‘আমার অনুতাপ নেই, কিন্তু লোকজন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায়’
যৌন হয়রানির শিকার ২০ শিশুর একজন। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের কাসুর শহরের কাছে হুসনে খান ওয়ালা গ্রামের পথ থেকে ২০ নভেম্বর ছবিটি তোলা। ছবি: এএফপি |
‘এসব বলতে আমার কোনো অনুতাপ নেই, কিন্তু লোকজন আমার দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায়।’
কথাগুলো ১৬ বছরের শিশু ইরফানের। শিশুটি সেই ২০টি শিশুর একজন, যারা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের যৌন নির্যাতনের শিকার। চক্রটি শিশুদের যৌন নিপীড়ন করে ভিডিও ধারণ করত। পরে ওই ভিডিওগুলো দেখিয়ে অভিভাবকদের বেকায়দায় ফেলে অর্থ আদায় করত। সামাজিকভাবে হেয় হওয়া ও লোকলজ্জার ভয়ে এসব ঘটনা কাউকে বলতে পারতো না অভিভাবকেরা।
নির্যাতনের এ ঘটনা বহু বছর ধরে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের কাসুর শহরের কাছে হুসনে খান ওয়ালা গ্রামে চলে আসছিল। তবে বিষয়টি গত বছরের জুনে গণমাধ্যমে চলে আসে। পুলিশ ওই সময় অভিযান চালিয়ে হুসনে খান ওয়ালার ২৮০ শিশুকে যৌন নির্যাতনের ১৫০টি ভিডিও ক্লিপ উদ্ধার করে। ওই শিশুদের বয়স ছিল ১৪ বছরের নিচে।
আলোচিত এ ঘটনার ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। পুলিশ জানায়, এখন অভিযুক্ত ১৭ জন বিচারের অপেক্ষায় কারাগারে রয়েছেন। তিনজন জামিনে মুক্ত।
কিন্তু যৌন নির্যাতনের শিকার ছোট্ট শিশুরা, যারা সমাজের লোকলজ্জার বেড়াজাল ভেঙে বিচার চাইছে, তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে এক নতুন আশঙ্কা। সমাজে অন্যদের মতো সাধারণ জীবন পাবে কি না—এ প্রশ্ন তাদের।
যৌন নির্যাতনের শিকার অন্য শিশুদের মতো ইরফানও সমাজের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পায়নি। নিজেকে তার কলঙ্কিত মনে হয়। সে বলে, ‘বন্ধুরা যখন আমার দিকে তাকায়, আমি নিজের মধ্যে গুটিয়ে যাই। জানি, আমার সম্পর্কে তারা কী ভাবছে।’ কথাগুলো বলতে গিয়ে গলাটা ধরে আসছিল তার। বলে, ‘আমার সহপাঠীরা ও শিক্ষকেরা আমার দিকে তাকায়। তাই আমি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’
এই ২০ শিশুর পরিবারগুলো সন্তানদের জীবন নতুনভাবে গড়ে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। একজনের বাবা বলেন, তাদের ইসলামাবাদ বা বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। তারা এখানে পড়াশোনা পারবে না। তাদের অবশ্যই এই পরিবেশ থেকে বাইরে নিয়ে যেতে হবে।
দেশটির জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাইয়ে গণমাধ্যমে যৌন নির্যাতনের খবরটি এলেও এর আগেই পুলিশ এ ধরনের অপরাধ সম্পর্কে জানত, কিন্তু তারা দেখেও না দেখার ভান করে ছিল। যা শুধু অপরাধকে অবহেলা করা নয়, অপরাধকে প্রশ্রয়ও দেওয়া।
গত গ্রীষ্মে ঘটনাটি প্রকাশ পেলে অভিভাবকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়। আহত হন অনেকে। ওই বিক্ষোভের পরই রাজনৈতিক নেতারা নড়েচড়ে বসেন ও গ্রেপ্তারের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
কথাগুলো ১৬ বছরের শিশু ইরফানের। শিশুটি সেই ২০টি শিশুর একজন, যারা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের যৌন নির্যাতনের শিকার। চক্রটি শিশুদের যৌন নিপীড়ন করে ভিডিও ধারণ করত। পরে ওই ভিডিওগুলো দেখিয়ে অভিভাবকদের বেকায়দায় ফেলে অর্থ আদায় করত। সামাজিকভাবে হেয় হওয়া ও লোকলজ্জার ভয়ে এসব ঘটনা কাউকে বলতে পারতো না অভিভাবকেরা।
নির্যাতনের এ ঘটনা বহু বছর ধরে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের কাসুর শহরের কাছে হুসনে খান ওয়ালা গ্রামে চলে আসছিল। তবে বিষয়টি গত বছরের জুনে গণমাধ্যমে চলে আসে। পুলিশ ওই সময় অভিযান চালিয়ে হুসনে খান ওয়ালার ২৮০ শিশুকে যৌন নির্যাতনের ১৫০টি ভিডিও ক্লিপ উদ্ধার করে। ওই শিশুদের বয়স ছিল ১৪ বছরের নিচে।
আলোচিত এ ঘটনার ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। পুলিশ জানায়, এখন অভিযুক্ত ১৭ জন বিচারের অপেক্ষায় কারাগারে রয়েছেন। তিনজন জামিনে মুক্ত।
কিন্তু যৌন নির্যাতনের শিকার ছোট্ট শিশুরা, যারা সমাজের লোকলজ্জার বেড়াজাল ভেঙে বিচার চাইছে, তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে এক নতুন আশঙ্কা। সমাজে অন্যদের মতো সাধারণ জীবন পাবে কি না—এ প্রশ্ন তাদের।
যৌন নির্যাতনের শিকার অন্য শিশুদের মতো ইরফানও সমাজের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পায়নি। নিজেকে তার কলঙ্কিত মনে হয়। সে বলে, ‘বন্ধুরা যখন আমার দিকে তাকায়, আমি নিজের মধ্যে গুটিয়ে যাই। জানি, আমার সম্পর্কে তারা কী ভাবছে।’ কথাগুলো বলতে গিয়ে গলাটা ধরে আসছিল তার। বলে, ‘আমার সহপাঠীরা ও শিক্ষকেরা আমার দিকে তাকায়। তাই আমি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’
এই ২০ শিশুর পরিবারগুলো সন্তানদের জীবন নতুনভাবে গড়ে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। একজনের বাবা বলেন, তাদের ইসলামাবাদ বা বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। তারা এখানে পড়াশোনা পারবে না। তাদের অবশ্যই এই পরিবেশ থেকে বাইরে নিয়ে যেতে হবে।
দেশটির জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাইয়ে গণমাধ্যমে যৌন নির্যাতনের খবরটি এলেও এর আগেই পুলিশ এ ধরনের অপরাধ সম্পর্কে জানত, কিন্তু তারা দেখেও না দেখার ভান করে ছিল। যা শুধু অপরাধকে অবহেলা করা নয়, অপরাধকে প্রশ্রয়ও দেওয়া।
গত গ্রীষ্মে ঘটনাটি প্রকাশ পেলে অভিভাবকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়। আহত হন অনেকে। ওই বিক্ষোভের পরই রাজনৈতিক নেতারা নড়েচড়ে বসেন ও গ্রেপ্তারের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
হুসনে খান ওয়ালা গ্রামের দৃশ্য এটি। এখান থেকে গত জুনে ছেলে শিশুদের যৌন হয়রানির ১৫০টি ভিডিও উদ্ধার করে পুলিশ। ছবিটি ২০ নভেম্বর তোলা। ছবি: এএফপি |
পরে
কর্তৃপক্ষ জানায় মাত্র ২০টি শিশু ধর্ষণ ও সমকামিতার শিকার হয়েছে।
পাকিস্তানি আইন অনুযায়ী কেবল ধর্ষণ ও সমকামিতাই যৌন নির্যাতনের মধ্যে পড়ে।
কিন্তু এ ধরনের অন্যান্য ঘটনাগুলোকে অপরাধ হিসেবে এ আইনের আওতায় আনা হয়নি।
তবে বর্তমানে এসব বিষয় ওই আইনের অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে পাকিস্তানে সিনেটে
বিতর্ক চলছে।
