যখন রিপোর্টার ছিলাম: ক্ষমা করুন স্যার! by মতিউর রহমান চৌধুরী
মেলা
কাল বাদে লিখছি। নানা কারণে অনেকদিন লিখতে পারিনি বা লিখিনি। মাঝে মাঝেই
লেখার প্রচণ্ড ইচ্ছে হয়। আবার নিজেই নিজেকে সংযত করি। বলি কি দরকার। না
লিখেও তো ভালোই আছি।
অযথা ঝামেলা আমন্ত্রণের কি প্রয়োজন। কিন্তু বিবেক যে তাড়া করে। যদি না-ই লিখি তাহলে সাংবাদিকতায় এসেছিলাম কেন? বিলেত প্রবাসী হলে ক্ষতি কি ছিল? এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারি না। একটা পুরনো লেখা পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম আমি এখন কোথায় দাঁড়িয়ে? আমার সাহস গেল কোথায়? চোখের সামনে অনেক কিছুই তো ঘটছে। অনেকেই বলেন- কি ভাই সেদিন তো সাহসী হয়েছিলেন। এখন তো দেখি চুপ করে বসে আছেন। বলুন তো কি জবাব দেব তাদের। জবাব যে আমার কাছে নেই। শুধু কি লেখা? বলায়ও নানা হিসাবনিকাশ। সেদিন এক আড্ডায় এক ভদ্রলোক সরাসরি বললেন, কি ভাই এখন তো ‘দুর্নীতিপরায়ণদের উল্লাসের নৃত্য’ লিখতে পারেন না। এরশাদের জমানা। নব্বই সালের শুরুর দিকে সাপ্তাহিক খবরের কাগজে এই লেখাটি লিখেছিলাম। আমি তখন দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনৈতিক রিপোর্টার। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ কভার করতে সৌদি আরব যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। খবরের কাগজে নিয়মিত কলাম লিখি। নির্বাহী সম্পাদক জিল্লুর রহমান নাছোড়বান্দা। তৃতীয় মাত্রা খ্যাত জিল্লুর সকালে ফোন করে বললেন মতিভাই লেখা না দিয়ে ঢাকা ছাড়বেন না। বিশ্বাস করুন লেখা অসম্পূর্ণ রেখে বিমান ধরতে গেলাম এয়ারপোর্টে। জিল্লুরকে কি ফাঁকি দিতে পারবো? বিমান পাঁচঘণ্টা বিলম্বে ছাড়বে। ফিরে এলাম বাসায়। স্ত্রী বললেন সে কি? আবার কলম নিয়ে বসলে কেন? বললাম অসম্পূর্ণ লেখাটা শেষ করে দেই। ঠিকই একঘণ্টার মধ্যে লেখা শেষ করে জিল্লুরকে ফোন দিলাম- কাউকে পাঠালে ভালো হয়। একজন এসে লেখাটা নিয়ে গেল। আমি আবার বিমানবন্দরের দিকে ছুটলাম। বিষয়টি এখানেই তো শেষ হওয়ার কথা। সে কি আর হয়? হাফরুল বাতেন সীমান্ত থেকে ফিরে এলাম মদিনায়। সঙ্গে রয়েছেন আরো তিন সাংবাদিক। রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, আমানুল্লাহ কবির, সালাহউদ্দিন বাবর। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হচ্ছি এমন সময় একজন সৌদি প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার বললেন, আপনি এখানে। এইমাত্র বিবিসিতে শুনে এলাম ঢাকায় আপনাকে নিয়ে কত কিছু হচ্ছে। হুলিয়া জারি হয়েছে। আপনার লেখার কারণে সাপ্তাহিক খবরের কাগজের প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সম্পাদক, প্রকাশক কাজী শাহেদ আহমেদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তাই নাকি? এতো সব। এখন তাহলে কি করবো? ঢাকায় ফোন