অসহনীয় শব্দ দূষণে বেহাল নগরবাসী by সুদীপ অধিকারী
নীরব
ঘাতক শব্দ দূষণের কবলে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
মতে, ৬০ ডেসিবেল শব্দে মানুষের সাময়িক শ্রবণ শক্তি নষ্ট হতে পারে এবং ১০০
ডেসিবেল শব্দে চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে। অথচ প্রতিদিনই রাজধানী শহর
ঢাকায় ১০৭ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ তৈরি হচ্ছে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন
বিধি বিধান থাকলেও তার তেমন কোনো প্রয়োগ হচ্ছে না কোথাও।
খান জান্নাতুল ফেরদৌসি এ্যালিছ বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন রাজধানীর গ্রীণ রোড এলাকায়। ব্যস্ত এ ঢাকা শহরে পাখির ডাকে ভোরে তার ঘুম ভাঙবে, এরকম প্রত্যাশা তিনি কখনো করেন না।
কিন্তু যানবাহনের বিকট শব্দে ঘুম ভাঙার বিষয়টিকেও তিনি মেনে নিতে পারেন না। কান ঝালাপালা করা এই শব্দের কারণে তিনি অনিদ্রা ও মাথাব্যথার মতো অস্বস্তিকর সমস্যায় ভুগছেন। নাফিজা রহমান মৌ একজন চাকরিজীবী। থাকেন ধানমন্ডি এলাকায়। তার বাসার পাশের খালি জায়গায় উঠছে নতুন একটি ভবন। প্রতিদিন সকাল হতে না হতেই নির্মাণকাজের বিকট শব্দ তাদের দারুণ বিরক্তি তৈরি করে। সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ এ শব্দ দূষণ চলতেই থাকে একটানা। সেখানে অসংখ্য রড কাটাসহ ইট-পাথর ভাঙার কাজ হয়। হয় মেশিনের শব্দ। মৌ সকালে উঠে প্রহর গোনেন যে কখন বাসা ছেড়ে অফিসে চলে যাবেন এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি দুশ্চিন্তাতেও থাকেন এই ভেবে যে, তার আদরের সন্তানটিকে স্কুল থেকে ফিরে সারাদিন এই শব্দ দূষণের মধ্যেই কাটাতে হবে। এভাবেই পুরো রাজধানীতে কোথাও না কোথাও শব্দের অস্বাভাবিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে সবাইকে। প্রতিদিন রাজধানীবাসীর ঘুম ভাঙে ইটপাথর ভাঙার মেশিনের বিকট শব্দ কিংবা যানবাহনের অযাচিত হর্নে। কাউকে বলারও কোনো সুযোগ নেই। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে রয়েছে বেশ কিছু আইন ও নীতিমালা। কিন্তু নাগরিকদের অসচেতনতা এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এসবের প্রয়োগ হচ্ছে না। শব্দ দূষণের গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে ১৯৯৭ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে শহরকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নীরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, শিল্প এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা। এসব এলাকায় দিন ও রাত ভেদে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাসিক এলাকায় ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ডেসিবেল, শিল্প এলাকায় ৭৫ ডেসিবেল, নীরব এলাকায় ৪৫ ডেসিবেল, আবাসিক কাম বাণিজ্যিক এলাকায় ৬০ ডেসিবেল, রাতের জন্য সর্বত্র ১০ ডেসিবেলের কম। এই আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকাকে নীরব এলাকা চিহ্নিত করা হয়। আইনানুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারের নির্ধারিত ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকার মধ্যে মোটরগাড়ির হর্ন বাজানো বা মাইকিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরপর দেশে প্রণয়ন করা হয় ২০০২ ও ২০০৬ সালের শব্দ দূষণ নীতিমালা। এই নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা হলো ৫৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। একইভাবে নীরব এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্ধারিত অনুপাতের চেয়ে অধিক শব্দ সৃষ্টি করাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় বলা আছে, আবাসিক এলাকার সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণকাজের ইট বা পাথর ভাঙার যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। যানবাহনে অপ্রয়োজনে উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো যাবে না। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা যবে না। স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের চতুর্দিকে ১০০ গজের ভেতরে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না। কিন্তু কর্তৃপক্ষের যথাযথ আইনের প্রয়োগ না করা ও সাধারণ মানুষের এই বিষয়ে জ্ঞান না থাকায় প্রয়োজন ছাড়াই যার যেমন খুশি করছে শব্দ দূষণ। সরজমিনে, গতকাল রাজধানীর এ্যালিফ্যন্ট রোড এলাকায় গেলে দেখা যায়, ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছু যানবহন। সিগন্যাল ছাড়ার পরই শুরু হয় একে অন্যের থেকে আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতার জন্যে কিছুটা প্রয়োজন ছাড়াই হর্ন দিচ্ছে চালকরা। অন্য সকলের চেয়ে কিছুটা বেশিই ব্যস্ত ছিল গাড়ি চালক আরিফ। এ জন্যে অন্য সকল গাড়ির চালকের থেকে একটু বেশিই গাড়ির হর্ন বাজাচ্ছিল সে। হর্নে বিকট শব্দে কিছু সময়ের মধ্যেই এলাকাটিতে নেমে এলো বিশৃঙ্খলা। সাধারণ পথচারীরা অসহনীয় এই হর্নে শব্দে চলছিল, কানে হাত চেপে। বেশি হর্ন বাজানোর প্রশ্নের জবাবে আরিফ মানবজমিনকে বলেন, হর্ন না দিলে কেউই সাইড দিতে চায় না। এর লাইগাতো এতো হর্ন বাজাইতে হয়।’ রাজধানীর কাওরান বাজারের প্রধান সড়কেও দেখা মেলে একই চিত্র। মোটরসাইকেল চালক থেকে শুরু করে ট্রাক চালক পর্যন্ত, যে যেমন খুশি হর্ন দিচ্ছে। বাচ্চাকে প্রতিদিন সকালে স্কুলে নিয়ে যাওয়া ও নিয়ে আসার পথে এমনই যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় বাসাবোর মাহিমের আম্মু সাদিয়া ইসলামকে। সাদিয়া বলেন, ‘ত্রিশটা তিন এই গাড়ি চালকরা কারণে অকারণে এমনভাবে হর্ন বাজায় যা অসহ্য হয়ে উঠেছে আমাদের কাছে। অফিস টাইমে ব্যস্তভাবে আগে যাওয়ার জন্যে প্রতিদিনই শুরু করে হর্ন দেয়া। এই হর্নের জন্যে আমাদেরতো ক্ষতি হচ্ছেই, বাচ্চাদের ক্ষতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।’ এ ব্যাপারে একজন পুলিশ সার্জেন্ট বলেন, গাড়িতে বা বাইকে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার সম্পূর্ণ্য নিষিদ্ধ। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করলে দুইশ টাকা জরিমানা করার বিধান আছে। তিনি বলেন, সার্জেন্ট বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে শব্দের মাত্রা পরিমাপের কোনো যন্ত্র না থাকায় তারা এ ব্যাপারে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন না। তবে মাঝেমধ্যে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পরিচালিত অভিযানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয় এবং যথাযথ শাস্তি দেয়া হয়।
পরিবেশ সংগঠন পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান বলেন, হর্নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আগে চালক ও ঢাকাবাসীর ধারণার পরিবর্তন প্রয়োজন। কোনো যানবাহনের রাস্তা সাইড দেয়া বা নেয়ার জন্য হর্ন ব্যবহার মোটেও ঠিক নয়। বহির্বিশ্বে হর্ন বাজানো মানে সামনের চালকের কোনো গুরুতর ভুল তাকে ধরিয়ে দেয়া বোঝায়। এর দ্বারা মূলত ওই গাড়ির চালককে অপমান করা হয়। সেখানে আমাদের দেশে বিনা প্রয়োজনেই যত্রতত্র বাজানো হচ্ছে হর্ন। এ ব্যাপারে সুন্দর জীবন সংস্থার সভাপতি এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটির সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, বহু আন্দোলন আর প্রতীক্ষার পর সরকার ২০০৬ সালের নভেম্বরে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন পাস করেছে। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি বাংলাদেশের অনেক মন্ত্রণালয়, পরিবেশ এবং শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের গাড়িতেও হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার হচ্ছে। হর্ন বাজানো যেখানে সম্পূর্ণ নিষেধ সেখানে আমরা দেখতে পাই গাড়ি সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকলে বা যানজটে দাঁড়িয়ে থাকলেও অনেক চালক অহেতুক হর্ন বাজাচ্ছেন। ট্রাফিক পুলিশ ইচ্ছা করলেই এটা কমাতে পারে। এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশকে আরো বেশি সক্রিয় ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বিশিষ্টজনদের মতে, শব্দ দূষণের কুফল সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করার গুরুদায়িত্ব মিডিয়াকে নিতে হবে। তবেই সময়ের ব্যবধানে সমাজ থেকে এই ব্যাধি দূর হবে।
