সাত দিনে বাজারমূলধন ১৮ হাজার কোটি টাকা কমেছে
শেয়ারবাজারে
টানা দরপতন চলছে। গত ৭ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)
বাজারমূলধন কমেছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে মূল্যসূচক কমেছে ৩২৮ পয়েন্ট।
শতকরা হিসাবে যা ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এদিকে আজ মঙ্গলবার থেকে শেয়ারবাজার ঘুরে
দাঁড়াতে পারে বলে আশা করছে ডিএসই। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির
ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান এ কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে
উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)
সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ, সাবেক সভাপতি মো. ছায়েদুর
রহমান, ডিবিএ পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও ও সাজিদুর রহমান। সংবাদ
সম্মেলনের আগে ডিএসইর শীর্ষ ব্রোকারের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ
অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসির) সঙ্গে বৈঠক করে ডিএসইর পরিচালনা
পর্ষদ। বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর বাজারমূলধন ছিল
৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এরপর টানা দরপতন শুরু হয়। আর মঙ্গলবার ডিএসইর
বাজারমূলধন ৪ লাখ ২ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এ হিসাবে আলোচ্য সময়ে
বাজারমূলধন ১৮ হাজার কোটি টাকা কমেছে। এছাড়া আলোচ্য সময়ে ডিএসইর মূল্যসূচক ৬
হাজার ১০২ পয়েন্ট থেকে কমে ৫ হাজার ৭৭৪ পয়েন্ট নেমে এসেছে। এ হিসাবে সূচক ৫
দশমিক ৩৮ পয়েন্ট কমেছে। এর মানে হল ডিএসইর সব কোম্পানির শেয়ারের দাম ৫
দশমিক ৩৮ শতাংশ।
অর্থাৎ ৭ কার্যদিবস আগে যে শেয়ারের দাম ছিল ১০০ টাকা।
সোমবার তা ৯৪ টাকা ৬২ পয়সায় নেমে এসেছে। বাজারের এ অবস্থাকে অস্বাভাবিক
বলছে ডিএসইর নেতারা। সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন,
বেশ কয়েকটি কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষ
করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতি ও ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী
কেন্দ্র করে। তিনি বলেন, কৌশলগত বিনিয়োগকারী চীন না ভারত ডিএসইর শেয়ার
পাবে, তা নিয়েও গুজব ছিল। এছাড়াও আমানতের বিপরীতে ঋণ প্রদান অনুপাত (এডিআর)
পুঁজিবাজারে অহেতুক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। যার কোনো ভিত্তি নেই। এমতাবস্থায়
বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, কৌশলগত
বিনিয়োগকারীর বিষয়ে চীনের পক্ষে মত দিয়েছিল ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ।
এক্ষেত্রে ডিএসইর দেয়া প্রস্তাবটিই কমিশন দেখছে বলে জানান তিনি। মাজেদুর
রহমান বলেন, ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত বিএসইসিতে জমা দেয়া হয়েছে। এর আইনগত বিষয়টি
যাচাই-বাছাই করার জন্য বিএসইসি একটি কমিটি করেছে। কমিটির প্রতিবেদনের পর
কমিশন একটি সিদ্ধান্ত নেবে। মাজেদুর রহমান আরও বলেন, পাশের দেশের তুলনায়
অনেক ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। এডিআর নিয়ে সরকার অনেক
সচেতন। ফলে এডিআর যাতে বেড়ে না যায়, ওই বিষয়টি কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ব্যাংক
একটি সার্কুলার দিয়েছিল। সব কিছু বিবেচনা করে এটির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানো
হয়। এটি পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর
পুঁজিবাজারে বাড়তি বিনিয়োগের বিষয়ে মাজেদুর রহমান বলেন, সবপক্ষের লোক নিয়ে
একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি একটি প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের বিভিন্ন
পর্যায়ে জমা দেবে। একই সঙ্গে এখানে আমরা ছাড়ের কথা বলব না, তবে যৌক্তিক
পর্যায়ে নিয়ে আশার জন্য বলব এবং এটি যেন হয় একটি স্থায়ী সমাধান।
একক দিন
হিসেবে সোমবার ডিএসইতে ৩৩৪টি প্রতিষ্ঠানের ৭ কোটি ৮৯ লাখ শেয়ার লেনদেন
হয়েছে, যার মোটমূল্য ৩৫০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৮টি
প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের, কমেছে ২৪৯টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৭টি কোম্পানির
শেয়ারের দাম। ডিএসইর ব্রডসূচক আগের দিনের চেয়ে ৫৭ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট কমে ৫
হাজার ৭৭৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ১৪ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট কমে ২
হাজার ১২৭ দশমিক ১০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই শরীয়াহ সূচক ১২ দশমিক ৬৬
পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৪৮ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। শীর্ষ দশ কোম্পানি
: সোমবার যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি বেড়েছে সেগুলো হল- অলিম্পিক
ইন্ডাস্ট্রিজ, ইফাদ অটোস, স্কয়ার ফার্মা, ইউনিক হোটেল, ন্যাশনাল টিউবস,
ইবনে সিনা, লংকা বাংলা ফাইন্যান্স, সিভিও পেট্রো কেমিক্যাল, ব্র্যাক ব্যাংক
এবং গ্রামীণফোন। ডিএসইতে সোমবার যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি
বেড়েছে সেগুলো হল- এটলাস বাংলাদেশ, ফাইন ফুডস, এসিআই লিমিটেড, আইপিডিসি,
পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, আমরা নেটওয়ার্ক, প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পপুলার
লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এফবিএফ আইএফ এবং প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল। অন্যদিকে
যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি কমেছে সেগুলো হল- জিএসপি ফাইন্যান্স,
এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স,
ইসলামিক ফাইন্যান্স, নদার্ন ইন্স্যুরেন্স, মাইডাস ফাইন্যান্স, সোনারগাঁও
টেক্সটাইল, দুলামিয়া কটন এবং সিভিও পেট্রো কেমিক্যাল।
No comments