করে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম নতুন কি আর আছে? আতঙ্কিত মাহবুবার কণ্ঠে ভীতির ছাপ। বিপদের কথাই জানালেন। বাড়ির সামনে গোয়েন্দারা গিজ গিজ করছে। খবরের কাগজে ফোন করেও কাউকে পেলাম না। সহকর্মীরা অপেক্ষা করতে বললেন। দেখা যাক না কি দাঁড়ায়। কি আর দাঁড়াবে? এরশাদ সাহেব তো সামান্য সমালোচনাই সহ্য করেন না। কথায় কথায় পত্রিকা বন্ধ করে দেন। কে তাকে রুখবে। একমাত্র ভরসা আদালত। ঠিকই আদালতে গড়ালো বিষয়টি। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ ও বিচারপতি মোস্তাফা কামাল তখন উচ্চ আদালতে সাহসী ভূমিকা রেখে চলেছেন। পত্রিকার প্রকাশনা পুনর্বহাল চেয়ে রিট হলো। যুগান্তকারী রায় দিলেন তারা। এখন থেকে কথায় কথায় পত্রিকা বন্ধ করা যাবে না। সাংবাদিকরা লিখতে পারবেন হাত খুলে। অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে নিজের চিন্তায় এবং বিবেকে। হেরে গেলেন এরশাদ। স্বৈরশাসনের কব্জামুক্ত হলো সাংবাদিকতা। আজ আমরা যেটুকু লিখছি বা বলছি তার জন্য সামান্যতম ক্রেডিট দিতে হলে সাপ্তাহিক খবরের কাগজ তথা কাজী শাহেদ আহমেদকে দিতে হবে। নিজের কথা এখানে নাই বা বললাম। ইতিহাস হয়তো একদিন বিচার করবে। সেনাবাহিনীর লোক হয়েও সেদিন শাহেদ ভাই যে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন তা এদেশের মুক্ত সাংবাদিকতার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকা উচিত। এরশাদ প্রশাসন পত্রিকা বন্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি। দেশে ফেরার পর ১৭ ঘণ্টা আমাকে আটকে রাখা হলো। আমার গাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নিয়ে গিয়ে ব্রিজের ওপর থেকে ফেলে দেয়া হলো পানিতে। গাড়িটি যখন আনতে গেলাম তখন দেখলাম গাড়ির ওপরে নির্যাতনের চিহ্ন। আদালতে হেরে গিয়ে গাড়ির ওপর উল্লাসের নৃত্য করা হয়েছে। একটা রূপকাশ্রয়ী লেখাতে এত ঝাল হবে তা ভাবিনি কখনো। যে লেখায় এরশাদের নাম পর্যন্ত ছিল না। পাঠকদের জানার জন্য লেখাটি তুলে ধরছি এখানে।
এমন একদিন আসবে যেদিন মূর্খরা উদ্ভট আদেশ জারি করে দেশ শাসন করবে। নির্বোধরা তাদের নির্বুদ্ধিতার জন্য গর্ব অনুভব করবে। পণ্ডিতরা তাদের পাণ্ডিত্যের জন্য অনুশোচনা বোধ করবেন। দুর্নীতিপরায়ণরা তাদের দুর্নীতির জন্য উল্লাসে নৃত্য করবে।
সাধক শেখ সাদী এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি অবশ্য সময় বলে যাননি কখন এমন ঘটনা ঘটবে। আমরা প্রতিদিনই এমন ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি। অনেক মিলও খুঁজে পাচ্ছি। তাহলে কি শেখ সাদীর বর্ণিত সেদিন এসে গেছে।
