আবারও শ্রমিকের মৃত্যু
সিলেটের
কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের সময় গর্ত ধসে
ছয় শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা শুধু দুঃখজনক নয়, অনভিপ্রেতও বটে। এই নিয়ে এ রকম
গর্ত ধসে গত ১৩ মাসে ৫০ জন পাথরশ্রমিক নিহত হলেও তা নিয়ে যেন কারও কোনো
মাথাব্যথা নেই। মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত রোববার রাতে
কোম্পানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকার হাজিরডেগনায় ফসলি জমিতে গর্ত করে
অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের সময় ধসে ১০ শ্রমিক চাপা পড়েন। এঁদের মধ্যে ৫ জন
মারা যান। সোমবার জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর পাথর কোয়ারিতে গর্ত ধসে আরও এক
শ্রমিকের মৃত্যু হয়। পাথরশ্রমিকেরা সাধারণত পাথর কোয়ারিতে মাটির তলদেশে
বোমা মেশিন নামের পাওয়ার পাম্পযন্ত্র দিয়ে পাথর উত্তোলন করে থাকেন। কিন্তু
বোমা মেশিন ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ মাটির স্তরের পরিবর্তন হয়। এতে ভূমিধস
হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ আশঙ্কা থেকেই বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি এটা
নিষিদ্ধ করার জন্য উচ্চ আদালতের কাছে আবেদন করে। পরে উচ্চ আদালতের
নির্দেশনায় পরিবেশ অধিদপ্তর ২০১০ সালে এই বোমা মেশিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ
করে।
কিন্তু এরপরও এ যন্ত্রের ব্যবহার থামেনি। ফলে ঘটে চলেছে গর্ত ধসের
ঘটনা। আর এরই মাশুল গুনতে হলো কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরের ছয়
পাথরশ্রমিককে। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জসহ ছয়টি উপজেলার পাহাড় ও টিলা কাটার ওপর
আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পাহাড় ও টিলা
কাটা চলছেই। টিলা খুঁড়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে যে শুধু
মানুষের প্রাণহানি ঘটছে তা নয়, গুরুতর বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে সংশ্লিষ্ট
এলাকার প্রকৃতি এবং পরিবেশও। এভাবে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের পেছনে রয়েছে
একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এসব ব্যবসায়ী ‘পাথরখেকো’ হিসেবে পরিচিত। বছরের
পর বছর ধরে তাঁরা শ্রমিকদের দিয়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করালেও তাঁদের
বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাহলে স্থানীয়
প্রশাসন কী করছে? আর পরিবেশ অধিদপ্তরই–বা বসে আছে কেন? এসব অসাধু ব্যবসায়ীর
বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া গেলে পাথর উত্তোলন এবং গর্ত ধসে এভাবে
শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটত না। স্থানীয় প্রশাসনেরও কি এতে স্বার্থ
রয়েছে? কেননা, তাদের সহযোগিতা ছাড়া বছরের পর বছর ধরে এই অবৈধ কাজ চলে
কীভাবে? চিহ্নিত পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি যাঁরা
অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে মদদ দিচ্ছেন, তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে এবং কঠোর
শাস্তি দিতে হবে।
No comments