বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত মন্দিরের মেঝেতে পাঠদান
নারায়ণগঞ্জ নগরের খানপুরের এল কে বালক-বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাশের মন্দিরে শিশুদের পাঠদান করা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে খানপুরের সিদ্ধি গোপাল জিউর আখড়া মন্দির থেকে তোলা ছবি |
নারায়ণগঞ্জ নগরীর খানপুর এলাকার এল কে বালক/বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পাশের শ্রীশ্রী সিদ্ধি গোপাল আখড়া মন্দিরের মেঝেতে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে মন্দিরের পূজা অর্চনার কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, গত বছরের ২৫ এপ্রিল নেপালে ভূমিকম্পের সময় প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাংলাদেশে সংঘটিত ভূ-কম্পনে স্কুলটির দোতলা ভবনে ফাটল ধরে। ফলে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর পরিচালনা কমিটি স্কুলের সীমানা দেয়াল-সংলগ্ন মন্দিরটিতে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা মন্দিরের মেঝেতে বসে ক্লাস করছে। পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষিকা সন্ধ্যা রানী ও কাজী শিরিন সুলতানা। সন্ধ্যা রানী জানান, স্কুলটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পর থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। মন্দিরটির ছাদ খোলা হওয়ায় রাতের বেলা পাখির মলমূত্রে বসার পরিবেশ থাকে না। পরদিন শিক্ষার্থীরা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে। বৃষ্টি হলে ক্লাস করার সুযোগই নেই। বর্ষা মৌসুমে বিশেষ করে পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া হবে সেটাই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম শ্রেণির ছাত্র সীমান্ত দাস ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবু হুরায়রা বলে, খোলা মেঝেতে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ক্লাস করতে হচ্ছে। স্কুল সূত্র জানায়, ১৯২৯ সালে স্কুলটি নির্মিত হয়। ১৯৯৩ সালে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে দুটি পালায় স্কুলের বালক ও বালিকা শাখার কার্যক্রম চলছে। প্রথম পালায় সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বালিকা ও দ্বিতীয় পালায় দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সোয়া ৫টা পর্যন্ত বালকদের ক্লাস চলে। স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫৮৪ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ৯ জন। ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ার পর গত বছর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শাহীন আরা বেগম স্কুলটি পরিদর্শনে আসেন। এর কয়েক দিন পরে উপজেলা স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী ভবনটি পরিদর্শন করে সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেন। গত বছরের ৫ মে তিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠান। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় ভবনটিতে পাঠদানে নিষেধ করে। মন্দিরের সেবায়েত সুমন চক্রবর্তী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য সাময়িকভাবে পাঠদান চালানোর জন্য মন্দিরে জায়গা দিয়েছিলাম। কিন্তু গত এক বছরেও স্কুল কর্তৃপক্ষ বিকল্প ব্যবস্থা করতে না পারায় মন্দিরেই স্কুলের কার্যক্রম চলছে। এখন মন্দিরে পূজা অর্চনাসহ নানা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্কুলের কার্যক্রম চলে। এরপর বাণী-অর্চনা, কীর্তন ও অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করতে হয়। মন্দিরটি ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত।’ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা মাহফুজা বেগম বলেন, ৪৪/৪৫ খানপুর এল কে বালক/বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ জেলার ১৮টি ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনের তালিকা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ওই সব ভবন পুনর্নির্মাণের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। স্কুলটির বালিকা শাখার পরিচালনা কমিটির সভাপতি জসিমউদ্দিন বলেন, স্কুল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার পর পার্শ্ববর্তী বরফ কল মাঠ-সংলগ্ন শাপলা ক্লাবে ক্লাস নেওয়ার চিন্তাভাবনা ছিল। তবে সেখানে টয়লেট ও বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই। তবে সেখানে টিনশেড ঘর তৈরির মাধ্যমে ক্লাস চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
No comments