৩০ ঘণ্টা পর ‘নবান্ন’ ছাড়লেন মমতা
কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন টোল প্লাজায় সেনাবাহিনী নামানোর প্রতিবাদে রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্ন’তে ৩০ ঘণ্টা অবস্থান নেওয়ার পর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সেখান থেকে বেরিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে তিনি বলেছিলেন, সেনাবাহিনী প্রত্যাহার না করা হলে তিনি নবান্ন থেকে বের হবেন না। গতকাল সচিবালয় ছাড়ার আগে মমতা বলেন, ‘কেন্দ্র আমাদের নিপীড়ন করতে চাইছে।
আমরা আইনিভাবে এর বিরুদ্ধে লড়ব।’ বৃহস্পতিবার পূর্বঘোষণা ছাড়াই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন টোল প্লাজায় সেনা মোতায়েন করা হয়। এর পরপরই মমতা দাবি করেন, রাজ্য সরকারকে না জানিয়েই পশ্চিমবঙ্গে সেনা মোতায়েন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তিনি ঘোষণা দেন, সেনা প্রত্যাহার না হলে তিনি রাজ্য সচিবালয় ছাড়বেন না। বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা ৩০ ঘণ্টা তিনি সেখানে ছিলেন। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি সেনাবাহিনীর নিয়মিত মহড়ার অংশ। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারকে আগেই জানানো হয়েছে। তবে মমতা বলেছেন, তাঁর সরকারকে এ বিষয়ে আদতে কিছুই জানানো হয়নি। মমতার দাবি, রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে সেনাবাহিনী কেন্দ্রের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গে নেমেছে। তাঁর সরকারের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব বা পুলিশের প্রধানকে না জানিয়ে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। এদিকে রাজ্য সরকারের অভিযোগ খণ্ডন করে গতকাল ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল সুনীল যাদব বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চিঠি দিয়ে এই অভিযানে নেমেছে সেনাবাহিনী। গত ২৪ নভেম্বর রাজ্য পুলিশকেও জানানো হয়েছিল। এটা তাদের নিয়মিত কর্মসূচি। এ ধরনের মহড়া গত বছরের ১৯ থেকে ২৪ নভেম্বরও হয়েছিল। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরও একই কথা বলেছেন। সেনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,
দুই দিন ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, অরুণাচল, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম—সর্বত্রই একাধিক জায়গায় সেনাবাহিনীর এই কর্মসূচি চলছে। প্রতিটি দলে ৫ থেকে ১০ জন নিরস্ত্র সেনাসদস্য রয়েছেন। কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের পুলিশকে জানিয়েই তারা এই কর্মসূচি শুরু করেছে। প্রথমে সেনাবাহিনী এই কর্মসূচি ২৮ নভেম্বর গোটা পশ্চিমবঙ্গে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু পুলিশের অনুরোধে তা ১ ডিসেম্বর শুরু করা হয়। মমতার দলের বিধায়কেরা রাজ্যপালের বাসভবন ‘রাজভবন’ চত্বরও ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। রাজ্যপাল কলকাতায় নেই। তিনি এখন দিল্লিতে রয়েছেন। তবে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজভবনে গিয়ে দলের তরফ থেকে সেনা প্রত্যাহারের দাবিসংবলিত একটি স্মারকলিপি পেশ করেছেন। তৃণমূলের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, রাজ্যকে না জানিয়ে যেভাবে পশ্চিমবঙ্গে সেনাসদস্য নামানো হয়েছে, তা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আঘাত। তৃণমূলের আরেক সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের ১৯টি জায়গায় সেনা নেমেছে। এ ধরনের ঘটনা এই পশ্চিমবঙ্গে আগে ঘটেনি। নয়াদিল্লি প্রতিনিধি জানান, সেনা মোতায়েনের বিষয়টি গতকাল সংসদের উভয় কক্ষে উত্থাপন করেন তৃণমূল কংগ্রেস সদস্যরা।
তাঁদের পাশে সমর্থন নিয়ে দাঁড়ায় কংগ্রেস, বহুজন সমাজ পার্টিসহ অনেকেই। সবাই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন। পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর লোকসভায় বলেন, যেভাবে দেশের সেনাবাহিনীকে এই বিতর্কে টেনে আনা হচ্ছে, তা নিতান্তই দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, এই আচরণ তৃণমূল নেত্রীর ‘রাজনৈতিক হতাশার’ বহিঃপ্রকাশ। প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই ঘটনাকে ‘রুটিন মহড়া’ জানিয়ে বলেন, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, এই মহড়া উত্তর প্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খন্ডে গত মাসে হয়ে গেছে। মহাসড়কে কী পরিমাণ ভারী যান চলাচল করে, সেনাবাহিনী তার একটা হিসাব নেয়। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এই জরিপ কাজ দেয়। সেনাবাহিনী পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অরুণাচল, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, মণিপুর ও মেঘালয়ে এই জরিপ করেছে। সংসদের দুই কক্ষেই তৃণমূলের সদস্যরা অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকার, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সবাইকে অন্ধকারে রেখে সেনাবাহিনী এই কাজটা করেছে।
No comments