খান জান্নাতুল ফেরদৌসি এ্যালিছ বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন রাজধানীর গ্রীণ রোড এলাকায়। ব্যস্ত এ ঢাকা শহরে পাখির ডাকে ভোরে তার ঘুম ভাঙবে, এরকম প্রত্যাশা তিনি কখনো করেন না।
কিন্তু যানবাহনের বিকট শব্দে ঘুম ভাঙার বিষয়টিকেও তিনি মেনে নিতে পারেন না। কান ঝালাপালা করা এই শব্দের কারণে তিনি অনিদ্রা ও মাথাব্যথার মতো অস্বস্তিকর সমস্যায় ভুগছেন। নাফিজা রহমান মৌ একজন চাকরিজীবী। থাকেন ধানমন্ডি এলাকায়। তার বাসার পাশের খালি জায়গায় উঠছে নতুন একটি ভবন। প্রতিদিন সকাল হতে না হতেই নির্মাণকাজের বিকট শব্দ তাদের দারুণ বিরক্তি তৈরি করে। সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ এ শব্দ দূষণ চলতেই থাকে একটানা। সেখানে অসংখ্য রড কাটাসহ ইট-পাথর ভাঙার কাজ হয়। হয় মেশিনের শব্দ। মৌ সকালে উঠে প্রহর গোনেন যে কখন বাসা ছেড়ে অফিসে চলে যাবেন এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি দুশ্চিন্তাতেও থাকেন এই ভেবে যে, তার আদরের সন্তানটিকে স্কুল থেকে ফিরে সারাদিন এই শব্দ দূষণের মধ্যেই কাটাতে হবে। এভাবেই পুরো রাজধানীতে কোথাও না কোথাও শব্দের অস্বাভাবিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে সবাইকে। প্রতিদিন রাজধানীবাসীর ঘুম ভাঙে ইটপাথর ভাঙার মেশিনের বিকট শব্দ কিংবা যানবাহনের অযাচিত হর্নে। কাউকে বলারও কোনো সুযোগ নেই। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে রয়েছে বেশ কিছু আইন ও নীতিমালা। কিন্তু নাগরিকদের অসচেতনতা এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এসবের প্রয়োগ হচ্ছে না। শব্দ দূষণের গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে ১৯৯৭ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে শহরকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নীরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, শিল্প এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা। এসব এলাকায় দিন ও রাত ভেদে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাসিক এলাকায় ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ডেসিবেল, শিল্প এলাকায় ৭৫ ডেসিবেল, নীরব এলাকায় ৪৫ ডেসিবেল, আবাসিক কাম বাণিজ্যিক এলাকায় ৬০ ডেসিবেল, রাতের জন্য সর্বত্র ১০ ডেসিবেলের কম। এই আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকাকে নীরব এলাকা চিহ্নিত করা হয়। আইনানুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারের নির্ধারিত ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকার মধ্যে মোটরগাড়ির হর্ন বাজানো বা মাইকিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরপর দেশে প্রণয়ন করা হয় ২০০২ ও ২০০৬ সালের শব্দ দূষণ নীতিমালা। এই নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা হলো ৫৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। একইভাবে নীরব এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্ধারিত অনুপাতের চেয়ে অধিক শব্দ সৃষ্টি করাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় বলা আছে, আবাসিক এলাকার সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণকাজের ইট বা পাথর ভাঙার যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। যানবাহনে অপ্রয়োজনে উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো যাবে না। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা যবে না। স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের চতুর্দিকে ১০০ গজের ভেতরে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না। কিন্তু কর্তৃপক্ষের যথাযথ আইনের প্রয়োগ না করা ও সাধারণ মানুষের এই বিষয়ে জ্ঞান না থাকায় প্রয়োজন ছাড়াই যার যেমন খুশি করছে শব্দ দূষণ। সরজমিনে, গতকাল রাজধানীর এ্যালিফ্যন্ট রোড এলাকায় গেলে দেখা যায়, ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছু যানবহন। সিগন্যাল ছাড়ার পরই শুরু হয় একে অন্যের থেকে আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতার জন্যে কিছুটা প্রয়োজন ছাড়াই হর্ন দিচ্ছে চালকরা। অন্য সকলের চেয়ে কিছুটা বেশিই ব্যস্ত ছিল গাড়ি চালক আরিফ। এ জন্যে অন্য সকল গাড়ির চালকের থেকে একটু বেশিই গাড়ির হর্ন বাজাচ্ছিল সে। হর্নে বিকট শব্দে কিছু সময়ের মধ্যেই এলাকাটিতে নেমে এলো বিশৃঙ্খলা। সাধারণ পথচারীরা অসহনীয় এই হর্নে শব্দে চলছিল, কানে হাত চেপে। বেশি হর্ন বাজানোর প্রশ্নের জবাবে আরিফ মানবজমিনকে বলেন, হর্ন না দিলে কেউই সাইড দিতে চায় না। এর লাইগাতো এতো হর্ন বাজাইতে হয়।’ রাজধানীর কাওরান বাজারের প্রধান সড়কেও দেখা মেলে একই চিত্র। মোটরসাইকেল চালক থেকে শুরু করে ট্রাক চালক পর্যন্ত, যে যেমন খুশি হর্ন দিচ্ছে। বাচ্চাকে প্রতিদিন সকালে স্কুলে নিয়ে যাওয়া ও নিয়ে আসার পথে এমনই যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় বাসাবোর মাহিমের আম্মু সাদিয়া ইসলামকে। সাদিয়া বলেন, ‘ত্রিশটা তিন এই গাড়ি চালকরা কারণে অকারণে এমনভাবে হর্ন বাজায় যা অসহ্য হয়ে উঠেছে আমাদের কাছে। অফিস টাইমে ব্যস্তভাবে আগে যাওয়ার জন্যে প্রতিদিনই শুরু করে হর্ন দেয়া। এই হর্নের জন্যে আমাদেরতো ক্ষতি হচ্ছেই, বাচ্চাদের ক্ষতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।’ এ ব্যাপারে একজন পুলিশ সার্জেন্ট বলেন, গাড়িতে বা বাইকে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার সম্পূর্ণ্য নিষিদ্ধ। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করলে দুইশ টাকা জরিমানা করার বিধান আছে। তিনি বলেন, সার্জেন্ট বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে শব্দের মাত্রা পরিমাপের কোনো যন্ত্র না থাকায় তারা এ ব্যাপারে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন না। তবে মাঝেমধ্যে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পরিচালিত অভিযানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয় এবং যথাযথ শাস্তি দেয়া হয়।
পরিবেশ সংগঠন পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান বলেন, হর্নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আগে চালক ও ঢাকাবাসীর ধারণার পরিবর্তন প্রয়োজন। কোনো যানবাহনের রাস্তা সাইড দেয়া বা নেয়ার জন্য হর্ন ব্যবহার মোটেও ঠিক নয়। বহির্বিশ্বে হর্ন বাজানো মানে সামনের চালকের কোনো গুরুতর ভুল তাকে ধরিয়ে দেয়া বোঝায়। এর দ্বারা মূলত ওই গাড়ির চালককে অপমান করা হয়। সেখানে আমাদের দেশে বিনা প্রয়োজনেই যত্রতত্র বাজানো হচ্ছে হর্ন। এ ব্যাপারে সুন্দর জীবন সংস্থার সভাপতি এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটির সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, বহু আন্দোলন আর প্রতীক্ষার পর সরকার ২০০৬ সালের নভেম্বরে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন পাস করেছে। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি বাংলাদেশের অনেক মন্ত্রণালয়, পরিবেশ এবং শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের গাড়িতেও হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার হচ্ছে। হর্ন বাজানো যেখানে সম্পূর্ণ নিষেধ সেখানে আমরা দেখতে পাই গাড়ি সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকলে বা যানজটে দাঁড়িয়ে থাকলেও অনেক চালক অহেতুক হর্ন বাজাচ্ছেন। ট্রাফিক পুলিশ ইচ্ছা করলেই এটা কমাতে পারে। এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশকে আরো বেশি সক্রিয় ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বিশিষ্টজনদের মতে, শব্দ দূষণের কুফল সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করার গুরুদায়িত্ব মিডিয়াকে নিতে হবে। তবেই সময়ের ব্যবধানে সমাজ থেকে এই ব্যাধি দূর হবে।
No comments