকার ডলার এখন ৮৩ টাকায় উঠে গেছে। প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। গতকাল সোমবারও আটটি ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করেছে এক কোটি ৮০ লাখ ডলার। যদিও চাহিদা ছিল ১০ কোটি ডলারের ওপরে। সব মিলে চলতি অর্থবছরের গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় দেড় শ’ কোটি ডলার বিক্রি করেছে ব্যাংকগুলোর কাছে। এর বিপরীতে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। সামনে এ চাপ অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ দিকে ফারমার্স ব্যাংকের জের ধরে সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যাংক থেকে আমানত প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এর কারণ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানের তহবিলের ৭৫ শতাংশ সরকারি ব্যাংকে এবং ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখতে হবে। কিন্তু বেশি মুনাফার আশায় বা অনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান তার তহবিলের শতভাগ বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখে। এর ফলে পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ অনেক প্রতিষ্ঠানের তহবিল ফারমার্স ব্যাংকে আটকে গেছে। শুধু জলবায়ু তহবিলেরই ৫০৩ কোটি টাকা আটকে গেছে ফারমার্স ব্যাংকে। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় নিয়ম রক্ষার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান এখন বেসরকারি ব্যাংক থেকে তহবিল প্রত্যাহার করে সরকারি ব্যাংকে রাখছে। রাতারাতি তহবিল প্রত্যাহার করায় অনেক ব্যাংকই এখন নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, বাস্তবতা হলো অনেক ব্যাংকই তীব্র তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অনেকেই আমানতকারীদের অর্থ ফেরত না দিয়ে সুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক ব্যাংক ঋণসঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করছে। ঋণ মঞ্জুর করেও তা বিনিয়োগ করতে পারছে না। এ দিকে বছর শেষ হলেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ আমানতের অনুপাত কমিয়ে আনার খড়গ ঝুলছে। অর্থাৎ প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ৮৩ শতাংশে এবং ইসলামি ব্যাংকগুলোকে ৮৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। রাতারাতি ঋণ আদায় করা যাবে না, ফলে আমানত সংগ্রহ করেই এ অনুপাত কমিয়ে আনতে হবে। কিন্তু আমানত সরবরাহ না বাড়ার আশঙ্কাই রয়েছে। ফলে বছরের শেষ সময়ে এসে আমানত সংগ্রহ নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে যাবে। সব মিলে সামনে ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনি সঙ্কেত বিরাজ করছে। পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে না রাখলে এ খাতের অস্থিরতা আরো বেড়ে যাবে।
No comments