কার নির্দেশে অস্ত্র দিলেন ভোলা, জানতে সাত মাস পর আবারও জিজ্ঞাসাবাদ
সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানমকে খুন করতে খুনিদের পিস্তল ও গুলি সরবরাহ করেছিলেন এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা। কার নির্দেশে এবং কেন তিনি অস্ত্র ধার দিয়েছিলেন, সে বিষয়ে জানতে সাত মাস পর আবারও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনের সময় বাবুল আক্তারের ‘সোর্স’ হিসেবে কাজ করতেন ভোলা। গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ভোলাকে নগরের লালদীঘি এলাকার গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে আনা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুজ্জামান। এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে ভোলাকে দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। গত বছরের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করা হয় মাহমুদাকে। মো. কামরুজ্জামান গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, দুই দফায় আট দিন রিমান্ডে নিয়ে ভোলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও মুখ খোলেননি তিনি। গত বছরের আগস্ট মাসে ভোলাকে আবারও রিমান্ডে নিতে আদালতে আবেদন করা হয়।
তখন দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। কিন্তু এত দিন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। এর মধ্য তদন্তে আরও বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলো তাঁর কাছ থেকে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কাল (আজ) তাঁকে আদালতে হাজির করা হবে। এদিকে মাহমুদা হত্যার ঘটনায় তাঁর স্বামী বাবুল আক্তার জড়িত বলে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন মাহমুদার বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন ও মা শাহেদা মোশাররফ। সেদিন তদন্ত কর্মকর্তা রাজধানীর মেরাদিয়ার ভূঁইয়াপাড়ায় মাহমুদার বাবার বাসায় যান। পরদিন বাবুল আক্তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লেখেন, তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই তাঁকে খুনি বানানো হচ্ছে। মাহমুদা হত্যার তিন সপ্তাহ পর গত বছরের ২৭ জুন এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মো. ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁরা উল্লেখ করেন, কামরুল শিকদার ওরফে মুছার নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডে তাঁরা সাত-আটজন অংশ নেন। অস্ত্র সরবরাহ করেন ভোলা। ওই দিন রাতেই পুলিশ বাকলিয়ার রাজাখালী এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করেন। গ্রেপ্তার করা হয় ভোলা ও তাঁর সহযোগী মো. মনিরকে। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুজ্জামান বাদী হয়ে বাকলিয়া থানায় পৃথক আরেকটি মামলা করেন। অস্ত্র মামলায় মনির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে তিনি বলেন, মাহমুদা হত্যার পর ভোলা তাঁকে অস্ত্র-গুলি রাখতে দেন। তদন্ত শেষে এই মামলায় গত বছরের ২৮ জুলাই ভোলা ও মনিরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু কার নির্দেশে, কেন ভোলা মাহমুদা হত্যায় অস্ত্র সরবরাহ করেন, তা তদন্তে উঠে আসেনি।
বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। পুলিশ সূত্র জানায়, মাহমুদা হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন কামরুল শিকদার ওরফে মুছাকে ঘটনার পর থেকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় গত বছরের ৬ অক্টোবর তাঁকে ধরতে পাঁচ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেন নগর পুলিশ কমিশনার। তিনি বাবুলের সোর্স ছিলেন। তাঁকে যেহেতু পাওয়া যাচ্ছে না, ভোলাই একমাত্র ভরসা। ভোলাই বলতে পারবেন তাঁকে অস্ত্র-গুলি দিতে কে বা কারা কেন বলেছিলেন। মাহমুদা হত্যার তিন সপ্তাহ পর গত বছরের ২৪ জুন মধ্যরাতে ঢাকার বনশ্রী এলাকার শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে আবার বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ‘বাবুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হলো।’
No comments