পঞ্চায়েতে বিরোধের জেরেই খুন, ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
হবিগঞ্জের
বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের চার শিশু অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় গ্রাম
পঞ্চায়েতের (একাংশ) প্রধান আবদুল আলী ও তাঁর তিন ছেলেসহ নয়জনের বিরুদ্ধে
অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, পঞ্চায়েত নিয়ে বিরোধের জের
ধরেই ওই ঘটনা ঘটে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম
মো. কাউছার আলমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা
জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক মো. মোকতাদির হোসেন। আদালত ১০
এপ্রিল অভিযোগপত্রের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেছেন। অভিযোগপত্রে যাঁদের
অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাঁরা হলেন গ্রাম পঞ্চায়েতপ্রধান আবদুল আলী ওরফে বাগাল
এবং তাঁর ছেলে মো. জুয়েল মিয়া, মো. রুবেল মিয়া ও মো. বিল্লাল মিয়া; একই
গ্রামের সাহেদ ওরফে ছায়েদ, মো. হাবিবুর রহমান ওরফে আরজু, উস্তার মিয়া,
বাবুল মিয়া ও অটোরিকশাচালক বাচ্চু মিয়া। তাঁদের মধ্যে র্যা পিড অ্যাকশন
ব্যাটালিয়নের (র্যা ব) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় বাচ্চু এবং
সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে বাছির আহমদ ও মো. সালেহ আহমদকে অব্যাহতির সুপারিশ
করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিল্লাল, উস্তার ও বাবুল পলাতক
রয়েছেন। বাকিরা কারাবন্দী। তাঁদের মধ্যে রুবেল, জুয়েল ও হাবিবুর আদালতে
হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। অভিযোগপত্র দাখিলের
পর দুপুরে সিলেটে পুলিশের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) দপ্তরে এক সংবাদ
সম্মেলনে অভিযোগপত্রের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান
ও হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) জয়দেব কুমার ভদ্র। ডিআইজি বলেন, দ্রুততম
সময়ে তদন্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। আশা করছি বিচারকার্য দ্রুত
হবে। এদিকে মামলার বাদী মো. আবদাল মিয়া বলেন, প্রকৃত দোষী ব্যক্তিরা
অভিযুক্ত হওয়ায় তাঁরা খুশি। এখন সঠিকভাবে বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে
আসামিদের বিচার দেখতে চান তাঁরা। গত ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সুন্দ্রাটিকি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র জাকারিয়া ওরফে শুভ (৮),
প্রথম শ্রেণির মনির মিয়া (৭), চতুর্থ শ্রেণির তাজেল মিয়া ওরফে সাদেক (১০) ও
সুন্দ্রাটিকি মাদ্রাসার ছাত্র ইসমাইল মিয়া (১০) নিখোঁজ হয়। পাঁচ দিন পর ১৭
ফেব্রুয়ারি সকালে গ্রামের পাশে ইছারবিল খালের পাশে বালুচাপা অবস্থায় চার
শিশুর লাশ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে ইসমাইল ছাড়া তিনজন আপন চাচাতো ভাই।
ইসমাইল প্রতিবেশী। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সুন্দ্রাটিকি গ্রামে আটটি পঞ্চায়েত।
এর মধ্যে একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন আবদুল খালেক তালুকদার (খালেক মাস্টার)।
অন্যটির আবদুল আলী। এ দুটি পক্ষের মধ্যে পঞ্চায়েত ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব অনেক
পুরোনো। নিহত চার শিশুর পরিবার আবদুল খালেকের সমর্থক। অন্যদিকে, আবদুল
আলীর চার ভাই, পাঁচ ছেলে। নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে গ্রামে বিরোধ লাগিয়ে
রাখতেন তাঁরা। চার শিশুহত্যার ২০ দিন আগে আবদুল আলী এক গোপন বৈঠকে আবদুল
খালেকপক্ষের প্রধান দুজনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। কিন্তু বড়দের হত্যায়
সুবিধা করতে না পেরে ওই চার শিশুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
No comments