কাস্ত্রোর মৃত্যুতে কিউবায় মার্কিন উপস্থিতি বাড়বে
মার্কিন পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়তে গোটা জীবনটাই পার করে দিয়েছিলেন কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো। কিন্তু তাঁর প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গেই কমিউনিস্ট শাসিত দ্বীপদেশটিতে মার্কিন উপস্থিতি বাড়ার আভাস স্পষ্ট হওয়া শুরু করেছে। তাঁর প্রয়ানের অল্প কিছুদিন আগেই কিউবায় ফিরে এসেছে মার্কিন প্রমোদতরি। দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত উড়োজাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। ফিরে এসেছে দূতাবাসও। বাইসাইকেল রিকশাগুলোয় এখন অবাধে উড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। হাভানার পুরোনো নানা এলাকায় এখন মার্কিন পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে।
ফেরিওয়ালারা বিক্রি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পোস্টার। কিউবার জনগণের একটি অংশ আশা করছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে দ্বীপদেশটির অর্থনীতি চাঙা হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ও কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো ইতিমধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। দুই দেশ পরস্পরের ভূখণ্ডে দূতাবাস আবার চালু করেছে। আর কিউবার ওপর থেকে বাণিজ্য ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রতি ফিদেলের বৈরী মনোভাব ছিল। তিনি মার্কিনপন্থী স্বৈরশাসক ফুলগেনসিও বাতিস্তাকে উৎখাত করেই কিউবায় বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গেরিলাযুদ্ধ চলাকালে কাস্ত্রো ১৯৫৮ সালে এক চিঠিতে অঙ্গীকার করেছিলেন, বাতিস্তাকে সমর্থন করার মাশুল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আদায় করবেন। কাস্ত্রোর প্রয়াণের অল্প কিছুদিন আগেই কিউবায় ফিরে এসেছে মার্কিন প্রমোদতরি। দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত উড়োজাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। ফিরে এসেছে দূতাবাসও। বাইসাইকেল রিকশাগুলোয় এখন অবাধে উড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়ে কাস্ত্রো বলেছিলেন, এটিই তাঁর সত্যিকারের গন্তব্য। সম্প্রতি নিজের ৯০তম জন্মদিনে গত ১৩ আগস্ট কাস্ত্রো এক নিবন্ধে স্মৃতিচারণা করেন, তাঁকে হত্যার লক্ষ্যে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) বেশ কয়েকবার ‘ম্যাকিয়াভেলীয়’ প্রচেষ্টা চালিয়েছে। ২০১৪ সালে রাউল কাস্ত্রো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রকাশ্যে এর প্রতিক্রিয়া জানাতে ফিদেল কয়েক মাস সময় নিয়েছিলেন। কিছুটা উষ্ণতা মাখিয়েই বলেছিলেন, রাউল ‘ঠিক কাজটাই’ করেছেন। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইন্টার-আমেরিকান ডায়ালগের প্রেসিডেন্ট মাইকেল শিফটার বলেন, সবাই জানে ফিদেল তাঁর ভাইয়ের রাজনৈতিক পরিবর্তন উদ্যোগের ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিলেন না। তিনি কিছুটা অনমনীয়ই ছিলেন। বারাক ওবামা গত মার্চে কিউবায় ঐতিহাসিক সফরে যান। ৮৮ বছরের মধ্যে এটিই ছিল সেখানে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম সফর।
এ সময় কাস্ত্রো এক কঠোর নিবন্ধে লেখেন, ‘আমরা ওই সাম্রাজ্যের কাছ থেকে কোনো উপহার চাই না।’ কিন্তু তাঁর অপছন্দ সত্ত্বেও কিউবায় মার্কিন প্রভাব ফিরে আসছে। কয়েক দশকের পুরোনো অর্থনৈতিক অবরোধ বহাল থাকা অবস্থায়ই ওবামা প্রশাসন হাভানার ওপর থেকে বেশ কিছু বাণিজ্য ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। কিউবায় ৫০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথম কোনো মার্কিন প্রমোদতরি গত মে মাসে নোঙর করে। দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত উড়োজাহাজ চলাচলও শুরু হয়েছে। এয়ারবিএনবি এবং নেটফিক্সের মতো মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো এখন কিউবায় কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ছাড়া স্টারউড হোটেল কর্তৃপক্ষ হাভানায় গত জুনে শেরাটন হোটেলের একটি শাখা খুলেছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার মার্কিন নাগরিক কিউবা ভ্রমণ করেছেন। তবে ওবামা সরকার নানা বাধা তুলে নিলেও অন্যান্য পশ্চিমা দেশ কিউবার সরকার-নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিতে প্রবেশ করতে এখনো বাধার মুখোমুখি হচ্ছে। কাস্ত্রো বেঁচে থাকলে আরও বেশি শত্রুভাবাপন্ন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দেখতেন। যুক্তরাষ্ট্রের হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিউবার প্রয়াত নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুর পরও তাঁকে একজন ‘নির্মম স্বৈরশাসক’ আখ্যা দিয়েছেন। ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কিউবান রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হোর্হে দুয়ানি বলেন, কাস্ত্রোবিরোধী কথাবার্তার মাধ্যমে ট্রাম্প কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন।
No comments