যোগ দিতে বাধ্য করার অভিযোগ
ভোলার মনপুরা উপজেলার মনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলাউদ্দিন হাওলাদারের মুক্তির দাবিতে গতকাল রোববার বেলা ১১টায় কয়েক শ মানুষ মানববন্ধন করেছেন। চেয়ারম্যানকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার দাবি করে তাঁরা ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান পরিষদের নেতৃবৃন্দ এসব দাবিকে মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে বলেন, মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভূমিদস্যুকে বাঁচাতে এ মানববন্ধন করা হয়েছে। ভোলা প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে মনপুরাবাসী গতকাল রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১ ঘণ্টা মানববন্ধন করেছেন। প্রেসক্লাব সড়কের দুই পাশে কাবিল জামে মসজিদের সামনে থেকে নতুনবাজার চত্বর পর্যন্ত মানববন্ধন করা হয়। ব্যানার ও ফেস্টুনে আলাউদ্দিন চেয়ারম্যানের মুক্তি ও ষড়যন্ত্রকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। মানববন্ধন শেষে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মনপুরা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক চন্দ্র দাস সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদারের ভাগনে উপজেলা যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক মো. কালাম উপস্থিত ছিলেন। লিখিত ও মৌখিক বক্তব্যে তাঁরা বলেন, শংকর বিজয় দাস,
ননী গোপাল দাস, ভবেশ মজুমদারসহ কয়েকজন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নাম করে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছেন। তাঁরা হিন্দুদের পৈতৃক জমি ফিরিয়ে দেওয়ার নাম করে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা নেন। কিন্তু ফল না পেয়ে তাঁরা মনপুরা ইউপির চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদারের সাহায্য প্রার্থনা করেন। চেয়ারম্যান হিন্দুদের সাহায্য ও আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসত করার আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করলে ভবেশ মজুমদার পক্ষের শত্রুতে পরিণত হন। তাঁরা ভারতীয় হাইকমিশন, কেন্দ্রীয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার পুলিশ আলাউদ্দিন হাওলাদার ও তাঁর ভাই ফরহাদ হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান করেছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি করা হয়, আলাউদ্দিন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হিন্দু পরিবার ও সরকারি ৭ হাজার একর জমি দখল ও বিক্রি, সরকারি জমিতে বাজার স্থাপন করে বিক্রি, বার্ষিক চাঁদা আদায়সহ সাধারণ জনগণের শতাধিক কোটি টাকা লোপাটের যে অভিযোগ উঠেছে, তা মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। একটি পক্ষ তাঁর জনপ্রিয়তা দেখে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা করছে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভোলা জেলা শাখার সভাপতি অবিনাশ নন্দী ও মনপুরা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক ভবেশ মজুমদার তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মনপুরা উপজেলার কলাতলি ও মাছগ্রাম মৌজা মনপুরা ইউনিয়নের অংশ ছিল। এ দুটি মৌজায় মোট রেকর্ড করা জমি ছিল ৪ হাজার ৫০ একর। ১৯৮০-৮২ সালে মৌজা দুটি মেঘনা নদীতে ভেঙে যায়। আবার ১৯৯০-৯২ সালে জেগে ওঠে বড় পরিসরে, যার পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার একর।
রেকর্ড করা মালিকদের দখলে আছে মাত্র ১ হাজার ৩৫০ একর। বাকি প্রায় ২০ হাজার ৬৫০ একর জমি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদার ও তাঁর ভাইদের দখলে। তাঁরা চিহ্নিত ভূমিদস্যু। আলাউদ্দিন ওই জমি দেড় একরের প্লট করে বিনা দলিলে দুই লাখ এবং চারটি বাজার করে প্রতিটি ভিটা চার-পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। ওই কলাতলি চরে সরকার চারটি আশ্রয়ণ প্রকল্প করেছে। সেখানে ৫০-৬০ হাজার টাকা নিয়ে ভূমিহীনদের আশ্রয় দিয়েছেন। ইউনিয়নে অনেক মানুষ আছেন যাঁরা ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতা, এলজিএসপির সুবিধাভোগী। এসব জমির ক্রেতা, আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী ও ইউনিয়নের সুবিধাভোগী লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে ভোলায় এনেছেন। গতকাল রোববার প্রেসক্লাবের সামনের মানববন্ধনে অংশ নিতে বাধ্য করেছেন। তারপরও অনেক মানুষ আসেননি। বাকি মানুষগুলো আলাউদ্দিন হাওলাদার ও তাঁর ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির এলাকার আত্মীয়স্বজন, যাঁদের অনেককেই টাকার বিনিময়ে আনা হয়েছে।
No comments