এবার ‘দিল্লি দখল’ মিশন মমতার
টানা দ্বিতীয়বার বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর এবার দিল্লি দখলের মিশন বাস্তবায়ন করতে চান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বিভিন্ন রাজ্যের শক্তিশালী আঞ্চলিক দলগুলোর সমন্বয়ে ফেডারেল ফ্রন্ট গড়ে তুলতে চান তিনি। প্রস্তাবিত এই ফেডারেল ফ্রন্ট জাতীয় পর্যায়ে বিজেপি ও কংগ্রেসের বিকল্প তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারণায় মমতা বারবার জানিয়েছেন, ২০১৬ নির্বাচনে বড় জয় পেলে ২০১৯ সালে তিনি দিল্লি দখলের পদক্ষেপ নেবেন। এখন পশ্চিমবঙ্গের বাম-কংগ্রেস জোটকে ধরাশয়ী করে নিরংকুশ জয় পেয়েছে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে মমতা ১৮৪ আসন পেয়েছিলেন, এবার সেখানে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন ২১১ আসন। এই অভাবিত সাফল্যের পর দিল্লি দখল মিশন পূরণে আরও চাঙ্গা হবেন তিনি। সেই উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়নে প্রাদেশিক বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত মমতা। পশ্চিমবঙ্গের ‘দিদি’ মমতা তার দিল্লি দখল মিশন নিয়ে বেশ বিনয়ী কথা বলছেন। বৃহস্পতিবার নিউজ ১৮-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মমতা বলেন,
আমি একজন এলআইপি-লেস ইমপর্টেন্ট পারসন (নগণ্য মানুষ)। আমি নিজেকে সাধারণ মনে করি। আমি কোনো বড় ভূমিকা রাখতে পারি না। তবে ছোট মানুষরা ছোট ছোট ভূমিকা রাখে। আর আমি এই কাজের জন্যই প্রস্তুত। মমতা আরও বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য ফেডারেল ফ্রন্ট গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। রাজ্যে রাজ্যে অনেক আঞ্চলিক দল রয়েছে। তারা একত্রিত হতে পারে। তাদের সঙ্গে মিলে কাজ করতে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি তাদের পেছনে থেকেও এ কাজ করতে পারব। পরে এনডিটিভির সঙ্গে পৃথক সাক্ষাৎকারে মমতা প্রাদেশিক দলগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রাখার ইঙ্গিত দেন। ভারতের রাজ্যে রাজ্যে তার অনেক বন্ধু রয়েছে বলে জানান তিনি। মমতা বলেন, আমার অনেক বন্ধু রয়েছে। আমরা একসঙ্গে বসতে পারি, আলোচনা করতে পারি। চন্দ্র বাবু আমার বন্ধু, তেলেঙ্গানা বন্ধু, অরবিন্দ কেজরিওয়ালও অবশ্যই আমার বন্ধু। আমি নবীন পাটনায়েকের সঙ্গে কথা বলতে পারি। জয়ললিতা, মায়াবতী, মুলায়েমজি, লালুজি, নীতিশ কুমারজি কারও সঙ্গে বসতে আমার সমস্যা নেই। ভারতের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থান নিয়ে আগেও একটু আধটু আলোচনা ছিল। সাম্প্রতিক পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল নতুন কিছু সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছে। আসামে কংগ্রেসকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে সক্ষম হয়েছে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি। তাদের এই জয় কেবল তরুণ গগৈর আধিপত্যের অবসান নয়, বরং বাম-কংগ্রেসের দ্বিমেরু দুর্গের ওপর আঘাত। এখন কেরালা এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি দলীয় খাতা খুলতে পেরেছে। এখন বিজেপির উত্থান ঠেকাতে বিকল্প হিসেবে বহু রাজনৈতিক দল এক ছাতার নিচে আসতে পারে। এই সম্ভাবনা আরও জোরদার হয়েছে বৃহত্তর দল কংগ্রেসের দ্রুত অবনতির কারণে। অন্যথায় ভারতের স্বাধীনতা আদায়কারী দল হিসেবে কংগ্রেস একটা ভারসাম্য হিসেবে কাজ করছিল। তৃতীয় শক্তি হিসেবে ফেডারেল ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠা করতে গেলে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
কেননা বহু প্রকার রাজনৈতিক শ্রেণীবিন্যাস ও নানা মতাদর্শিক সমন্বয় সাধনের প্রয়োজন হবে। আর এই কঠিন পর্বতময় পথের কথা মাথায় রেখে মমতা ব্যানার্জি নিজেকে নেতা হিসেবে সামনে উপস্থাপন করেনি। কিন্তু এবারের পশ্চিমবঙ্গে একচেটিয়া বিজয়ের পর মমতার সেনানায়করা প্রকাশ্যেই তাকে সামনে ঠেলে দিচ্ছেন। তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা বলা শুরু করেছেন, ২০১৯ সালে দিদিকেই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়া উচিত। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ও এমপি দেরেক ব্রেইন বলেছেন, বাংলায় ভোটের ফল মমতাদিকে রাজনৈতিক অমরত্ব দিয়েছে। তিনি কোনো পদের জন্য লালায়িত নন, কিন্তু তিনিই ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। কোনোকিছুই উড়িয়ে দেয়া যায় না। এনডিটিভির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, কলকাতা থেকে মাত্র দু’ঘণ্টায় দিল্লি যাওয়া যায়। এর আগেই আমরা দিল্লি দখল করতে পারি। রাজ্যের শিল্প ও অর্থমন্ত্রী অরুণ মিত্র বলেছেন, আঞ্চলিক রাজনীতিতে এখন নতুন প্যারাডাইম। নতুন ছন্দ ও নীতি বিজয়ীরাই ৈৈতরি করবে, পরাজিতরা নয়। তাই আঞ্চলিক দলগুলো বড় ম্যান্ডেট পেয়েছে এবং তারা দিল্লি অভিযানে প্রস্তুত। আর ২০১৯ সালে মমতাকেই বড় ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ তিনিই একমাত্র নেতা যিনি একইসঙ্গে বিজেপি-কংগ্রেস-বাম ধরাশয়ী করেছেন। এদিকে, ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, এমন জগাখিচুড়ি জোট দিয়ে ভালো কিছু করা যায় না। আঞ্চলিক দলগুলোর এক হওয়া একটা তত্ত্বগত বিষয়। এ ধরনের তৃতীয় শক্তির চিন্তা আগেও হয়েছে আর তা ব্যর্থতায় রূপ নিয়েছে। ভারত যদি এমন জোটের অভিজ্ঞতার ভেতরে যায়, তবে তা বিপর্যয়কর হবে। জাতীয় রাজনীতির ক্ষমতাসীনরা যাই বলুক, মমতার এই দিল্লি দখল মিশনে নতুন কিছু আসতে পারে। তৃতীয় শক্তির ফেডারেল ফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত কোনো চমক দেখাতে পারবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
No comments