কথিত বাংলাদেশিরাই প্রধান ইস্যু! by তরুণ চক্রবর্তী
উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামের এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ‘তথাকথিত বাংলাদেশি’ই প্রধান ইস্যু। আজ সোমবার ভোটপর্ব মেটার আগে নির্বাচনী পক্ষগুলোর অনেকের ইশতেহার আর সভা-সমাবেশের ভাষণ লক্ষ করলেই এটা স্পষ্ট হয়। টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে হারাতে বিজেপি আসাম থেকে হঠাতে ‘বাংলাদেশি বহিষ্কার’ই প্রধান ইস্যু করেছে। এই প্রেক্ষাপটে আজ বিধানসভার দ্বিতীয় পর্বে রাজ্যের ১২৬টি আসনের মধ্যে ৬১টিতে ভোট। ভোট হবে রাজধানী গুয়াহাটিসহ নিমনী (দক্ষিণ) আসামের বিস্তীর্ণ এলাকায়। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের অভিযোগ, ‘বেআইনিভাবে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরাই আসামের উন্নয়নের প্রধান শত্রু। সেই সঙ্গে এ সমস্যা দেশের সুরক্ষাকেও প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে।’ অন্যদিকে, বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের দাবি, ‘আসামে একজনও বাংলাদেশি নেই। বিজেপি বাংলাদেশির নামে মুসলিমদের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’ আসামের ৩৬ শতাংশ ভোটার মুসলিম। আজ দ্বিতীয় দফায় যেসব জায়গায় ভোট হচ্ছে তার বেশির ভাগেই মুসলিমদের আধিপত্য বেশি। ‘বিদেশি’ বিতাড়নের নামে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে মুসলিমদের ভয় দেখানোর চেষ্টায় কোনো ত্রুটি নেই বিজেপির। দলটির শীর্ষ নেতা হীমন্ত বিশ্বশর্মা আগেই হুমকি দিয়েছিলেন, ’৭১ নয়, ’৫১ সালের পর যাঁরা বাংলাদেশ থেকে আসামে এসেছেন তাঁদেরও তাড়িয়ে দেওয়া হবে।’ আর ভোট প্রচারের শেষ লগ্নে গত শনিবার দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ সাংবাদিকদের বলে গেলেন, ‘বিজেপি এ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশি বিতাড়নের রোড ম্যাপ করা হবে।’ কংগ্রেস অবশ্য প্রথম থেকেই রাজ্যের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার অভয় দানে কার্পণ্য করেনি। ভোটযুদ্ধে নেমে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বারবার সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, ‘আসামে একজনও বাংলাদেশি নেই। সব মিছা কথা আর অপপ্রচার।’ তাঁর মতে, সংঘাতের কথা বলে বিজেপি রাজ্যে উন্নয়নের পথই বন্ধ করে দিতে চাইছে। কংগ্রেসের মতোই মুসলিমদের দল এআইইউডিএফ বেশি গুরুত্ব দিয়েছে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টিকেই। শুধু কথিত বাংলাদেশি ইস্যুই নয়, বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তিও আসাম ভোটের বড় ইস্যু। বিজেপি বিভিন্ন জনসভায় দাবি করেছে, সীমান্ত চিহ্নিতকরণের দীর্ঘদিনের সমস্যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মাত্র দুই বছরেই সমাধান করেছেন। কিন্তু বিজেপির জোট সঙ্গী অসম গণপরিষদ (অগপ) এই সীমান্ত চুক্তির ঘোরতর বিরোধী ছিল। তাই কংগ্রেস তাঁদের প্রচারে বলছে, সীমান্ত চুক্তির বিরোধীরা এখন কেন চুপ! ইতিমধ্যেই বুথে বুথে পৌঁছে গেছেন ভোটকর্মীরা। বেশির ভাগ বুথেই মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই সঙ্গে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে বাংলাদেশ ও ভুটান সীমান্তে।
No comments