অযথা ঝামেলা আমন্ত্রণের কি প্রয়োজন। কিন্তু বিবেক যে তাড়া করে। যদি না-ই লিখি তাহলে সাংবাদিকতায় এসেছিলাম কেন? বিলেত প্রবাসী হলে ক্ষতি কি ছিল? এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারি না। একটা পুরনো লেখা পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম আমি এখন কোথায় দাঁড়িয়ে? আমার সাহস গেল কোথায়? চোখের সামনে অনেক কিছুই তো ঘটছে। অনেকেই বলেন- কি ভাই সেদিন তো সাহসী হয়েছিলেন। এখন তো দেখি চুপ করে বসে আছেন। বলুন তো কি জবাব দেব তাদের। জবাব যে আমার কাছে নেই। শুধু কি লেখা? বলায়ও নানা হিসাবনিকাশ। সেদিন এক আড্ডায় এক ভদ্রলোক সরাসরি বললেন, কি ভাই এখন তো ‘দুর্নীতিপরায়ণদের উল্লাসের নৃত্য’ লিখতে পারেন না। এরশাদের জমানা। নব্বই সালের শুরুর দিকে সাপ্তাহিক খবরের কাগজে এই লেখাটি লিখেছিলাম। আমি তখন দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনৈতিক রিপোর্টার। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ কভার করতে সৌদি আরব যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। খবরের কাগজে নিয়মিত কলাম লিখি। নির্বাহী সম্পাদক জিল্লুর রহমান নাছোড়বান্দা। তৃতীয় মাত্রা খ্যাত জিল্লুর সকালে ফোন করে বললেন মতিভাই লেখা না দিয়ে ঢাকা ছাড়বেন না। বিশ্বাস করুন লেখা অসম্পূর্ণ রেখে বিমান ধরতে গেলাম এয়ারপোর্টে। জিল্লুরকে কি ফাঁকি দিতে পারবো? বিমান পাঁচঘণ্টা বিলম্বে ছাড়বে। ফিরে এলাম বাসায়। স্ত্রী বললেন সে কি? আবার কলম নিয়ে বসলে কেন? বললাম অসম্পূর্ণ লেখাটা শেষ করে দেই। ঠিকই একঘণ্টার মধ্যে লেখা শেষ করে জিল্লুরকে ফোন দিলাম- কাউকে পাঠালে ভালো হয়। একজন এসে লেখাটা নিয়ে গেল। আমি আবার বিমানবন্দরের দিকে ছুটলাম। বিষয়টি এখানেই তো শেষ হওয়ার কথা। সে কি আর হয়? হাফরুল বাতেন সীমান্ত থেকে ফিরে এলাম মদিনায়। সঙ্গে রয়েছেন আরো তিন সাংবাদিক। রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, আমানুল্লাহ কবির, সালাহউদ্দিন বাবর। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হচ্ছি এমন সময় একজন সৌদি প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার বললেন, আপনি এখানে। এইমাত্র বিবিসিতে শুনে এলাম ঢাকায় আপনাকে নিয়ে কত কিছু হচ্ছে। হুলিয়া জারি হয়েছে। আপনার লেখার কারণে সাপ্তাহিক খবরের কাগজের প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সম্পাদক, প্রকাশক কাজী শাহেদ আহমেদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তাই নাকি? এতো সব। এখন তাহলে কি করবো? ঢাকায় ফোন করে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম নতুন কি আর আছে? আতঙ্কিত মাহবুবার কণ্ঠে ভীতির ছাপ। বিপদের কথাই জানালেন। বাড়ির সামনে গোয়েন্দারা গিজ গিজ করছে। খবরের কাগজে ফোন করেও কাউকে পেলাম না। সহকর্মীরা অপেক্ষা করতে বললেন। দেখা যাক না কি দাঁড়ায়। কি আর দাঁড়াবে? এরশাদ সাহেব তো সামান্য সমালোচনাই সহ্য করেন না। কথায় কথায় পত্রিকা বন্ধ করে দেন। কে তাকে রুখবে। একমাত্র ভরসা আদালত। ঠিকই আদালতে গড়ালো বিষয়টি। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ ও বিচারপতি মোস্তাফা কামাল তখন উচ্চ আদালতে সাহসী ভূমিকা রেখে চলেছেন। পত্রিকার প্রকাশনা পুনর্বহাল চেয়ে রিট হলো। যুগান্তকারী রায় দিলেন তারা। এখন থেকে কথায় কথায় পত্রিকা বন্ধ করা যাবে না। সাংবাদিকরা লিখতে পারবেন হাত খুলে। অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে নিজের চিন্তায় এবং বিবেকে। হেরে গেলেন এরশাদ। স্বৈরশাসনের কব্জামুক্ত হলো সাংবাদিকতা। আজ আমরা যেটুকু লিখছি বা বলছি তার জন্য সামান্যতম ক্রেডিট দিতে হলে সাপ্তাহিক খবরের কাগজ তথা কাজী শাহেদ আহমেদকে দিতে হবে। নিজের কথা এখানে নাই বা বললাম। ইতিহাস হয়তো একদিন বিচার করবে। সেনাবাহিনীর লোক হয়েও সেদিন শাহেদ ভাই যে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন তা এদেশের মুক্ত সাংবাদিকতার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকা উচিত। এরশাদ প্রশাসন পত্রিকা বন্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি। দেশে ফেরার পর ১৭ ঘণ্টা আমাকে আটকে রাখা হলো। আমার গাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নিয়ে গিয়ে ব্রিজের ওপর থেকে ফেলে দেয়া হলো পানিতে। গাড়িটি যখন আনতে গেলাম তখন দেখলাম গাড়ির ওপরে নির্যাতনের চিহ্ন। আদালতে হেরে গিয়ে গাড়ির ওপর উল্লাসের নৃত্য করা হয়েছে। একটা রূপকাশ্রয়ী লেখাতে এত ঝাল হবে তা ভাবিনি কখনো। যে লেখায় এরশাদের নাম পর্যন্ত ছিল না। পাঠকদের জানার জন্য লেখাটি তুলে ধরছি এখানে।
এমন একদিন আসবে যেদিন মূর্খরা উদ্ভট আদেশ জারি করে দেশ শাসন করবে। নির্বোধরা তাদের নির্বুদ্ধিতার জন্য গর্ব অনুভব করবে। পণ্ডিতরা তাদের পাণ্ডিত্যের জন্য অনুশোচনা বোধ করবেন। দুর্নীতিপরায়ণরা তাদের দুর্নীতির জন্য উল্লাসে নৃত্য করবে।
সাধক শেখ সাদী এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি অবশ্য সময় বলে যাননি কখন এমন ঘটনা ঘটবে। আমরা প্রতিদিনই এমন ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি। অনেক মিলও খুঁজে পাচ্ছি। তাহলে কি শেখ সাদীর বর্ণিত সেদিন এসে গেছে।
রাষ্ট্র
পরিচালনা করছে কারা? দেশে দেশে কিছু উদ্ভট আদেশ জারির মাধ্যমে রাষ্ট্র
পরিচালনার খবর আমরা পাচ্ছি। তাদের মূর্খ বলা ঠিক হবে কিনা জানি না। তবে
জনগণকে নিয়ে তারা তামাশা করে চলেছে। এমন আদেশ জারি করছে যা না মেনে কোনো
উপায় নেই জনতার। এরা জনগণকে ভয় পায় না। জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় না।
মাঝে মধ্যে জনগণের সঙ্গে অভিনয় করে। বলে-জনগণই আমার শক্তি। আসলে জনগণের
পক্ষে তারা কথা বলে না। এরা নিজেদের সবজান্তা মনে করে। জনগণকে বলে দেয়, আমি
যা বলবো তাই মেনে চলতে হবে। জনগণের সেবক নয়, তারা চায় জনগণ তাদের সেবা
করুক। এরা আইন মানে না। সংবিধান মানে না। তাদের ইচ্ছার ওপর দেশ চলে। দেশে
দেশে এমন অবস্থা চলছে। যার রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা থাকার কথা নয় বা
রাষ্ট্র পরিচালনা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না অথচ তারা বলপূর্বক ক্ষমতা দখল
করে বলে-এভাবে দেশ চলতে পারে না। আজ থেকে আমি যেভাবে বলবো সেভাবে দেশ
চলবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মাঝেমধ্যে তাদের উন্মাদ বলে আখ্যায়িত করেন। তাতে
কি যায় আসে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা কিছুই জানেন না বলে তারা প্রকাশ্যে মন্তব্য
করেন। রাজনীতিবিদরা দেশ চালানোর কোনো যোগ্যতা রাখে না বলে ফরমান জারি করে
দেয়। বলে- রাজনীতিবিদরা দেশের সব অনিষ্টের মূল। এদের সমাজ থেকে নির্মূল করে
দিতে হবে। ক’দিন পর যখন দেখে রাজনীতিবিদ ছাড়া চলে না তখন আবার
রাজনীতিবিদদের ডেকে নিয়ে উজির বানায়। অর্থনীতিবিদদের ভর্ৎসনা করে স্পষ্ট
বলে দেয়-এরা অর্থনীতির কি বুঝে? আমি সবই বুঝি। আমি লেফট রাইট করেও সব
জেনেছি। বড় বড় বই পড়ার কোনো দরকার নেই। আমি কূটনীতিও বুঝি। সমালোচকরা বলে,
আমি নাকি জেনারেল ডিপ্লোম্যাসিতে বিশ্বাস করি। এটা সর্বৈব মিথ্যা। আমি সব
কূটনীতিতেই ওস্তাদ। সিদ্ধান্ত নিয়ে পাল্টানোর মধ্যে মজা আছে। পৃথিবীতে ক’জন
পারে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে। আমি কারো সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেই না। আমি
মনে করি, আমার চাইতে অন্যরা বেশি জানতেই পারে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
স্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য সিদ্ধান্ত নেই। সেভাবে কাজ করি। অন্যরা কে কি ভাবলো
বা মনে করলো তা নিয়ে মোটেও চিন্তা করি না। আমার কাছে রাষ্ট্র বা জনগণ
হচ্ছে পণ্য। সময় বুঝে নিলামে তুলি। অন্য রাষ্ট্রপ্রধান টেলিফোন করলে
দাঁড়িয়ে কুর্নিশ জানাতে থাকি। হার্ভার্ডে পড়ালেখা করা লোককে বলি সে ইংরেজি
জানে না। আমার ইংরেজি শুনে বৃটিশরাও বলে কি করে এত সুন্দর ইংলিশ শিখলাম।
আমি মনে করি, আমি ছাড়া সবাই নির্বোধ। তাই আমি বছরের পর বছর তাদের নির্বোধ হিসেবেই বিবেচনা করি। তারা আমার কথা হেরফের করে না। বরং গর্ব অনুভব করে। বলে-আমরা গর্বিত এমন এক সন্তানকে পেয়ে; যিনি না হলে রাষ্ট্র চলতোই না। পল্লীর বন্ধু হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়ে বসে। আমি শহরে থাকি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসা। মাঝেমধ্যে হেলিকপ্টারে উড়ে পল্লীতে যাই। কান্নাকাটি করি তাদের সুখ-দুঃখে। ফিরে এসে বলি এই ব্যাটাদের জন্য শান্তিতে থাকা গেল না। একটা না একটা সমস্যার মধ্যে ওরা থাকেই। কখনও পানিতে, কখনও রোগে-শোকে আবার কখনও অনাহারে। বলেন তো আর কাহাতক পারা যায়। আমি আর পারি না। আমারও তো আরাম-আয়েশের কথা চিন্তা করতে হয়। লোকে আমার সম্পর্কে অযথাই সমালোচনা করে। আমি শত ব্যস্ততার মধ্যেও কিছু সময় আমোদ-ফুর্তিতে ডুবে থাকি তাও অনেকের সহ্য হয় না। তারা কানাঘুষা করে। অবশ্য জনসমক্ষে কিছু বলে না। তাদের আমি নির্বোধ বলি। জানেন তো আমার রাজ্যে পণ্ডিত বলে তো কেউ নেই। কারণ আমার জ্ঞানের চেয়ে তাদের জ্ঞান বেশি নয়। আমি তাদের বলেই দিয়েছি পাণ্ডিত্য যেন না দেখায়। আমি বৈঠক ডাকি। আলোচনা করতে বলি তাদের মধ্যে। ঘুরে এসে বলি আপনারা এবার বাড়ি যান। সিদ্ধান্ত আমি নিয়ে ফেলেছি। তারা কোনো প্রশ্ন করে না। জানে, আমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কতিপয় লোক ছিল শুধু শুধু আমার সমালোচনা করতো। বলতো আমার নাকি রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো অধিকার নেই। এখন তারা ক্লান্ত। নিজেরাই বলছে, কেন রাজনীতি করলাম, দেশ স্বাধীন করলাম। এত লেখাপড়া করলাম কেন? তারা নিজেদের পাণ্ডিত্যের জন্য অনুশোচনা করে বলছে-আমি যোগ্য ব্যক্তি। আমার মতো পণ্ডিত লোক হয় না।
দুর্নীতির কথা বলবেন। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছি। তবে আমাকে লোকে দুর্নীতিবাজ বলে। আমি নাকি টাকা পাচার করি। জনগণের রক্ত শুষে নিচ্ছি। আমার রাজ্যে দুর্নীতিবাজরা উল্লাস করে বলে আমরা দুর্নীতিবাজ-আসুন আমরা দুর্নীতিকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেই। কেউ কেউ সমালোচনার চেষ্টা করে। সুযোগ মতো তাদের নামও খাতায় লিখিয়ে দেই। অথবা মুখ বন্ধ করে দেই চেনাপথে। আমার কাছে জাদু আছে। গভীর রাতে আমার সঙ্গে সবাই দেখা করতে আসে। যারা পল্টনে গরম গরম বক্তৃতা করে তাদের দেখাও পাবেন আমার বাড়িতে। আমি মাঝেমধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তালিকা প্রকাশ করে বলি ওদের এবার রেহাই নেই।
জনগণের সামনে বলি, রাঘববোয়ালদের পাকড়াও করতে হবে। রাতে তাদের ডেকে বলি মনে কিছু করো না। আমাকে বলতে হয়। আমি যে রাষ্ট্র চালাই। তোমাদের কিছু হবে না। তোমরা ধরা পড়লে আমার কি হবে। তোমরাই তো আমার আসল শক্তি, বন্ধু। এ কথা শুনে দুর্নীতিবাজরা উল্লাস করে। এই উল্লাসে আমরা সবাই যোগ দেই।’
পাঠক পড়লেন তো লেখাটি। এখন নিশ্চয়ই দুটো গালি দিচ্ছেন। আর বলছেন, কই গেল আপনার সে সাহস। ক্ষমা করবেন পাঠক। এখন আমার সাহস নেই। বলতে পারেন ভয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। বরং উল্টো মনে হয় এরশাদ সাহেবকে বলি ‘ক্ষমা করুন স্যার! ক্ষমা করুন।’
ঢাকা, ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০১৮
আমি মনে করি, আমি ছাড়া সবাই নির্বোধ। তাই আমি বছরের পর বছর তাদের নির্বোধ হিসেবেই বিবেচনা করি। তারা আমার কথা হেরফের করে না। বরং গর্ব অনুভব করে। বলে-আমরা গর্বিত এমন এক সন্তানকে পেয়ে; যিনি না হলে রাষ্ট্র চলতোই না। পল্লীর বন্ধু হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়ে বসে। আমি শহরে থাকি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসা। মাঝেমধ্যে