স্থানীয় একটি এনজিও গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট পাকিস্তানের পরিচালক ভেলেরাই খান বলেন, এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় যৌন হয়রানি সামাল দিতে বা শিশুদের সুরক্ষা দিতে দেশটিতে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাঠামো নেই।
শিশু অধিকার সংগঠন সাহিল জানায়, এ ধরনের ঘটনা যে হারে বেড়ে চলেছে সে ক্ষেত্রে সংস্কার খুব প্রয়োজন। এ সংগঠনের হিসেবে ২০০৮ সালে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ছিল দুই হাজারের কিছু কম। কিন্তু ২০১৪ সালে এ সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের বেশি দাঁড়ায়।
প্রবীণ মানবাধিকার কর্মী হিনা জিলানি বলেন, এ ধরনের ঘটনাগুলো সামনে আসছে এটি ভালো। তবে এ ঘটনাগুলোকে সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখতে হবে। তবে নির্যাতনের শিকার এসব শিশুদের কীভাবে প্রশ্ন করতে হবে সে সম্পর্কে মানবাধিকারকর্মী, বিচারক ও পুলিশ কারও প্রশিক্ষণ নেই।
জিলানি বলেন, এ ক্ষেত্রে আরেকটি বড় ধরনের বাধা হলো ওই শিশুদের পরিবারগুলো। তারা মনে করে, বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের সম্মানহানি ঘটবে।
সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে রক্ষণশীল মুসলিম এই দেশটিতে অভিভাবকেরা শিশুদের ওপর হওয়া যৌন নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খোলার সাহস করেছে। কিন্তু এই সাহসী লোকরে সংখ্যা খুব কম। লোকলজ্জার ভয়, আইনের ফাঁকফোকর ও সচেতনতার অভাবে এখনো সমাজে এ ধরনের ঘটনা গোপনে ঘটেই চলেছে।
স্থানীয় একটি এনজিও গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট পাকিস্তানের পরিচালক ভেলেরাই খান বলেন, এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় যৌন হয়রানি সামাল দিতে বা শিশুদের সুরক্ষা দিতে দেশটিতে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাঠামো নেই।
শিশু অধিকার সংগঠন সাহিল জানায়, এ ধরনের ঘটনা যে হারে বেড়ে চলেছে সে ক্ষেত্রে সংস্কার খুব প্রয়োজন। এ সংগঠনের হিসেবে ২০০৮ সালে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ছিল দুই হাজারের কিছু কম। কিন্তু ২০১৪ সালে এ সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের বেশি দাঁড়ায়।
প্রবীণ মানবাধিকার কর্মী হিনা জিলানি বলেন, এ ধরনের ঘটনাগুলো সামনে আসছে এটি ভালো। তবে এ ঘটনাগুলোকে সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখতে হবে। তবে নির্যাতনের শিকার এসব শিশুদের কীভাবে প্রশ্ন করতে হবে সে সম্পর্কে মানবাধিকারকর্মী, বিচারক ও পুলিশ কারও প্রশিক্ষণ নেই।
জিলানি বলেন, এ ক্ষেত্রে আরেকটি বড় ধরনের বাধা হলো ওই শিশুদের পরিবারগুলো। তারা মনে করে, বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের সম্মানহানি ঘটবে।
সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে রক্ষণশীল মুসলিম এই দেশটিতে অভিভাবকেরা শিশুদের ওপর হওয়া যৌন নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খোলার সাহস করেছে। কিন্তু এই সাহসী লোকরে সংখ্যা খুব কম। লোকলজ্জার ভয়, আইনের ফাঁকফোকর ও সচেতনতার অভাবে এখনো সমাজে এ ধরনের ঘটনা গোপনে ঘটেই চলেছে।
No comments