যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী কুরুক্ষেত্র এখন নিউইয়র্ক
উইসকনসিনের প্রাইমারি ভোটে মঙ্গলবার বেধড়ক মার খেয়ে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন নজর দিয়েছেন নিউইয়র্কের ওপর। তাঁদের পিছু পিছু এই শহরে এসে হাজির হয়েছেন তাঁদের দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডার্স ও টেড ক্রুজ। ১৯ এপ্রিল এই রাজ্যে প্রাইমারি নির্বাচন। সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুযায়ী, হিলারি ও ট্রাম্প তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে স্বস্তিদায়ক নিরাপদ দূরত্বে রয়েছেন। এটি তাঁদের নিজস্ব রাজ্য এবং এখানে বড় ব্যবধানে জয় ছাড়া সামনে এগোনো তাঁদের পক্ষে কঠিন হবে। অন্যদিকে, বার্নি স্যান্ডার্স ভারমন্ট থেকে নির্বাচিত সিনেটর হলেও পোলিশ অভিবাসী পিতা-মাতার সঙ্গে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে তাঁর শৈশব ও যৌবন কাটিয়েছেন। এই শহরে তাঁর শেকড় বেশ গভীর। একমাত্র টেড ক্রুজই এখানে ‘বহিরাগত’। তাঁর প্রতি সমর্থনও নামমাত্র। এমনকি ওহাইয়োর গভর্নর জন কেইসিক এখানে ক্রুজের চেয়ে জনমত জরিপে এগিয়ে। বুধবার ট্রাম্প নিউইয়র্কে একাধিক জনসভায় অংশগ্রহণ করেন। ‘আহ, ঘরে ফিরে কী ভালো লাগছে’, তিনি আনন্দ প্রকাশ করে বলেন। ট্রাম্প গভীর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ‘মিথ্যাবাদী ক্রুজকে’ পরাজিত করার ও রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন পাওয়ার কথা ঘোষণা করেন। ইতিপূর্বে ক্রুজ ‘নিউইয়র্ক মূল্যবোধের’ জন্য ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলেন। ট্রাম্প সে কথা স্মরণ করে তাঁকে নতুন করে আক্রমণ করে বলেন, ‘ক্রুজ আজ এই শহরে এসেছেন, কিন্তু তাঁর সভায় এক শ মানুষও আসেনি। আমার মনে হয় তাঁকে আমরা হিসাব থেকে বাদ দিতে পারি।’ লং আইল্যান্ডের জনসভায় তুমুল করতালির মধ্যে তিনি এ কথা ঘোষণা করেন। নিউইয়র্কে তাঁর বিজয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই জেনেও ক্রুজ বুধবার আফ্রিকান-আমেরিকান অধ্যুষিত ব্রঙ্কস ও ম্যানহাটন সফর করেন। প্রতি অনুষ্ঠানেই তিনি প্রবল সমালোচনা ও বিদ্রূপের সম্মুখীন হন। ব্রঙ্কসে তিনি কথা বলার সময় বারবার বাধা দেওয়ায় একজন বিক্ষোভকারীকে সভাস্থল থেকে বের করে দেওয়া হয়। নিউইয়র্কের ডেইলি নিউজ পত্রিকা ক্রুজের এই সফরকে ঠাট্টা করে লেখে, তিনি এখানে রীতিমতো ‘ক্রুশবিদ্ধ’ হয়েছিলেন। একজন দর্শকের মন্তব্য উদ্ধৃত করে পত্রিকাটি জানায়, হিস্পানিক পদবি আছে বলে যে তিনি নিজে একজন হিস্পানিক, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। উল্লেখ্য, ক্রুজের বাবা কিউবা থেকে আগত অভিবাসী। ব্রঙ্কসবরোর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রুবেনডিয়াজও ক্রুজের বহিরাগত অবস্থানের জন্য তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘এই লোকটি এখানে এসেছে আমাদের ভোট চাইতে, অথচ দুদিন আগেও সে আমাদের মূল্যবোধের নামে বারবার অপমান করেছে।’ অন্যদিকে, ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিসেবে হিলারি ক্লিনটন এই রাজ্যে বড় ধরনের বিজয় অর্জন করে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চাইছেন। গত এক সপ্তাহ ধরেই তিনি এখানে একের পর এক রাজনৈতিক সভায় অংশ নিচ্ছেন। মঙ্গলবার উইসকনসিনে ভোটের দিন, তিনি এই ম্যানহাটনে রাজ্যের গভর্নর এন্ড্রু কুওমোর সঙ্গে ঘণ্টা প্রতি ১৫ ডলার বেতনের সমর্থনে এক সভায় অংশ নেন। সেখানে স্যান্ডার্স বা ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের একজন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে বিভক্ত করতে চান, অন্যজন বাস্তবসম্মত নয়, এমন সব কাগুজে পরিকল্পনার কথা বলছেন। বুধবার স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ করে হিলারি বলেন, নিজেকে ডেমোক্রেটিক দাবি করলেও তিনি আদৌ ডেমোক্রেটিক দলের কেউ নন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি কখনো ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য অর্থ সংগ্রহে সাহায্য করেননি। দিন দু-এক আগে ডেইলি নিউজ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে স্যান্ডার্স বৃহৎ ব্যাংক সমূহ কয়েক খণ্ডে বিভক্ত করার এক পরিকল্পনা গুছিয়ে বলতে ব্যর্থ হন। সে কথা উল্লেখ করে ক্লিনটন বলেন, স্যান্ডার্স এখনো ঠিক ‘হোম ওয়ার্ক’ করে ওঠেননি। ভোটারদের খুশি করার জন্য যা খুশি বলছেন, কিন্তু সে সব কথা কি তিনি রাখতে পারবেন? হিলারি ক্লিনটন তাঁকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার ‘অযোগ্য’ বলেছেন, এই অভিযোগ তুলে স্যান্ডার্স ফিলাডেলফিয়ায় এক ভাষণে বলেন, হিলারি সম্ভবত ভীত হয়ে অসংলগ্ন কথা বলা শুরু করেছেন। ‘আমার তো মনে তিনি নিজে প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন।’ হিলারির সঙ্গে ওয়ালস্ট্রিটের গভীর সখ্যের কথা উল্লেখ করে স্যান্ডার্স বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলার চাঁদা তোলার পর তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য যোগ্য, সে কথা আর বলা যায় না। হিলারি ইতিপূর্বে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে স্যান্ডার্সের অবস্থান ধোঁয়াটে, সে কথা উল্লেখ করে আবারও কানেকটিকাটের স্যান্ডি হুক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বিচার গোলাগুলিতে নিহত শিশুদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেন। সে কথা উল্লেখ করে স্যান্ডার্স বলেন, হিলারির উচিত হবে ইরাকে নিহত হাজার হাজার মানুষের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাওয়া। উল্লেখ্য, ইরাকে মার্কিন অভিযানের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন হিলারি, স্যান্ডার্স ওই অভিযানের বিরোধিতা করেছিলেন। সর্বশেষ জনমত গণনা অনুযায়ী হিলারি স্যান্ডার্সের তুলনায় ৮ থেকে ১০ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। এই রাজ্যের অধিকাংশ ‘সুপার ডেলিগেট’ বা দলীয় কর্মকর্তা ও নির্বাচিত প্রতিনিধি ক্লিনটনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। স্যান্ডার্স ‘ডেমোক্রেটিক’ নন, ক্লিনটনের এই সমালোচনার লক্ষ্য যে দলের ‘সুপার ডেলিগেটরা’ তাতে সন্দেহ নেই। তবে সুপার ডেলিগেটদের সমর্থনে বিস্তর এগিয়ে থাকলেও জাতীয় পর্যায়ে জনসমর্থনে হিলারি পিছিয়ে রয়েছেন স্যান্ডার্সের চেয়ে। তাঁর প্রতি ‘অবিশ্বাস’ এখনো প্রবল এবং এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে তিনি ক্রুজ ও কেইসিকের সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরাস্ত হবেন। একমাত্র ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই তিনি সহজে পরাস্ত করতে সক্ষম। অন্যদিকে স্যান্ডার্স তরুণদের মধ্যে তাঁর সমর্থনের জোরে সব রিপাবলিকান প্রার্থীকেই বড় অঙ্কের ব্যবধানে পরাস্ত করতে সক্ষম।
No comments