হেলিকপ্টারে উড়ে পল্লীতে যাই। কান্নাকাটি করি তাদের সুখ-দুঃখে। ফিরে এসে বলি এই ব্যাটাদের জন্য শান্তিতে থাকা গেল না। একটা না একটা সমস্যার মধ্যে ওরা থাকেই। কখনও পানিতে, কখনও রোগে-শোকে আবার কখনও অনাহারে। বলেন তো আর কাহাতক পারা যায়। আমি আর পারি না। আমারও তো আরাম-আয়েশের কথা চিন্তা করতে হয়। লোকে আমার সম্পর্কে অযথাই সমালোচনা করে। আমি শত ব্যস্ততার মধ্যেও কিছু সময় আমোদ-ফুর্তিতে ডুবে থাকি তাও অনেকের সহ্য হয় না। তারা কানাঘুষা করে। অবশ্য জনসমক্ষে কিছু বলে না। তাদের আমি নির্বোধ বলি। জানেন তো আমার রাজ্যে পণ্ডিত বলে তো কেউ নেই। কারণ আমার জ্ঞানের চেয়ে তাদের জ্ঞান বেশি নয়। আমি তাদের বলেই দিয়েছি পাণ্ডিত্য যেন না দেখায়। আমি বৈঠক ডাকি। আলোচনা করতে বলি তাদের মধ্যে। ঘুরে এসে বলি আপনারা এবার বাড়ি যান। সিদ্ধান্ত আমি নিয়ে ফেলেছি। তারা কোনো প্রশ্ন করে না। জানে, আমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কতিপয় লোক ছিল শুধু শুধু আমার সমালোচনা করতো। বলতো আমার নাকি রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো অধিকার নেই। এখন তারা ক্লান্ত। নিজেরাই বলছে, কেন রাজনীতি করলাম, দেশ স্বাধীন করলাম। এত লেখাপড়া করলাম কেন? তারা নিজেদের পাণ্ডিত্যের জন্য অনুশোচনা করে বলছে-আমি যোগ্য ব্যক্তি। আমার মতো পণ্ডিত লোক হয় না।
দুর্নীতির কথা বলবেন। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছি। তবে আমাকে লোকে দুর্নীতিবাজ বলে। আমি নাকি টাকা পাচার করি। জনগণের রক্ত শুষে নিচ্ছি। আমার রাজ্যে দুর্নীতিবাজরা উল্লাস করে বলে আমরা দুর্নীতিবাজ-আসুন আমরা দুর্নীতিকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেই। কেউ কেউ সমালোচনার চেষ্টা করে। সুযোগ মতো তাদের নামও খাতায় লিখিয়ে দেই। অথবা মুখ বন্ধ করে দেই চেনাপথে। আমার কাছে জাদু আছে। গভীর রাতে আমার সঙ্গে সবাই দেখা করতে আসে। যারা পল্টনে গরম গরম বক্তৃতা করে তাদের দেখাও পাবেন আমার বাড়িতে। আমি মাঝেমধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তালিকা প্রকাশ করে বলি ওদের এবার রেহাই নেই।
জনগণের সামনে বলি, রাঘববোয়ালদের পাকড়াও করতে হবে। রাতে তাদের ডেকে বলি মনে কিছু করো না। আমাকে বলতে হয়। আমি যে রাষ্ট্র চালাই। তোমাদের কিছু হবে না। তোমরা ধরা পড়লে আমার কি হবে। তোমরাই তো আমার আসল শক্তি, বন্ধু। এ কথা শুনে দুর্নীতিবাজরা উল্লাস করে। এই উল্লাসে আমরা সবাই যোগ দেই।’
পাঠক পড়লেন তো লেখাটি। এখন নিশ্চয়ই দুটো গালি দিচ্ছেন। আর বলছেন, কই গেল আপনার সে সাহস। ক্ষমা করবেন পাঠক। এখন আমার সাহস নেই। বলতে পারেন ভয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। বরং উল্টো মনে হয় এরশাদ সাহেবকে বলি ‘ক্ষমা করুন স্যার! ক্ষমা করুন।’
ঢাকা, ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০১৮
No comments