সড়কে পিকআপস্ট্যান্ড, রয়েছে মাদক সমস্যা
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা মাদককে এলাকার প্রধান সমস্যা বলেছিলেন। নির্বাচনের প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু আগের অবস্থা এখনো বদলায়নি। ওয়ার্ডে মাদক সমস্যা বরং আরও ছড়িয়েছে। আগে মাদক ছিল কল্যাণপুর পোড়া বস্তিকেন্দ্রিক, এখন তা এলাকার পাড়া ও মহল্লার ভেতরেও ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১১ নম্বর ওয়ার্ডের আয়তন ১ দশমিক ১৩ বর্গকিলোমিটার। দক্ষিণ পাইকপাড়া, মধ্য পাইকপাড়ার কিছু অংশ, কল্যাণপুর ও সরকারি ডি-টাইপ কোয়ার্টার এলাকা নিয়ে গঠিত এ ওয়ার্ডে লক্ষাধিক লোকের বাস। গতকাল রোববার ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, কল্যাণপুর নতুন বাজার থেকে বাঙলা কলেজ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে পিকআপ স্ট্যান্ড, রিকশা মেরামতের দোকান। সড়কের এক পাশজুড়ে সারি দিয়ে রাখা হচ্ছে পিকআপ।
মোটরসাইকেল মেরামতের কাজ চলছে সড়কের ওপরই। ওয়ার্ডের অন্তত ২০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাঁদের অধিকাংশ অভিযোগ করেন, এলাকার নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে মাদকের আড্ডা বেশি হচ্ছে। মাদকের অন্যতম প্রধান উৎস কল্যাণপুর পোড়া বস্তি। এর আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রায় সব সময় উপস্থিত থাকেন। তবুও বন্ধ হচ্ছে না মাদকের ব্যবসা। কল্যাণপুর পোড়া বস্তির একাধিক বাসিন্দা বলেন, আগে বস্তির ভেতরেই মাদকসেবীদের দল বেঁধে মাদক নিতে দেখা যেত। এখন আর এই চিত্র দেখা যায় না। বর্তমানে মাদক ব্যবসার পুরোটাই ভ্রাম্যমাণ। ক্রেতা ও বিক্রেতা কেউই বস্তির ভেতরে অবস্থান করেন না। কেনাবেচা শেষ হলেই বস্তি থেকে বের হয়ে যান। কল্যাণপুর নতুন বাজার এলাকায় সড়কের এক পাশে গড়ে উঠেছে পিকআপ স্ট্যান্ড আর অপর পাশে রিকশা মেরামতের দোকান। সারি দিয়ে প্রায় ২০টি পিকআপ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। বাজারের মোড়ে সড়ক দখল করে স্ট্যান্ড বানিয়ে চালানো হচ্ছে রেন্ট-এ-কার ব্যবসা। ফলে সড়কের প্রস্থ অনেকটাই কমে গেছে। স্থানীয় বাজারের একাধিক দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগে দু-তিনটি পিকআপ এখানে রাখা হতো। ধীরে ধীরে পিকআপের সংখ্যা বেড়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ লোকজন পিকআপ স্ট্যান্ডটি গড়ে তুলেছেন। দেখা যায়, এলাকায় অসংখ্য আবাসিক ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এসব ভবনের নির্মাণসামগ্রী সামনের সড়কের অনেকটাজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে।
রাতে ট্রাকে এনে রাখা ইট, বালু সড়কেই রেখে দিয়েছেন নির্মাণাধীন ভবনের মালিকেরা। ফলে সড়ক সংকুচিত হয়ে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মশার উপদ্রব কল্যাণপুর ও পাইকপাড়া এলাকার অন্যতম সমস্যা। এলাকায় খেলার মাঠ নেই। ওয়ার্ডে একটি কমিউনিটি সেন্টার হবে—এটি এলাকাবাসীর বহুদিনের প্রত্যাশা হলেও সেটি পূরণ হয়নি। কল্যাণপুর পোড়া বস্তিতে প্রবেশের প্রধান সড়ক দুটির বেহাল অবস্থা। দেখে বোঝার উপায় নেই শেষ কবে পিচঢালাই হয়েছিল। সড়কের দুই পাশেই গড়ে উঠেছে দোকান, নেই ফুটপাতও। বস্তির ভেতরে কয়েকটি রিকশা-ভ্যান গাড়ির গ্যারেজ আছে, চালকদের সেগুলো নিয়ে আসা-যাওয়া করতে বেগ পেতে হচ্ছে। বস্তির কমিউনিটি বেইসড অর্গানাইজেশনের (সিবিও) সাধারণ সম্পাদক হান্নান আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের বস্তি উন্নয়ন বিভাগ নামেই আছে। ২০ বছরে তাদের কোনো কাজ করতে দেখিনি। গত দুই বছরে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো উন্নয়ন বস্তিতে হয়নি। বস্তির প্রধান সড়ক পিচঢালাই করা, বস্তির পাশে সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠা, বৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাস-সংযোগসহ নাগরিক সুবিধার দাবি জানান বস্তিবাসী।
No comments