সুয়ারেজ ঝলকে এগিয়ে থাকল বার্সা
আগের
দিনই ‘পানামা পেপারস’-এ নাম এসেছে তাঁর। আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ মাথায়
নিয়ে নিজের স্বাভাবিক খেলাটা লিওনেল মেসি খেলতে পারবেন কিনা, এ নিয়ে সংশয়ে
ছিলেন অনেক বার্সেলোনা সমর্থকই। মেসি দোষী হন বা না হন, পানামা পেপারসে
ধন-সম্পদ পাচারের অভিযোগ আসাটা মানসিক দিক দিয়েও তো এক ধরনের চাপ। কিন্তু
চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে মাঠে নেমে মেসি কাল
সবকিছু দূরেই সরিয়ে রাখলেন। নিজে খেললেন, দলকে খেলালেন। তাঁর নেতৃত্বে
বরাবরের মতোই দুর্দান্ত ‘এমএসএন’। মেসির সঙ্গে নেইমার দেখালেন নিজের ঝলক।
গোল করার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিলেন লুইস সুয়ারেজ। এই ত্রয়ীর নৈপুণ্যে
এক গোলে পিছিয়ে পড়েও বার্সেলোনা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে তুলে নিয়েছে
২-১ ব্যবধানের স্বস্তির জয়। অ্যাটলেটিকোর দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। যে
ফার্নান্দো তোরেসের গোলে দলটি ন্যু ক্যাম্পে প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল, সেই
তোরেসের লালকার্ডই শেষ পর্যন্ত তাদের হারের কারণ। দশজনের দল নিয়ে
বার্সেলোনার সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি তারা। ৬৩ ও ৭৪
মিনিটে লুইস সুয়ারেজের জোড়া গোল বার্সেলোনাকে এনে দেয় জয়। তোরেসের দুই হলুদ
কার্ডের মিলিত পরিণতিতেই ঘটেছে অ্যাটলেটিকোর সর্বনাশ। গোল করে দলকে এগিয়ে
দিয়েছিলেন তিনিই। কিন্তু গোল করেই নেইমারকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন। ৩৫
মিনিটে সার্জিও বুসকেটসকে পেছন থেকে ফাউল করে বসেন। ডাগ আউট থেকে রেফারির
সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ এলেও তোরেস কেন বার্সেলোনার অর্ধে বুসকেটসকে
ফাউল করতে গেলেন, সেটা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। তোরেস নিজে অবশ্য বেশ
ক্ষুব্ধ রেফারির এই সিদ্ধান্তে। ম্যাচ শেষে নিজের ক্ষোভটা আর অপ্রকাশিত
রাখেননি। তাঁকে যে অপরাধে হলুদ কার্ড দেওয়া হয়েছে, বার্সেলোনার কোনো
খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে রেফারি নাকি তা এড়িয়েই যেতেন। স্প্যানিশ রেডিও কাদানা
কোপেকে দেওয়ার এক সাক্ষাৎকারে তোরেস বলেছেন, ‘এই ম্যাচে রেফারি বার্সেলোনা
আর অ্যাটলেটিকোকে এক চোখে দেখেননি, এক পাল্লায় মাপেননি। ১১ জন নিয়ে খেলতে
পারলে ম্যাচটা আমরাই জিততাম।’ লুইস সুয়ারেজের একটি ঘটনা রেফারির দৃষ্টি
এড়িয়ে যাওয়াতেই যত সমস্যা। বার্সেলোনার উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার একপর্যায়ে
অ্যাটলেটিকোর হুয়ানফ্রানকে পা দিয়ে মেরে দিলেও রেফারি এড়িয়ে যান। বল ছাড়াই
ফিলিপে লুইসকে আরও একবার ফাউল করলেও রেফারি তাঁকে কিছু বলেননি। ম্যাচ শেষে
অ্যাটলেটিকো কোচ ডিয়েগো সিমিওনেও ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলেছেন, ‘রেফারির
বদান্যতায় সুয়ারেজ কমপক্ষে দুবার বেঁচে গেছে।’ ম্যাচে ১৯ মিনিটে এগিয়ে যেতে
পারত বার্সেলোনা। দানি আলভেজের ক্রসে লাফিয়ে উঠে করা নেইমারের হেড বার
উঁচিয়ে চলে যায়। ২৫ মিনিটে তোরেসের গোল ন্যু ক্যাম্পকে স্তব্ধ করে দেয়।
কোকের পাস থেকে বল পেয়ে বার্সেলোনা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেনকে
খুব সহজেই হারালেন তোরেস। ৩২ মিনিটে আন্দ্রে গ্রিয়েজমেন ব্যবধানটা বাড়িয়ে
নিতে পারতেন। তোরেসের পাস থেকে পেয়ে তাঁর নেওয়া শটটি বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে
আটকে দেন স্টেগেন। ৩৫ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তোরেস।
দশজনের দলে পরিণত হওয়ার পর রক্ষণাত্মক কৌশল নিয়ে নেওয়ার বিকল্প ছিল না
অ্যাটলেটিকোর। সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে এই সময় অ্যাটলেটিকোর রক্ষণকে
রীতিমতো কাঁপিয়ে দেন ‘এমএসএন’ ত্রয়ী। ৫০ মিনিটে নেইমারের ক্রস বুক দিয়ে
নামিয়ে নেওয়া মেসির একটি দুর্দান্ত শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। ৫২ মিনিটে
অ্যাটলেটিকোর দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে নেওয়া নেইমারের শট ক্রসবারের লাগে। ৫৬
মিনিটে আবারও মেসি। এবার তাঁর নিচু শট ওবলাক কোনোরকমে ফেরালেও ফিরতি শটে
গোল করতে পারেননি নেইমার। তবে সুরায়েজ ছিলেন লক্ষভেদে নিঁখুত। ৬৩ মিনিটে
জডি আলবার বাড়ানো বলে পোস্টের সামান্য সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সুয়ারেজ
সুযোগ-সন্ধানী এক গোল করলেন। ৭৪ মিনিটে তাঁর মাথা থেকে এল বার্সেলোনার জয়ের
গোলটি। দানি আলভেসের ক্রস থেকে এবার স্বাক্ষর রাখেন হেডিং-সামর্থ্যের।
কালকের দুই গোলে এই মৌসুমে সুয়ারেজের গোলসংখ্যা দাঁড়িয়েছে-৪৫টি। আগামী ১৩
এপ্রিল অ্যাটলেটিকোর মাঠে ফিরতি লড়াইয়ে মাঠে নামবে দুই দল। ন্যু ক্যাম্পের
এই জয় ন্যূনতম ব্যবধানে হলেও তা অ্যাটলেটিকোর মাঠে লড়াইয়ে নামার আগে
বার্সেলোনাকে সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।
No comments