পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতের প্রতিক্রিয়া
জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানের পেশোয়ারের বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে উদ্বিগ্ন স্বজনেরা বের করে নিচ্ছেন আতঙ্কিত শিক্ষার্থীদের। ছবি: এএফপি |
পেশোয়ারের বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসী আক্রমণ ভারত ও পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় বাধ্য করবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাংশের ধারণা এমনই। এই মহলের তথ্য, দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা শিগগিরই সন্ত্রাসের মোকাবিলায় আলোচনায় বসবেন। ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের পর যেকোনো দিন এই আলোচনা হতে পারে। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। হামলায় নিহতদের পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি মহলের মতে, ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশকেই এই বিপদের যৌথ মোকাবিলায় নামতে হবে। সে জন্য সন্ত্রাসকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বাকি বিষয়গুলো থেকে আলাদা করে দেখা হচ্ছে। সন্ত্রাস মোকাবিলায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়টিও ভাবনায় রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের স্থগিত বৈঠক কবে ফের শুরু হবে, তা এখনো অনিশ্চিত হলেও ভারতের পাঞ্জাবের পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে হামলার তদন্তের ক্ষেত্রে পাকিস্তানি দলকে ভারত স্বাগত জানিয়েছে। ইসলামাবাদ এখনো স্পষ্ট করে জানায়নি, তাদের দেশের বিশেষ তদন্তকারী দল কবে ভারতে আসবে। পাঠানকোট হামলার তদন্তে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এই বিশেষ দল গঠন করেন। ভারতীয় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রাও ইন্দ্রজিৎ সিং অবশ্য গত মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তানের বিশেষ দলের তদন্তে সব ধরনের সহযোগিতা করা হলেও তাদের পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে যেতে দেওয়া হবে না। পাকিস্তান সীমান্তের মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরত্বের এই বিমানঘাঁটিতেই আত্মঘাতী জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিল।
ভারতের দাবি, জইশ-ই-মুহাম্মদ এই হামলা চালায়। পাঠানকোট ঘাঁটিতে যেতে না দেওয়ার এই সিদ্ধান্তে পাকিস্তান অবশ্য আপত্তি করেনি। তারা জানিয়েছে, ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) আগে তাদের তদন্ত শেষ করুক। তারপর তারা দল পাঠাবে। সেই দল এনআইএর সঙ্গে প্রাথমিক কথা বলবে। তথ্য বিনিময়ও তারা এনআইএর সঙ্গেই করবে। এনআইএর তদন্ত কবে শেষ হবে তা এখনো অনিশ্চিত। কারণ, দুটি বিষয় তদন্তকারী দলকে এখনো ভাবাচ্ছে। হামলাকারীরা মোট কতজন ছিল এবং অভ্যন্তরীণ কোনো সাহায্য তারা পেয়েছিল কি না। এই সংশয়ের কারণ, নিহত সন্ত্রাসীরা দুটি দলে ভাগ হয়ে দুভাবে ঘাঁটিতে ঢুকেছিল। চারজনের দলটির সবার মৃতদেহ পাওয়া গেলেও বাকি দুজনের মৃতদেহ নিয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে তারা পারছে না। এই দলটি আবার এক দিন আগেই বিমানঘাঁটিতে ঢুকে লুকিয়ে ছিল। পাঞ্জাবের যে জায়গা দিয়ে সন্ত্রাসীরা এসেছিল তা গুরুদাসপুর জেলায়। ওই জেলার পুলিশ সুপার সালবিন্দর সিং এখনো নিজেকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে নিয়ে যেতে পারেননি। এনআইএ তাঁকে বিভিন্নভাবে জেরা করছে। তাঁকে একাধিকবার ‘লাই ডিটেক্টর’ দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। এসপি বলেছেন, জঙ্গিরা পথে গাড়ি থামিয়ে ‘অপহরণ’ করেছিল তাঁকে। পাঞ্জাবে মাদকের কারবার ব্যাপক। আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান হয়ে এই মাদক পাঞ্জাব হয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে যায়। এই মাদকের কারবারিদের সঙ্গে পাঞ্জাব পুলিশের একাংশের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসীরা পাঠানকোট হামলা ঘটিয়েছে কি না, সেটাই এনআইএর তদন্তের প্রধান বিষয়। এই সন্দেহ থেকে সালবিন্দর সিং এখনো মুক্ত নন।
No comments