পাটুয়াটুলী গোল্ডেন টাওয়ারে বাড়তি অবৈধ দুটি তলা হচ্ছে
পুরান ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাস্থল পাটুয়াটুলীতে পাঁচতলা ঘড়ির মার্কেট গোল্ডেন টাওয়ারে অবৈধভাবে আরও দুটি তলা নির্মিত হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অবৈধ অংশ উচ্ছেদের তারিখ ঘোষণা করেও ঘটনাস্থলে না যাওয়ায় নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, রাজউক কালক্ষেপণ করে অবৈধ নির্মাণকারীদের ভবনের তলা বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। গত শনিবার সরেজমিনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এলাকার ব্যবসায়ীরা বলেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের বিশেষ অভিযানে যেখানে রাজধানীর বিভিন্ন ভবনের ছোটখাটো ত্রুটি এবং অবৈধ অংশ উচ্ছেদ করা হচ্ছে, সেখানে রাজউকেরই কিছু কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে এ ধরনের ভবনের অবৈধ তলা গড়ে উঠছে। পাটুয়াটুলীর ৬৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের এ ভবনটির অবৈধ তলা বাড়ানোর কাজ শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে পাঁচ মাস আগে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজউকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। বাংলাদেশ ঘড়ি ব্যবসায়ী সমিতি ও গোল্ডেন টাওয়ার (এস আর ঘড়ি ভবন) মার্কেট কমিটি আলাদাভাবে এই অভিযোগ করে। এতে বলা হয়, নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ওই ভবনে অবৈধভাবে ষষ্ঠ ও সপ্তম তলা নির্মাণ করা হচ্ছে। মার্কেটটিতে এমনিতেই ধারণক্ষমতার ওপরে লোকজনের সমাগম।
ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা ওই ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন। এ ছাড়া পানি, বিদ্যুৎ, শৌচাগারের সমস্যা রয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। বাংলাদেশ ঘড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল বাশারসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করতে রাজউকের অথরাইজড কর্মকর্তা (অঞ্চল-৭) নূরুজ্জামান জহির বরাবর দফায় দফায় লিখিত অভিযোগ জানানোর পরও কোনো কাজ না হওয়ায় তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোল্ডেন টাওয়ারকে নির্মাণকাজ বন্ধ করে নির্মিত অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলার চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়। পরে উচ্ছেদের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল গত ১৭ জানুয়ারি। কিন্তু ওই দিন বিকেল পর্যন্ত রাজউক ঘটনাস্থলে যায়নি। নূরুজ্জামান জহির তাঁদের বলেন, পুলিশ না পাওয়ায় তাঁরা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেননি। পরে নতুন করে তারিখ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু ওই দিনের পর রাজউকের পক্ষ থেকে অথরাইজড কর্মকর্তা বা অন্য কেউ ঘটনাস্থলে যাননি বা কোনো রকম খবর নেননি। ব্যবসায়ীদের দাবি, ভবনটির অবৈধ তলা ভাঙার পরিবর্তে রাজউকের সংশ্লিষ্ট লোকেরাই তা নির্মাণে মালিকপক্ষকে সুযোগ করে দিয়েছেন। গোল্ডেন টাওয়ার মার্কেট কমিটির সভাপতি আফজাল হোসেন ঢালী বলেন, ‘রাজউককে বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। রাজউক কাজ করে না, কিন্তু নির্মাণকাজ প্রতিদিন এগিয়ে যাচ্ছে।’ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে অনেকগুলো বহুতল ভবন। বেশির ভাগই ঘড়ির মার্কেট। ১৩ কাঠা আয়তনের জমিতে নির্মিত সাততলা হাজী ইলিয়াস মার্কেটের পাশে মাত্র দুই কাঠা জমির ওপর নির্মিত পাঁচতলা ভবন গোল্ডেন টাওয়ার। নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় ৪০টির মতো দোকান।
ওপরের তিনটি তলায় গুদাম। তার ওপরে নির্মিত অতিরিক্ত দুই তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়ে গেছে। জানা যায়, দুটি তলায় সেলামির বিনিময়ে বেশ কয়েকটি ‘ঘর’ বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। যাঁরা সেলামি দিয়েছেন, তাঁরাও বিপদের মধ্যে আছেন। ঘটনাস্থলে গোল্ডেন টাওয়ারের মালিক মতিউর রহমানকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অন্য প্রান্ত থেকে জানতে চাওয়া হয়, কে কথা বলছেন? পরিচয় দিলে বলা হয়, তিনি মতিউর রহমান নন, তাঁর ভাই সাইদুর রহমান। অনুমোদন ছাড়া তাঁরা বাড়তি তলা নির্মাণ করা হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি কিছু জানেন না। তিনি স্বীকার করেন মুঠোফোন নম্বরটি তাঁর ভাই মতিউর রহমানের। রাজউক কালক্ষেপণ করে ভবনমালিককে অবৈধ নির্মাণের সুযোগ করে দিয়েছে—ব্যবসায়ীদের এই অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নূরুজ্জামান জহির উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আপনারা রিপোর্ট করতে পারেন, এটা আমার জন্য কোনো ব্যাপারই নয়।’ রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রাজউকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কালক্ষেপণের কারণে অবৈধ তলা নির্মাণ শেষ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে কি না, তা খোঁজ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ভবনটির বিরুদ্ধেও অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments