‘নৈতিক কারণে তাঁর মন্ত্রী থাকা উচিত নয়’
ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্টের খালাসের রায় বাতিল করে আপিল বিভাগ বলেছিলেন, মামলাটি হাইকোর্টে পুনঃশুনানি করতে হবে। মায়া এই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেছিলেন। গতকাল রোববার তাঁর আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ায় দুর্নীতির মামলাটি হাইকোর্টে পুনঃশুনানির আদেশ বহাল থাকল। তিনি মনে করেন, এখন নৈতিক কারণে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর আর মন্ত্রী থাকা উচিত নয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ মন্ত্রীর রিভিউ আবেদন উপস্থাপন হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন। আদালতে মন্ত্রীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। রিভিউ খারিজ হওয়ার ফলে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১৩ বছরের কারাদণ্ড বহাল থাকল কি না—এ প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ আলম বলেন, এ পর্যায়ে সেটা বলা যাচ্ছে না। বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড রাখা যাবে কি না, তা হাইকোর্ট পুনঃশুনানি করে দেখবেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলাটি হয় এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এই মামলায় তাঁকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ে আদালত অবৈধভাবে অর্জিত মায়ার ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেন। বিচারিক আদালতের এ রায় ঘোষণার সময় মায়া পলাতক ছিলেন। পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দেন। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করলে গত বছরের ১৪ জুন আপিল বিভাগ রায় দেন। রায়ে আপিল বিভাগ বলেন, একেবারেই বিচারিক প্রজ্ঞা প্রয়োগ না করে হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দিয়েছেন। এ জন্য হাইকোর্টকে আবার নতুন করে সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে দ্রুত এ মামলাটি নিষ্পত্তি করতে হবে। প্রধানত যে কারণে হাইকোর্ট মায়াকে খালাস দিয়েছেন তা হলো আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেও দুদক তাঁকে আইনি নোটিশ দেয়নি। কিন্তু বিচারিক আদালত যেসব কারণে আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন, সেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ হাইকোর্ট আদৌ বিচার-বিশ্লেষণ করেননি। কিন্তু আপিল বিভাগের রায়ে ইতিমধ্যে এটা প্রতিষ্ঠিত যে ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৭ ধারার অধীনে অপরাধের বিচারের জন্য অভিযুক্তকে নোটিশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই মামলাটি শুরু থেকে আবার শুনানির জন্য হাইকোর্টে ফেরত পাঠানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। গত বছর আপিলের রায় ঘোষণার পর খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর মন্ত্রী ও সাংসদ পদে থাকা সংবিধানের ৬৬ (২)(ঘ) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, তিনি নৈতিকতার স্খলনজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং আপিলে এখনো নির্দোষ সাব্যস্ত হননি। খুরশীদ আলম গতকাল বলেন, তিনি আগের অবস্থান থেকে সরেননি।সেনাসমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৩ জুন রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির এই মামলাটি করে দুদক। ওই বছরের ২৫ অক্টোবর মায়া, তাঁর স্ত্রী পারভীন চৌধুরী, দুই ছেলে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী ও রাশেদুল হোসেন চৌধুরী এবং সাজেদুলের স্ত্রী সুবর্ণা চৌধুরীকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২ কোটি ৯৭ লাখ ৯ হাজার টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। ৫ কোটি ৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অর্জন করে ৬ কোটি ২৯ লাখ ২৩ হাজার টাকার সম্পদ নিজেদের দখলে রেখেছেন। ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালত মায়াকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করলেও মামলার বাকি আসামিদের খালাস দেন।
No comments