ট্রাম্প–ওবামা দ্বন্দ্ব আবার সামনে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পূর্বসূরি বারাক ওবামার প্রতি গত শনিবার কথিত ‘আড়ি পাতা’ নিয়ে যে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন, তা খুব বিস্ময়কর কিছু নয়। তবে দুই নেতার মধ্যে পারস্পরিক বিদ্বেষের গভীরতার প্রমাণ মেলে এতে। এই বিরোধ চলছিল এক দশক ধরেই। ওবামা বহু বছর ট্রাম্পের নেতৃত্বে ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্ব’ বিষয়ে প্রচারণা শুনেছেন। এতে দাবি করা হয়, ওবামার জন্ম সনদ জাল আর তাঁর প্রকৃত জন্মস্থান যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্য নয়, বরং কেনিয়া। এই প্রচারণার মাধ্যমে ওবামার আফ্রিকান শেকড়ের প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ আক্রমণ করা হয়। ওবামা যখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন, ট্রাম্প তখন রাজনৈতিক অঙ্গনে ততটা প্রভাবশালী ছিলেন না। তবে টেলিভিশনের রিয়েলিটি শোর তারকা হিসেবে তিনি বেশ পরিচিত ছিলেন। ২০১১ সালের শুরুর দিকে কনজারভেটিভ অ্যাকশন কনফারেন্সে (সিপিএসি) ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট কোত্থেকে এসেছেন, তা অস্পষ্ট। আসলে আরেকটু বিশদভাবে বলছি। বিদ্যালয়ের সহপাঠীরা কেউই তাঁকে দেখেনি; কেউ চেনেই না তিনি কে। অদ্ভুত।’ তবে ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় দুজনের মধ্যে একধরনের আন্তরিকতার প্রকাশ দেখা যায়। ট্রাম্প বিভিন্ন জনসভায় প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রশংসা করেন। সম্ভবত ট্রাম্প তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে নিজের লৈঙ্গিক ব্যবধানের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করতেই এমন কৌশল বেছে নেন। নির্বাচনের মাস দুয়েক আগে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন, ওবামার জন্ম পরিচয় নিয়ে কথাবার্তা বন্ধ করবেন। ওবামা ফ্লোরিডায় এক জনসভায় বলেছিলেন, ট্রাম্পের সহযোগীরা তাঁর টুইটার ব্যবহারে বাধা দিতে চাইছেন। কেউ যদি রাত তিনটা পর্যন্ত জেগে টুইট করেন, তাহলে তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।
এবারের নির্বাচনের পর ট্রাম্প ও ওবামা পরস্পরের প্রতি আন্তরিক ছিলেন, জনসমক্ষে হলেও। ওবামা চেয়েছিলেন জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্যসেবা ও পররাষ্ট্র বিষয়ে তাঁর নীতিগুলো বহাল থাকুক। তিনি ট্রাম্পের বিজয়ের পর অভিনন্দন জানান। অন্যদিকে বিজয়ী ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে গিয়ে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেন। তবে ডিসেম্বরের শেষ দিকে তাঁদের সম্পর্কে আবার অবনতি ঘটে। একপর্যায়ে ‘ইরানের সঙ্গে ভয়ানক চুক্তির’ জন্য ওবামা প্রশাসনের নিন্দা করেন ট্রাম্প। এ ছাড়া ইঙ্গিত দেন, তিনি অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে নতুন করে ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানাবেন। এ বিষয়ে ওবামা প্রশাসনের নীতি ছিল বিপরীত। অনলাইনে শনিবার ট্রাম্প-ওবামার দ্বন্দ্ব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। ওই সকালেই ওবামাকে ‘খারাপ লোক’ আখ্যা দিয়েট্রাম্প আক্রমণাত্মক একটি টুইট করেন। এতে তিনি বলেন, ‘ভয়ানক ব্যাপার! এইমাত্র জানতে পারলাম ওবামা আমার কথাবার্তায় আড়ি পেতেছিলেন। আমার বিজয়ের কিছুক্ষণ আগে ট্রাম্প টাওয়ারে ওই কথাবার্তা হয়েছিল। তবে তিনি কিছুই পাননি।’ ট্রাম্পপন্থী সংবাদবিষয়ক রক্ষণশীল ওয়েবসাইট ব্রেইটবার্ট বৃহস্পতিবার একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। ডানপন্থী বেতার উপস্থাপক মার্ক লেভিন এতে দাবি করেন, ওবামার শাসনামলের ‘পুলিশি রাষ্ট্রের’ বিভিন্ন পদক্ষেপ তদন্ত করে দেখতে হবে। এসব নিয়েই বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরোধ অব্যাহত রয়েছে। হয়তো তাঁদের দ্বন্দ্বের ধরন পাল্টেছে, কিন্তু বৈরিতা কমেনি।
No comments