ধর্ষণের পর হত্যা, বর্বরতা বাড়ছে by আল-আমিন
নয়
বছরের শিশু নুদরাত। পৃথিবী কী বোঝার আগে সব ছেড়ে চলে যেতে হলো তাকে। এর
আগে তার ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। গত ১০ই ফেব্রুয়ারির ঘটনা।
চট্টগ্রামের সার্সন রোড এলাকায় নুদরাতকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে
সন্ত্রাসীরা। এভাবেই অঙ্কুরেই বিলীন হয় নুদরাতের স্বপ্ন।
শুধু নুদরাত নয়, গত ২৯শে জানুয়ারি ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকায় অজ্ঞাত এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। পরে ধর্ষকরা তার লাশ একটি মাঠে ফেলে যায়। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। ২৩শে জানুয়ারি চট্টগ্রামের আকবর শাহ্ বিশ্ব কলোনির একটি ভবনে ফাতেমা নামের আট বছরের এক শিশুকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এর আগে গত বছরের ২৯শে আগস্ট রাতে টাঙ্গাইলের মধুপুরের পঁচিশ মাইল এলাকার রাস্তার পাশ থেকে রুপা খাতুন নামে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। রুপাকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। পরে তাকে মহাসড়কের পাশে ফেলে দেয় ধর্ষকরা। রুপার ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত হয় বাসের চালক, হেলপার ও স্টাফ। এ নিয়ে গোটা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। বর্তমান সময়ে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা বাড়ছে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘটনাগুলো ঘটছে গাণিতিক নয়, জ্যামিতিক হারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. অধ্যাপক নেহাল করীম মানবজমিনকে বলেন, বর্বরতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সমাজকে আরও সচেতন হতে হবে। যখনই আইনের শাসন একটু ঢিলে-ঢালা হবে তখনই সমাজে বর্বরতা বাড়বে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে বর্বরতা বাড়ছে। সামাজিকভাবে পরিবারকে ছোট থেকে শিশুদের নীতি নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে। যারা অপরাধী তাদের কঠোরভাবে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংসদে জানান, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ সংক্রান্ত ১৭ হাজার ২৮৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় ভিকটিমের সংখ্যা ১৭ হাজার ৩৮৯ জন। তিনি আরও জানান, এর মধ্যে ১৩ হাজার ৮৬১ জন নারী ও ৩ হাজার ৫২৮ জন শিশু রয়েছে। এই চার বছরে ৩ হাজার ৪৩০টি ধর্ষণ মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এতে ১৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড ৮০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫৭৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাসহ মোট ৬৭৩ জনকে শাস্তি দিয়েছেন আদালত।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোট ৬০ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। একক ধর্ষণ করা হয়েছে ৪২ জনকে। গণধর্ষণ করা হয়েছে ১৪ জনকে। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৪ জনকে। এই বর্বরতার কারণে আত্মহত্যা করেছেন একজন। ধর্ষণের পরে ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৬০ টি মামলা হয়েছে।
অন্যদিকে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন থানায় গত ৫ বছরে ১৮ হাজার ৯৯৮ টি মামলা হয়েছে। ২০১৩ সালে সারা দেশে ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৩৬৫০ টি, ২০১৪ সালে ৩৬৯৫ টি, ২০১৫ সালে ৩৯৩০টি, ২০১৬ সালে ৩৭২৮টি, ৩৯৫০ টি ও ২০১৭ সালে ৩৯৯৫টি মামলা হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রত্যেক বছরে মামলার সংখ্যা বাড়ছে।
বেসরকারি সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা দেশের আদালতগুলোতে বিচারাধীন রয়েছে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের দেড় লক্ষাধিক মামলা। প্রত্যেক বছরে গড়ে নিষ্পত্তি হচ্ছে ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ মামলা আর সাজা পাচ্ছে হাজারে সাড়ে ৪ জন আসামি। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ১০ বছরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ১১৭টি। এর মধ্যে রায় ঘোষণা হয়েছে ৮২১টির, শাস্তি হয়েছে ১০১ জনের। মামলার অনুপাতে রায় ঘোষণার হার ৩.৬৬ শতাংশ ও সাজার হার দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের এসি মিরাস উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগে ধর্ষণের মামলা হতো। কিন্তু, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, ধর্ষণের সঙ্গে বর্বরতাও বাড়ছে। এ কারণে অনেক ভিকটিম আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করেন। তিনি আরও জানান, ধর্ষণের মামলা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু, সাক্ষীর অভাবে মামলাগুলো ঝুলে যাচ্ছে। অনেক ভিকটিমের আবার বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়েসহ নানা কারণে তারা অনেকে আদালতে সাক্ষী দিতে আসেননা বলে জানান তিনি।
শুধু নুদরাত নয়, গত ২৯শে জানুয়ারি ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকায় অজ্ঞাত এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। পরে ধর্ষকরা তার লাশ একটি মাঠে ফেলে যায়। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। ২৩শে জানুয়ারি চট্টগ্রামের আকবর শাহ্ বিশ্ব কলোনির একটি ভবনে ফাতেমা নামের আট বছরের এক শিশুকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এর আগে গত বছরের ২৯শে আগস্ট রাতে টাঙ্গাইলের মধুপুরের পঁচিশ মাইল এলাকার রাস্তার পাশ থেকে রুপা খাতুন নামে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। রুপাকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। পরে তাকে মহাসড়কের পাশে ফেলে দেয় ধর্ষকরা। রুপার ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত হয় বাসের চালক, হেলপার ও স্টাফ। এ নিয়ে গোটা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। বর্তমান সময়ে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা বাড়ছে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘটনাগুলো ঘটছে গাণিতিক নয়, জ্যামিতিক হারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. অধ্যাপক নেহাল করীম মানবজমিনকে বলেন, বর্বরতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সমাজকে আরও সচেতন হতে হবে। যখনই আইনের শাসন একটু ঢিলে-ঢালা হবে তখনই সমাজে বর্বরতা বাড়বে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে বর্বরতা বাড়ছে। সামাজিকভাবে পরিবারকে ছোট থেকে শিশুদের নীতি নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে। যারা অপরাধী তাদের কঠোরভাবে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংসদে জানান, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ সংক্রান্ত ১৭ হাজার ২৮৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় ভিকটিমের সংখ্যা ১৭ হাজার ৩৮৯ জন। তিনি আরও জানান, এর মধ্যে ১৩ হাজার ৮৬১ জন নারী ও ৩ হাজার ৫২৮ জন শিশু রয়েছে। এই চার বছরে ৩ হাজার ৪৩০টি ধর্ষণ মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এতে ১৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড ৮০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫৭৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাসহ মোট ৬৭৩ জনকে শাস্তি দিয়েছেন আদালত।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোট ৬০ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। একক ধর্ষণ করা হয়েছে ৪২ জনকে। গণধর্ষণ করা হয়েছে ১৪ জনকে। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৪ জনকে। এই বর্বরতার কারণে আত্মহত্যা করেছেন একজন। ধর্ষণের পরে ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৬০ টি মামলা হয়েছে।
অন্যদিকে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন থানায় গত ৫ বছরে ১৮ হাজার ৯৯৮ টি মামলা হয়েছে। ২০১৩ সালে সারা দেশে ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৩৬৫০ টি, ২০১৪ সালে ৩৬৯৫ টি, ২০১৫ সালে ৩৯৩০টি, ২০১৬ সালে ৩৭২৮টি, ৩৯৫০ টি ও ২০১৭ সালে ৩৯৯৫টি মামলা হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রত্যেক বছরে মামলার সংখ্যা বাড়ছে।
বেসরকারি সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা দেশের আদালতগুলোতে বিচারাধীন রয়েছে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের দেড় লক্ষাধিক মামলা। প্রত্যেক বছরে গড়ে নিষ্পত্তি হচ্ছে ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ মামলা আর সাজা পাচ্ছে হাজারে সাড়ে ৪ জন আসামি। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ১০ বছরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ১১৭টি। এর মধ্যে রায় ঘোষণা হয়েছে ৮২১টির, শাস্তি হয়েছে ১০১ জনের। মামলার অনুপাতে রায় ঘোষণার হার ৩.৬৬ শতাংশ ও সাজার হার দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের এসি মিরাস উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগে ধর্ষণের মামলা হতো। কিন্তু, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, ধর্ষণের সঙ্গে বর্বরতাও বাড়ছে। এ কারণে অনেক ভিকটিম আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করেন। তিনি আরও জানান, ধর্ষণের মামলা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু, সাক্ষীর অভাবে মামলাগুলো ঝুলে যাচ্ছে। অনেক ভিকটিমের আবার বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়েসহ নানা কারণে তারা অনেকে আদালতে সাক্ষী দিতে আসেননা বলে জানান তিনি।
No comments